শিক্ষা দর্শনের পরিধি আলোচনা কর | Scope of Educational Philosophy

আধুনিক শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার একটি অন্যতম শাখা হল দর্শন। শিক্ষা ক্ষেত্রে দার্শনিক চিন্তাধারা বিকাশের জন্য এবং প্রয়োগের জন্য শিক্ষা দর্শনের উৎপত্তি হয়েছে। এই শিক্ষা দর্শনের পরিধি (Scope of Educational Philosophy) গত দিক অনেক বিস্তৃত প্রকৃতির।

বর্তমান শিক্ষা ক্ষেত্রে তাই শিক্ষা ও দর্শন পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি বিষয়। শিক্ষা ও দর্শন একে অপরকে ছাড়া অগ্রসর হতে পারে না। তাই শিক্ষায় দার্শনিক ভাবধারা বা চিন্তাধারা ব্যাপক বিস্তৃত লাভ করেছে।

শিক্ষা দর্শনের অর্থ

শিক্ষাদর্শনের সমন্বিত রূপই শিক্ষা দর্শন। তাই শিক্ষা দর্শনের অর্থ হল শিক্ষার সঙ্গে দর্শন এর সম্পর্কযুক্ত বিষয়। যার মাধ্যমে শিক্ষার উন্নতি সাধন হয়ে থাকে। সুতরাং ব্যক্তির জীবন দর্শন গুলি শিক্ষা ক্ষেত্রে যুক্ত হয়ে শিক্ষা দর্শনের উৎপত্তি হয়েছে।

শিক্ষা দর্শন সম্পর্কে বিশিষ্ট দার্শনিক ফিকটে (Ficthe) বলেছেন – দর্শন ছাড়া শিক্ষারূপ কখনোই বাস্তবায়িত হতে পারে না বা স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়।

সুতরাং শিক্ষা দর্শন হল শিক্ষা ক্ষেত্রে দর্শন শাস্ত্রের প্রয়োগ। যার মাধ্যমে শিক্ষার উন্নতি সাধন বা বিকাশ সাধন করা সম্ভবপর হয়ে থাকে। তাই আধুনিককালে শিক্ষাকে আরো ফলপ্রসু করার জন্য দর্শন শাস্ত্রের প্রয়োগ করা হচ্ছে। এখানে বিভিন্ন দার্শনিকগনের সুচিন্তিত মতামত শিক্ষাকে আরোও উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করছে।

শিক্ষা দর্শনের পরিধি | Scope of Educational Philosophy

শিক্ষা দর্শন বর্তমানে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষভাবে বিস্তার করছে। তাই শিক্ষা দর্শনের পরিধি ব্যাপক এবং বিস্তৃত। শিক্ষা দর্শনের পরিধি যে সমস্ত দিক থেকে বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

1. শিক্ষার লক্ষ্য

শিক্ষা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বর্তমান। আর এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে দর্শনের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাই শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে দর্শন শাস্ত্রের প্রভাব রয়েছে। তাই শিক্ষার লক্ষ্য কি হবে এবং কিভাবে তা বাস্তবায়িত হবে তা স্থির করতে শিক্ষা দর্শন সাহায্য করে।

2. শিক্ষার পাঠক্রম

শিক্ষার পাঠক্রম শিক্ষা দর্শনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তাই বিশিষ্ট দার্শনিক হিল্দা তাবা বলেছেন – যুগে যুগে ভাবনা-চিন্তার অবয়বহীন ফলশ্রুতি হল পাঠক্রম। তাই শিক্ষার লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করতে পাঠক্রম এর সাহায্যে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। আর এই পাঠক্রম নির্ধারণে দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। সুতরাং শিক্ষার পাঠক্রম শিক্ষা দর্শনের আলোচ্য বিষয়।

3. শিক্ষণ পদ্ধতি

শিক্ষা ক্ষেত্রে শিশুকে শেখানোর উপায় হল শিক্ষণ পদ্ধতি। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দার্শনিক চিন্তাধারা বা দার্শনিক শিক্ষা পদ্ধতি উল্লেখ করা যায়। যেমন – প্রজেক্ট মেথড, ডালটন পদ্ধতি, সমস্যা সমাধানমূলক পদ্ধতি প্রভৃতি। তাই বর্তমানে শিক্ষা দর্শনের মাধ্যমে শিক্ষণ পদ্ধতি আকর্ষণীয় ও ফলপ্রসূচি হচ্ছে। এই জন্য শিক্ষণ পদ্ধতি শিক্ষা দর্শনের পরিধির অন্তর্গত।

4. শিক্ষকের ভূমিকা

শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। তাই শিক্ষার উপাদান গুলির মধ্যে অন্যতম হল শিক্ষক। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষক হলেন শিক্ষার্থীর বন্ধু, পথপ্রদর্শক এবং দার্শনিক। অর্থাৎ আধুনিক শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা শিক্ষা দর্শন দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে।

5. শিক্ষার্থী

শিক্ষার একটি অন্যতম উপাদান হলো শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থী ছাড়া শিক্ষা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। আধুনিক শিক্ষা হল শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষা। অর্থাৎ শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে হল শিশু বা শিক্ষার্থী।

বিখ্যাত দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ রুশো শিক্ষা ক্ষেত্রে শিশু কেন্দ্রীকতার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাই বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষা দর্শন দ্বারা প্রভাবিত। তাই শিক্ষার্থী সম্পর্কিত ধারণা শিক্ষা দর্শনের পরিধির অন্তর্গত।

6. শৃঙ্খলা

শিক্ষা ক্ষেত্রে মুক্ত শৃংখলার কথা বলা হয়েছে। যা দর্শন দ্বারা অনেকাংশে প্রভাবিত। শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণ বিকাশের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা একান্ত প্রয়োজন। তাই বিশিষ্ট দার্শনিক বিবেকানন্দ বলেছিলেন -শিক্ষা হলো অন্তর্নিহিত সত্তা বা সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন। শিক্ষার্থীদের মুক্ত শৃঙ্খলা শিক্ষা দর্শনের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার ধারণা, 2 টি সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যব্যাপক অর্থে শিক্ষার ধারণা, সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য
ভাববাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাবপ্রয়োগবাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাব
বাস্তববাদ বা বস্তুবাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাব প্রকৃতিবাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাব
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা : ধারণা, সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যডেলর কমিশনের আধুনিক শিক্ষার চারটি স্তম্ভ

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষা ও দর্শনের মধ্যে সম্পর্ক যুক্ত বিষয় হল শিক্ষা দর্শন। অর্থাৎ শিক্ষাক্ষেত্রে দর্শনের প্রয়োগের দিককে শিক্ষা দর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে শিক্ষা দর্শনের পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত হয়েছে। অর্থাৎ শিক্ষার বিস্তারের ক্ষেত্রে শিক্ষা দর্শনের পরিধিতে বিভিন্ন শিক্ষাবিদ ও দার্শনিকদের মতামতকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে এবং সেই অনুযায়ী শিক্ষার বিভিন্ন নীতি নির্ধারণ করা হচ্ছে।

তথ্যসূত্র (References)

  • Aggarwal, J. C., Theory and Principles of Education. 13th Ed. Vikas Publishing House Pvt. Ltd.
  • V.R. Taneja, Educational Thoughts & Practice. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi
  • Nayak, B.K, Text Book of Foundation of Education. Cuttack, Odisha: KitabMhal
  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1,
  • Internet sources

প্রশ্ন – শিক্ষা দর্শনের পরিধি কি

উত্তর – শিক্ষা দর্শনের পরিধি ব্যাপক এবং বিস্তৃত। শিক্ষা দর্শনের পরিধির অন্তর্গত বিষয় গুলি হল – শিক্ষার লক্ষ্য, শিক্ষার পাঠক্রম, শিক্ষাদান পদ্ধতি, শিক্ষকের ভূমিকা, শিক্ষার্থী, শৃঙ্খলা, বিদ্যালয় ধারণা, মূল্যায়ন প্রভৃতি।

প্রশ্ন – শিক্ষা দর্শন বলতে কি বুঝায়

উত্তর – শিক্ষা দর্শন হল শিক্ষা ক্ষেত্রে দর্শন শাস্ত্রের প্রয়োগ। তাই বর্তমান শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষা ও দর্শনের একটি পারস্পরিক সুসম্পর্ক পরিলক্ষিত হয়। দর্শন ব্যতীত শিক্ষার তাই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। সুতরাং শিক্ষা দর্শন হল দর্শনের একটি প্রয়োগমূলক শাখা যেখানে শিক্ষার লক্ষ্য, পাঠক্রম শিক্ষা পদ্ধতি, মূল্যায়ন, শৃঙ্খলা কেমন হবে তা আলোচনা করা।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close