Share on WhatsApp Share on Telegram

অক্ষমতার সংজ্ঞা | অক্ষমতার কারণ আলোচনা | Definition and Causes of Disabilities

Join Our Channels

সমাজে স্বাভাবিক শিশুর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ব্যতিক্রম ধর্মী শিশু পরিলক্ষিত হয়। এদের আবার বিভিন্ন দিক রয়েছে যার মধ্যে অন্যতম হল অক্ষমতা। এই অক্ষমতার কারণ (Causes of Disabilities) বিভিন্নভাবে পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।

ভিন্নতরভাবে সক্ষম শিশুদেরকে বিভিন্ন দিক থেকে অভিহিত করা হয়ে থাকে। যথা – প্রতিবন্ধকতা (Impairment), অক্ষমতা (Disability) এবং বিকলাঙ্গ (Handicap)। এখানে অক্ষমতার সংজ্ঞা ও অক্ষমতার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

অক্ষমতার সংজ্ঞা | Definition of Disabilities

সাধারণভাবে শারীরিকভাবে গঠন বা অঙ্গসংস্থান গত বা পেশিগত কোনো অসুবিধা ব্যক্তি দৈনন্দিন জীবনে বা স্বাভাবিক জীবন যাপনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তখন তাকে বলে অক্ষমতা। অর্থাৎ অক্ষমতা ব্যক্তিকে স্বাভাবিক ব্যক্তির মতো জীবন যাপনে অক্ষম করে তোলে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় – স্বাভাবিক দৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি খালি চোখে দেখতে পায় বা কোনো বইয়ের বিষয় পড়তে পারে কিন্তু অক্ষমতা যুক্ত ব্যক্তি খালি চোখে দেখতে পায় না। উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে বা চশমা দিলে তার সেই সমস্যার সমাধান হতে পারে। এক্ষেত্রে উঠতো ব্যক্তির চোখের অস্বাভাবিক দৃষ্টি শক্তি তার যে স্বাভাবিক জীবন যাপনের পথে বাধা সৃষ্টি করছে সেটি হলো অক্ষমতা।

ব্যক্তির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অক্ষমতা দেখা যেতে পারে। যেমন – দৃষ্টি শক্তিগত অক্ষমতা, শ্রবনগত অক্ষমতা, দর্শনগত অক্ষমতা প্রভৃতি।

অক্ষমতার কারণ বা প্রতিবন্ধীর কারন আলোচনা | Causes of Disabilities

প্রতিবন্ধী শিশুদের ক্ষেত্রে বা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অক্ষমতার কারণ হিসেবে বংশগতি ও পরিবেশের মিশ্র প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তবে গবেষকগণ অক্ষমতার কারণ বা প্রতিবন্ধীর কারণ হিসেবে যে সমস্ত কারণগুলির কথা উল্লেখ করেছেন, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

A. গর্ভকালীন কারণ

ব্যক্তির অক্ষমতার কারণ গুলির মধ্যে গর্ভকালীন কারণ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বিশেষজ্ঞদের মতে অক্ষমতার গর্ভকালীন কারণ এর মধ্যে যে সমস্ত কারণগুলি গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলি হল –

i) গর্ভপাতের লক্ষণ থাকলে বা মায়ের ঘনঘন গর্ভপাতের লক্ষণ বা সম্ভাবনার ফলে অক্ষমতা ঘটতে পারে।

ii) গর্ভকালীন সময়ে সঠিক ট্রিটমেন্ট না করা বা নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ না নেওয়া বা চেকআপ না করানো হলে।

iii) গর্ভাবস্থায় মায়ের পুষ্টির অভাব থাকলে শিশুর মধ্যে অক্ষমতা ঘটতে পারে।

iv) মায়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকলে।

v) মায়ের যৌন রোগ বা কোন কঠিন অসুখ থাকলে। যেমন – মৃগী, হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভারের রোগ, হার্টের রোগ প্রভৃতি।

vi) গর্ভাবস্থায় মা ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে অত্যাধিক ওষুধ সেবন বা ভুল ওষুধ সেবন।

vii) গর্ভকালীন সময়ে মায়ের মাদকদ্রব্য সেবন শিশুর মধ্যে অক্ষমতা দেখা দিতে পারে।

B. জন্ম পরবর্তী কারণ

জন্ম পরবর্তী অসাবধানবশত বিভিন্ন কারণের ফলে শিশুর মধ্যে অক্ষমতা দেখা দিতে পারে। জন্ম পরবর্তী অক্ষমতার যে সমস্ত কারণ বর্তমান, সেগুলি হল –

i) নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে শিশুর জন্ম হলে, শিশুর মধ্যে অক্ষমতা দেখা দিতে পারে

ii) জন্মের সময় শিশুর মধ্যে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিলে

iii) নির্দিষ্ট সময়ের অধিক পরে শিশুর জন্ম হলে, শিশুর মধ্যে অক্ষমতা দেখা দিতে পারে।

iv) জন্মের পরবর্তী সময়ে শিশু যদি অপুষ্টিতে ভোগে, তাহলে শিশুর মধ্যে অক্ষমতা দেখা দেয় বা দেখা দিতে পারে।

v) প্রসবের সময় মায়ের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে।

vi) সিজার বা কৃত্রিম উপায়ে প্রসবের সময় অসাবধানবশত ভুলের ফলে শিশুর মধ্যে অক্ষমতা দেখা দিতে পারে

vii) জন্মের পর শিশু যদি না কাঁদে তাহলে শিশুর মধ্যে ব্যতিক্রমধর্মী লক্ষণ প্রকাশিত হতে পারে।

viii) শিশুর ওজন আড়াই কেজি এর কম হলে বা শিশু প্রি ম্যাচিওর যুক্ত হলে।

ix) শিশুর শরীরে বা মস্তিষ্কে কোনো গুরুতর আঘাত হলে শিশুর মধ্যে অক্ষমতা দেখা দিতে পারে।

C. অন্যান্য কারণ

শিশুদের অক্ষমতার অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে যে সমস্ত কারণগুলি পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল –

i) পিতা-মাতার কোনো বংশগত রোগ থাকলে। যেমন – থ্যালাসেমিয়া।

ii) মা ও শিশুর রক্তের বিষমতা দেখা দিলে। অর্থাৎ RH বিষমতা বা ফ্যাক্টর শিশুর মধ্যে অক্ষমতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই মায়ের রক্তের গ্রুপ ও শিশুর রক্তের গ্রুপ যদি আলাদা হয় এক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে থাকে।

iii) মায়ের বয়স যদি অতিরিক্ত কম (১৬ বছরের কম) বা অতিরিক্ত বেশি (৩৫ বছরের বেশি) হলে শিশুর মধ্যে অক্ষমতা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া কম বয়সে মা হওয়ার ক্ষেত্রে শিশু ও মায়ের উভয়ের ঝুঁকি থাকে।

iv) ঘনঘন ও অধিক সন্তান প্রসবের ফলে পরবর্তী সন্তানের ক্ষেত্রে অক্ষমতা দেখা দিতে পারে।

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, অক্ষমতা যুক্ত শিশুরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে অক্ষম হয়ে থাকে। তবে অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসার মাধ্যমে অক্ষমতা কিছুটা দূরীকরণ করা সম্ভব করা হয়। কিন্তু গুরুতর মাত্রার অক্ষমতার ফলে প্রতিবন্ধকতা বা যাদেরকে আমরা প্রতিবন্ধী বলি সেই প্রকারের অবস্থা সৃষ্টি হয়ে থাকে। ফলে এই সমস্ত শিশুরা বা ব্যক্তিরা সামাজিক অন্তর্ভুক্তিকরনের ক্ষেত্রে বিশেষ বাধার শিকার হয়ে থাকে।

তথ্যসূত্র (References)

  • Kar. Chintamani, Exceptional Children Their Psychology and Education. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi.
  • Kirk, S. A. Educating Exceptional Children. Oxford IBH. New Delhi.
  • Mangal, S. K. Educating Exceptional Children: An Introduction to Special Education. PHI Learning Pvt. Ltd. New Delhi.
  • Panda, K. C. Education of Exceptional Children. Vikas Publishing House Pvt. Ltd. New Delhi.
  • Internet sources

প্রশ্ন – অক্ষমতা কাকে বলে সহজ ভাষায়?

উত্তর – যে সমস্ত ব্যক্তি বা শিশু শারীরিকভাবে বা অঙ্গসংস্থান ভাবে স্বাভাবিক শিশুদের তুলনায় কোন কাজকর্মে অক্ষম, তাকে অক্ষমতা বলে। এর ফলে ব্যক্তি স্বাভাবিক শিশুদের মতো কাজকর্ম করতে পারে না। চিকিৎসার ফলে আবার কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে।

আরোও পড়ুন

Rate this post

Mr. Debkumar – Author and Founder of Edutiips.com

Mr. Debkumar – Author and Founder of Edutiips.com

A dedicated educator with 10+ years of teaching experience, UGC NET Qualified, and holder of MA, B.Ed, and M.Phil in Education (University of Calcutta).

He has authored several books published by Aheli Publication, such as Communication Skills, Aspect of Democratic Citizenship, Sociological Foundation of Education, Computer Applications, Fundamentals of Education, Educational Organization and Planning, and Educational Research.

He is also an active contributor on Quora, where he shares expert insights on education, history, and social issues.

4 thoughts on “অক্ষমতার সংজ্ঞা | অক্ষমতার কারণ আলোচনা | Definition and Causes of Disabilities”

Leave a Comment

close