Share on WhatsApp Share on Telegram

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য | 10 Aims of Higher Education

Join Our Channels

স্বাধীন ভারতের উচ্চশিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে ভারত সরকার দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। এই কমিশন উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য গুলি (Aims of Higher Education) কি হবে তা নির্ধারণ করেন ও সুপারিশ করেন।

ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভের পর দেশে উচ্চ শিক্ষার হার ছিল নিম্নগতি। তাই উচ্চ শিক্ষার প্রসারের জন্য ভারত সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন বা রাধাকৃষ্ণন কমিশন গঠন। এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন উচ্চশিক্ষার বিস্তারে বিভিন্ন ধরনের সুপারিশ করেছিলেন।

Table of Contents

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য | Aims of Higher Education

স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন হল রাধাকৃষ্ণন কমিশন বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন। ১৯৪৮-৪৯ সালে ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন এর নেতৃত্বে গঠিত হয়। তাই এই কমিশন আবার রাধাকৃষ্ণন কমিশন নামে খ্যাত।

এই কমিশনের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল 10 জন। তাদের মধ্যে তিন জন সদস্য ছিল বিদেশি এবং সাতজন সদস্য ছিল ভারতীয়। বিদেশি সদস্যদের মধ্যে অন্যতম হলেন – ড. জেমস্‌. এফ ডাফ, ড. ই. মরগ্যান ও ড. টিগার্ট এবং সাত জন ভারতীয় শিক্ষাবিদ তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন – তারাচাঁদ, জাকির হোসেন, লক্ষণ স্বামী মুদালিয়র, মেঘনাথ সাহা প্রমুখ।

কমিশন দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পর 1949 সালে তাদের রিপোর্টটি পেশ করেন। কমিশনের রিপোর্টে উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন সুপারিশ পরিলক্ষিত হয়। তাদের মধ্যে অন্যতম হল উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য গুলি আলোচনা করা হল –

1. যোগ্যতা অর্জন

সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দানের উপযুক্ত ব্যক্তির অভাব পরিলক্ষিত হয়। তাই স্বাধীনতার পর গঠিত বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য হিসাবে যোগ্যতা অর্জনের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

কমিশন বলেন – সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দানের উপযুক্ত ব্যক্তিদের গড়ে তোলা হবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য।

2. শিক্ষার মানের উন্নয়ন

বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের মতে উচ্চ শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হল শিক্ষার মানোন্নয়ন করা। কারণ শিক্ষার মান সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ শিক্ষার মান যদি নিম্নমুখী হয় তাহলে সমাজব্যবস্থা উন্নতি নিম্নমুখী হবে।

তাই কমিশন বলেন – শিক্ষা ও পরীক্ষার সর্বোচ্চ মান রক্ষা করা হল বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের প্রাথমিক কর্তব্য।

3. গবেষণার কেন্দ্র স্থাপন

উচ্চ শিক্ষাকে আর বেশি সার্বজনীন করার জন্য কমিশন উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে গবেষণার উপর অতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

কমিশনের মতে – উচ্চ শিক্ষার পর্যায়ে বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্র সম্প্রসারিত করতে হবে। ফলে শিক্ষা ও তার সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান সহজসাধ্য হবে।

4. ভারতীয় সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও সঞ্চালন

ব্রিটিশদের দ্বারা ভারতীয় সংস্কৃতির সংরক্ষণ তেমনভাবে হয়নি। স্বাধীন ভারতের গঠিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে ভারতীয় সংস্কৃতির সংরক্ষণ এবং সঞ্চালনের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।

অর্থাৎ ভারতবর্ষ সংস্কৃতিতে প্রাচীন ও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তাই উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য হবে ভারতীয় সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও সঞ্চালনের সহায়তা করা।

5. বিজ্ঞান কারিগরি ও কৃষি শিক্ষার প্রসার

দেশের অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিজ্ঞান কারিগরি ও কৃষি শিক্ষার প্রসারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য বা জাতীয় অগ্রগতির উদ্দেশ্যে বিজ্ঞান কারিগরি ও কৃষি শিক্ষার প্রসারের সুপারিশ করেন।

অর্থাৎ কমিশনের মতে – উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য হবে বিজ্ঞান কারিগরি ও কৃষি শিক্ষার প্রসার ঘটানো।

6. বৃত্তি শিক্ষার প্রসার

বৃত্তি শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন বিশেষ সুপারিশ করেন। কমিশন বলেন শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনের উপযোগী করে গড়ে তোলা হল উচ্চশিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। আর বৃত্তি শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে এই লক্ষ্য পূরণ করা। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের বৃত্তি শিক্ষার মাধ্যমে সাবলম্বী করে গড়ে তোলা হল উচ্চ শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য।

7. নৈতিক মূল্যবোধ গঠন

নৈতিক অবক্ষয় যে কোনো দেশকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে যেতে পারে। তাই রাধাকৃষ্ণন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিকতার বিকাশ সাধন করা বা নৈতিক মূল্যবোধ গঠন করা।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

8. গণতান্ত্রিক চেতনা সঞ্চার

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের মতে উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য হল – গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করা। এই গণতন্ত্রের ভিত্তি সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা। তাই কমিশন বলেন – বিশ্ববিদ্যালয় গুলি হবে স্বয়ংশাসিত, স্বাধীন এবং ভ্রাতৃত্ববোধের প্রতীক ও রক্ষক।

9. জাতীয় সংহতি স্থাপন

কমিশন বলেন উচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে জাতীয় সংহতি স্থাপন করতে হবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মাধ্যমে ‘Unity in Diversity’ রক্ষা করা উচ্চশিক্ষা অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তাই জাতীয় সংহতি স্থাপন জাতীয় উন্নতিকে ত্বরান্বিত করে থাকে।

10. শিক্ষায় সমসুযোগ লাভের ব্যবস্থা

কমিশন বলেছেন উচ্চশিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে শিক্ষায় সমসুযোগ লাভের ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ সকল শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা অনুযায়ী শিক্ষার সমতা বা সমসুযোগ লাভ করবে। তাই রাধাকৃষ্ণন কমিশনের মতে শিক্ষায় সমসুযোগ লাভের ব্যবস্থা উচ্চ শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

উপসংহার | Conclusion

সর্বোপরি বলা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য গুলি বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে। তাই এগুলি যথাযথ বিকাশের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন করাই হবে উচ্চশিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। উচ্চশিক্ষার এই লক্ষ্যগুলি যদি যথাযথভাবে পূরণ করা সম্ভব হয় তাহলে সমাজ সঠিকভাবে এগিয়ে যেতে পারবে।

তথ্যসূত্র | References

  • Education in India-Past-Present-Future, Vol. I and II, J. P. Banerjee
  • Landmarks in the History of Modern Indian Education, J. C. Aggarwal
  • History of Education in India, Dr. R N Sharma and R K Sharma
  • Report of Commissions – Radhakrishnan, Mudaliar, Kothari.
  • National Policy on Education, 1986. Policy perspective.
  • Internet Sources

প্রশ্ন – রাধাকৃষ্ণন কমিশনের অপর নাম কি?

উত্তর – রাধাকৃষ্ণন কমিশনের অপর নাম হল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন। এটি স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন।

প্রশ্ন – রাধাকৃষ্ণন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ কতজন ছাত্র থাকতে হবে?

উত্তর – রাধাকৃষ্ণন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ৫০০জন ছাত্র থাকতে হবে।

প্রশ্ন – রাধা কৃষ্ণন কমিশন অনুযায়ী ভারতীয় শিক্ষার লক্ষ্য কি হওয়া উচিত?

উত্তর – রাধা কৃষ্ণন কমিশন অনুযায়ী ভারতীয় শিক্ষার লক্ষ্য হল – নেতৃত্বের প্রশিক্ষণ দান, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার, বৃত্তি শিক্ষার প্রসার, শিক্ষায় সমসুযোগের ব্যবস্থা প্রভৃতি।

আরোও পড়ুন

3.4/5 - (11 votes)

Mr. Debkumar – Author and Founder of Edutiips.com

Mr. Debkumar – Author and Founder of Edutiips.com

A dedicated educator with 10+ years of teaching experience

He is also an active contributor on Quora, where he shares expert insights on education and social issues.

Leave a Comment

close