কথন দক্ষতা কি | ধারণা, সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য | Concept of Speaking Skills

কথা বলা একটি উন্নত শিল্পকলা। কারন ‘বাক্যই শক্তি’। কথন দক্ষতার (Speaking Skills) মাধ্যমে ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির যোগাযোগ সম্পন্ন হয়ে থাকে।

কথন দক্ষতা হল সুন্দরভাবে কথা বলার দক্ষতা। এর মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। কথন দক্ষতা শ্রবণ দক্ষতার উপর নির্ভরশীল। “একজন ভালো শ্রোতা হলেন একজন ভালো বক্তা”। তাই যারা বেশি শ্রুতিধর তারা বেশি বাকপটু।

কথন দক্ষতা কি | Speaking Skills

কথন দক্ষতা হল মৌখিক মাধ্যমে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করার ক্ষমতা। এটি মানুষের যোগাযোগের একটি অপরিহার্য দিক। যা ব্যক্তিদের তাদের চিন্তাভাবনা, ধারণা, আবেগ এবং তথ্য অন্যদের কাছে স্পষ্ট এবং বোধগম্যভাবে জানাতে সক্ষম করে।

Bygate (1987) বলেছেন – কথন হল শ্রোতাদের মধ্যে বিভিন্ন মৌখিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে শ্রবণ সংকেত উত্পাদন করা।

Summers (2003) বলেছেন – কথন হল এমন কিছু বলা যা আপনার ধারণা বা মতামত প্রকাশ, অথবা আপনি যে ধারণাটি সত্য বলে মনে করেন তা প্রকাশ করার সময় ব্যবহৃত হয়।

কথন বলতে কিছু কথা বলা, কিছু সম্পর্কে কিছু বলা, কিছু উল্লেখ করা, কারো সাথে কথোপকথন করা, কাউকে সম্বোধন করা, কিছু বলা বা একটি নির্দিষ্ট ভাষায় নিজেকে প্রকাশ করা।

কথন দক্ষতার বৈশিষ্ট্য কি কি

কথন দক্ষতার বৈশিষ্ট্য যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলি হল –

সাবলীলতা

কথন দক্ষতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল সাবলীলতা। তাই সাবলীলতা হল শিক্ষার্থীর বোধগম্য উপায়ে কথা বলার ক্ষমতা যাতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন না হয়।

যথার্থতা

যথার্থতা কথন দক্ষতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাই  কথনের সময় শিক্ষার্থীদের ভাষা কাঠামোর সঠিকতা এবং সম্পূর্ণতার দিকে যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া উচিত।

কার্যকরী যোগাযোগ

পরিষ্কার এবং সংক্ষিপ্ত যোগাযোগ হল ভাল কথন দক্ষতার বৈশিষ্ট্য। কারণ এটি ভুল বোঝাবুঝি কমিয়ে দেয় এবং তথ্যের সঠিক আদান-প্রদানকে উৎসাহিত করে।

আত্মবিশ্বাস

আত্মবিশ্বাস ব্যক্তির কথোপথনের অংশগ্রহণকে উত্সাহিত করে। বক্তার কথন ক্ষমতার উপর আস্থা বা আত্মবিশ্বাস শ্রোতাদের মধ্যে বিশ্বাস জাগিয়ে তোলে এবং বক্তার বার্তার প্রতি আরও গ্রহণযোগ্য হতে দেয়।

সক্রিয় শ্রবণ

কার্যকর বক্তারাও হলেন মনোযোগী শ্রোতা। তাই বলা যায়, “একজন ভালো শ্রোতা হলেন একজন ভালো বক্তা”।

কথন দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা

কার্যকর যোগাযোগের জন্য কথা বলার দক্ষতার বিকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কথন দক্ষতার বিকাশের বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা বর্তমান সেগুলি হল –

i) শিক্ষার্থীদের নিজস্ব বাচনভঙ্গি গড়ে ওঠে।

ii) শিক্ষার্থীদের ভাষা-প্রয়োগে স্পষ্টতা আসে।

iii) এক বা একাধিক মানুষের মধ্যে সংযোগ বা যোগাযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ।

iv) শিক্ষার্থীদের নির্ভুল ভাষা-ব্যবহারে পটু করে তোলে।

v) শিক্ষার্থীদের বর্ণ-শব্দের সঠিক উচ্চারণের প্রয়োগে সমর্থ হয়।

vi) শিক্ষার্থীদের স্পষ্টভাবে এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে ধারণা, চিন্তাভাবনা এবং আবেগ প্রকাশের জন্য কথন দক্ষতা অপরিহার্য।

vii) শিক্ষার্থীদের ভাল কথন দক্ষতা অন্যদের সাথে সংযোগ স্থাপন এবং অর্থপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা সহজ করে তোলে।  

উপসংহার (Conclusion)

সর্বপরি বলা যায়, কথন দক্ষতা (Speaking Skills) হল মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য অংশ। কারণ ভাষার মাধ্যমে বা মধ্য দিয়ে ব্যক্তির বৃহত্তর সমাজের মধ্যে পরিচিত লাভ করতে পারে। যারা কথা বলতে পারে না বা যারা বোবা তারা মনের ভাব প্রকাশ করতে সহজে পারেনা।

তাই শিক্ষার্থীদের শিক্ষার জন্য কথন দক্ষতা একটি অপরিহার্য বিষয়। তবে গবেষণায় জানা গেছে, কথন দক্ষতা নির্ভর করে শ্রবণ দক্ষতার উপর ভিত্তি করে। তাই যারা কানে শুনতে পায় না তারা অনেক সময় কথা বলতে পারে না বা তাদের ভাষার বিকাশ ধীর গতিতে সম্পন্ন হয়ে থাকে।

গ্রন্থপঞ্জি

প্রশ্ন – কথন কাকে বলে

উত্তর – কথন হল দুই বা ততোধিক ব্যক্তিবর্গের মধ্যে মনের ভাব প্রকাশের জন্য ভাষার ব্যবহার করা।

প্রশ্ন – কথন দক্ষতার উদ্দেশ্য

উত্তর – কথন দক্ষতার উদ্দেশ্য হল – যোগাযোগ স্থাপন, মনের ভাব প্রকাশ করা, সামাজিকীকরণে অংশগ্রহণ করা, ভাষার বিকাশ প্রভৃতি।

প্রশ্ন – কথন দক্ষতা বিকাশে শিক্ষকের ভূমিকা

উত্তর – প্রথম দক্ষতা বিকাশে শিক্ষকের ভূমিকা হল – শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কথা বলার ভুলগুলি ধরিয়ে দেবেন, সঠিক বর্ণ উচ্চারণ শেখাবেন, শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন গল্প বলবেন, শিক্ষার্থীদের অনুশীলনের উপর গুরুত্ব আরোপ করবেন, নির্ভয় কথা বলার দক্ষতা শেখাবেন প্রভৃতি।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close