Share on WhatsApp Share on Telegram

মুদালিয়ার কমিশনের সুপারিশ | Recommendations of Mudaliar Commission

Join Our Channels

ভারতবর্ষে উচ্চ শিক্ষার পাশাপাশি মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নতিকল্পে মুদালিয়ার কমিশন গঠন করা হয়। মাধ্যমিক শিক্ষা সংক্রান্ত মুদালিয়ার কমিশনের সুপারিশ (Recommendations of Mudaliar Commission) গুলি ছিল স্বাধীন ভারতবর্ষে নতুনতম সংযোজন।

মুদালিয়ার কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নতিকল্পে এবং মাধ্যমিক শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছিলেন। যেগুলি মাধ্যমিক শিক্ষাকে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ও আরো বেশি ফলপ্রসু হয়ে উঠতে বিশেষভাবে সহায়তা করেছিল।

মুদালিয়ার কমিশনের সুপারিশ | Recommendations of Mudaliar Commission

স্বাধীন ভারতের উচ্চশিক্ষা বিস্তারে প্রথম শিক্ষা কমিশন রাধাকৃষ্ণণ কমিশন গঠিত হয়। রাধাকৃষ্ণন কমিশন অভিমত প্রকাশ করে যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার বা উচ্চ শিক্ষার প্রসারের পূর্ব শর্ত হল মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নতিকরণ ও পুনর্গঠন।

তাই ভারত সরকার মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নতিকরণ এবং পুনর্গঠনের জন্য ১৯৫২-৫৩ সালে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ লক্ষণস্বামী মুদালিয়ারের নেতৃত্বে মুদালিয়ার কমিশন গঠন করেন। শিক্ষার ইতিহাস এটি মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন নামে পরিচিত।

মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন বা মুদালিয়ার কমিশনে দেশি-বিদেশি 9 জন শিক্ষাবিদ ছিলেন। জন ক্রিষ্টি, কিনেট উইলিয়াম প্রমুখ ছিলেন বিদেশী সদস্য এবং ভারতীয়দের মধ্যে অন্যতম ছিলেন – শ্রীমতি হংসরাজ মেহেতা, এস. টি. ব্যাস, অনাথ বসু প্রমুখ।

মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন বা মুদালিয়ার কমিশনের সুপারিশ গুলি বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়। মুদালিয়ার কমিশনের সুপারিশ গুলি নিম্ন আলোচনা করা হল –

1. শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য

মুদালিয়ার কমিশন স্বাধীন ভারতবর্ষের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব আরোপ করে শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নির্ধারণের কথা বলেছেন। কমিশনের মতে শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হবে –

i) আদর্শ ও দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা,

ii) শিক্ষার্থীদের জীবিকা অর্জনের উপযোগী করে গড়ে তোলা,

iii) ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার মাধ্যমে উদার মনোভাব তৈরি করা,

iv) পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে বা সমাজ জীবনের সঙ্গে সঙ্গতিবিধানে সহায়তা করা।

2. শিক্ষার কাঠামো

শিক্ষার কাঠামো সম্পর্কে মুদালিয়ার কমিশনের সুপারিশ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কমিশন সমগ্র দেশের একই ধরনের শিক্ষার কাঠামোর কথা সুপারিশ করেছেন। কমিশনের সুপারি অনুযায়ী মাধ্যমিক শিক্ষার কাঠামোটি হল নিম্নরূপ –

i) মাধ্যমিক শিক্ষা স্থায়িত্বকাল হবে সাত বছর

ii) ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী সমস্ত শিক্ষার্থীরা আট বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করবে।

iii) চোদ্দ থেকে আঠারো বছর বয়সী সকল শিক্ষার্থী চার বছরের মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করবে।

iv) কলেজ শিক্ষা হবে তিন বছরের।

v) যারা 10 বছরের মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হবে তাদের জন্য কলেজগুলিতে – ” বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা শ্রেণি” এর শিক্ষা কাল হবে এক বছর।

3. শিক্ষার পাঠক্রম

পাঠক্রম সম্পর্কে মুদালিয়ার কমিশনের সুপারিশ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মুদালিয়ার কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রমকে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন, সেগুলি হল –

i) নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের পাঠক্রম – এই স্তরের পাঠক্রমের মধ্যে থাকবে – ভাষা, গণিত, সমাজবিদ্যা, সাধারণ বিজ্ঞান, শরীর চর্চা, সংগীত শিল্পকলা প্রভৃতি।

ii) উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠক্রম – উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠক্রমের ক্ষেত্রে কমিশন শিক্ষার্থীদের আগ্রহ, প্রবণতা, সামর্থ্য প্রভৃতির উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পাঠক্রম সম্পর্কে কমিশন বলেন – পাঠক্রমের মধ্যে কতকগুলি হবে মূল বিষয় (Core Subject) এবং কতগুলি হবে ঐচ্ছিক বিষয় (Elective Subject)

পাঠক্রমের মূল বিষয়গুলি সমস্ত শিক্ষার্থীদের গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে অন্তর্গত বিষয় গুলি হল – ভাষা (মাতৃভাষা এবং ইংরেজি), সমাজবিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান এবং গণিত ও শিল্পকলা।

পাঠক্রমে ঐচ্ছিক বিষয়গুলি সম্পর্কে কমিশন বলেন – এগুলি হবে শিক্ষার্থীদের পছন্দ অনুযায়ী বা রুচি অনুযায়ী। ঐচ্ছিক বিষয়ে পাঠক্রম সম্পর্কে কমিশন সাতটি বহুমুখী পাঠক্রমকে উল্লেখ করেছেন। যেগুলিকে সপ্তপ্রবাহ বলা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – ভাষা বিভাগ, বিজ্ঞান বিভাগ, কারিগরি বিভাগ, বাণিজ্য বিভাগ প্রভৃতি।

4. শিক্ষার মাধ্যম বা ভাষা শিক্ষা

শিক্ষার মাধ্যম বা ভাষা শিক্ষা সম্পর্কে মুদালিয়ার কমিশনের সুপারিশ গুলি হল –

i) সমগ্র মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে শিক্ষার মাধ্যম হবে মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা।

ii) জুনিয়র মাধ্যমিক স্তরে দুটি ভাষা শিখতে হবে।

iii) প্রাথমিক স্তরের শেষে ইংরেজি বা হিন্দি পাঠ্য পুস্তকের অন্তর্ভুক্ত হবে।

iv) উচ্চ এবং উচ্চতর মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের দুটি ভাষা থাকবে এবং তাদের মধ্যে একটি হবে মাতৃভাষা।

5. শিক্ষক শিক্ষণ

শিক্ষক শিক্ষণ সম্পর্কে মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের বা মুদালিয়ার কমিশনের সুপারিশ হল – শিক্ষকের পেশাগত দক্ষতা বিকাশের ক্ষেত্রে উপযুক্ত শিক্ষক শিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যার ফলে শিক্ষকরা শিক্ষার মান উন্নয়নে দক্ষ হয়ে উঠবে।

কমিশন আরো বলেন – মাধ্যমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য দু’বছরের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং স্নাতক স্তরের শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্য এক বছরের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।

6. মূল্যায়ন ব্যবস্থা

মূল্যায়ন ব্যবস্থা বা পরীক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে মুদালিয়ার কমিশন গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেন। কমিশন বলেন – শিক্ষার মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে মূল্যায়ন ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করতে হবে। গতানুগতিক পরীক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তে মূল্যায়ন ব্যবস্থা সম্পর্কে মুদালিয়ার কমিশনের সুপারিশ গুলি হল –

i) শিক্ষা ক্ষেত্রে আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় প্রকার মূল্যায়ন ব্যবস্থা থাকবে।

ii) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র রচনাধর্মীর পরিবর্তে সংক্ষিপ্ত ধর্মী প্রকৃতির হবে।

iii) পরীক্ষার নম্বর প্রদানের ক্ষেত্রে গ্রেডিং এর ব্যবস্থা বা সাংকেতিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। যেমন – A – অতি উত্তম, B – উত্তম, C – সাধারন প্রভৃতি।

iv) শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা পরিমাপের জন্য টেস্ট পরীক্ষা এবং বার্ষিক পরীক্ষার ফলকে যুক্ত করতে হবে।

7. নারী শিক্ষা

নারী শিক্ষা সম্পর্কে মুদালিয়ার কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে – মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য থাকবে না। তবে মেয়েদের জন্য আলাদা করে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করা যেতে পারে।

নারী শিক্ষার পাঠক্রমের ক্ষেত্রে কমিশন সুপারিশ করেন – নারী শিক্ষার পাঠক্রম হবে – গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, শিল্পকলা, সঙ্গীত প্রভৃতি।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

8. শিক্ষায় প্রশাসন

শিক্ষায় প্রশাসন সম্পর্কে মুদালিয়ার কমিশন বলেছেন শিক্ষার বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি কমিটি থাকবে। এই কমিটি শিক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ও উন্নতির বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দেবে।

এছাড়া প্রত্যেক রাজ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য একটি মধ্যশিক্ষা পর্ষদ গঠন করার সুপারিশ করা হয়। এই পর্ষদের কাজ হবে মাধ্যমিক শিক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় বিবেচনা করে বিভিন্ন নীতি নির্ধারণ করা।

উপসংহার | Conclusion

সর্বোপরি বলা যায়, ১৯৫২-৫৩ সালে গঠিত মুদালিয়ার কমিশনের মাধ্যমিক শিক্ষা সংক্রান্ত সুপারিশ গুলি ভারতবর্ষের শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই রিপোর্টে মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নতির জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা হয়। যেগুলি শিক্ষার উন্নতি ও বিস্তারের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল।

তথ্যসূত্র | References

  • Education in India-Past-Present-Future, Vol. I and II, J. P. Banerjee
  • Landmarks in the History of Modern Indian Education, J. C. Aggarwal
  • History of Education in India, Dr. R N Sharma and R K Sharma
  • Report of Commissions – Radhakrishnan, Mudaliar, Kothari.
  • National Policy on Education, 1986. Policy perspective.
  • Internet Sources

প্রশ্ন – মুদালিয়ার কমিশন কবে গঠিত হয়

উত্তর – মুদালিয়ার কমিশন ১৯৫২-৫৩ সালে ডঃ লক্ষণস্বামী মুদালিয়ারের নেতৃত্বে গঠিত হয়।

প্রশ্ন – মুদালিয়ার কমিশন সদস্য সংখ্যা

উত্তর – মুদালিয়ার কমিশনের সদস্য সংখ্যা ছিল ৯ জন।

প্রশ্ন – মুদালিয়ার কমিশনের সম্পাদক কে ছিলেন

উত্তর – মুদালিয়ার কমিশনের সম্পাদক ছিলেন – অনাথ নাথ বসু।

প্রশ্ন – মুদালিয়ার কমিশনের অপর নাম কি

উত্তর – মুদালিয়ার কমিশনের অপর নাম হল মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন।

প্রশ্ন – মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে কতগুলি পৃষ্ঠা ছিল

উত্তর – মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে পৃষ্ঠা ছিল -১০১ টি ও দশটি অধ্যায়ে বিভক্ত।

প্রশ্ন – ডক্টর লক্ষণস্বামী মুদালিয়ার কোন কমিশনের সদস্য ছিলেন

উত্তর – ডঃ লক্ষ্মণস্বামী মুদালিয়ার স্বাধীন ভারতের প্রথম উচ্চ শিক্ষা কমিশন রাধাকৃষ্ণন কমিশনের সদস্য ছিলেন।

আরোও পড়ুন

2.9/5 - (14 votes)

Mr. Debkumar – Author and Founder of Edutiips.com

Mr. Debkumar – Author and Founder of Edutiips.com

A dedicated educator with 10+ years of teaching experience, UGC NET Qualified, and holder of MA, B.Ed, and M.Phil in Education (University of Calcutta).

He has authored several books published by Aheli Publication, such as Communication Skills, Aspect of Democratic Citizenship, Sociological Foundation of Education, Computer Applications, Fundamentals of Education, Educational Organization and Planning, and Educational Research.

He is also an active contributor on Quora, where he shares expert insights on education, history, and social issues.

1 thought on “মুদালিয়ার কমিশনের সুপারিশ | Recommendations of Mudaliar Commission”

Leave a Comment

close