নারী শিক্ষার সমস্যা ও সমাধান | Problems and Solutions of Women’s Education

প্রাচীনকালে নারী শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপিত হতো না। স্বাধীনতার পর ভারতবর্ষে নারী শিক্ষার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তাই নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান (Problems and Solutions of Women’s Education) বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

নারী শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ থাকলেও ভারতবর্ষে নারী শিক্ষার হারের অগ্রগতি খুব বেশি পরিলক্ষিত হয় না। এর কারণ বিভিন্ন সমস্যা। এগুলি সমাধান করতে পারলে নারী শিক্ষার ধীর অগ্রগতি দ্রুত সম্ভবপর হবে। এখানে নারী শিক্ষার সমস্যা ও সমাধান কিভাবে সম্ভব তা আলোকপাত করা হলো।

নারী শিক্ষার সমস্যা ও সমাধান | Problems and Solutions of Women’s Education

ভারতবর্ষে নারী শিক্ষার অগ্রগতির জন্য বিশিষ্ট মনীষীগন যেমন – রাজা রামমোহন, বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ প্রমূখদের বিশেষ অবদান পরিলক্ষিত হয়।

তাছাড়া নারী শিক্ষার বিস্তারে বিভিন্ন কমিশন ও কমিটি গঠিত হয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – রাধাকৃষ্ণান কমিশন, কোঠারি কমিশন, মুদালিয়ার কমিশন, জাতীয় শিক্ষানীতি, দুর্গাবাই দেশমুখো কমিটি প্রভৃতি। কিন্তু নারী শিক্ষার অগ্রগতি আশানুরূপ হয়নি। বিভিন্ন সমস্যার কারণে নারী শিক্ষা অগ্রগতি ধীরগতিতে সম্পন্ন হচ্ছে।

নারী শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় এবং এই সমস্যাগুলির সমাধান ও সম্ভবপর হয়। তাই এখানে নারী শিক্ষার সমস্যা ও সমাধান গুলি নিয়ে আলোচনা করা হল।

নারী শিক্ষার সমস্যা

নারী শিক্ষার সমস্যা শিক্ষার একটি অন্যতম সমস্যা। কারণ এই সমস্যা গুলির জন্য নারী শিক্ষার অগ্রগতি সমপর হয়নি। নারী শিক্ষার সমস্যা যে সমস্ত দিক থেকে বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়, তা নিম্ন আলোচনা করা হল –

1. বাল্যবিবাহ

নারী শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ একটি অন্যতম নারী শিক্ষার সমস্যা। অর্থাৎ মেয়েদেরকে অতি অল্প বয়সে বিয়ে দেয়ার রীতি সমাজের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে। তাই বিয়ের পরে মেয়েদের পড়াশোনা কখনো সম্ভবপর হয় না। তাই নারী শিক্ষার সমস্যা হল বাল্যবিবাহ।

2. অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার

পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা সব থেকে বেশি লাঞ্ছিত, বঞ্চিত ও অবহেলিত হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হল কুসংস্কার এবং অন্ধবিজ্ঞান। সমাজের মধ্যে মেয়েদের শিক্ষিত করার বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার প্রচলিত আছে, যা নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা স্বরূপ।

3. দারিদ্রতা

ভারতবর্ষের দরিদ্রতম দেশ। অর্থনৈতিক কারণে বহু পরিবারের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মেয়েদেরকে শিক্ষাদান করা সম্ভবপর হয় না। তাই পিতা-মাতার আর্থিক প্রতিবন্ধকতা বা দারিদ্রতা নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান বাতা স্বরূপ।

4. ত্রুটিপূর্ণ পাঠক্রম

স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগে কমিশন ও কমিটি গঠিত হলেও নারী শিক্ষার অগ্রগতি খুব বেশি হয়নি। তার কারণ পাঠক্রম সংস্কারের বা নারী শিক্ষার পাঠক্রমের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কমিশন ও কমিটির সন্তোষজনক সুপারিশ পাওয়া যায় না। অর্থাৎ ত্রুটিপূর্ণ পাঠক্রম বিভিন্ন সময়ে নারী শিক্ষার সমস্যার অন্যতম কারণ।

5. প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাব

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাবে নারী শিক্ষার অগ্রগতি সম্ভবপর হয়নি। অর্থাৎ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং মহিলা শিক্ষকের অভাবে মেয়েদের জন্য গঠিত স্কুল গুলিতে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটানো সম্ভবপর হয়নি।

6. দুর্গম বা প্রত্যন্ত এলাকা

দুর্গম বা প্রত্যন্ত এলাকা নারী শিক্ষার বিস্তার সাধন নারী শিক্ষার সমস্যা অন্যতম কারণ। অর্থাৎ দুর্গম বা প্রত্যন্ত এলাকায় নারী শিক্ষার বিস্তারের জন্য যথাযথ বিদ্যালয় স্থাপন বা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হয়নি। তাই সেই সমস্ত এলাকায় নারী শিক্ষা আর অনেক কম।

7. বিদ্যালয়ের দূরত্ব

বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব অধিক হওয়ার ফলে অভিভাবকগণ মেয়েদেরকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে চাইতো না। অর্থাৎ বিদ্যালয়ের দূরত্বের কারণে মেয়েরা স্কুলে যেতে চাইত না। এটি নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়।

8. অভিভাবকদের উদাসীনতা

অভিভাবকদের উদাসীনতা নারী শিক্ষার অন্যতম সমস্যা। কারণ বেশিরভাগ পরিবারে কন্যা সন্তানের তুলনায় সন্তানের তুলনায় পুত্র সন্তানের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। ফলে মেয়েরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয় এবং তারা বাড়ির মধ্যে আবদ্ধ থাকে ও বাড়ির কাজকর্ম বা গৃহ কর্ম করে থাকে।

নারী শিক্ষার সমস্যার সমাধান

নারী শিক্ষার বিভিন্ন সমস্যা পরিলক্ষিত হলেও নারী শিক্ষার সমস্যার সমাধানে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়। নারী শিক্ষার সমস্যার সমাধানে বর্তমানে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প চালু হয়েছে। যার মধ্য দিয়ে মেয়েরা শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে সক্ষম হচ্ছে।

তাছাড়া নারী শিক্ষার সমস্যার সমাধান করার জন্য যে সমস্ত বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা বিশেষ প্রয়োজন, সেগুলি হল –

i) বাল্যবিবাহ রোধ করতে হবে,

ii) জনগণকে সচেতন করতে হবে।

iii) বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোর উন্নতি করতে হবে।

iv) বিদ্যালয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত পরিমাণে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।

v) প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে অপচয় ও অনুন্নয়ন বন্ধ করতে হবে।

vi) মেয়েদের শিক্ষার জন্য বিভিন্ন স্টাইপেন্ড ও স্কলারশিপের ব্যবস্থা করতে হবে।

viii) গ্রামাঞ্চলে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে।

ix) নারী পুরুষের মধ্যে ভেদাভেদ দূরীকরণ করতে হবে। অর্থাৎ লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ করতে হবে।

x) চাকরি ক্ষেত্রে মেয়েদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা বা অধিক বেশি সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে।

xi) যাতায়াতের সুবিধার জন্য বাড়ি থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বা বাড়ির কাছাকাছি বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।

xii) উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মেয়েদেরকে উৎসাহিত করতে হবে এবং পাশাপাশি বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে প্রভৃতি।

নারী শিক্ষায় রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকানারী শিক্ষায় বিদ্যাসাগরের ভূমিকা
নারী শিক্ষা বিষয়ে ভক্তবৎসলম কমিটির সুপারিশনারী শিক্ষা সংক্রান্ত হংসরাজ মেহেতা কমিটির সুপারিশ
নারী শিক্ষায় দূর্গাবাঈ দেশমুখ কমিটির সুপারিশনারী শিক্ষায় মিশনারীদের অবদান

👉 আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

উপসংহার (Conclusion)

সর্বোপরি বলা যায়, নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে আগে যেমন সমস্যা ছিল এখন তা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। আজ মেয়েরা শিক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন পেশায় অংশগ্রহণ করছে তার প্রমাণ আমরা সরাসরি দেখতে পাই। কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু কিছু এলাকায় এখনো পর্যন্ত নারী শিক্ষার বিস্তারসাধন খুব বেশি সম্ভবপর হয়নি।

সুতরাং নারী শিক্ষার সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে তাই সামাজিক সচেতনতা এবং জনগণের সচেতনতা বাড়ানো তার থেকে জরুরী। সুতরাং নারী শিক্ষার সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

তথ্যসূত্র (References)

  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1
  • Internet Sources

প্রশ্ন – ভারতে নারী শিক্ষার সমস্যা

উত্তর – ভারতে নারী শিক্ষার সমস্যা গুলি হল – দারিদ্রতা, বাল্যবিবাহ, লিঙ্গ বৈষম্য, অভিভাবকদের উদাসীনতা, অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার প্রভৃতি।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close