অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব | Importance of Inclusive Education

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা হল সমাজের সকল শিশুদের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা। আধুনিক বিশ্বে ও শিক্ষাক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব (Importance of inclusive education) অপরসীম।

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের একই সঙ্গে শিক্ষাদান করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ এর জন্য আলাদা কোনো বিদ্যালয় বা শিক্ষালয়ের প্রয়োজন হয় না। অর্থাৎ একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বা অক্ষমতা যুক্ত শিক্ষার্থীদেরও সহজে শিক্ষা দান করা সম্ভবপর হয়। তাই অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব আধুনিক শিক্ষা ক্ষেত্রে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব | Importance of inclusive education

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা হলো এমন শিক্ষা ব্যবস্থা যেখানে স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি প্রতিবন্ধী বা অক্ষমতা যুক্ত শিশুদেরকে শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তি করনের মাধ্যমে একসঙ্গে উপযুক্ত শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা।

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা প্রসঙ্গে Lipsky and Gartner বলেছেন – অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে কোনরকম ভাবে অক্ষম শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত শিক্ষা সহায়ক উপকরণ ও সহায়ক পরিষেবা দেয়ার মাধ্যমে নিকটবর্তী বিদ্যালয়ে বয়স অনুযায়ী শ্রেণীতে প্রবেশের অধিকার প্রদান।

এটি কোনো শিক্ষামূলক কর্মসূচি নয়, বরং একটি ধারণা যে আধুনিক শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষায় সমসুযোগের নীতির উপর গুরুত্ব আরোপ করে গঠিত। বর্তমান বিশ্বে সর্বস্তরের সমাজে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ এর মাধ্যমে একই সঙ্গে সব ধরনের শিশুদেরকে শিক্ষাদান সম্ভবপর হয়।

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

1. উপযুক্ত শিক্ষা প্রদান

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে একই সঙ্গে স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অক্ষমতা যুক্ত বা প্রতিবন্ধকতা যুক্ত শিক্ষার্থীদের সহজে শিক্ষা দান করা সম্ভব। তাই উপযুক্ত শিক্ষা প্রদানে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।

2. শিক্ষায় সমসুযোগ প্রতিষ্ঠা

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষায় সমসুযোগ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ এখানে সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের শিক্ষা মাধ্যমে শিক্ষার সময় সুযোগ দান করার ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

3. অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যালয় গঠন

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যালয় গঠন করা সম্ভব হয়ে থাকে। যেখানে সকল শিক্ষার্থীরা একইসঙ্গে শিক্ষণ শিখনে অংশগ্রহণ করে থাকে।

4. অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে সাহায্য করে। যার ফলে অক্ষমতা যুক্ত শিক্ষার্থীরা সহজেই সমাজের সঙ্গে অভিযোজনে অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে একজন সদস্য হিসেবে পরিচিত লাভ করে। এদিক থেকে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

5. শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা প্রদান

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা প্রদান করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ ভিন্নতর বা অক্ষমতা যুক্ত শিক্ষার্থীদের চাহিদাগুলি অন্তর্ভুক্তি শিক্ষা মাধ্যমে পরিপূরণ করা সম্ভব।

6. বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সমবন্টন

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সম বন্টন করা সম্ভব। এখানে যেহেতু সমাজের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা সুযোগ পায়, ফলে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসুযোগ সুবিধার সমবন্টন করা সহজসাধ্য হয়। তাই সুযোগ সুবিধার সম বন্টনের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব বর্তমান।

7. বিভিন্ন শিক্ষা সহায়ক উপকরণের ব্যবহার

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষা সহায়ক উপকরণের ব্যবহার করা হয়। কারণ স্বাভাবিক শিশুদের পাশাপাশি বিশেষ অক্ষমতাযুক্ত শিশুদের শিক্ষাদান করার জন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন শিক্ষা সহায়ক উপকরণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ফলে এর থেকে সমাজের সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে উপকৃত হয়।

8. অক্ষমতা যুক্ত শিক্ষার্থীদের মানসিকতার বিকাশ

অক্ষমতা যুক্ত শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক শিশুদের তুলনায় মানসিকভাবে পিছিয়ে থাকে। কিন্তু অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা স্বাভাবিক শিশুদের পাশাপাশি এই অক্ষমতা যুক্ত শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশের বিশেষভাবে উপযোগী। এদিক থেকে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব বর্তমান।

9. সামাজিকীকরণের সহায়তা

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের সামাজিকীকরণে সহায়তা করা সহজসাধ্য হয়। সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়।

10. স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা

এই শিক্ষার মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষা পাশাপাশি বিভিন্ন বৃত্তি শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়, ফলে শিক্ষার্থীরা এর মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব বর্তমান।

11. সামাজিক গুণাবলীর বিকাশ

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সামাজিকীকরণের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক গুনাবলির বিকাশ সাধনে সহায়তা করা সম্ভব হয়।

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, বর্তমান দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। সামাজিক, মানসিক সমস্ত বাধা দূরে সরিয়ে রেখে বিভিন্ন অক্ষমতা যুক্ত শিশুদের একই ছাদের তলায় স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষা প্রদান ও তাদের যথাযথ বিকাশ সাধনের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার যে ধারণা আধুনিক শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গৃহীত হয় প্রশংসার দাবি রাখে।

তথ্যসূত্র (References)

  • Kar. Chintamani, Exceptional Children Their Psychology and Education. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi.
  • Kirk, S. A. Educating Exceptional Children. Oxford IBH. New Delhi.
  • Mangal, S. K. Educating Exceptional Children: An Introduction to Special Education. PHI Learning Pvt. Ltd. New Delhi.
  • Panda, K. C. Education of Exceptional Children. Vikas Publishing House Pvt. Ltd. New Delhi.
  • Internet sources

প্রশ্ন – অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার দুটি গুরুত্ব

উত্তর – অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার দুটি গুরুত্ব হল – শিক্ষায় সমসুযোগ সৃষ্টি করা এবং প্রতিবন্ধী বা অক্ষমতা যুক্ত শিশুদেরকে উপযুক্ত শিক্ষা প্রদান করা।

প্রশ্ন – ভারতে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব?

উত্তর – আধুনিক শিক্ষায় ভারতে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব অপরসীম। ভারতে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব হল স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অক্ষমতা যুক্ত শিক্ষার্থীদের বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা করা। যাতে যাতে শিক্ষার্থীদের মানসিক, সামাজিক গুণাবলীর বিকাশ সাধন করা সম্ভব হয়।

আরোও পড়ুন

1 thought on “অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব | Importance of Inclusive Education”

Leave a Comment

close