ডেলর কমিশনের শিক্ষার চারটি স্তম্ভ (Delors Commission in Bengali)

ডেলর কমিশন (Delors Commission) আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য হিসাবে কমিশন চারটি লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করেছেন।

সমাজ হল সতত পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনশীলতার সাথে ব্যক্তিকে মানিয়ে নিতে হয়। অপরদিকে শিক্ষাও পরিবর্তনশীল, জীবনব্যাপী, ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। তাই শিক্ষার মূল লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন করা। আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্যের উপর গুরুত্ব আরোপ করতে গিয়ে ও শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে নির্ধারণ করার জন্য ডেলর কমিশন (Delor’s Commission) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

Table of Contents

ডেলর কমিশন (Delors Commission)

আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন করা। আর এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক স্তরে ১৯৯৬ সালে UNESCO (United Nations Educational, Scientific and Cultural Organization) ফ্রান্সের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জ্যাক ডেলরের (Jacuques Delor’s) সভাপতিত্বে একটি কমিশন গঠন করেন। এই কমিশনটি ডেলর কমিশন নামে অধিক পরিচিত।

কমিশন শিক্ষার লক্ষ্য হিসাবে চারটি প্রধান লক্ষ্যকে চিহ্নিত করেছিলেন। ডেলর কমিশনের শিক্ষার লক্ষ্যগুলি এখানে আলোচনা করা হল।

ডেলর কমিশনের চারটি স্তম্ভ (Delors Commission Four Pillars of Modern Education)

শিক্ষার আধুনিক লক্ষ্য হিসাবে ডেলর কমিশন শিক্ষার প্রধান চারটি লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করেছেন। ডেলর কমিশনের এই লক্ষ্যগুলিকে শিক্ষা চারটি স্তম্ভ (Delor’s Commission Four Pillars of Modern Education) হিসাবে পরিগণিত করা যায়।

আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য প্রসঙ্গে ডেলর কমিশনের শিক্ষার চারটি স্তম্ভ হল নিম্নলিখিত –

  • জানার জন্য শিক্ষা (Learning to Know),
  • কর্মের জন্য শিক্ষা (Learning to Do),
  • একত্রে বসবাসের জন্য শিক্ষা (Learning to Live Together),
  • প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা (Learning to Be)
Delors Commission
Delors Commission Aims of Education

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

1. জানার জন্য শিক্ষা (Learning to Know)

ডেলর কমিশনের (Delors Commission) শিক্ষার চারটি স্তম্ভের মধ্যে প্রথম ও অন্যতম হল জানার জন্য শিক্ষা। জ্ঞান হল শিক্ষার প্রধান চালিকাশক্তি। তাই শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হল যথাযথ জ্ঞান অর্জন করা। এই জ্ঞানার্জনের মধ্য দিয়ে মানুষের প্রকৃত শিক্ষা সম্পন্ন হয়ে থাকে। তাই জ্ঞান শিশুকে বা ব্যক্তিকে বিশ্বের সঙ্গে সঠিকভাবে পরিচয় করতে সহায়তা করে। জীবনে চলার পথে জ্ঞান ব্যক্তিকে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে।

বিশ্বজগতের বিভিন্ন জ্ঞান সঠিকভাবে অর্জন করার জন্য কয়েকটি মানসিক ক্ষমতা প্রয়োজন হয়। এগুলি হল – স্মৃতি (Memory), একাগ্রতা (Concentration), চিন্তন ক্ষমতা (Thinking Power) প্রভৃতি।

জানার জন্য শিক্ষা যে সমস্ত উদ্দেশ্যে বর্তমান, সেগুলি হল –

  • বিশ্ব প্রকৃতির সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন,
  • নতুন নতুন জ্ঞান অর্জনের সহায়তা,
  • ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন,
  • সৃজনশীলতার বিকাশ সাধন,
  • জ্ঞানের সঞ্চালন প্রভৃতি।

2. কর্মের জন্য শিক্ষা (Learning to Do)

ডেলর কমিশনের (Delors Commission) আধুনিক শিক্ষার আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে চারটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হল কর্মের জন্য শিক্ষা। কর্মের জন্য শিক্ষা হল শিশুকে ভবিষ্যৎ জীবনের উপযোগী করে গড়ে তোলা। তাই শিক্ষাকে বৃত্তিমুখী করার কথা বলা হয়েছে।

তাই কর্মের জন্য শিক্ষার লক্ষ্যটি বৃত্তিমূলক শিক্ষার লক্ষ্যের সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কিত। এই শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যাতে বিভিন্ন কর্মের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

কর্মের জন্য শিক্ষার মাধ্যমে শিশুকে সমাজ উপযোগী গড়ে তোলা সম্ভবপর হয়। এই কর্মের জন্য শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি হল –

  • বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দান করা,
  • ভবিষ্যৎ জীবনের উপযোগী করে গড়ে তোলা,
  • কর্ম দক্ষতা অর্জনের শিক্ষার থেকে সাহায্য করা,
  • দলগত মনোভাব সৃষ্টি,
  • শিক্ষার্থীকে অর্থনৈতিক দিক থেকে সাবলম্বী করে গড়ে তোলা প্রভৃতি।

3. একত্রে বসবাসের জন্য শিক্ষা (Learning to Live Together)

ডেলর কমিশনের শিক্ষার লক্ষ্যের চারটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হল একত্রে বসবাসের জন্য শিক্ষা। অর্থাৎ আধুনিক সমাজে মানুষের মধ্যে মানুষের বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের মাধ্যমে বেঁচে থাকাই হল একত্রে বসবাসের শিক্ষা। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমাজে সকল মানুষ মিলেমিশে বাস করাই হল একত্রে বসবাসের শিক্ষা।

আধুনিক শিক্ষার এটি একটি অন্যতম লক্ষ্য। একত্রে বসবাসের শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি হল –

  • জাতীয় সংহতি রক্ষা করা,
  • গণতান্ত্রিক চেতনার সঞ্চার,
  • ধর্ম ও বর্ণ ভেদের প্রবণতা হ্রাস,
  • সহনশীল মনোভাব গঠন,
  • মানবিকতার বিকাশ সাধন প্রভৃতি।

4. প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা (Learning to Be)

আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে ডেলর কমিশনের অন্যতম লক্ষ্য হল প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা। কমিশন বলেন – সারা বিশ্বব্যাপী মানুষের মানুষে ভেদাভেদ একটি জ্বলন্ত সমস্যা। তাই আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য হবে ব্যক্তিকে প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা।

প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা বলতে বোঝায় মানুষের মধ্যে নৈতিকতা, মূল্যবোধ প্রভৃতির বিকাশ সাধন। প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি হল –

  • শিশুকে সমাজ উপযোগী করে গড়ে তোলা,
  • গণতান্ত্রিক চেতনা সঞ্চার ঘটানো,
  • ব্যক্তিকে নৈতিক গুণসম্পন্ন করে গড়ে তোলা,
  • মূল্যবোধের যথাযথ বিকাশ সাধন করা,
  • আধ্যাত্মিক বিকাশ সাধন,
  • জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কথা বোধের বিকাশ প্রভৃতি।
সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার ধারণা, 2 টি সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যব্যাপক অর্থে শিক্ষার ধারণা, সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য
ভাববাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাবপ্রয়োগবাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাব
বস্তুবাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাব প্রকৃতিবাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাব

উপসংহার (Conclusion)

সর্বোপরি বলা যায়, ডেলর কমিশনের আধুনিক শিক্ষার চারটি স্তম্ভ বা শিক্ষার চারটি লক্ষ্য মানুষের জীবন বিকাশের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ একজন মানুষের সর্বাঙ্গিন বিকাশ সাধনের ক্ষেত্রে শিক্ষার এই লক্ষ্যগুলি বিশেষভাবে সহায়কের ভূমিকা পালন করে থাকে।

তাছাড়া ব্যক্তিকে আদর্শ ও সমাজ উপযোগী করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটি বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

তথ্যসূত্র (References)

  • V.R. Taneja, Educational Thoughts & Practice. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi
  • Nayak, B.K, Text Book of Foundation of Education. Cuttack, Odisha: KitabMhal
  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1,
  • Internet sources

প্রশ্ন – শিক্ষার চারটি স্তম্ভ এর প্রবক্তা কে?

উত্তর – শিক্ষার চারটি স্তম্ভের প্রবক্তা হলেন জ্যাক ডেলরের সভাপতিত্বে গঠিত ডেলর কমিশন।

প্রশ্ন – ডেলার কমিশন কবে গঠিত হয়?

উত্তর – ডেলর কমিশন ১৯৯৩ সালে জ্যাক ডেলরের নেতৃত্বে গঠিত হয়। 1996 সালে কমিশন তাদের শিরোনামটি পেশ করেন।

প্রশ্ন – ডেলরস কমিশনের প্রতিবেদনটি কি?

উত্তর – ডেলরস কমিশনের প্রতিবেদন ছিল – Learning: The treasure Within. অর্থাৎ শিখন: অন্তর্নিহিত সম্পদ।

প্রশ্ন – ডেলরস কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষার স্তম্ভ কয়টি?

উত্তর – ডেলরস কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষার স্তম্ভ চারটি সেগুলি হল –
১. জানার জন্য শিক্ষা (Learning to Know),
২. কর্মের জন্য শিক্ষা (Learning to Do),
৩. একত্রে বসবাসের জন্য শিক্ষা (Learning to Live Together),
৪. প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা (Learning to Be)

প্রশ্ন – ডেলর কমিশনের আলোকে আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য গুলি লেখো।

উত্তর – ডেলর কমিশনের আলোকে আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য গুলি হল –
১. জানার জন্য শিক্ষা (Learning to Know),
২. কর্মের জন্য শিক্ষা (Learning to Do),
৩. একত্রে বসবাসের জন্য শিক্ষা (Learning to Live Together),
৪. প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা (Learning to Be)

প্রশ্ন – ডেলরস কমিশন ভারতীয় সদস্য কে ছিলেন?

উত্তর – ডেলরস কমিশন ভারতীয় সদস্য ছিলেন – করণ সিং।

প্রশ্ন – দেলোর্স কমিশন কত সালে ইউনেস্কো থেকে তাদের রিপোর্ট পেশ করে?

উত্তর – দেলোর্স কমিশন বা ডেলর কমিশন ১৯৯৬ সালে ইউনেস্কো থেকে তাদের রিপোর্ট পেশ করে।

প্রশ্ন – UNESCO chairman কে?

উত্তর – UNESCO chairman হলেন Director-General, Audrey Azoulay (Day 8 June 2023)

প্রশ্ন – The treasure within কি?

উত্তর – The treasure within হল ডেলরস কমিশনের প্রতিবেদনের নাম।

প্রশ্ন – UNESCO -এর পুরো নাম কি?

উত্তর – UNESCO -এর পুরো নাম হল – United Nations Educational, Scientific and Cultural Organization.

প্রশ্ন – শিক্ষার চারটি স্তম্ভ কি কি

উত্তর – ডেলর কমিশন অনুযায়ী শিক্ষার চারটি স্তম্ভ হল –
1. জানার জন্য শিক্ষা (Learning to Know),
2. কর্মের জন্য শিক্ষা (Learning to Do),
3. একত্রে বসবাসের জন্য শিক্ষা (Learning to Live Together),
4. প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা (Learning to Be)

আরোও পড়ুন

3 thoughts on “ডেলর কমিশনের শিক্ষার চারটি স্তম্ভ (Delors Commission in Bengali)”

Leave a Comment

close