অক্ষমতার প্রকারভেদ

Q: প্রশ্ন - তিনটি সবচেয়ে সাধারণ শারীরিক অক্ষমতা কি কি?

উত্তর - তিনটি সবচেয়ে সাধারণ শারীরিক অক্ষমতা গুলি হল - অস্থিগত বা অঙ্গসংস্থানগত অক্ষমতা, দৃষ্টিগত অক্ষমতা এবং শ্রবণগত অক্ষমতা।

শারীরিক বা অঙ্গসংস্থান গত বা পেশীগত এবং মানসিকভাবে কোনো ব্যক্তির বিভিন্ন কাজকর্মে অসুবিধা সৃষ্টি হয় তখন তাকে অক্ষমতা বলে। শারীরিক বা পেশীগত বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে অক্ষমতার প্রকারভেদ (Types of Disabilities) বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়।

অক্ষমতা হল ব্যক্তির এমন একটি অবস্থা, যার ফলে ব্যক্তির স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাহত হয়ে থাকে। ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন প্রকার অক্ষমতা পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। অক্ষমতার যে সমস্ত প্রকারভেদ রয়েছে তা বিস্তারিত এই পর্বে আলোচনা করা হল।

Table of Contents

অক্ষমতার প্রকারভেদ | Types of Disabilities

শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতার উপর ভিত্তি করে অক্ষমতার বিভিন্ন প্রকারভেদ (Types of Disabilities) পরিলক্ষিত হয়। অক্ষমতার প্রকারভেদ যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

1. অস্থিগত বা অঙ্গসংস্থান গত অক্ষমতা

সাধারণভাবে অস্থিগত বা অঙ্গসংস্থান গত অক্ষমতা হল ব্যক্তি শারীরিক গঠন কাঠামোর অস্বাভাবিকতা। এই ধরনের অক্ষমতার উদাহরণ হল পক্ষঘাত, অঙ্গচ্ছেদ, খোঁড়া প্রভৃতি।

অস্থিগত বা অঙ্গসংস্থান গত অক্ষমতার কারণ –

অস্থিগত বা অঙ্গসংস্থান গত অক্ষমতার যে সমস্ত কারণ পরিলক্ষিত হয় সেগুলি হল –

i) বংশগত কারণে ফলে অস্থিগত বা অঙ্গ সংস্থান গত অক্ষমতা পরিলক্ষিত হয়। যেমন – হাত বাঁকা, জোড়া আঙুল, ছটা আঙুল, বাঁকা পা প্রভৃতি।

ii) জন্মগত কারণ। অর্থাৎ গর্ভকালীন বিভিন্ন কারণে এই ধরনের অক্ষমতা পরিলক্ষিত হয়। যেমন – মায়ের অপুষ্টি, মায়ের ড্রাগ সেবন, মায়ের কোনো জটিল বা কঠিন রোগ প্রভৃতি শিশুর ক্ষেত্রে অক্ষমতা দেখা দিতে পারে।

iii) পরিবেশগত বিভিন্ন কারণ। অর্থাৎ পরিবেশগত বিভিন্ন কারণে অস্থি গত বা অঙ্গ সংস্থান গত অক্ষমতা দেখা দেয়। যেমন – সময়ের আগে প্রসব হলে, শিশু ও মা কঠিন রোগে আক্রান্ত হলে, কোনো দুর্ঘটনায় পড়লে বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে অঙ্গহানি হলে এই ধরনের অক্ষমতা সৃষ্টি হতে পারে।

2. দর্শনগত অক্ষমতা

যখন কোনো ব্যক্তির শিক্ষার্থীদের দর্শনগত সমস্যা সৃষ্টি হয় বা স্বাভাবিক ব্যক্তির মতো দেখতে পায় না তখন তাকে, দর্শনগত অক্ষমতা বলে।

আমেরিকার Social Security Act (1935) অনুসারে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার আইনগত সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে – যে সমস্ত ব্যক্তিরা স্বাভাবিক চোখে বা লেন্স ব্যবহার করার পরেও ব্যক্তির ভিজুয়ায় অ্যাকুইটি 20/200 বা তার কম অথবা 20/200 এর বেশি কিন্তু ব্যক্তির ভালো চোখে দৃষ্টির ক্ষেত্রে 20 -এর বেশি নয়, তখন তাকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বা অক্ষমতা বলে।

জনসংখ্যার পরিপেক্ষিতে সমগ্র বিশ্বে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা সংখ্যা অনেক বেশি। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO) সমীক্ষা অনুযায়ী সারা বিশ্বে প্রায় 30 মিলিয়নের বেশি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী যুক্ত ব্যক্তিরাও রয়েছে।

3. শ্রবণগত অক্ষমতা

যখন কোনো ব্যক্তি বা শিক্ষার্থীরা কানে শুনতে পায় না বা অল্প শুনতে পায় তাদেরকে শ্রবণগত অক্ষমতা বলে। তবে যারা পুরোপুরি বা কোনো শব্দ শুনতে অক্ষম তাদেরকে বধির বলে। আবার যারা অল্প অল্প শব্দ বা ভাষা শুনতে পায় তাদেরকে মৃদু মাত্রার শ্রবণ অক্ষমতা হিসেবে গণ্য করা হয়।

4. সেরিব্রাল পালসি

সেরিব্রাল পালসি হল এক ধরনের মানসিক অক্ষমতা। অর্থাৎ ব্যক্তি বা শিশুদের স্নায়বিক ভারসাম্যহীনতাকে সেরিব্রাল পালসি বলা হয়ে থাকে।

5. অটিজম

কোনো ব্যক্তি বা শিশু যদি পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সঙ্গে বা ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া বা ভাবের আদান প্রদান করতে ব্যর্থ হয় তখন তাকে অটিজম বলে।

6. শিখন অক্ষমতা

বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অক্ষমতা হল শিখন অক্ষমতা। অর্থাৎ কোনো শিশু যদি স্বাভাবিক শিশুর সাথে পড়াশোনা করতে অক্ষম হয় তখন তাকে শিখন অক্ষমতা হিসেবে চিহ্নিতকরণ করা হয়ে থাকে।

শিখন অক্ষমতার প্রকারভেদ প্রধানত তিন ধরনের, সেগুলি হল –

i) পঠনগত অক্ষমতা,

ii) লিখনগত অক্ষমতা ও

iii) গাণিতিক অক্ষমতা

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, অক্ষমতা ব্যক্তির মধ্যে সাধারণভাবে বিভিন্ন কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করে থাকে। তবে উপযুক্ত চিকিৎসা বা সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে অক্ষমতাকে কিছুটা হলেও দূরীকরণ করা সম্ভব হয়।

তথ্যসূত্র (References)

Kar. Chintamani, Exceptional Children Their Psychology and Education. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi.
Kirk, S. A. Educating Exceptional Children. Oxford IBH. New Delhi.
Mangal, S. K. Educating Exceptional Children: An Introduction to Special Education. PHI Learning Pvt. Ltd. New Delhi.
Panda, K. C. Education of Exceptional Children. Vikas Publishing House Pvt. Ltd. New Delhi.
Internet sources