বাধামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে বিদ্যালয়ের ভূমিকা | Role of School in Creating a Barrier Free Environment

শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রথাগত সংস্থা হিসেবে বিদ্যালয়ের বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষ করে বাধামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে বিদ্যালয়ের ভূমিকা (Role of School in Creating a Barrier Free Environment) অনবদ্য।

পরিবারের পর বিদ্যালয় হল শিশুর শিক্ষার প্রথম শিক্ষালয়। পরিবার থেকে শিশুরা বিদ্যালয়ে পদার্পণ করে ও জীবনব্যাপী শিক্ষা লাভ করে থাকে। বিদ্যালয় শিশুকে সমাজ জীবনের উপযোগী করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া সকল শিশুদের শিক্ষার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ বা বাধামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে বিদ্যালয়ের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

বাধামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে বিদ্যালয়ের ভূমিকা | Role of School in Creating a Barrier Free Environment

বিদ্যালয় হল সমাজের ক্ষুদ্র সংস্করণ। বিদ্যালয়ের মধ্যে শিশুদের সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধিত হয়ে থাকে। অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার জন্য বিদ্যালয় এর পরিবেশ বাধামুক্ত হওয়া প্রয়োজন। কারণ বাধামুক্ত পরিবেশে সকল শিক্ষার্থীরা বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়।

তাই বাধামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে বিদ্যালয়ের ভূমিকা বা পদক্ষেপ গুলি হল নিম্নলিখিত –

1. বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ

বর্তমানে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যালয়ের ধারণা প্রসারিত হয়েছে। সেই জন্য বিদ্যালয়ের পরিবেশ মুক্ত প্রকৃতির হওয়া প্রয়োজন। অর্থাৎ অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের বাধা মুক্ত পরিবেশ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাধামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে বিদ্যালয়ের ভবন অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে নির্মিত হওয়া প্রয়োজন।

তাই বাধা মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের যে সমস্ত দিকের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা উচিত তা হল – প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য প্রবেশদ্বার প্রশস্ত হওয়া দরকার, আলো বাতাস যুক্ত শ্রেণিকক্ষ, প্রতিবন্ধী শিশুদের যাতায়াতের জন্য লিফটের ব্যবস্থা, চাওড়া বারান্দা যাতে প্রতিবন্ধী শিশুরা হুইল চেয়ার নিয়ে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারে।

2. উপযুক্ত শিক্ষা সহায়ক উপকরণ

শিক্ষার সাফল্য নির্ভর করে শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত শিক্ষা সহায়ক বিভিন্ন উপকরণের উপর। এক্ষেত্রে বিদ্যালয়ে উপযুক্ত শিক্ষা সহায়ক উপকরণ সকল ধরনের শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে অক্ষমতা যুক্ত শিক্ষার্থীদের শিখনের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। তাই বাধা মুক্তির পরিবেশ সৃষ্টিতে বিদ্যালয়ের ভূমিকা হল বিদ্যালয়ের পঠন-পাঠনের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা সহায়ক উপকরণের ব্যবস্থা করা.

3. শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ

বাধা মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ পরিবেশ গণতান্ত্রিক প্রকৃতির হওয়া উচিত। যেখানে সকল শিক্ষার্থীরা একইসঙ্গে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। তাই শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ এমনভাবে যেখানে শিক্ষার্থীরা পারস্পরিক মেলবন্ধন বা মেলামেশার পরিবেশ পাবে, সহযোগিতা ও সহমর্মিতার পরিবেশ পাবে যার ফলে শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন হবে।

তাই অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের পরিবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেখানে শিক্ষার্থীরা বাধাহীন ভাবে শিক্ষালয় যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা লাভ করবে।

4. প্রশিক্ষণযুক্ত শিক্ষক

বাধামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত শিক্ষাদানের উপর গুরুত্ব আরোপ করবে। অর্থাৎ এখানে শিক্ষার্থীরা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ যুক্ত শিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষা সম্পন্ন করুন। কারণ অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ যুক্ত শিক্ষক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

5. মনোবিজ্ঞানসম্মত পাঠক্রম

শিক্ষার সাফল্য নির্ভর করে পাঠক্রমের উপর। তাই আধুনিককালে মনোবিজ্ঞান সম্মত পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষাদানের উপর গুরুত্ব আরোপিত হচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের আগ্রহ, প্রবণতা, সামর্থ্য অনুযায়ী পাঠক্রম রচনা করা আবশ্যিক।

বর্তমান শ্রেণিকক্ষে বা বিদ্যালয়ের পঠন-পাঠনের ক্ষেত্রে এই মনোবিজ্ঞান সম্মত পাঠক্রম বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে কোন বাধা ছাড়াই সকল প্রকাশ শিক্ষার্থীরা সহজে শিক্ষণ শিখন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে।

এছাড়াও বাধামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে বিদ্যালয়ের ভূমিকা হল –

i) শ্রেণীকক্ষের বাইরের পরিবেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা। যেমন – খেলার মাঠ, ফুলের বাগান প্রভৃতি। যেখানে স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি প্রতিবন্ধী শিশুরা অক্ষমতা যুক্ত শিশুরা সহজেই বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা লাভ করতে পারে ও শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

ii) প্রধান শিক্ষকের ভূমিকা। বাধামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বর্তমান। কারণ তিনি বিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন সংক্রান্ত যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। ফলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

iii) নমনীয় নীতি গ্রহণ। বাধামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে বিদ্যালয়ের ভূমিকার মধ্যে অন্যতম হল নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি বা নীতি গ্রহণ করা। এর ফলে সহজেই স্বাভাবিক শিশুদের পাশাপাশি প্রতিবন্ধী শিশুরাও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে না। বরং এই সমস্ত শিশুদের প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও সহজে শিক্ষার মূল স্রোতে নিয়ে আসা সম্ভব।

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, বিদ্যালয়ের পরিবেশ বাধামুক্ত হলেই তবে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য পরিপূরণ করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় যেখানে সকল শিশুদের বিশেষ করে প্রতিবন্ধী বা অক্ষমতাযুক্ত শিশুদের শিক্ষা দানের কথা বলা হয়েছে সেখানে বিদ্যালয়ের পরিবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই বিদ্যালয়ের পরিবেশ বাধামুক্ত প্রকৃতির হলে তবে শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে সর্বাঙ্গীন বিকাশ সম্ভব পর হবে।

তথ্যসূত্র (References)

  • Kar. Chintamani, Exceptional Children Their Psychology and Education. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi.
  • Kirk, S. A. Educating Exceptional Children. Oxford IBH. New Delhi.
  • Mangal, S. K. Educating Exceptional Children: An Introduction to Special Education. PHI Learning Pvt. Ltd. New Delhi.
  • Panda, K. C. Education of Exceptional Children. Vikas Publishing House Pvt. Ltd. New Delhi.
  • Internet sources

প্রশ্ন – বিদ্যালয়ে বাধা মুক্ত পরিবেশ কি?

উত্তর – বিদ্যালয়ে বাধা মুক্ত পরিবেশ হল এমন পরিবেশ যেখানে সকল শিশুরা বিশেষ করে প্রতিবন্ধী বা অক্ষমতা যুক্ত শিশুরা স্বাধীনভাবে ও মুক্তভাবে শিক্ষা লাভের সুযোগ পায়। বর্তমানে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের পরিবেশ বাধা মুক্ত প্রকৃতির হওয়া বাঞ্ছনীয়।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close