অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার বৈশিষ্ট্য (10 Main Characteristics of Inclusive Education)

আধুনিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য হল শিক্ষায় সকলের সমান সুযোগ প্রদান করা। শিশুর বৈচিত্র্য বা বিভিন্নতা অনুযায়ী শিক্ষাক্ষেত্রে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান হল অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার (Characteristics of Inclusive Education) বিশেষ দিক।

‘সবার জন্য শিক্ষা’ – শিক্ষার এই আধুনিক লক্ষ্য সমাজের সব ধরনের শিক্ষার্থীদের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে করা হয়েছে। দৈহিক, মানসিক, প্রাক্ষোভিক প্রভৃতি দিক থেকে প্রতিটা শিশুর মধ্যে আলাদা আলাদা বৈচিত্র্য বা বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। শিক্ষা ক্ষেত্রে এই সমস্ত বৈচিত্র বা বৈষম্যকে গুরুত্ব না দিয়ে সকলের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রধান আলোচ্য বিষয়। এখানে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা কি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করা হল।

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা বা সর্বসমাবিষ্ট শিক্ষা (Inclusive Education)

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা হল একগুচ্ছ শিক্ষা নীতি, মূল্যবোধ এবং অভ্যাসের সমষ্টি যা শিক্ষার্থীদের বা শিশুদের কোন ব্যতিক্রমধর্মি তার থাকা বা না থাকার উপর নির্ভর না করে সকলের জন্য যথাযথ শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

তাই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে শিক্ষার মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার শিক্ষা হল অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা।

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Inclusive Education)

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা হল শিক্ষাদান এবং শেখার একটি পদ্ধতি যা শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্যকে প্রাধান্য দেয় এবং সংস্কৃতি, ক্ষমতা বা পার্থক্য বা ধর্ম, বর্ণ, ভাষা নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীর জন্য সমান সুযোগ প্রদানের অতি গুরুত্ব আরোপ করে। অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার বৈশিষ্ট্য গুলি হল নিম্নলিখিত –

1. বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা প্রতিবন্ধী, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পটভূমি যুক্ত শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্যকে স্বীকৃতি দেয়। এর লক্ষ্য এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী সমানভাবে শিক্ষায় সুযোগ লাভ করে। অর্থাৎ এখানে বিশেষ কোনো শিক্ষার্থীকে গুরুত্ব না দিয়ে বৈচিত্রধর্মী শিক্ষার্থীদের বা বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে বা বিভিন্ন ধর্ম, ভাষা প্রভৃতি ভেদাভেদ না করে সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি করা।

2. সমান সুযোগ

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা সকল শিক্ষার্থীকে উপযুক্ত শিক্ষার সমান সুযোগ প্রদান করে। অর্থাৎ ভাষা, ধর্ম, বর্ণ, সংস্কৃতিক পটভূমি বা পার্থক্য নির্বিশেষে প্রত্যেকটি শিশুকে তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী সমান সুযোগ প্রদান করেন। এই অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে সকল শিক্ষার্থীর সমান সুযোগের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

3. ব্যক্তিগত সহায়তা

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত কোন সমস্যা দেখা দিলে তা সহজে সমাধান করার উপায় রয়েছে। বিশেষ করে প্রতিবন্ধী শিশুদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতার ফলে তাদের বিভিন্ন অসুবিধা সম্মুখীন হয়। এক্ষেত্রে এই শিক্ষা সকল শিক্ষার্থীদের সমান চোখে দেখে এবং ব্যক্তিগত ভাবে সহায়তা করে।

4. সহযোগিতামূলক শিক্ষা

অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রেণীকক্ষে সহযোগিতামূলক শিক্ষা দান প্রদান করে। যেখানে সাধারণ শিক্ষার শিক্ষক এবং বিশেষ শিক্ষার শিক্ষক সকল শিক্ষার্থীদের সমর্থন করার জন্য একসাথে কাজ করেন। তাই অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার বৈশিষ্ট্য হল সহযোগিতামূলক দিক।

5. নমনীয় পাঠ্যক্রম

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার পাঠক্রম নমনীয় প্রকৃতির হয়ে থাকে। যেহেতু বিভিন্ন সংস্কৃতির পটভূমি থেকে শিক্ষার্থীরা এই বিদ্যালয়ে পড়তে আসে। সেই জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের আগ্রহ, প্রবণতা, চাহিদা, প্রভৃতির উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছে।

6. ইতিবাচক শিক্ষার পরিবেশ

অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রেণীকক্ষ একটি ইতিবাচক এবং গ্রহণযোগ্য পরিবেশ গড়ে তোলে যেখানে বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়। এটি সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে একত্রিত হওয়ার অনুভূতি তৈরি করতে সাহায্য করে এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তি প্রচার করে। তা ইতিবাচক শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য বহন করে থাকে।

7. সমাজের মূল স্রোতের শিক্ষা।

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা হল শিক্ষার্থীদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা। যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়, বিশেষ করে বিভিন্ন কার সামাজিক কারণের ফলে সেই সমস্ত শিশুদেরকে শিক্ষার মাধ্যমে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যম।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

8. সক্রিয় অংশগ্রহণ

সক্রিয় অংশগ্রহণ অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার বৈশিষ্ট্য দিক থেকে অন্যতম। কারণ এখানে শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে থাকে। সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশ সাধন সম্ভব হয়।

9. পেশাগত দক্ষতার বিকাশ

অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং কর্মীরা অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা অনুশীলনের সাথে সম্পর্কিত তাদের জ্ঞান এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ এবং পেশাগত দক্ষতার বিকাশ লাভ করে। তাই এই শিক্ষা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করতে পারে।

10. সামাজিক দক্ষতামূলক

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা সামাজিক দক্ষতা এবং মানসিক বুদ্ধিমত্তার বিকাশের উপরও গুরুত্ব আরোপ করে। অর্থাৎ অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সামাজিক বিভিন্ন দক্ষতার বিকাশে সহায়তা করে। তাই সামাজিক দক্ষতামূলক দিক অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার বৈশিষ্ট্য।

বহির্ভূত করণ বলতে কী বোঝো | সামাজিক বহির্ভূত করণের কারণ

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা এই নীতির উপর ভিত্তি করে প্রতিটি শিক্ষার্থীর এমন একটি পরিবেশে মানসম্পন্ন শিক্ষার অধিকার রয়েছে যা তাদের ব্যক্তিত্বকে সম্মান এবং তাদের বৃদ্ধি ও বিকাশকে ত্বরান্বিত করে। তাই এটি একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি যা শ্রেণীকক্ষে শুরু করার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের দিকে এগিয়ে যায়।

তথ্যসূত্র (References)

  • Kar. Chintamani, Exceptional Children Their Psychology and Education. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi.
  • Kirk, S. A. Educating Exceptional Children. Oxford IBH. New Delhi.
  • Mangal, S. K. Educating Exceptional Children: An Introduction to Special Education. PHI Learning Pvt. Ltd. New Delhi.
  • Panda, K. C. Education of Exceptional Children. Vikas Publishing House Pvt. Ltd. New Delhi.
  • Internet sources

প্রশ্ন – অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার উদ্দেশ্য লেখো।

উত্তর – অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল – শিক্ষা সকলের বা সমস্ত শিশুকে সুযোগ প্রদান করা, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের শিক্ষার মূল স্রোতে ফিরিয়ে নিয়ে আসা, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন করা প্রভৃতি।

প্রশ্ন – অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রকারভেদ

উত্তর – অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রকারভেদ গুলি হল – পূর্ণ অন্তর্ভুক্তিকরণ ও আংশিক অন্তর্ভুক্তিকরণ।

আরোও পড়ুন

1 thought on “অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার বৈশিষ্ট্য (10 Main Characteristics of Inclusive Education)”

Leave a Comment

close