পাঠক্রম কাকে বলে | পাঠক্রমের 10 টি সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য | Definition of Curriculum

যে-কোনো শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণতা দান করার ক্ষেত্রে পাঠক্রম বিশেষভাবে অনস্বীকার্য। তাই শিক্ষা ব্যবস্থার মূল হাতিয়ার হল পাঠক্রম (Curriculum)।

শিক্ষার উপাদান চারটি। শিক্ষার এই চারটি উপাদানের মধ্যে অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ বস্তুগত উপাদান হল পাঠক্রম। পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজসাধ্য হয়। অর্থাৎ শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছানোর অন্যতম উপায় হলো পাঠক্রম। এই পাঠক্রমের সাহায্যে শিক্ষক মহাশয় সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিচালিত করেন এবং সুসম্পন্ন করে তোলেন।

পাঠক্রম কাকে বলে

যথার্থ শিক্ষা পাঠক্রমের উপর ভিত্তি করে রচিত হয়। পাঠক্রমের ইংরেজি ‘Curriculum’ শব্দটি লাতিন শব্দ ‘Currere’ থেকে এসেছে। যার অর্থ হল – “দৌড়ের পথ” বা “Race Course”. অর্থাৎ শিক্ষার্থী যে পথ অতিক্রম করে শিক্ষার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছায়, তাকে বলে পাঠক্রম।

তাই পাঠক্রম হল শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। এই পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন হয়ে থাকে।

পাঠক্রমের সংজ্ঞা | Definition of Curriculum

পাঠক্রমের বিভিন্ন সংজ্ঞা পরিলক্ষিত হয়। তাদের মধ্যে অন্যতম হল –

1. শিক্ষাবিদ হিলদা তাবা (H. Taba) বলেছেন – যুগে যুগে ভাবনা-চিন্তার অবয়বহীন ফলশ্রুতি হল পাঠক্রম।

2. পাঠক্রমের সংজ্ঞা হিসেবে কানিংহাম বলেছেন – পাঠক্রম হল শিক্ষকের হাতিয়ার, যা দিয়ে তিনি বিদ্যালয়ের আদর্শ অনুযায়ী শিশুকে গঠন করেন।

3. বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হর্নি (Horney) বলেছেন – শিক্ষার্থীরা যা কিছু শেখে, তাই হল পাঠক্রম।

4. বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেল বলেছেন – পাঠক্রম হল মানবজাতির সামগ্রিক জ্ঞানের ক্ষুদ্র সংস্করণ।

5. শিক্ষাবিদ পেইনি (Payne) বলেছেন – শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বের বিকাশ ও আচরণের পরিবর্তন ঘটানোর জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে সমস্ত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় এবং সচেতন ভাবে পরিচালনা করা হয় তাদের সামগ্রিক সমষ্টি হল পাঠক্রম।

6. মুদালিয়ার কমিশন (১৯৫২-৫৩) র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে – পাঠক্রম বলতে গতানুগতিকভাবে বিদ্যালয় গুলিতে নির্দিষ্ট কতগুলি শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুকে বোঝায় না। বরং এগুলি ছাড়া শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে এবং শ্রেণিকক্ষের বাইরে, গ্রন্থাগারে, পরীক্ষাগারে, কর্মশালায়, খেলার মাঠে এবং শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত যোগাযোগের ফলে যে সকল বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতার সঞ্চার হয়, তারই ফলশ্রুতি হল পাঠক্রম।

পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্য

পাঠক্রম হল শিক্ষার সাফল্যের চাবিকাঠি। পাঠক্রমের যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

1. নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ভর

2. পরিবর্তনশীল

3. মনোবিজ্ঞান সম্মত

4. নির্বাচন ধর্মী

5. সমন্বয় মূলক

6. বাস্তব ভিত্তিক

7. তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক প্রকৃতির

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল পাঠক্রম (Curriculum)। পাঠক্রম ছাড়া কোন শিক্ষা ব্যবস্থাকে একভাবে কল্পনা করা যায় না। তাই বা তখন যে কোনো শিক্ষাব্যবস্থার প্রাণ। এই পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের জ্ঞানমূলক চাহিদা পরিপূরণ করে থাকে। এবং তাকে ভবিষ্যৎ জীবনের উপযোগী করে গড়ে তোলে। তাই যে কোনো শিক্ষা ব্যবস্থা সাফল্যে পাঠক্রমের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

তথ্যসূত্র (References)

  • Aggarwal, J. C., Theory and Principles of Education. 13th Ed. Vikas Publishing House Pvt. Ltd.
  • V.R. Taneja, Educational Thoughts & Practice. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi
  • Nayak, B.K, Text Book of Foundation of Education. Cuttack, Odisha: KitabMhal
  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1,
  • Internet sources

প্রশ্ন – শিক্ষার্থী যা কিছু শেখে তাই হল পাঠক্রম কে বলেছেন

উত্তর – বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হর্নি (Horney) বলেছেন – শিক্ষার্থী যা কিছু শেখে তাই হল পাঠক্রম।

প্রশ্ন – গতানুগতিক পাঠক্রম কাকে বলে

উত্তর – গতানুগতিক পাঠক্রম বলতে কতগুলি নির্দিষ্ট পুঁথিকেন্দ্রিক জ্ঞান অর্জনকে বোঝানো হয়। অর্থাৎ গতানুগতিক অর্থে পাঠক্রম হল নির্দিষ্ট বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করা। এটি শিক্ষার সংকীর্ণ অর্থের সঙ্গে সম্পর্কিত।

প্রশ্ন – পাঠ্যক্রম সম্পর্কে আপনার ধারণা কি

উত্তর – পাঠক্রম হল কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত এমন একটি বিষয় যেটি মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কিছু জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সঞ্চারণ ঘটানো হয়ে থাকে। তাই পাঠক্রম হল শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর হাতিয়ার।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close