শিক্ষায় গতিশীল সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে। তাই আধুনিককালে সমাজের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য শিক্ষার ভূমিকা (Role of Education for Peaceful Coexistence) অত্যন্ত ফলপ্রসু।
শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান
সাধারণভাবে শান্তি হল যথাযথভাবে বা শান্তিপূর্ণভাবে জীবন যাপনের প্রক্রিয়া। তাই পারস্পরিক সহযোগিতা, সৌভ্রাতৃত্ববোধ, সহানুভূতি, সহমর্মিতা, একত্রে বসবাস করা প্রভৃতি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মূল চাবিকাঠি।
শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান হল সমাজের ব্যক্তিবর্গের মধ্যে পারস্পরিক সহানুভূতি, সুসম্পর্ক বা মেলবন্ধনের একটি প্রচেষ্টা। যেখানে সমাজের সকল স্তরের মানুষ একে অপরের মধ্যে ভাবের আদান প্রদান ও সহযোগিতার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ গঠন করে।
তাই বলা যায়, সামাজিক ন্যায়বিচার, মানব অধিকার, গণতন্ত্র, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য প্রভৃতির সমন্বয় হল শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। ডেলর কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী (UNESCO) শিক্ষার চারটি লক্ষ্যের মধ্যে একত্রে বসবাসের শিক্ষা এর মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তাই একত্রে বসবাসের শিক্ষা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান দুটি একে অপরের পরিপূরক বিষয়।
শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য শিক্ষার ভূমিকা | Role of Education for Peaceful Coexistence
বর্তমান সমাজে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থানের অভাব পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় হিংসা, মারামারি, ও বিভিন্ন প্রকারের অসামাজিক কার্যকলাপ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে বিঘ্নিত করে।
তাই সমাজে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য শিক্ষার ভূমিকা অনস্বীকার্য। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য শিক্ষার যে সমস্ত ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –
1. মনোভাব গঠন
প্রকৃত শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রকৃত মনোভাবের বিকাশ ঘটিয়ে থাকে। এর ফলে একে অপরের প্রতি দ্বন্দমূলক মানসিকতা, মনোভাবকে দূর করে সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা গঠন সম্ভব হয়। যা শান্তিপূর্ণ সহবস্থানের জন্য বিশেষভাবে সহায়ক।
2. সচেতনতা সৃষ্টি
শিক্ষার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সহবস্থানের প্রভাব ও ফলাফল সম্বন্ধে সমাজের সকল ব্যক্তিবর্গকে সচেতন করা সম্ভব হয়। ফলে ব্যক্তিরা আগ্রহী হয় এবং একত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে সুষ্ঠ সমাজ ব্যবস্থা করে তোলে।
3. পূর্ণ বিকাশে সহায়তা
শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি স্বাধীনভাবে, সক্রিয়ভাবে বসবাস করতে পারে। ফলে প্রত্যেক ব্যক্তির চাহিদা পূরণ হয় এবং ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ ঘটানো সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রক্রিয়াই ব্যক্তিকে এই পথে পরিচালিত করতে পারে। তাই শিক্ষা ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সম্ভব হয়।
4. আন্তর্জাতিকতা বোধ
শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তি মহৎ, উদার, সামাজিকীকরণে অংশগ্রহণ করতে পারে। ফলে নিজস্ব দেশ-জাতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠতে পারে। তাই শিক্ষা জাতীয়তাবোধের বিকাশ ঘটানোর মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সহবস্থানে বিশেষ পালন করে থাকে।
তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিস্তারে মাধ্যমে বিশ্বভারতীকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন।
5. বিশ্বজনীন ধারণা
প্রকৃত শিক্ষা ব্যক্তির মধ্যে ভাতৃত্ববোধ, দয়া, মায়া, সামাজিক গুণাবলীর বিকাশ সাধন করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। যার ফলেবিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়। তাই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য শিক্ষার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার (Conclusion)
পরিশেষে বলা যায়, সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য শিক্ষার ভূমিকা বা প্রয়োজনীয়তা বর্তমান। কারণ শিক্ষাই পারে সমাজের যাবতীয় প্রতিকূলতা দূর করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ফিরিয়ে আনতে। অর্থাৎ শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ সাধনের মাধ্যমে সুষ্ঠ ও প্রগতিশীল সমাজ গঠন করতে। যেখানে থাকবে না কোনো হিংসা, মারামারি বা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা। সেখানেই থাকবে সৌভাতৃত্ববোধ, মানবতা, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রভৃতি।
তথ্যসূত্র (References)
- Kar. Chintamani, Exceptional Children Their Psychology and Education. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi.
- Kirk, S. A. Educating Exceptional Children. Oxford IBH. New Delhi.
- Mangal, S. K. Educating Exceptional Children: An Introduction to Special Education. PHI Learning Pvt. Ltd. New Delhi.
- Panda, K. C. Education of Exceptional Children. Vikas Publishing House Pvt. Ltd. New Delhi.
- Internet sources
প্রশ্ন – শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান কাকে বলে? বা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বলতে কি বুঝ
উত্তর – শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান হল পারস্পরিক মেলবন্ধনের বা সহযোগিতার মাধ্যমে সুষ্ঠ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
প্রশ্ন – শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য শিক্ষা বলতে কী বোঝায়
উত্তর – যে শিক্ষার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান গড়ে তোলা সম্ভব তাকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য শিক্ষা বলে। আধুনিককালের সমাজ ব্যবস্থা অপ্রীতিকর হওয়ার জন্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থার জন্য শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য শিক্ষার লক্ষ্যে ডেলর কমিশন শিক্ষা চারটি লক্ষ্যের মধ্যে একত্রে বসবাস করার শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন।
আরোও পড়ুন
- অন্তর্ভুক্তিকরণের বাধা সমূহ | Barriers to Inclusion
- তপশিলি জাতি ও উপজাতি কাকে বলে | Concept of Scheduled Castes and Tribes
- বহু কৃষ্টি মূলক সমাজের জন্য শিক্ষার ভূমিকা | Role of Education for a Multicultural Society
- শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য শিক্ষার ভূমিকা | Role of Education for Peaceful Coexistence
- বাধামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে সমাজের ভূমিকা | Role of Society in Creating Barrier Free Environment
- বাধামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে বিদ্যালয়ের ভূমিকা | Role of School in Creating a Barrier Free Environment
1 thought on “শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য শিক্ষার ভূমিকা | Role of Education for Peaceful Coexistence”