শারীরিক অক্ষমতা যুক্ত শিশুদের মধ্যে অন্যতম অক্ষমতা হল দৃষ্টিহীন। সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য (Main Objective of Education for Blind Children) বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সমাজে দৃষ্টিহীন শিশুরা অবহেলিত, শোষিত হতো। কিন্তু আধুনিক শিক্ষায় আধুনিক সমাজে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দৃষ্টিহীন শিশুদেরকে শিক্ষার মাধ্যমে সমাজ উপযোগী করে গড়ে তোলা প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। অর্থা দৃষ্টিহীন আজকের দিনে সামাজিক বোঝা নয়। বরং তারা শিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের জীবনধারণ করতে পারছে।
দৃষ্টিহীন শিশু
যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা বা শিশুরা চোখে দেখতে পায় না তাদেরকে দৃষ্টিহীন হিসাবে গণ্য করা হয়ে থাকে। তারা আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে দৃষ্টিহীন শিশুদেরকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয় ও সংজ্ঞায়িত করা হয়।
Social Security Act (1935) অনুসারে – যে সমস্ত ব্যক্তিরা স্বাভাবিক চোখে বা লেন্স ব্যবহার করার পরেও ব্যক্তির ভিজুয়াল অ্যাকুইটি 20/200 বা তার কম বা 20/200 এর বেশি, কিন্তু ব্যক্তির ভালো চোখে দৃষ্টির ক্ষেত্রে 20 -এর বেশি নয়, তখন তাকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বলে।
দৃষ্টিহীন শিশুদেরকে দৃষ্টিহীনতার মাত্রা অনুযায়ী বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়ে থাকে, সেগুলি হল –
i) সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন,
ii) আংশিক দৃষ্টিহীন,
iii) জন্মগতভাবে দৃষ্টিহীন
iv) অর্জিত দৃষ্টিহীন বা অন্যান্য কারণে দৃষ্টিহীন।
দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য | Main Objective of Education for Blind Children
আধুনিক শিক্ষা ক্ষেত্রে দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষার প্রতি অধিক গুরুত্ব আরোপিত হয়েছে। অর্থাৎ দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষার যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে তাদের সমাজে উপযোগী করে গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। তাই দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য গুলি যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –
1. শিক্ষায় সমসুযোগ সৃষ্টি
আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য হল শিক্ষায় সমসুযোগ সৃষ্টি করা. অর্থাৎ সকলের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা। আর দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে শিক্ষায় সমসুযোগ সৃষ্টি করাই হলো দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য।
2. সমাজের মূল স্রোতে নিয়ে আসা
স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষার মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনাই হলো শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য। অর্থাৎ দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে এবং উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে তাদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা।
3. সমাজ-উপযোগী করে গড়ে তোলা
উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে দৃষ্টিহীন শিশুরা সমাজে একজন সদস্য হিসাবে গড়ে উঠতে পারে। অর্থাৎ দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে তাদের সমাজ উপযোগী করে গড়ে তোলা শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য।
5. বৃত্তি শিক্ষা প্রদান
দৃষ্টিহীনদের শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হল বৃত্তি শিক্ষা প্রদান করা। কারণ বৃত্তি শিক্ষা হল এমন শিক্ষা ব্যবস্থা যার মাধ্যমে প্রতিটা শিক্ষার্থী স্বাবলম্বী হয়ে গড়ে উঠতে সক্ষম হয় এবং ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য যেকোনো বৃত্তিতে অংশগ্রহণ করতে পারে।
6. আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলা
উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলা সম্ভব হয়। অর্থাৎ শিক্ষার মাধ্যমে দৃষ্টিহীন শিশুদের সমাজের বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয় । ফলে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগ্রত হয়।
7. পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে সংহতি সাধন
পরিবেশ সর্বদা পরিবর্তনশীল। আর এই পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে টিকে থাকতে হলে শিক্ষার প্রয়োজন বর্তমান। তাই স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি প্রতিবন্ধী শিশু হিসেবে অন্ধ শিশুদের বা দৃষ্টিহীন শিশুদের উপযুক্ত শিক্ষার মধ্য দিয়ে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে সঙ্গতি সাধন করতে সাহায্য করা হয়।
8. যথাযথ মনোভাব গড়ে তোলা
মানসিকতার বিকাশ বা যথাযথ মনোভাব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বর্তমান। কারণ যে-কোনো সমাজব্যবস্থায় প্রতিবন্ধী বা দৃষ্টিহীন শিশুদেরকে ভালো চোখে দেখা হয় না। তারা সবসময় অবহেলার পাত্র বা অনেক সময় লাঞ্ছিত, বঞ্চিত হয়ে থাকে। তাই উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে যথাযথ মনোভাব গড়ে তোলা সম্ভব হয়। তাই যথাযথ মনোভাব গড়ে তোলা দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য।
9. অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কার বর্জন
দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার দূর করা সম্ভব হয়। প্রাচীনকালে সমাজ ব্যবস্থায় দৃষ্টিহীন শিশুদের কে নিয়ে বিভিন্ন কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার সমসুযোগ বা সকলের জন্য শিক্ষাদানের ফলে সমাজ থেকেই অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার কিছুটা হলেও দূর করা সম্ভব হয়েছে। তাই দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হল সমাজের মধ্যে যাবতীয় অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার বর্জন করা।
উপসংহার (Conclusion)
পরিশেষে বলা যায়, অক্ষমতার প্রকারভেদ গুলির মধ্যে দৃষ্টিহীনতা একটি অন্যতম দিক। দৃষ্টিহীন শিশুরা যদি উপযুক্ত পরিবেশ ও সামাজিকভাবে সমর্থন পায়, তবে তারা নিজেদেরকে যথাযথভাবে বিকশিত করতে সক্ষম হবে। গবেষণা দেখা গেছে দৃষ্টিহীন শিশুরা সাধারণ শিশুদের তুলনায় বুদ্ধিমান হয়ে থাকে। তাই তাদের উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে স্বাভাবিক মানুষের মত জীবন ধারণের সহায়তা করাই হলো শিক্ষার একমাত্র উদ্দেশ্য।
তথ্যসূত্র (References)
- Kar. Chintamani, Exceptional Children Their Psychology and Education. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi.
- Kirk, S. A. Educating Exceptional Children. Oxford IBH. New Delhi.
- Mangal, S. K. Educating Exceptional Children: An Introduction to Special Education. PHI Learning Pvt. Ltd. New Delhi.
- Panda, K. C. Education of Exceptional Children. Vikas Publishing House Pvt. Ltd. New Delhi.
- Internet sources
প্রশ্ন – ব্যাহত দৃষ্টি সম্পন্ন শিশু কাদের বলা হয়
উত্তর – শিশুরা স্বাভাবিকভাবে চোখে দেখতে সমস্যা হয় বা স্বাভাবিক দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের তুলনায় দৃষ্টিক্ষমতা1/20 ভাগের কম তাদেরকেই ব্যাহত দৃষ্টি সম্পন্ন শিশু বলা হয়।
প্রশ্ন – আইনগত দৃষ্টিহীন কাদের বলা হয়
উত্তর – আইনগত দৃষ্টিহীন সম্পর্কে Social Security Act (1935) অনুসারে – যে সমস্ত ব্যক্তিরা স্বাভাবিক চোখে বা লেন্স ব্যবহার করার পরেও ব্যক্তির ভিজুয়াল অ্যাকুইটি 20/200 বা তার কম বা 20/200 এর বেশি, কিন্তু ব্যক্তির ভালো চোখে দৃষ্টির ক্ষেত্রে 20 -এর বেশি নয়, তখন তাকে দৃষ্টিহীন বলে।
আরোও পড়ুন
- অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার নীতি | Principles of Inclusive Education
- অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের প্রয়োজনীয়তা | Need for an Inclusive Society
- অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার উপাদান | Elements of Inclusive Education
- অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব | Importance of Inclusive Education
- দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য গুলি কি কি | Main Objective of Education for Blind Children
- মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষাদান পদ্ধতি | Method of Teaching the Deaf and Dumb