Share on WhatsApp Share on Telegram

অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের উপাদান | Elements Necessary for Creating an Inclusive Society

Join Our Channels

জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে যেখানে সকল শ্রেণীর মানুষদের সমস্ত রকম সুযোগ-সুবিধা বর্তমান সেটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ নামে পরিচিত। অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের উপাদান (Elements Necessary for Creating an Inclusive Society) বিভিন্ন প্রকৃতির পরিলক্ষিত হয়।

অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা যেখানে সমাজের সকল শ্রেণীর বা বিভিন্ন ধরনের মানুষের একটি মেলবন্ধন সূচিত হয়। যার ফলে সমাজের সমস্ত নাগরিকদের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা এবং পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া সম্ভবপর হয়ে থাকে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের উপাদান | Elements Necessary for Creating an Inclusive Society

অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজে সকল শ্রেণীর মানুষদের সমান গুরুত্ব বা সময় সুযোগের মধ্য দিয়ে একটি সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা হয়ে থাকে। তাই অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজে প্রতিটি মানুষের মধ্যে সংহতিপূর্ণ মনোভাব সৃষ্টি হয়ে থাকে

অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের উপাদান বিভিন্ন প্রকৃতির ও বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়। সেগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল –

1. গণতান্ত্রিকতা

ভারতবর্ষ গণতান্ত্রিক দেশ। শিক্ষা হবে গণতান্ত্রিক প্রকৃতি অনুযায়ী। অর্থাৎ অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় গণতান্ত্রিকতা নীতি মেনে নিয়ে সকল শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা। তাই অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিকতা একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

2. মানবাধিকার এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা

অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে মানবাধিকার এবং ব্যক্তিস স্বাধীনতার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়ে থাকে। কারণ ব্যক্তির অধিকার যদি খর্ব করা হয় তবে কোনো সমাজ ব্যবস্থা সঠিকভাবে চলতে পারে না। তাই মানবাধিকার এবং ব্যক্তিস স্বাধীনতার প্রতি গুরুত্ব আরোপের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন করা সম্ভব হয়।

3. আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা

আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সমাজের একজন সভ্য নাগরিক হিসেবে বিভিন্ন আইন কানুন মেনে চলা এবং সমাজের সকল ব্যক্তিকে নিয়ে একসঙ্গে বা একত্রে বসবাস করার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। তাই সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন নিয়ম-নীতি, আইন কানুন এবং সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা ও আনুগত্য অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের সহায়ক।

4. সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমসুযোগ

অন্তর্ভুক্তি মূলক সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে সমসুযোগ সৃষ্টি করা বিশেষ প্রয়োজন। কেননা সমাজের মানুষ যদি বিভিন্ন সামাজিক সুযোগ-সুবিধা ও অর্থনৈতিকভাবে বৈষম্যের শিকার হয় তাহলে কোনো সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠা সম্ভব নয়। তাই সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের উপাদান হিসেবে বিশেষ সহায়ক।

5. সর্বজনীন অধিকার নিশ্চিতকরণ

অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে সমাজের সকল ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতা বা সকল ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহণ বিশেষভাবে প্রয়োজন। কারণ মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। একাকী বা এককভাবে কোন সমাজ গঠন হয় না বা হতে পারে না। তাই সার্বজনীন অধিকার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন করা সম্ভবপর হয়।

6. তথ্যের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা

তথ্যের অধিকার বা তথ্য জানার অধিকার সকলের আছে। তাই সামাজিকভাবে যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে সেই সম্পর্কিত তথ্য সমাজে অবস্থিত ব্যক্তিবর্গের সকলের জানা প্রয়োজন। অর্থাৎ তথ্যের অধিকার থেকে যদি বঞ্চিত করা হয় তাহলে সমাজের মানুষ বঞ্চিত থাকবে। তাই তত্ত্বের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে অন্তর্ভুক্তি মূলক সমাজ গঠন করা সম্ভব হয়।

7. সম্পদের সমবন্টন

প্রতিটা সমাজে অর্থনৈতিকভাবে বৈষম্য প্রকট আকারে পরিলক্ষিত হয়। ফলে অর্থনৈতিকভাবে সমাজব্যবস্থা পিছিয়ে থাকে। অর্থাৎ সম্পদের সমবন্টনের অভাবে সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। যা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে অন্তরায় বা বাধাস্বরূপ। তাই অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব সম্পদের সম বন্টন করা বিশেষ প্রয়োজন।

8. বর্ণভেদ বা শ্রেণি বৈষম্য দূরীকরণ

অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে সবথেকে বড় অন্তরায় হল বর্ণবৈষম্য বা শ্রেণি বৈষম্য। তাই কোনো সমাজব্যবস্থায় বর্ণভেদ ও শ্রেণী বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন করা সম্ভব হয়। তাই এটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের উপাদান হিসেবে পরিগণিত।

9. সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব গঠন

অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব গঠন করতে হবে। অর্থাৎ সমাজে যে বিভিন্ন সংস্কৃতি বা ঐতিহ্য রয়েছে সেগুলিকে যথাযথ গুরুত্ব আরোপের মাধ্যমে ও সেগুলি সঞ্চালন ও সংস্করণের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন করা সম্ভব হয়।

10. শিক্ষা

শিক্ষা আনে সমাজের প্রগতি ও উন্নতি। তাই শিক্ষাব্যবস্থা যে কোনো সমাজ ব্যবস্থার উন্নতির হাতিয়ার। সুতরাং শিক্ষার বিস্তার সাধনের মাধ্যমে বা উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন করা সম্ভব হয়। তাই অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের উপাদান হিসেবে শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের উপাদান গুলির মাধ্যমে সমাজের সকল বর্ণের, ধর্মের ও শ্রেণীর মানুষদের এক সূত্রে গ্রথিত করা সম্ভব করা হয়। ফলে সমাজ ব্যবস্থা উন্নত থেকে উন্নততর দিকেএগিয়ে চলে।

তথ্যসূত্র (References)

  • Kar. Chintamani, Exceptional Children Their Psychology and Education. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi.
  • Kirk, S. A. Educating Exceptional Children. Oxford IBH. New Delhi.
  • Mangal, S. K. Educating Exceptional Children: An Introduction to Special Education. PHI Learning Pvt. Ltd. New Delhi.
  • Panda, K. C. Education of Exceptional Children. Vikas Publishing House Pvt. Ltd. New Delhi.
  • Internet sources

প্রশ্ন – অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ কাকে বলে

উত্তর – যে সমাজ ব্যবস্থা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষ একই ধরনের সুযোগ সুবিধা বা সমস্যযোগ লাভ করে তাকে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বলে।

আরোও পড়ুন

Rate this post

Mr. Debkumar – Author and Founder of Edutiips.com

Mr. Debkumar – Author and Founder of Edutiips.com

A dedicated educator with 10+ years of teaching experience, UGC NET Qualified, and holder of MA, B.Ed, and M.Phil in Education (University of Calcutta).

He has authored several books published by Aheli Publication, such as Communication Skills, Aspect of Democratic Citizenship, Sociological Foundation of Education, Computer Applications, Fundamentals of Education, Educational Organization and Planning, and Educational Research.

He is also an active contributor on Quora, where he shares expert insights on education, history, and social issues.

2 thoughts on “অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের উপাদান | Elements Necessary for Creating an Inclusive Society”

Leave a Comment

close