শিক্ষাগত পরিকল্পনার প্রকারভেদ বা শ্রেণীবিভাগ | 10 Main Types of Educational Planning

Join Our Channels

শিক্ষা পরিকল্পনা শিক্ষাক্ষেত্রকে উন্নততর করতে সহায়তা করে। শিক্ষাগত পরিকল্পনার প্রকারভেদ (Types of Educational Planning) গুলি শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে গৃহীত হয়ে থাকে।

শিক্ষাগত পরিকল্পনার প্রকারভেদ | Types of Educational Planning

পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কাজ সুসম্পন্ন করা সম্ভব না। বর্তমানে শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিকল্পনার ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিক্ষার বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা পরিকল্পনা করা হয়ে থাকে। কারণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিক্ষার বিভিন্ন লক্ষ্য অর্জন করতে হয়। সেই কারণে শিক্ষা পরিকল্পনাকে বিভিন্ন ভাবে ভাগ করা হয়।

Main Types of Educational Planning

শিক্ষাগত পরিকল্পনার প্রকারভেদ গুলি এখানে আলোচনা করা হল –

মাইক্রো বা ক্ষুদ্র স্তরের পরিকল্পনা

যখন পরিকল্পনা ক্ষুদ্র স্তরের জন্য করা হয়ে থাকে, তখন তাকে মাইক্রো স্তরের পরিকল্পনা বলে। এই স্তরের পরিকল্পনা একটি ছোট এলাকা বা বিদ্যালয়ের কোন ছোট ছোট কাজের জন্য করা হয়ে থাকে। , উদাহরণস্বরূপ বলা যায় – বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী কিভাবে পরিচালিত হবে, কিভাবে শিক্ষার্থীদের ক্লাসের উপস্থিতির হার বৃদ্ধি করানো যাবে তার জন্য যে পরিকল্পনা করা হয়, সেটি মাইক্রো বা ক্ষুদ্রস্তরের পরিকল্পনা।

ম্যাক্রো বা বৃহৎ স্তরের পরিকল্পনা

যখন বিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বৃহৎ কোন কর্মসূচি গৃহীত হয় বা বৃহৎ কোন কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা হয়, তখন তাকে ম্যাক্রো বা বৃহৎ স্তরের পরিকল্পনা বলে। শিক্ষা ক্ষেত্রে ম্যাক্রো স্তরের পরিকল্পনার উদাহরণ হল – পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কতগুলি বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে, শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত পরিকল্পনা প্রভৃতি।

স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা

যখন কোনো পরিকল্পনা অল্প সময়ের জন্য করা হয়ে থাকে, তখন তাকে স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা বলে। অর্থাৎ কম সময়ের মধ্যে শিক্ষাগত বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য যে পরিকল্পনা সেটি হল স্বল্পমেয়াদী শিক্ষাগত পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার সময়সীমা এক থেকে দুই বছরের জন্য হয়ে থাকে। উদাহরণ বলা যায় – শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পানীয় জলের সমস্যা সমাধান বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অগ্রগতির জন্য স্পেশাল ক্লাসের ব্যবস্থা করা।

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা

যখন কোনো পরিকল্পনা দীর্ঘ সময়ের জন্য করা হয়ে থাকে, তখন তাকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বলে। সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সময়সীমা পাঁচ থেকে দশ বছরের জন্য হয়ে থাকে। অর্থাৎ শিক্ষার বৃহৎ লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যে অর্জনের জন্য এই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা হয়ে থাকে। যেমন – সর্বশিক্ষা অভিযান কর্মসূচি, বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচি, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচি প্রভৃতি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা।

তৃণমূল স্তরের পরিকল্পনা

কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী বা সমাজের চাহিদার কথা বিচার বিবেচনা করে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তাকে তৃণমূল স্তরের পরিকল্পনা বলা হয়। অর্থাৎ তৃণমূল স্তরের পরিকল্পনা অঞ্চলভেদে গৃহীত হয়ে থাকে। যেমন – আদিবাসী অঞ্চলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মূলস্রোতে নিয়ে আসা তৃণমূল স্তরের পরিকল্পনা।

জেলা স্তরের পরিকল্পনা

জেলা স্তরের পরিকল্পনা হল এমন পরিকল্পনা যেখানে জেলাভিত্তিক বিভিন্ন শিক্ষাগত সমস্যা সমাধান বা শিক্ষার উন্নতির জন্য গ্রহণ করা হয়ে থাকে বা গৃহীত হয়। ভারতবর্ষে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পর জেলা স্তরের পরিকল্পনা করা হয়। এই পরিকল্পনার উদাহরণ হল – জেলাভিত্তিক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়ন, পরিচালন সমিতি গঠন, শিক্ষক নিয়োগ প্রভৃতি।

তাৎক্ষণিক শিক্ষা পরিকল্পনা

শিক্ষাকে তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধান বা তাৎক্ষণিক কোনো বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করার জন্য তাৎক্ষণিক শিক্ষা পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এই পরিকল্পনার লক্ষ্য হল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তাৎক্ষণিক সমস্যার সমাধান করা। যেমন – পানীয় জলের সমস্যা, শিক্ষার্থীদের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীতে অংশগ্রহণের পরিকল্পনা, বিদ্যালয়ের তাৎক্ষণিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান কর্মসূচি পরিচালনা প্রভৃতি।

প্রয়োজন ভিত্তিক পরিকল্পনা

শিক্ষার বিভিন্ন প্রয়োজনের তাগিদে যখন বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়ে থাকে, তখন তাকে প্রয়োজন ভিত্তিক পরিকল্পনা বলে। অর্থাৎ যখন শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিকল্পনা কার্যকর হয় না বা এমন সমস্যা উদ্ভূত হল যে সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে হয়, তখন তাকে প্রয়োজন ভিত্তিক পরিকল্পনা বলে। তবে মূল পরিকল্পনা চলাকালীন অবস্থায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন প্রয়োজন ভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে কোনো সমস্যার বা তৎকালীন সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষার বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা করা হয়ে থাকে। কারণ শিক্ষা পরিকল্পনা শিক্ষাকে বাস্তবায়নের বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা পরিকল্পনা শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রকে পরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়নে সফল করে তোলে।

তথ্যসূত্র (Reference)

  • J. C. Aggarwal- Educational Administration, Management and Supervision.
  • J. Mohanty- Educational Administration, Supervision and School Management.
  • I. S. Sindhu- Educational Administration and Management.
  • Bimal Charan swain and Dr. Rajalakshmi Das. Educational Management.
  • Arnab Chowdhury & Jayanta Mete. Educational Management, Administration and Leadership. ISBN :978-93-89234-76-3
  • Internet Sources

প্রশ্ন – শিক্ষা পরিকল্পনার প্রকারভেদগুলি কি কি ?

উত্তর – শিক্ষা পরিকল্পনার প্রকারভেদ গুলি হল মাইক্রো স্তরের পরিকল্পনা, ম্যাক্রো স্তরের পরিকল্পনা, ক্ষুদ্র পরিকল্পনা, মাঝারি পরিকল্পনা, বৃহৎ পরিকল্পনা, তৃণমূল স্তরের পরিকল্পনা প্রভৃতি।

আরোও পড়ুন

শিক্ষাগত পরিকল্পনার প্রকারভেদ | Main Types of Educational Planning সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Comment

close