বিশ্বায়ন হল আধুনিকতম ধারণা। বিশ্বায়নের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর সকল দেশের সকল মানুষের মধ্যে একসঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করা সম্ভব তাই বিশ্বায়নের প্রকৃতি (Nature of Globalization) ব্যাপক এবং বিস্তৃত।
বিশ্বায়ন কাকে বলে | Definition of Globalization
১৯৮০ সালে সমগ্র বিশ্বব্যাপী বৈজ্ঞানিক গবেষণার ধারাবাহিকতা বৃদ্ধি পায়। আর এই সময় থেকে ‘বিশ্বায়ন’ (Globalization) শব্দটি ব্যবহার শুরু হয় এবং জনপ্রিয়তা লাভ করে থাকে।
ভারতবর্ষে বিশ্বায়নের ধারণার ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখা যায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা ভাবনার মধ্যে। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিকতাবাদ বা বিশ্বায়নকে স্বাগত জানিয়েছে।
বিশ্বায়নের বিভিন্ন সংজ্ঞা বর্তমান তার মধ্যে অন্যতম হল –
i) Ronald Robertson বলেছেন – বিশ্বায়ন হলো একটি ধারণা, যা বিশ্বের মধ্যে সংযুক্তিকরণ এবং সামগ্রিকভাবে বিশ্বচে চেতনার দৃঢ়করণ করতে সহায়তা করে।
ii) A. Giddens বলেছেন – বিশ্বায়ন হল বিশ্বজুড়ে সম্পর্কগুলির সুদৃঢ়করণ, যা দূরবর্তী অঞ্চলগুলিকে সংযোগ করে। যার ফলে আঞ্চলিক ঘটনাগুলি বহু দূর অবস্থিত কোন দেশের ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত হয়।
বিশ্বায়নের প্রকৃতি | Nature of Globalization
বিশ্বায়ন হল সারা বিশ্ব জুড়ে মানুষের মধ্যে সামাজিক সম্পর্কগুলির দৃঢ়করন এবং সংযোগ সাধন যার ফলে বহু দূর অবস্থিত কোনো দেশের মানুষরা সহজে অন্য দেশের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করতে পারে।
বিশ্বায়নের প্রকৃতি আলোচনা করলে যে সমস্ত দিক পরিস্ফুট হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –
i) বিশ্বায়ন হল পারস্পারিক সহযোগিতামূলক। অর্থাৎ এর ফলে সারা বিশ্বের মানুষ পরস্পরের সাথে পরস্পরের সুসম্পর্কের মাধ্যমে সহযোগিতা স্থাপন করে থাকে।
ii) বিশ্বায়ন সামাজিক সম্পর্কগুলির মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা সম্প্রসারণ করে থাকে। অর্থাৎ বিশ্বায়ন মানুষের সাথে মানুষের পারস্পরিক বন্ধনকে অটুট করে তোলে।
iii) বিশ্বায়নের ফলে মানুষের মধ্যে আঞ্চলিকতা দূরীকরণ করা বা দূরকে কাছে করা সম্ভবপর হয়। তাই বিশ্বায়ন দূরকে নিকট করার একটি বিশেষ দিক।
iv) বিশ্বায়ন আর্থিক দিকের বিকাশ সাধন করে থাকে। তাই বিশ্বায়নের প্রকৃতির মধ্যে অর্থনৈতিক দিক একটি অন্যতম দিক। অর্থাৎ অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে বিশ্বায়ন সংগঠিত হয়ে থাকে। এর ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়।
v) সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা দূর করার মাধ্যমে বিশ্বায়ন বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির মধ্যে একটি যোগসূত্র স্থাপন করতে সহায়তা করে। বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতিকে বিশ্বায়ন বিশেষভাবে বিশ্বের দরবারে বিভিন্ন মানুষের কাছে উপস্থাপন করে থাকে।
ফলে মানুষ বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সাথে পরিচয় লাভ করে ও তাদের মধ্যে ভাবের আদান প্রদান করে থাকে। অর্থাৎ বিশ্বায়নের ফলে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঞ্চালন ও সংরক্ষণ হয়ে থাকে।
vi) বিশ্বায়ন বর্তমান সভ্যতা, ধ্যান-ধারণা,, বিভিন্ন নিয়ম নীতি বা রীতিনীতি প্রভৃতিকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে থাকে।
vii) বিশ্বায়ন একটি বহুমুখী সামাজিক প্রক্রিয়া হিসেবে গণ্য করা হয়। অর্থাৎ বিশ্বায়নের প্রকৃতি হল সামাজিক বহুমুখীনতা। তাই সামাজিক বহুমুখীনতা হিসাবে বিশ্বায়ন সামাজিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সামাজিক নির্ভরশীলতা সম্প্রসারিত করে থাকে।
উপসংহার (Conclusion)
পরিশেষে বলা যায়, বিশ্বায়ন হল সারা বিশ্বের মানুষের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করা। তাই বিশ্বায়নের ফলে মানুষের জীবনযাত্রার আমুল পরিবর্তন সাধন সম্ভবপর হচ্ছে। বিশ্বায়ন একদিকে যেমন মানুষের সাথে মানুষের যোগসূত্র স্থাপনের সম্ভব গড়ে তুলছে, অন্যদিকে তেমনি বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নতির দিকের পথকেও প্রশস্ত করে তুলছে।
প্রাথমিক গোষ্ঠীর ধারণা, সংজ্ঞা, বৈশিষ্ঠ্য ও শিক্ষাগত তাৎপর্য | সামাজিক গোষ্ঠীর ধারণা, সংজ্ঞা ও শ্রেণীবিভাগ |
শিশুর সামাজিকীকরণে পরিবারের ভূমিকা | শিশুর সামাজিকীকরণে বিদ্যালয়ের ভূমিকা |
তথ্যসূত্র (Reference)
- Brown, F. J. (1954). Educational Sociology. New York: Prentice-Hall.
- Bhattacharjee, Srinivas. (1996). Philosophical & Sociological Foundation of Education. Herald book service.
- Das, P. (2007). Sociological Foundation of Education. New Delhi: Authorspress
- Shukla, S & K Kumar. (1985). Sociological Perspective in Education. New Delhi, Chanakya
Publications - Sodhi, T.S & Suri, Aruna. (1998). Philosophical & Sociological Foundations of Education, H.P Bhargav Book House, Agra,
প্রশ্ন – বিশ্বায়ন বলতে কী বোঝ?
উত্তর – বিশ্বায়ন হল সারা বিশ্বের মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন বা পারস্পরিক যোগাযোগ স্থাপন করা। এর ফলে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানুষ অন্য কোনো প্রান্তে থাকা মানুষের সাথে সহজে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। তাই বিশ্বাস হলো বিভিন্ন দেশের মানুষ এবং সরকারের সাথে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেদের উন্নতি সাধন করা।
প্রশ্ন – ভারতে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয় কত সালে?
উত্তর – ভারতবর্ষে বিশ্বায়নের ধারণার ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখা যায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা ভাবনার মধ্যে। তবে ভারতে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ১৯৯১ সালে।
আরোও পড়ুন
- যোগাযোগ কাকে বলে | যোগাযোগ প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য | What is Definition of Communication
- যোগাযোগ প্রক্রিয়ার উপাদান | 8 Essential Components of Communication
- শিক্ষার সমাজতত্ত্বের পরিধি | Scope of Sociology of Education
- সামাজিক স্তরবিন্যাস কি | সামাজিক স্তরবিন্যাসের ধরন | Types of Social Stratification
- Social Mobility: সামাজিক সচলতা কাকে বলে | সামাজিক সচলতার বৈশিষ্ট্য
- Types of Social Mobility: সামাজিক সচলতার প্রকারভেদ