অক্ষমতা যুক্ত শিশুদেরকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়ে থাকে। আর এদের মধ্যে অন্যতম হল অটিজম (Autism Disorder)।
বর্তমানে অটিজম একটি গুরুতর সমস্যা। এটি প্রধানত শিশুদের ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয় বা ৩০ মাস বয়সের আগে থেকে শিশুদের মধ্যে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হয়ে থাকে। এখানে অটিজম কি, অটিজমের সংজ্ঞা, কারণ ও প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো।
অটিজম কি
অটিজম একপ্রকার স্নায়বিক অক্ষমতা। সাধারণভাবে কোন শিশু বা ব্যক্তি পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে বা অন্য কোনো ব্যক্তির সাথে ভাবের আদান-প্রদান সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারে না বা সঠিকভাবে যোগাযোগ করতে পারে না, সেই ধরনের প্রতিবন্ধকতাকে বা অক্ষমতাকে অটিজম বলে।
অর্থাৎ অটিজম হল ব্যক্তি বা শিশুর এমন একটি অবস্থা, যার ফলে –
i) অন্য ব্যক্তির ভাব বা ভাষা বুঝতে পারে না,
ii) অন্য ব্যক্তির সাথে ভাবের আরান প্রদান করতে অক্ষম,
iii) সহপাঠী বা অন্য কোনো ব্যক্তির সাথে সহজে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে অক্ষম,
iv) নিজেকে প্রকাশ করতে অক্ষম প্রভৃতি।
অটিজমের সংজ্ঞা
অটিজমের বিভিন্ন সংজ্ঞা পরিলক্ষিত হয়, যথা –
The National Society for Children and Adults with Autism (1977) সংজ্ঞা অনুযায়ী – অটিজম হল একটি জৈবিক উপসর্গ যা সাধারণত কোনো শিশুর ৩০ মাস বয়সের আগেই শুরু হয় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে শিশুর বিকাশের হার, স্নায়বিক সংগঠন, বাচন শক্তি, ভাষার বিকাশ, বৌদ্ধিক বিকাশ এবং কোনো ব্যক্তি বা বস্তু বা ঘটনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।
অটিজমের কারণ
অটিজমের কারন নিয়ে গবেষকদের মধ্যে দ্বিমত লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ অটিজমের সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি।। তবে শিশুদের বা ব্যক্তির ক্ষেত্রে অটিজম বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে, যথা –
i) বংশগত কারণ,
ii) পরিবেশগত কারণ
iii) শিশুর জন্মের আগে ও পরে মস্তিষ্কের সঠিকভাবে বিকাশের অভাব বা অপুষ্টি,
অটিজমের লক্ষণ
অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের বিভিন্ন লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –
i) অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা সহজে অন্যের সাথে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া বা যোগাযোগ করতে পারে না। অর্থাৎ তারা একাকী বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে ভালোবাসে।
ii) অটিজম যুক্ত শিশুদের কল্পনা শক্তি থাকে না। তাই এদের মধ্যে সৃজনশীলতা দেখা যায় না।
iii) যে কোনো বিষয়ে অনাগ্রহ বা আগ্রহ থাকে না।
iv) অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন বা মেলামেশা করতে পারে না।
v) অটিজম যুক্ত শিশুরা বা ব্যক্তিরা বিমূর্ত চিন্তা করতে অক্ষম প্রভৃতি।
অটিজম কত প্রকার | Types of Autism Disorder
প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী অটিজম কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে, যথা –
i) ক্লাসিক অটিজম বা অটিস্টিক ডিজঅর্ডার
এটি অটিজমের অন্যতম প্রকার। এই প্রকার অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভাষাগত বাধা দেখা দেয়। ফলে তারা সামাজিকভাবে মেলামেশা করতে পারে না বা কোনো ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে পারে না।
ii) রেট সিনড্রোম (Rett syndrome)
এই প্রকার অটিজম খুব কম ব্যক্তির মধ্যে দেখা দেয়। অর্থাৎ এটি বিরলতম অটিজম। এর লক্ষণ হল হাতের আঙুলের অস্বাভাবিক অবস্থান, মুখের বিকৃতি প্রভৃতি। ফলে শিশুর মধ্যে আচরণগত সমস্যা দেখা দেয়।
iii) এসপারজার সিন্ড্রোম (Asperger’s syndrome)
এই প্রকার অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মোটামুটি ভাবে সামাজিকভাবে মেলামেশা করতে পারে। অর্থাৎ এদের মধ্যে ভাষার বিকাশ ঘটে তবে জটিল ভাষার ক্ষেত্রেদের অসুবিধা দেখা দেয়। স্বাভাবিক জীবন যাপনের ক্ষেত্রে এই প্রকার অটিজম আক্রান্ত শিশুরা বা ব্যক্তিরা সক্ষম হয়। এসপারজার সিন্ড্রোম শিশুরা বুদ্ধিমান প্রকৃতির হয়ে থাকে।
iv) চাইল্ডহুড ডিসইন্টেগ্রেটিভ ডিসঅর্ডার (CDD)
এই প্রকার অটিজম বিরল প্রকৃতির হয়ে থাকে। সাধারণত দুই থেকে দশ বছরের মধ্যে এই প্রকার অটিজমের লক্ষণগুলি প্রকাশিত হয়। এর ফলে শিশুর আগের অর্জিত দক্ষতা বা সামাজিক দক্ষতা বা ভাষাগত বিকাশ হারিয়ে যায়।
এছাড়াও আরোও কয়েক প্রকার অটিজম পরিলক্ষিত হয়, তা হল –
i) পারভেসিভ ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার (PDD)
ii) ক্যানার সিন্ড্রোম (Kanner’s syndrome)
উপসংহার (Conclusion)
পরিশেষে বলা যায়, অটিজমযুক্ত (Autism Disorder) শিশুদের সামাজিক বিকাশ বা অন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয় না। ফলে ব্যক্তি অন্তর্মুখী প্রকৃতির যেটি অন্যের সঙ্গে সঠিকভাবে আদান-প্রদান করতে ব্যাহত করে। অটিজমযুক্ত শিশুদের আচরণ তাই পারিপার্শ্বিক পরিবেশের বসবাসকারী ব্যক্তিবর্গ সঠিক ভাবে অনুধাবন সহজে পারে না।
তথ্যসূত্র (References)
- Kar. Chintamani, Exceptional Children Their Psychology and Education. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi.
- Kirk, S. A. Educating Exceptional Children. Oxford IBH. New Delhi.
- Mangal, S. K. Educating Exceptional Children: An Introduction to Special Education. PHI Learning Pvt. Ltd. New Delhi.
- Panda, K. C. Education of Exceptional Children. Vikas Publishing House Pvt. Ltd. New Delhi.
- Internet sources
প্রশ্ন – অটিজম কি ভাল হয়
উত্তর – অটিজম পুরোপুরি ভালো হয় না। তবে এটি প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়লে বিভিন্ন চিকিৎসার মাধ্যমে অটিজম থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব। অটিজমের চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে শ্রবণগত প্রশিক্ষণ, সংগীত পদ্ধতি, খেলা ভিত্তিক পদ্ধতি, সমস্যা সমাধানমূলক পদ্ধতি প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন – অটিজম কি কারনে হয়
উত্তর – অটিজম কি কারনে হয় সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট ধারণা বা কারণ জানা যায় না। তবে গবেষকগণ অটিজমের কারণ হিসেবে বংশগতি বা মস্তিষ্কের গঠনগত ত্রুটিকে দায়ী করে থাকেন।
প্রশ্ন – অটিজম কি রোগ
উত্তর – হ্যাঁ, অটিজম একটি রোগ। এটি একটি স্নায়বিক বিকাশজনিত অক্ষমতা।
প্রশ্ন – অটিজম কি ধরনের সমস্যা
উত্তর – অটিজম স্নায়বিক বিকাশ জনিত সমস্যা। এর ফলে শিক্ষার্থীদের ভাষাগত বিকাশ ও মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত হয়। ফলে শিশুর সামাজিকভাবে মেলামেশা করতে পারে না বা সামাজিকীকরণে অংশগ্রহণ করতে পারে না।
প্রশ্ন – অটিজম সর্বপ্রথম নামকরন করা হয় কত সালে?
উত্তর – ১৯৩৮ সালে অটিজম সর্বপ্রথম নামকরণ করা হয়।
প্রশ্ন – অটিজমের লক্ষণ কি কি?
উত্তর – অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে যে সমস্ত লক্ষণ বর্তমান সেগুলি হল – কল্পনাশক্তি না থাকা বা চিন্তন ক্ষমতা না থাকা, অন্যের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে না পারা, কোনো বিষয়ে আগ্রহ না থাকা প্রভৃতি।
প্রশ্ন – অটিজম জিন কে বহন করে মা নাকি বাবা?
উত্তর – অটিজম কোনো একটি নির্দিষ্ট জিন দ্বারা বাহিত নয়। তাই বাবা-মা উভয়ই অটিজমের জিন বহন করে থাকে।
প্রশ্ন – অটিজম কি পিতৃপক্ষ থেকে আসে?
উত্তর – অটিজম শুধু পিতৃপক্ষ থেকে আসে না। বরং মাতৃপক্ষ থেকেও আসতে পারে।
আরোও পড়ুন
- অন্তর্ভুক্তিকরণের বাধা সমূহ | Barriers to Inclusion
- তপশিলি জাতি ও উপজাতি কাকে বলে | Concept of Scheduled Castes and Tribes
- বহু কৃষ্টি মূলক সমাজের জন্য শিক্ষার ভূমিকা | Role of Education for a Multicultural Society
- শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য শিক্ষার ভূমিকা | Role of Education for Peaceful Coexistence
- বাধামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে সমাজের ভূমিকা | Role of Society in Creating Barrier Free Environment
- বাধামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে বিদ্যালয়ের ভূমিকা | Role of School in Creating a Barrier Free Environment