মুদালিয়ার কমিশনের মতে মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য | 8 Aims and Objectives of Secondary Education

স্বাধীনতার পর ভারতবর্ষে মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নতিকল্পে মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন বা মুদালিয়র কমিশন গঠিত হয়। মাধ্যমিক শিক্ষার বিস্তারে মুদালিয়ার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (Aims and Objectives of Secondary Education) বহুবিধ।

স্বাধীনতার পর উচ্চ শিক্ষার বিস্তারে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন বা রাধাকৃষ্ণন কমিশন গঠিত হয়। কিন্তু কমিশন বলেন – বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার বা উচ্চশিক্ষার পূর্ব শর্ত হল মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নতি ও পুনর্গঠন। মাধ্যমিক শিক্ষার বিস্তার সাধন না হলে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীদের অভাব পরিলক্ষিত হয়। আর এই কারণেই মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়।

মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য | Aims and Objectives of Secondary Education

১৯৫২ সালে ভারত সরকার মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নতিকল্পে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ লক্ষণ স্বামী মুদালিয়ারের সভাপতিতে মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। শিক্ষার ইতিহাস এটি মুদালিয়ার কমিশন নামেও খ্যাত।

মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন বা মুদালিয়ার কমিশন দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। তাই কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কে সুপারিশ করতেনতুন পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করেছেন।

মুদালিয়ার কমিশনের মতে মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

1. যোগ্য নাগরিক সৃষ্টি

কমিশন বলেন মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য হবে যোগ্য নাগরিক সৃষ্টি করা। অর্থাৎ সমাজের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য বা গণতান্ত্রিক ভারতের জন্য যোগ্য নাগরিক সৃষ্টি হবে মাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য।

2. জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধি

যে দেশে জাতীয় সম্পদ যত বৃদ্ধি পাবে সেই দেশের উন্নতি তত বেশি সাধিত হবে। । তাই মুদালিয়ার কমিশন বলেন মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হবে জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধি করা। অর্থাৎ ভারতবর্ষের মত দরিদ্র দেশে জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধি লক্ষ্য হওয়া উচিত।

3. জীবনের মান উন্নয়ন

মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য হলো জীবনের মানের উন্নয়ন ঘটানো। অর্থাৎ শিক্ষার মধ্য দিয়ে এটি সম্ভব। তাই মুদালিয়ার কমিশন বলেছেন – উপযুক্ত শিক্ষার মধ্য দিয়ে বা উপযুক্ত শিক্ষা পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের জীবনের মান উন্নয়ন ঘটানো হবে মাধ্যমিক শিক্ষা অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

4. উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণ

উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণ থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হলে উচ্চশিক্ষার প্রসার ব্যাহত হবে। তাই মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে মুদালিয়ার কমিশন বলেন উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার উপযোগী করে গড়ে তোলা।

5. চারিত্রিক উন্নতি সাধন

চারিত্রিক উন্নতি দেশের বা গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষের বিশেষ প্রয়োজন। তাই মুদালিয়ার কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন – শিক্ষার মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা সৃষ্টির কাজে যাতে শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে, সেই অনুযায়ী তাদের চরিত্রের বিকাশ সাধন করা বা চরিত্র গড়ে তোলা।

6. বৃত্তি শিক্ষার প্রসার

বৃত্তি শিক্ষার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের প্রবেশের পথকে সুগম করা যায়। অর্থাৎ উপযুক্ত বৃত্তি শিক্ষার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে গড়ে তোলাই হবে মাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

তাই মুদালিয়ার কমিশন বলেন – মাধ্যমিক শিক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা যাতে বাস্তব জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে বা দায়িত্ব গ্রহণে সক্ষম হয় সেই অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি শিক্ষায় যোগ্যতা অর্জন করাই হবে এই শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

7. ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাব সৃষ্টি

কমিশন শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাবের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। অর্থাৎ কমিশন সুপারিশ করেন গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাব সৃষ্টি করাই হবে মাধ্যমিক শিক্ষা অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

8. অতীত সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও সঞ্চালন

মুদালিয়ার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ভারতীয় অতীত সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও সঞ্চালনের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। তাই মাধ্যমিক শিক্ষা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল অতীত সংস্কৃতির যথাযথ সংরক্ষণ ও সঞ্চালনে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা।

উপসংহার (Conclusion)

সর্বোপরি বলা যায়, মুদালিয়ার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যে কোন শিক্ষা ব্যবস্থার নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। তাই মাধ্যমিক শিক্ষার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে সমাজের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বা সমাজ উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সে সম্পর্কে কমিশন বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

তথ্যসূত্র (References)

  • Education in India-Past-Present-Future, Vol. I and II, J. P. Banerjee
  • Landmarks in the History of Modern Indian Education, J. C. Aggarwal
  • History of Education in India, Dr. R N Sharma and R K Sharma
  • Report of Commissions – Radhakrishnan, Mudaliar, Kothari.
  • National Policy on Education, 1986. Policy perspective.
  • Internet Sources

প্রশ্ন – মুদালিয়ার কমিশনের মতে মাধ্যমিক শিক্ষার দুটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য লেখো

উত্তর – মুদালিয়ার কমিশনের মতে মাধ্যমিক শিক্ষার দুটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল – যোগ্য নাগরিক সৃষ্টি করা এবং জীবনের মান উন্নয়ন করা।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close