Share on WhatsApp Share on Telegram

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ গুলি আলোচনা করো | Recommendations of University Education Commission

Join Our Channels

স্বাধীন ভারতের উচ্চ শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে প্রথম যে কমিশন গঠিত হয়েছিল, সেটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন বা রাধাকৃষ্ণন কমিশন (University Education Commission) নামে খ্যাত।

ভারত স্বাধীনতা লাভের পর উচ্চশিক্ষার সংস্কার ও অগ্রগতির জন্য ভারত সরকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন বা রাধাকৃষ্ণন কমিশন গঠন। এই কমিশন উচ্চশিক্ষার অগ্রগতির জন্য ও উচ্চশিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন সুপারিশ প্রদান করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ | Recommendations of University Education Commission

ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভের পর উচ্চশিক্ষা প্রসারের জন্য ভারত সরকার ১৯৪৮ সালের ৪ই নভেম্বর ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন এর সভাপতিত্বে যে কমিশন গঠন করেন, সেটি শিক্ষার ইতিহাসে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন বা রাধাকৃষ্ণন শিক্ষা কমিশন নামে পরিচিত।

এই কমিশনের মোট সদস্য সংখ্যা ছিলেন 10 জন। যাদের মধ্যে তিনজন বিদেশি সদস্য (ড. জেমস্‌. এফ ডাফ, ড. ই. মরগ্যান ও ড. টিগার্ট) এবং সাত জন ভারতীয় শিক্ষাবিদ (তারাচাঁদ, জাকির হোসেন, লক্ষণ স্বামী মুদালিয়র, মেঘনাথ সাহা প্রমুখ) ছিলেন উল্লেখযোগ্য।

কমিশন দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা ও গবেষণার মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন সুপারিশ সংক্রান্ত ৭৪৭ পৃষ্ঠার সুদীর্ঘ একটি প্রতিবেদন ১৯৪৯ সালে সরকারের কাছে পেশ করেন।

উচ্চশিক্ষার উন্নতিকল্পে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ বা রাধাকৃষ্ণন কমিশনের সুপারিশ গুলি নিম্নে আলোচনা করা হল –

1. উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কে রাধাকৃষ্ণন কমিশন বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কে রাধাকৃষ্ণন কমিশন বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের কমিশনের সুপারিশ গুলি হল –

i) উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হবে উন্নততর সমাজ গড়ে তোলা,

ii) নেতৃত্ব দানের যোগ্যতা অর্জন,

iii) জাতীয় সংহতি স্থাপন,

iv) বিজ্ঞান কারিগরি ও কৃষি শিক্ষার প্রসার,

vi) ভারতীয় সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও সঞ্চালন প্রভৃতি।

2. শিক্ষার পাঠক্রম

উচ্চশিক্ষার পাঠক্রম সম্পর্কে রাধাকৃষ্ণন কমিশন বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পাঠক্রম হল শিক্ষা ব্যবস্থা প্রধান ও অন্যতম উপাদান। কমিশন বলেন স্নাতক স্তরে পাশ ও অনার্স কোর্সে দু বছরের পাঠক্রম এবং স্নাতকোত্তর কোর্স হবে এক বছরের।

এছাড়া শিক্ষার্থীরা যাতে নিজেদের পছন্দমত বিষয়ে অধ্যায়ন করতে পারে এবং ডিগ্রিলাভের সুযোগ পেতে পারে তার জন্য উপযুক্ত পাঠক্রম প্রণয়ন করতে হবে।

3. শিক্ষক শিক্ষা

কমিশন বিশেষভাবে সুপারিশ করেন যে শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষকের স্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষার মান ও সাফল্য নির্ভর করে। শিক্ষকের দায়িত্ব সম্পর্কে কমিশন সুপারিশ করেন – শিক্ষকের দায়িত্ব হবে ছাত্রদের মধ্যে আগ্রহ জাগিয়ে তোলা এবং উপযুক্ত মূল্যবোধ গঠন করা। যাতে ভবিষ্যৎ জীবনে শিক্ষার্থীরা উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠতে পারে।

শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য কমিশন উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে চার ধরনের শিক্ষকের কথা বলেছেন। যথা – প্রফেসর, রিডার, লেকচারার এবং ইনস্ট্রাকটর।

4. পেশাগত শিক্ষা

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কমিশন পেশাগত শিক্ষার সুপারিশ করেছেন। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য কমিশন পেশাগত শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।

পেশাগত শিক্ষার বিষয়ে কমিশন কয়েক ধরনের পেশা সম্পর্কে সুপারিশ করেন। সেগুলি হল – কৃষিকাজ, বাণিজ্য, চিকিৎসা বিদ্যা, ইঞ্জিনিয়ারিং ও কারিগরি, আইন শিক্ষা শিক্ষকতা প্রভৃতি।

5. ধর্ম শিক্ষা

কমিশন উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ধর্ম শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ধর্ম শিক্ষা সম্পর্কে কমিশন বলেন – শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রতিদিনের কাজ শুরু হওয়ার আগে কয়েক মিনিট প্রার্থনা মাধ্যমে শুরু করতে হবে। এছাড়া মহাপুরুষদের জীবনী পাঠের ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন – যীশুখ্রীষ্ট, সক্রেটিস, বিবেকানন্দ, মহাত্মা গান্ধী, মোহম্মদ, কবির প্রমুখ।

6. শিক্ষার মাধ্যম

উচ্চশিক্ষার বিস্তার সাধনের ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হল শিক্ষার মাধ্যম বা ভাষা সমস্যা। এ বিষয়ে কমিশন বিভিন্ন সুপারিশ করেছেন, যথা –

i) উচ্চ শিক্ষার মাধ্যম হবে আঞ্চলিক ভাষা।

ii) কোনো কোনো ক্ষেত্রে সর্বভারতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দি’র উপর গুরুত্ব আরোপ।

iii) সমস্ত ভারতীয় ভাষায় বিজ্ঞান ও কারিগরি বিষয়ে অভিন্ন ভাষা ব্যবহার করতে হবে।

iv) পাঠ্য হিসেবে ইংরেজি ভাষা এবং কমবর্ধমান জ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে ইংরেজি ভাষার চর্চা করতে হবে।

7. মূল্যায়ন ব্যবস্থা বা পরীক্ষা ব্যবস্থা

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যথাযথ মূল্যায়নের জন্য কমিশন বিভিন্ন সুপারিশ করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হল –

i) রচনাধর্মী প্রশ্নের বদলে বস্তুধর্মী প্রশ্ন থাকবে,

ii) বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং কলেজের নম্বর দেওয়ার ব্যাপারে সমতা থাকতে হবে বা রাখতে হবে।

iii) গ্রেস নম্বর দেয়ার প্রথা বাতিল করতে হবে প্রভৃতি।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

8. নারী শিক্ষা

নারী শিক্ষার বিস্তারের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন বা রাধাকৃষ্ণন কমিশন বিশেষ সুপারিশ করেন। কমিশন বলেন – নারী শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। না হলে মহিলারা উচ্চশিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত থাকবে।

তাই কমিশন মহিলাদের জন্য গার্হস্থ্য, অর্থনীতি, গৃহ পরিচালনা প্রভৃতি শিক্ষা দেয়ার কথা বলেছেন। এছাড়া কমিশন নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে সহ শিক্ষার ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেছেন।

9. ছাত্র কল্যাণ

কমিশন ছাত্র কল্যাণের বিষয়ে বিভিন্ন সুপারিশ করেন। কমিশন বলেন – বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কল্যাণমুখী কাজে অংশগ্রহণ করতে হবে। এর জন্য একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়। সেই কারণে বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলিতে NCC বিভাগ খোলার সুপারিশ করা হয়।

10. অর্থনৈতিক সংস্থান

কমিশন বলেন উচ্চশিক্ষার উন্নতির জন্য দরকার যথাযথ আর্থিক সংস্থান। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় এবং মহাবিদ্যালয়গুলির আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকলে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন বা প্রসাদ কখনোই সম্ভব নয়।

তাই উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সংস্থান বা অর্থ সংস্কারের জন্য কমিশন কিছু সুপারিশ করেন। কমিশনের মতে – উচ্চশিক্ষার অর্থ সংস্থানের যাবতীয় দায়িত্ব রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে। এছাড়া ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশন (UGC) গঠনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে অর্থ সাহায্য করতে হবে।

11. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সম্পর্কে রাধাকৃষ্ণন কমিশন বিশেষ সুপারিশ করেন। কমিশন বলেন –

i) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাকে যুগ্ম তালিকা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অর্থাৎ শিক্ষার প্রশাসনের দায়িত্ব থাকবে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের হাতে।

ii) কলেজ গুলিতে পরিচালন সমিতির গঠন করতে হবে। যাতে কলেজগুলি শিক্ষার মানের উন্নতি হয়।

iii) বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুধুমাত্র কলেজগুলোকে অনুদান দেওয়া নয়। কলেজগুলির শিক্ষার মানের দিকেও গুরুত্ব আরোপ করা।

iv) সরকারি মহাবিদ্যালয় বা কলেজগুলিকে ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অঙ্গীভূত করার মাধ্যমে শিক্ষাদানের বিস্তার ঘটাতে হবে।

উপসংহার | Conclusion

সর্বোপরি বলা যায়, উচ্চ শিক্ষার সম্পর্কে স্বাধীন ভারতে গঠিত প্রথম শিক্ষা কমিশন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন বা রাধাকৃষ্ণন কমিশনের সুপারিশ গুলি বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে।

তাই স্বাধীনতার পর ভারতবর্ষে উচ্চ শিক্ষা সংক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন বা রাধাকৃষ্ণন কমিশনের প্রতিবেদন ছিল ভারতের শিক্ষার ইতিহাস একটি মূল্যবান প্রতিবেদন বা রিপোর্ট। এটি তৎকালীন উচ্চ শিক্ষা সম্পর্কে সব ধরনের সুপারিশ গুলির কথা উল্লেখ করেছিলেন।

তথ্যসূত্র | References

  • Education in India-Past-Present-Future, Vol. I and II, J. P. Banerjee
  • Landmarks in the History of Modern Indian Education, J. C. Aggarwal
  • History of Education in India, Dr. R N Sharma and R K Sharma
  • Report of Commissions – Radhakrishnan, Mudaliar, Kothari.
  • National Policy on Education, 1986. Policy perspective.
  • Internet Sources

প্রশ্ন – বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের সম্পাদক কে ছিলেন

উত্তর – বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের সম্পাদক ছিলেন ডক্টর নির্মল কুমার সিদ্ধান্ত।

প্রশ্ন – ভারতের স্বাধীনতার পর প্রথম শিক্ষা কমিশন কোনটি

উত্তর – ভারতের স্বাধীনতার পর প্রথম শিক্ষা কমিশন হল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন বা রাধাকৃষ্ণন কমিশন। স্বাধীনতার পর এই কমিশনটি গঠন করা হয়। ১৮৪৮-৪৯ সালে ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন রাধাকৃষ্ণন কমিশন গঠিত হয়।

প্রশ্ন – স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশনের নাম কী

উত্তর – স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশনের নাম হল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন বা রাধাকৃষ্ণন কমিশন। এটি 1948-49 সালে গঠন করা হয়।

আরোও পড়ুন

4.8/5 - (24 votes)

Mr. Debkumar – Author and Founder of Edutiips.com

Mr. Debkumar – Author and Founder of Edutiips.com

A dedicated educator with 10+ years of teaching experience, UGC NET Qualified, and holder of MA, B.Ed, and M.Phil in Education (University of Calcutta).

He has authored several books published by Aheli Publication, such as Communication Skills, Aspect of Democratic Citizenship, Sociological Foundation of Education, Computer Applications, Fundamentals of Education, Educational Organization and Planning, and Educational Research.

He is also an active contributor on Quora, where he shares expert insights on education, history, and social issues.

1 thought on “বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ গুলি আলোচনা করো | Recommendations of University Education Commission”

Leave a Comment

close