স্বাধীনতার পর ভারতে নারী শিক্ষার বিস্তার সাধন ও উন্নতিতে বিভিন্ন কমিশন ও কমিটি গঠন হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হল হংসরাজ মেহেতা কমিটি (Hansraj Mehta Committee)।
স্বাধীনতার ভারতে সমাজের অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন কমিশন কমিটি গঠিত হয়েছিল। তাদের মধ্যে শিক্ষার জন্য বিভিন্ন কমিটি ও কমিশন গঠিত হয়। স্বাধীনতা লাভের পর ভারতবর্ষে শিক্ষার হার বিশেষত নারী শিক্ষার হার সন্তোষজনক ছিল না। শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের অন্তর্ভুক্ত ও নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন প্রকার কমিশন ও কমিটি গঠিত হয়েছে। তাদের মধ্যে হংসরাজ মেহতা কমিটির একটি উল্লেখযোগ্য কমিটি। এখানে হংসরাজ মেহতা কমিটির নারী শিক্ষার উদ্দেশ্য ও নারী শিক্ষার সুপারিশগুলি আলোকপাত করা হল –
হংসরাজ মেহতা কমিটি (Hansraj Mehta Committee)
ভারত স্বাধীনতা লাভের পর নারী শিক্ষার উন্নতিকল্পে 1961 সালে 10ই মে নারী শিক্ষার জাতীয় পরিষদ বা NCWE (National Council for Women’s Education) শ্রীমতি হংসরাজ মেহেতার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেন। নারী শিক্ষার ইতিহাসে সেটি হংসরাজ মেহেতা কমিটি নামে খ্যাত।
নারী শিক্ষায় হংসরাজ মেহতা কমিটির উদ্দেশ্য (Objectives of Hansraj Mehta Committee on Women Education)
নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে হংসরাজ মেহতা কমিটির (Hansraj Mehta Committee) যে সমস্ত উদ্দেশ্যগুলি বর্তমান, সেগুলি হল –
i) নারীদের শিক্ষা বিষয়ে পৃথক পাঠক্রমের সমস্যা সমাধান করা।
ii) নারীদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক চাহিদা পূরণ করা। অর্থাৎ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত নারীদেরকে শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও সামাজিক চাহিদা পূরণ করা।
iii) নারীদের জন্য প্রযুক্তিবিদ্যা বা বৃত্তিশিক্ষার মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তোলা।
iv) গার্হস্থ্য শিক্ষাকে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত রূপায়ণের মাধ্যমে বৃত্তিশিক্ষার পর্যায়ে উন্নীত করা।
v) সমাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নারীদেরকে যথাযথ শিক্ষা দান করা।
আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now
নারী শিক্ষা সংক্রান্ত হংসরাজ মেহতা কমিটির সুপারিশ (Recommendations of Hansraj Mehta Committee on Women Education)
নারী শিক্ষার উন্নতিকল্পে ও বিস্তার সাধনে 1961 সালে গঠিত হংসরাজ মেহেতা কমিটির (Hansraj Mehta Committee) ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। নারী শিক্ষার বিস্তার সাধনের ক্ষেত্রে হংসরাজ মেহতা কমিটির উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল –
1. সহশিক্ষার ব্যবস্থা
নারী শিক্ষা বিষয়ে হংসরাজ মেহেতা কমিটির অন্যতম সুপারিশ ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ ছেলেমেয়েদের মধ্যে সংখ্যা কত পার্থক্য দূরীকরণ করার মাধ্যমে মেয়েদের শিক্ষার সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে।
2. বৈষম্যহীন পাঠক্রম
নারী শিক্ষার বিস্তার সাধনের ক্ষেত্রে পাঠক্রম হবে বৈষম্যহীন। অর্থাৎ প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে পাঠক্রমের কোন পার্থক্য থাকবে না। তাই বৈষম্যহীন পাঠক্রমের মাধ্যমে নারী শিক্ষা বিস্তার সাধনকে ত্বরান্বিত করতে হবে। তাছাড়া সংগীত, অংকন, সেলাই, চিত্রকলা, কারুকার্য প্রভৃতি বিষয় পাঠক্রমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যাতে মেয়েদের আগ্রহ অনুযায়ী এই বিষয়গুলি নিয়ে পড়তে পারে।
3. কারিগরি ও বৃত্তি শিক্ষার ব্যবস্থা
নারী শিক্ষার বিস্তার সাধনের ক্ষেত্রে হংসরাজ মেহতা কমিটির অন্যতম সুপারিশ হল কারিগরি ও বৃত্তি শিক্ষার ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ মেয়েদেরকে ভবিষ্যৎ উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য কারিগরি ও বৃত্তি শিক্ষা ব্যবস্থার করার কথা বলা হয়েছে।
4. মহিলা শিক্ষিকা নিয়োগ
নারী শিক্ষার বিস্তার সাধনের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হল শিক্ষক নিয়োগ। তাই হংসরাজ মেহেতা কমিটি নারী শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে অন্যতম সুপারিশ হল শিক্ষক নিয়োগ। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয় মহিলা শিক্ষিকা বৃদ্ধি করার সুপারিশ করা হয়েছে।
5. বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান
নারী শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে হংসরাজ মেহেতা কমিটি (Hansraj Mehta Committee) নারীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দানের কথা সুপারিশ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলি হল – স্কলারশিপ এর ব্যবস্থা, বিনামূল্যে যাতায়াতের ব্যবস্থা, আবাসিক বা হোস্টেলের সুযোগ সুবিধা প্রভৃতি।
সর্বোপরি বলা যায়, উপরের সুপারিশগুলি ছাড়াও নারী শিক্ষার বিস্তার সাধনে হংসরাজ মেহতা কমিটির (Hansraj Mehta Committee) অন্যান্য সুপারিশগুলি হল –
i) পাঠ্য পুস্তক কমিটিগুলিতে মহিলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা।
ii) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দ্বারা বিদ্যালয়ে যৌন শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
iii) বিজ্ঞান, কারিগরি ও গণিত শিক্ষার প্রতি মেয়েদেরকে আগ্রহী করে গড়ে তোলা বা উৎসাহিত করা।
iv) শিক্ষিকা নিয়োগ ও মহিলা শিক্ষিকা নিয়োগের সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
v) ছেলেমেয়েদের মধ্যে ব্যক্তিগত বৈষম্য না করা প্রভৃতি।
তথ্যসূত্র – Click Here
প্রশ্ন – শ্রীমতি হংস মেহেতা কমিটি কবে কেন গঠিত হয়?
উত্তর – নারী শিক্ষার উন্নতিকল্পে ও বিস্তার সাধনের জন্য 1961 সালে 10ই মে নারী শিক্ষার জাতীয় পরিষদ বা NCWE (National Council for Women’s Education) শ্রীমতি হংসরাজ মেহেতার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়।
প্রশ্ন – NCWE পুরো নাম কি?
উত্তর – NCWE -এর পুরো নাম হল – National Council for Women’s Education.
প্রশ্ন – নারী শিক্ষার জাতীয় পরিষদ কবে গঠিত হয়?
উত্তর – নারী শিক্ষার জাতীয় পরিষদ 1961 সালে গঠিত হয়।
আরোও পড়ুন
- শিক্ষা কি | শিক্ষার 15 টি সংজ্ঞা (Concept and Best Definition of Education)
- Role of Television: গণমাধ্যম হিসেবে টেলিভিশনের ভূমিকা
- সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা বলতে কী বোঝো | 2 টি সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য : Narrow Meaning of Education
- ব্যাপক অর্থে শিক্ষা কি | সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য : Broader Meaning of Education
- নারী শিক্ষায় রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা (Important Role of Rammohan Roy in Women Education)
- নারী শিক্ষায় বিদ্যাসাগরের অবদান (Role of Vidyasagar in Women Education)
- নারী শিক্ষায় হংসরাজ মেহেতা কমিটির সুপারিশ (Hansraj Mehta Committee)
- Bhaktavatsalam Committee: নারী শিক্ষা বিষয়ে ভক্তবৎসলম কমিটির সুপারিশ
- Durgabai Deshmukh Committee: নারী শিক্ষায় দূর্গাবাঈ দেশমুখ কমিটির সুপারিশ
1 thought on “নারী শিক্ষায় হংসরাজ মেহেতা কমিটির সুপারিশ (Hansraj Mehta Committee)”