Share on WhatsApp Share on Telegram

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য কি | Individualistic Aims of Education

Join Our Channels

শিক্ষার বিভিন্ন লক্ষ্যের মধ্যে শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য অন্যতম। শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য (Individualistic Aims of Education) অনুযায়ী সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রকৃতির হয়ে থাকে।

শিক্ষার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে শিক্ষা দুটি প্রধান লক্ষ্য পরিলক্ষিত হয়। যথা – শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য এবং শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য। শিক্ষার এই দুই লক্ষ্যের সমন্বয়ে ব্যক্তির সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন সম্ভবপর হয়। এখানে শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য কি, শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের বৈশিষ্ট্য এবং শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের সুবিধা ও অসুবিধা গুলি উল্লেখ করা হল।

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য | Individualistic Aims of Education

যে শিক্ষার লক্ষ্য শিশুর আগ্রহ প্রবণতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী গড়ে ওঠে এবং সেই অনুযায়ী শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় তাকে শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য বলে। অর্থাৎ শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য অনুযায়ী শিক্ষার লক্ষ্য হল – ব্যক্তির উন্নয়ন করা।

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যে বিশ্বাসী শিক্ষাবিদগণ বলেন – ব্যক্তির বিকাশ সাধন হল শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। ব্যক্তির উন্নয়নী হবে শিক্ষারব্যক্তি তান্ত্রিক লক্ষ্যের অন্যতম কাজ।

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য সম্পর্কে বিশিষ্ট দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ অ্যারিস্টটল বলেছেন – শিক্ষা হল সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরি করা।

ব্যক্তি তান্ত্রিক লক্ষ্যের সমর্থনে ভাববাদী দার্শনিকগণের মতে – শিক্ষার লক্ষ্য হল ব্যক্তির মধ্যে পরমতম সত্তার বিকাশ ঘটানো। ভাববাদীরা আরো বলেন – ব্যক্তির মধ্যে আত্ম উপলব্ধির বিকাশ হল শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। তাই ভাববাদী দার্শনিকগণ ব্যক্তির বিকাশের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

প্রকৃতিবাদী দার্শনিকগণের মতে – শিশুর শিক্ষা হবে তার প্রকৃতি অনুযায়ী। অর্থাৎ শিশুর চাহিদা, সামর্থ, আগ্রহ কবিতার উপর ভিত্তি করে শিক্ষা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

আবার প্রয়োগবাদী দার্শনিকগণ বলেন – প্রতিভাবান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিগণের দ্বারাই মানব সভ্যতার উন্নয়ন সম্ভব। তাই তারা ব্যক্তির বিকাশের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের সমর্থক

গ্রিক দার্শনিকগণ এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদগণ শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের সমর্থন করেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হল –

প্লেটো, সক্রেটিস, রুশো, ফ্রয়েবেল, অ্যারিস্টটল, বিবেকানন্দ, গান্ধীজি প্রমুখ।

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের বৈশিষ্ট্য

শিক্ষার ব্যাক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের বৈশিষ্ট্য যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল –

i) ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রকৃতির – অর্থাৎ এই শিক্ষা ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে।

ii) স্বাধীনতা কেন্দ্রিক – অর্থাৎ ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষার লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

iii) সৃজনধর্মী – এই শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশ সাধন করা হয়। তাই শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের বৈশিষ্ট্য হল সৃজন ধর্মিতা।

iv) বিকাশধর্মী প্রক্রিয়া – শিক্ষার ব্যাক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তির বিকাশকে ত্বরান্বিত করা হয়। তাই এই শিক্ষা বিকাশ ধর্মী প্রকৃতির।

v) জীবনব্যাপী প্রকৃতির – এই শিক্ষার লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন করা। তাই এটি জীবনব্যাপী প্রকৃতির হয়ে থাকে।

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের সুবিধা ও অসুবিধা

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে গঠিত হয়। কিন্তু বিভিন্ন শিক্ষাবিদ শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের বিভিন্ন সুবিধা ও অসুবিধার কথা উল্লেখ করেছেন।

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের সুবিধা ও অসুবিধা গুলি নিম্নে আলোচনা করা হল –

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য সুবিধা

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে গঠিত হয়। তাই শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য সুবিধা গুলি যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

i) শিশুর সুপ্ত সম্ভাবনার বিকাশ সাধন

ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষার মাধ্যমে শিশুর জন্ম সূত্রে যে সমস্ত গুণাবলী বা বৈশিষ্ট্য পায় তার যথাযথ বিকাশ সাধন করার ক্ষেত্রে এটি বিশেষ সুবিধা জনক।

ii) আত্ম উপলব্ধি এবং আত্ম বিকাশে সহায়তা করা

শিক্ষার লক্ষ্য হল ব্যক্তিকে আত্ম উপলব্ধি এবং আত্ম বিকাশে সহায়তা করে। তাই ব্যাক্তিতান্ত্রিক শিক্ষার লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের আত্ম উপলব্ধি এবং আত্ম বিকাশে সহায়তা করা।

iii) ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন সম্ভব করা হয়। তাই শিশুর আগ্রহ ও চাহিদা অনুযায়ী ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন করাই হল শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য সুবিধা।

iv) সৃজনশীলতার বিকাশ

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশ সাধন সম্ভবপর হয়। শিশুদের মধ্যে যে সৃজনধর্মী মনোভাব রয়েছে বা গুণাবলী রয়েছে তার বিকাশ সাধন করার ক্ষেত্রে শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য বিশেষভাবে সুবিধাজনক।

v) মানসিক বিকাশ

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ সাধন সম্ভবপর হয়। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে সক্ষম করে তুলতে শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

vi) অভিজ্ঞতার সঞ্চয়ন ও সঞ্চালন

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের মাধ্যমে বংশ পরম্পরায় অভিজ্ঞতার সঞ্চয়ন ও সঞ্চালন করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ শিশুর মধ্যে আদর্শ, ভাবধারা এবং বিভিন্ন জ্ঞান সঞ্চালন করা হয়ে থাকে। তাই শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য সুবিধা বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়।

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের অসুবিধা

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের বিভিন্ন সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের অসুবিধা পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

i) সামাজিক উন্নতি ব্যাহত

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যে ব্যক্তির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয় ফলে অনেক সময় সামাজিক উন্নয়ন সম্ভবপর হয় না। কারণ সমাজ ছাড়া ব্যক্তির একক কোনো অস্তিত্ব নেই।

ii) আত্মকেন্দ্রিকতা

ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষার লক্ষ্যে ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে শিক্ষা দেওয়া হয় বা ব্যক্তির উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় ফলে এই শিক্ষা ব্যবস্থা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে বা ব্যক্তি স্বার্থপর হয়ে উঠতে পারে। তাই ভবিষ্যতে সমাজ কল্যাণ সম্ভবপর হয় না।

iii) সামাজিক গুণাবলীর বিকাশ সম্ভবপর হয় না

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের মাধ্যমে ব্যক্তির সর্বাঙ্গীন বিকাশের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় এবং ব্যক্তিগত গুণাবলীর বিকাশ সাধন করা হয়। তাহলে শিক্ষার্থীর মধ্যে সামাজিক গুণগুলি বিকশিত হয় না।

iv) ব্যয়বহুল পদ্ধতি

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য অনুযায়ী যে শিক্ষার কথা বলা হয়েছে তা ব্যয়বহুল প্রকৃতির। কারণ ব্যক্তি বৈষম্যের নীতি অনুসরণ করে শিক্ষা প্রদান করা বা ব্যক্তির ব্যক্তিগত চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা প্রদান করা অনেকটাই ব্যয় সাপেক্ষ। তাই এটি ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষার লক্ষ্যের বিশেষ অসুবিধা।

সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার ধারণা, 2 টি সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যব্যাপক অর্থে শিক্ষার ধারণা, সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য
ভাববাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাবপ্রয়োগবাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাব
বাস্তববাদ বা বস্তুবাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাব প্রকৃতিবাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাব
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা : ধারণা, সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যডেলর কমিশনের আধুনিক শিক্ষার চারটি স্তম্ভ

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের ভিত্তি হল শিশু বা শিক্ষার্থী। ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে বা শিশুকে কেন্দ্র করে শিক্ষার যাবতীয় আয়োজন করা হয়ে থাকে। তাই শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে যা কিছু প্রয়োজন তা সবই শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের মধ্যে নিহিত থাকে।

ব্যক্তি বা শিশু যাতে সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে পারে তা সবই শিক্ষার এই লক্ষ্যের মধ্যে গুরুত্ব আরোপ করা হয়। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের নৈতিক, আধ্যাত্মিক, বৌদ্ধিক, চারিত্রিক প্রভৃতি গুণাবলীর যথাযথ বিকাশ সাধন করা হয়ে থাকে।

সুতরাং শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের মধ্যে প্রধান হল শিশুর সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন করা। অর্থাৎ শিক্ষায় ব্যক্তিকে বা শিশুর উপর অধিকভাবে গুরুত্ব আরোপ করা।

তথ্যসূত্র (References)

  • Aggarwal, J. C., Theory and Principles of Education. 13th Ed. Vikas Publishing House Pvt. Ltd.
  • V.R. Taneja, Educational Thoughts & Practice. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi
  • Nayak, B.K, Text Book of Foundation of Education. Cuttack, Odisha: KitabMhal
  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1,
  • Internet sources

প্রশ্ন – শিক্ষার দুটি ব্যক্তিগত লক্ষ্য কি কি?

উত্তর – শিক্ষার দুটি ব্যক্তিগত লক্ষ্য হল – শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন করা এবং শিক্ষার্থীদের সমাজের উপযোগী করে গড়ে তোলা।

আরোও পড়ুন

3.6/5 - (8 votes)

Mr. Debkumar – Author and Founder of Edutiips.com

Mr. Debkumar – Author and Founder of Edutiips.com

A dedicated educator with 10+ years of teaching experience

He is also an active contributor on Quora, where he shares expert insights on education, history, and social issues.

1 thought on “শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য কি | Individualistic Aims of Education”

Leave a Comment

close