স্বাধীনতার পর গঠিত বিভিন্ন কমিটি ও কমিশন নারী শিক্ষার বিস্তারে বিভিন্ন সুপারিশ করেছিলেন। আর এইসব কমিশনের মধ্যে অন্যতম হল মুদালিয়র কমিশন। নারী শিক্ষার বিস্তারে মুদালিয়র কমিশনের সুপারিশ (Mudaliar Commission on Women Education) গুলি ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাধীনতার পর ভারতে রাধাকৃষ্ণন কমিশন, কোঠারি কমিশনের পাশাপাশি মুদালিয়র কমিশন গঠিত হয়। এই কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন নামে পরিচিত। ১৯৫২-৫৩ সালে লক্ষণস্বামী মুদালিয়রের নেতৃত্বে মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন (The Secondary Education Commission) বা মুদালিয়র কমিশন গঠিত হয়। মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নতিকল্পের পাশাপাশি নারী শিক্ষার বিস্তারে মুদালিয়র কমিশন বিভিন্ন সুপারিশ করেছিলেন।
নারী শিক্ষায় মুদালিয়র কমিশনের সুপারিশ | Mudaliar Commission on Women Education
মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন বা মুদালিয়র কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি নারীদের শিক্ষা বিস্তারেও বিভিন্ন সুপারিশ করেছিলেন। এই কমিশনের চতুর্থ অধ্যায় নারী শিক্ষার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোকপাত করা হয়। তাছাড়া কমিশনের প্রতিবেদনের বিভিন্ন অংশের বিক্ষিপ্তভাবে নারী শিক্ষা বিস্তারের বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়।
সাধারণভাবে নারী শিক্ষায় মুদালিয়র কমিশনের সুপারিশ গুলি যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –
1. সহ শিক্ষার ব্যবস্থা
মুদালিয়র কমিশন নারীদের শিক্ষার ক্ষেত্রে সহ শিক্ষার সুপারিশ করেন। কমিশন বলেন প্রাথমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের শিক্ষার মত মাধ্যমিক স্তরে ছেলে ও মেয়েদের একসঙ্গে শিক্ষা দিতে হবে। অর্থাৎ প্রাথমিক, প্রাথমিক এবং উচ্চশিক্ষায় সহ শিক্ষার মাধ্যমে সমতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবে মাধ্যমিক স্তরে সম্ভব হলে মেয়েদের জন্য পৃথক বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। কমিশন মনে করে পৃথক বিদ্যালয় মেয়েরা অধিক পড়াশোনা সুযোগ পাবে।
2. পাঠক্রম সংক্রান্ত সুপারিশ
পাঠক্রম প্রসঙ্গে কমিশন বলেন সহশিক্ষার প্রতিষ্ঠান এবং মেয়েদের জন্য স্থাপিত বিদ্যালয় গুলিতে পাঠক্রম হিসেবে গার্হস্থ্য বিদ্যা, সঙ্গীত, অঙ্কন প্রভৃতি ব্যবস্থা করতে হবে।
3. নারী পুরুষের বৈষম্য দূরীকরণ
নারী শিক্ষা বিস্তারের প্রধান বাধা হল নারী পুরুষের মধ্যে বৈষম্য। তাই নারী শিক্ষায় মুদালিয়র কমিশনের সুপারিশ হল – নারী পুরুষের মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে যেন কোনো বৈষম্য না থাকে তার সুপারিশ করেন। তাছাড়া কমিশন নারী শিক্ষার বিদ্যালয় গুলিতে সরকারকে সমানভাবে অর্থ সাহায্যের সুপারিশ করেন।
4. সুযোগ-সুবিধা প্রদান
কমিশন নারী শিক্ষার জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কথা বলেন। অর্থাৎ বিদ্যালয় গুলিতে পৃথক খেলার মাঠ, শৌচালয়, পৃথক বসার রুম বা কমন রুমের ব্যবস্থা, স্কলারশিপ প্রভৃতি ব্যবস্থার করার সুপারিশ করেন। তাই নারী শিক্ষায় মুদালিয়র কমিশনের সুপারিশ গুলির অন্যতম হলো নারীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা।
5. সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলীর ব্যবস্থা
মুদালিয়র কমিশন সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি মেয়েদের জন্য সহপাঠক্রমিক বিভিন্ন কার্যাবলী সুপারিশ করেন। এর মধ্যে অন্তর্গত হল গাইড, নার্সিং, সেলাই প্রভৃতি। এর ফলে মেয়েরা স্বাবলম্বী হয়ে গড়ে উঠতে পারবে।
6. বিদ্যালয় স্থাপন
কমিশনার নারী শিক্ষার বিস্তারে পৃথক বিদ্যালয় স্থাপনের কথা বলেছেন। অর্থাৎ কমিশন বলেন যদি সম্ভব হয় তাহলে মেয়েদের জন্য আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা প্রয়োজন। কারণ মিশ্র প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এখানে মেয়েরা অনেক বেশি সুযোগ পাবে ও শিক্ষায় আগ্রহ প্রকাশ করবে।
এগুলি ছাড়াও কমিশনের প্রতিবেদনে বিভিন্ন অংশে নারী শিক্ষার পাওয়া যায়, সেগুলি হল –
i) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মহিলা ও পুরুষ দুই ধরনের শিক্ষক নিয়োগের কথা বলেছেন।
ii) যে সমস্ত অঞ্চলে মহিলা শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে সেখানে অন্তত একজন করে মহিলা শিক্ষিকা নিয়োগ করতে হবে এবং শিক্ষিকাদের জন্য পৃথক থাকার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
iii) নারী শিক্ষা বিস্তারে সরকারকে আরো বেশি সচেষ্ট হতে হবে এবং শিক্ষা প্রশাসনে নারীদের অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
iv) যে সমস্ত স্থানে মেয়েদের জন্য স্কুল নেই বা বিদ্যালয় নেই সেখানে বিদ্যালয় স্থাপন করতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।
উপসংহার (Conclusion)
সর্বোপরি বলা যায়, নারী শিক্ষায় মুদালিয়র কমিশনের প্রতিবেদনের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন সুপারিশ পরিলক্ষত হয়। নারী শিক্ষার বিস্তারে মুদালিয়র কমিশনের (Mudaliar Commission on Women Education) আলাদা সুপারিশ না থাকলেও কমিশন সহ-শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তাই কমিশন বলেছিলেন অভিভাবকদের আপত্তি না থাকলে মিশ্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা ছেলেদের স্কুলে মেয়েদের ও ভর্তির ব্যবস্থা করতে পারে।
তথ্যসূত্র (References)
- Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1
- Basabi Chakrabarti, Women’s Studies: Various Aspects. Urbi Prakashani 2014
- Betty Friedan. The Feminine Mystique. New York: Norton, 1963
- Geraldine Forbes, Women in Modern India Cambridge University Press, 1996.
- Mary E. John. “Women’s Studies in India: A reader” Penguin Books. 2008
- Internet Sources
প্রশ্ন – নারী শিক্ষার বিস্তারে মুদালিয়র কমিশনের দুটি সুপারিশ লেখো।
উত্তর – নারী শিক্ষা বিস্তারে মুদালিয়ার কমিশনের দুটি সুপারিশ হল – i) নারী পুরুষের বৈষম্য দূর করে সহ-শিক্ষার ব্যবস্থা করা ও ii) মেয়েদের জন্য পৃথক স্কুল এবং আলাদা অর্থনৈতিক তহবিল গড়ে তোলা।
আরোও পড়ুন
- নারী শিক্ষায় রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা (Important Role of Rammohan Roy in Women Education)
- নারী শিক্ষায় বিদ্যাসাগরের অবদান (Role of Vidyasagar in Women Education)
- নারী শিক্ষায় হংসরাজ মেহেতা কমিটির সুপারিশ (Hansraj Mehta Committee)
- Bhaktavatsalam Committee: নারী শিক্ষা বিষয়ে ভক্তবৎসলম কমিটির সুপারিশ
- Durgabai Deshmukh Committee: নারী শিক্ষায় দূর্গাবাঈ দেশমুখ কমিটির সুপারিশ
- নারী শিক্ষায় মিশনারীদের অবদান : Missionaries’ Contribution to Women Education