Communication -এর বাংলা অর্থ হল – যোগাযোগ বা যোগাযোগ স্থাপন করা। যোগাযোগ হল একে অপরের মধ্যে ভাব বা মতামত আদান প্রদানের উপায়। এই ভাব বা মতামত মানুষ থেকে মানুষ বা যন্ত্র থেকে যন্ত্রে আদান প্রদান হতে পারে।
সমাজ জীবনে যোগাযোগ ব্যবস্থার উদ্ভব হয়েছে, একে অপরের মধ্যে প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে। প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত মানুষের জীবনধারার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মানুষের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ করার প্রবণতা সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে।
যোগাযোগ কাকে বলে
প্রাচীনকালে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে মুখোমুখি ভাবের আদান প্রদান বা চিঠিপত্র আদান প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমান আধুনিক সভ্যতার যুগে সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিবিদ্যার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ফলে আধুনিক সমাজব্যবস্থায় যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত ও সহজতর হয়েছে।
ইংরাজী ‘Communication’ (যোগাযোগ) শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ‘Communicare’ থেকে এসেছে, যার অর্থ হল – ‘to share’ or ‘to be in relation with’ অর্থাৎ ভাগ করা বা সাধারণ করা। তাই যোগাযোগ হল দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা সাধারণ তথ্য বা ভাবের আদান প্রদান করা।
যোগাযোগ ব্যবস্থা মাধ্যমে প্রতিটা ব্যক্তি একে অপরের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যমে পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
যোগাযোগের সংজ্ঞা (Definition of Communication)
যোগাযোগ হল সাধারণত তথ্যের আদান প্রদান (Transmission of information)। যোগাযোগের যে সকল সংজ্ঞা বর্তমান, সেগুলি হল –
1. এডগার ডেল (Edger Dale) বলেছেন – “Communication is defined as the sharing of ideas and feelings in a mood of mutuality.” অর্থাৎ যোগাযোগ হল পারস্পরিক অভিজ্ঞতা এবং অনুভূতিগুলি বিনিময় করা।
2. ব্রাউন (G. G. Brown) – এর মতে, “Communication is transfer of information from one person to another, whether or not it elicits confidence. But the information transferred must be understandable to the receiver.” অর্থাৎ যোগাযোগ হল এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে তথ্য স্থানান্তর, তা আত্মবিশ্বাস তৈরি করে বা না করে। কিন্তু স্থানান্তরিত তথ্য প্রাপকের কাছে বোধগম্য হতে হবে।
3. ডিউই (Dewey) – এর মতে, “Communication is a process of sharing experience till it becomes a common possession.” অর্থাৎ যোগাযোগ হল পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্রক্রিয়া, যতক্ষণ না উভয়ের অভিজ্ঞতা সমান হয়।
তাই যোগাযোগ হল দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে পারস্পরিক কোনো তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে বা ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যমে পারস্পরিক মতামত বিনিময় করা।
আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now |
যোগাযোগ প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য
যেকোনো ব্যক্তির কাছে যোগাযোগ একটি অপরিহার্য দিক। যোগাযোগ ছাড়া কোন ব্যক্তির সাথে অন্য কোন ব্যক্তির ভাবের আদান-প্রদান সম্ভব নয়। তাই যোগাযোগ মানব সমাজের একটি অপরিহার্য বিষয়।
যোগাযোগকে বিশ্লেষণ করলে যোগাযোগের যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় সেগুলি নিম্নলিখিত –
1. নির্দিষ্ট লক্ষ্যমুখী বা উদ্দেশ্যমুখী
যোগাযোগ একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যমুখী প্রক্রিয়া। অর্থাৎ যেকোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে সংগঠিত হয়ে থাকে।
2. দ্বিমুখী প্রক্রিয়া
যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্বিমুখী (two-way) প্রক্রিয়া। কারণ একমুখীভাবে যোগাযোগ কখনোই সম্ভবপর নয়। অর্থাৎ যোগাযোগ হল দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে পারস্পরিক তথ্য আদান-প্রদানের প্রক্রিয়া।
সুতরাং যোগাযোগ প্রক্রিয়া দ্বিমুখীভাবে সম্পন্ন হয়ে থাকে।
3. সুনির্দিষ্ট মাধ্যমযুক্ত প্রক্রিয়া
যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি সুনির্দিষ্ট মাধ্যম (Channel) অবস্থিত। তাই যেকোন যোগাযোগ ব্যবস্থা একটি সুনির্দিষ্ট মাধ্যমের মাধ্যমে সংগঠিত হয়। কারণ মাধ্যম ছাড়া যোগাযোগ কখনোই সম্ভব নয়।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় – দুজন ব্যক্তি মোবাইলের মাধ্যমে কথা বলছে। এখানে যোগাযোগের মাধ্যম হল মোবাইল।
4. বাচনিক ও অবাচনিক প্রকৃতির
যোগাযোগ বাচনিক (Verbal) বা অবাচনিক (Non-verbal) প্রকৃতির। এটি যোগাযোগের দুটি শ্রেণি। বাচনিক যোগাযোগে শব্দ বা সংকেত ভাষার মাধ্যমে আদান-প্রদান হয়ে থাকে।
আবার অবাচনিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোন ভাষা ব্যবহার করা হয় না। অঙ্গভঙ্গি বা মুখের অভিব্যক্তির দ্বারা এই বাচনিক যোগাযোগ সম্পন্ন হয়ে থাকে।
5. তথ্য নির্ভর প্রক্রিয়া
যোগাযোগ তথ্য নির্ভর প্রক্রিয়া। অর্থাৎ যোগাযোগের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্যের আদান-প্রদান হয়ে থাকে। তাই যোগাযোগ যে কোনো তথ্যকে কেন্দ্র করে সংগঠিত হয়।
6. ব্যক্তিগত বা দলগত প্রকৃতির
যোগাযোগ ব্যক্তিগত (Personal) বা দলগত (Group) উভয় প্রকৃতির। অর্থাৎ যোগাযোগ ব্যবস্থা একদিকে যেমন ব্যক্তিগত প্রকৃতির। অর্থাৎ এখানে ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্যের আদান প্রদান হয়ে থাকে।
আবার অন্যদিকে দলগত প্রকৃতির। অর্থাৎ এখানে দলগত কাজের জন্য বিভিন্ন তথ্যের আদান প্রদান হয়ে থাকে।
উপসংহার
তাই বলা যায়, বিভিন্ন আধুনিক যোগাযোগের মাধ্যম যেমন – বেতার (Radio), দূরদর্শন (Television), সংবাদপত্র (Newspaper), ইন্টারনেট (Internet), কম্পিউটার (Computer), মোবাইল বা দূরভাষ (Mobile) এবং বিভিন্ন প্রকার সোশ্যাল মিডিয়া যেমন -ফেসবুক (Facebook), ট্যুইটার (Twitter), হোয়াটস্ অ্যাপ (Whats App), ব্লগ (Blog), ই-মেইল (e-mail) প্রভৃতি ব্যবহারে সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থা আরোও সহজ ও দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে,
তথ্যসূত্র – Click Here
প্রশ্ন – যোগাযোগ কি এবং এর বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – যোগাযোগ হল পারস্পরিক অভিজ্ঞতা এবং অনুভূতিগুলি বিনিময় করা।
এর বৈশিষ্ট্য হল –
১. যোগাযোগ একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যমুখী প্রক্রিয়া,
২. যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্বিমুখী (two-way) প্রক্রিয়া,
প্রশ্ন – যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম কি?
উত্তর – যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হল ভাষা (language).
প্রশ্ন – লিখিত যোগাযোগ কি?
উত্তর – লেখার মাধ্যমে মনের ভাব আদান প্রদানকে লিখিত যোগাযোগ বলে । যেমন – চিঠিপত্র আদান-প্রদান
আরোও পড়ুন
- যোগাযোগ কাকে বলে | যোগাযোগ প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য | What is Definition of Communication
- যোগাযোগ প্রক্রিয়ার উপাদান | 8 Essential Components of Communication
- শিক্ষার সমাজতত্ত্বের পরিধি | Scope of Sociology of Education
- সামাজিক স্তরবিন্যাস কি | সামাজিক স্তরবিন্যাসের ধরন | Types of Social Stratification
- Social Mobility: সামাজিক সচলতা কাকে বলে | সামাজিক সচলতার বৈশিষ্ট্য
- Types of Social Mobility: সামাজিক সচলতার প্রকারভেদ