ব্যক্তিত্ব হল ব্যক্তি নিজস্ব কিছু গুণ বা বৈশিষ্ট্য যা তাকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের মধ্যে অভিযোজন করতে সহায়তা করে। মনোবিজ্ঞানে ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন তত্ত্বের মধ্যে ফ্রয়েডের ব্যক্তিত্ব বিকাশের তত্ত্ব (Freud’s Theory of Personality Development) অন্যতম।
ব্যক্তিত্ব বিকাশের বিভিন্ন তত্ত্ব বর্তমান। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – আলপোর্টের তত্ত্ব, ইয়ুং -এর তত্ত্ব, আইজাঙ্কের তত্ত্ব, পঞ্চ উপাদান তত্ত্ব, ফ্রয়েডের তত্ত্ব, ক্যাটেলের তত্ত্ব প্রভৃতি। এখানে ফ্রয়েডের ব্যক্তিত্ব বিকাশের তত্ত্ব আলোচনা করা হল।
ফ্রয়েডের ব্যক্তিত্ব বিকাশের তত্ত্ব | Freud’s Theory of Personality Development
বিখ্যাত মনস্তত্ত্ববিদ ও ভিয়েনার চিকিৎসক সিগমুণ্ড ফ্রয়েড ব্যক্তিত্ব বিকাশের তথ্য হিসেবে ‘সাইকো-সেক্সুয়াল’ (Psycho-sexual) বিকাশের তত্ত্ব বা যৌনশক্তি বিকাশের তত্ত্বের জনক হিসেবে অধিক পরিচিত। এই তত্ত্বটি ব্যক্তিত্বের মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব (Psychoanalytic Theory) নামে অধিক পরিচিত।
ফ্রয়েডের ব্যক্তিত্ব বিকাশের তত্ত্ব যৌন শক্তি বা লিবিডোর সংবর্ধনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছেন। ফ্রয়েডের ব্যক্তিত্ব বিকাশের তত্ত্ব বিশ্লেষণ করলে যে সমস্ত উল্লেখযোগ্য দিক পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি নিম্নলিখিত –
1. ব্যক্তিসত্তার সংগঠন – ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলি হল – ইদ্ (ID), ইগো বা অহম্ (Ego) ও অধিসত্তা (Super Ego)
2. চেতনার মাত্রা – চেতনার মাত্রার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বিষয় গুলি হল – চেতন স্তর, প্রাক্ চেতন স্তর এবং অবচেতন স্তর। ফ্রয়েডের মতে মানসিক এই তিনটি স্তরের মধ্যে দিয়ে ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন হয়ে থাকে।
3. যৌন মানসের বিকাশ বা সাইকো সেক্সুয়াল বিকাশের স্তর – ব্যক্তিত্ব বিকাশের তত্ত্বে এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রয়েডের মতানুসারে যৌন মানসের বিকাশ কয়েকটি স্তরের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়। এগুলি হল – মৌখিক পর্যায়, পায়ু পর্যায়, লৈঙ্গিক পর্যায়, প্রসুক্তি পর্যায় এবং জননেন্দ্রিয় পর্যায়।
আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now |
এখানে কেবলমাত্র ব্যক্তিসত্তার সংগঠন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
1. ব্যক্তিসত্তার সংগঠন
ফ্রয়েডের মতে ব্যক্তিসত্তার সংগঠন তিনটি স্তরের মধ্য দিয়ে সংগঠিত হয়ে থাকে। সেগুলি হল –
ইদ্ (ID)
ব্যক্তিত্ব গঠনের উপাদানের মধ্যে এটি হলো সব থেকে প্রধান ও প্রাচীন উপাদান। ফ্রয়েডের মতে – ইদ্ হল ব্যক্তিত্ব গঠনের এমন একটি উপাদান যেটি মনের অবচেতন স্তরে থাকে। এটির কাজ হল ব্যক্তির কামনা-বাসনা, ও সুখ ভোগের চাহিদাকে পূরণ করা।
অর্থাৎ এটি সুখ ভোগের নীতি দ্বারা পরিচালিত। এটি হল আদিম প্রকৃতির। অর্থাৎ এটি প্রকৃতিতে আদিম, জৈবিক ও অসংগঠিত প্রকৃতির। ইদ্ জন্মগতভাবে ব্যক্তির মধ্যে তৈরি হয় ও সুপ্ত অবস্থায় থাকে।
ইগো বা অহম্ (Ego)
ফ্রয়েডের মতে – ব্যক্তিত্ব গঠনের দ্বিতীয় উপাদান হল ঈদ বা অহম্ । এটি সেই অংশ যা বাইরের জগতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। অর্থাৎ এটি ব্যক্তিকে বাইরের জগতের বা পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলতে সহায়তা করে।
ইগো বা অহম্ হল বাস্তবসম্মত ও যুক্তিবাদী। এটি সব সময় ইদ্ -এর চাহিদাকে পূরণ করে না। বরং সামাজিক বা বাস্তবে সঙ্গে সঙ্গতিসাধনের মাধ্যমে ইদ্ -এর চাহিদাগুলিকে পূরণ করতে সচেষ্ট হয়।
অর্থাৎ যে চাহিদাগুলি পূরণ করা সম্ভব হয় ইগো বা অহম্ তার বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে সেই সমস্ত চাহিদাগুলিকে ইদ্ -এর চাহিদা গুলিকে পূরণ করে থাকে। ফ্রয়েডের মতে ইগো বা অহম্ তিন বছর বয়স থেকে শিশুর মধ্যে বিকশিত হতে থাকে।
অধিসত্তা (Super Ego)
ফ্রয়েডের মতে – ব্যক্তিত্ব গঠনের অন্যতম একটি উপাদান হল অধিসত্তা। এটি ব্যক্তিত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা ব্যক্তির মধ্যে নীতিবোধ ও আদর্শ গঠনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ ভালো-মন্দ, সততা অসততা, নৈতিকতা প্রভৃতি অধিসত্তার মাধ্যমে গঠন হয়ে থাকে। এটি হল মনের চেতন অবস্থা বা চেতন স্তর।
তাই অধিসত্তা ব্যক্তিত্ব গঠনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ফ্রয়েড বলেছেন – এটি পাঁচ বছর বয়স থেকে ব্যক্তি বা শিশুর মধ্যে গঠিত হতে থাকে।
পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী প্রভৃতি ব্যক্তিবর্গের নিকট থেকে শিশুরা ভালো মন্দ, ন্যায়নীতি, বিভিন্ন নিয়ম কানুন, আদর্শ ইত্যাদি আয়ত্ত করে থাকে, ফলে ব্যক্তির মধ্যে অধিসত্তার বিকাশ ঘটে যা পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now |
উপসংহার (Conclusion)
পরিশেষে বলা যায়, ফ্রয়েডের ব্যক্তিত্ব বিকাশের তত্ত্ব ব্যক্তিত্বের বিকাশের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য বংশগতির বা যৌনতার যে প্রভাব রয়েছে তা ফ্রয়েড ব্যক্তিত্ব বিকাশের তত্ত্ব -এ বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। তাই ব্যক্তির জীবন বিকাশের ক্ষেত্রে বা ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে এই তত্ত্বটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্যসূত্র (Reference)
- A. Woolfolk – Educational Psychology – Pearson Education
- J. W. Santrock – Educational Psychology – Mc Gray Hill
- J. C. Aggarwal – Essentials of Educational Psychology – Vikas publisher
- S. K. Mangal – Essentials of Educational Psychology – PHI Ltd.
- S. K. Mangal – Advanced Educational Psychology – PHI Ltd
- S. S. Chauhan – Advanced Educational Psychology – Vikas publisher
- E. B. Hurlock – Child Development – Anmol Publication Pvt. Ltd
- L. E. Berk – Child Development – PHI Ltd
- Internet Sources
প্রশ্ন – ফ্রয়েডের ব্যক্তিত্ব তত্ত্ব কি?
উত্তর – বিখ্যাত মনস্তত্ত্ববিদ ও ভিয়েনার চিকিৎসক সিগমুণ্ড ফ্রয়েড ব্যক্তিত্ব বিকাশের তথ্য হিসেবে ‘সাইকো-সেক্সুয়াল’ (Psycho-sexual) বিকাশের তত্ত্ব বা যৌনশক্তি বিকাশের তত্ত্বের জনক হিসেবে অধিক পরিচিত। এই তত্ত্বটি ব্যক্তিত্বের মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব নামে অধিক পরিচিত।
আরোও পড়ুন
- শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ | বৃদ্ধি ও বিকাশের মধ্যে পার্থক্য | 10 Difference Between Growth and Development
- বৃদ্ধি কাকে বলে | বৃদ্ধির বৈশিষ্ট্য | 4 Definition of Growth
- বৃদ্ধি ও বিকাশের বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Growth and Development
- জীবন বিকাশের বিভিন্ন স্তর গুলি আলোচনা কর | 4 Stages of Human Development
- শিখন কাকে বলে | শিখনের বৈশিষ্ট্য | 5 Definition and Characteristics of Learning
- ব্যক্তিত্ব কাকে বলে | ভালো ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য (5 Definition and Characteristics of Personality)
1 thought on “ফ্রয়েডের ব্যক্তিত্ব বিকাশের তত্ত্ব | Freud’s Theory of Personality Development”