শিক্ষা কি | শিক্ষার 15 টি সংজ্ঞা (Concept and Best Definition of Education)

শিক্ষা হল শিশুকে সতত পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া। তাই শিক্ষার সংজ্ঞায় (Definition of Education) বলা হয়েছে – শিক্ষা হল ব্যক্তি বা শিশুর মনের পরিপূর্ণ বিকাশের প্রক্রিয়া যা তাকে পরম নৈতিক ও বৌদ্ধিক মূল্যবোধ বিকাশে সাহায্য করে।

শিক্ষা হল শিশুর আচরণ সংশোধনের মাধ্যমে সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন করা। শিক্ষার দুটি অর্থ যথা – সংকীর্ণ অর্থ ও ব্যাপক অর্থ। সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা হল গতানুগতিক ও পুঁথিকেন্দ্রিক শিক্ষা। আর ব্যাপক অর্থে শিক্ষা হল শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ সাধনের জন্য শিক্ষা। এই শিক্ষা শিশুর সারা জীবনব্যাপী চলতে থাকে।

শিক্ষার সংজ্ঞা (Definition of Education)

শিক্ষা কি (What is education?)

শিক্ষা হল শিশুর সর্বাঙ্গীণ বিকাশসাধন করা। অর্থাৎ শিক্ষা হল শিশুকে সর্বাঙ্গীণ বিকাশ সাধনের মধ্য দিয়ে সমাজ উপযোগী করে গড়ে তোলা।

শিক্ষা সম্পর্কে বিভিন্ন শিক্ষাবিদ গণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষা কে ব্যাখ্যা করেছেন। এখানে শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন শিক্ষাবিদদের মতবাদ ও সংজ্ঞা উল্লেখ করা হল –

1. উপনিষদ অনুযায়ী শিক্ষা

শিক্ষা হল এমন প্রক্রিয়া যেটি মানুষকে সংস্কারমুক্ত করে তোলে।

2. ঋগ্বেদ অনুযায়ী শিক্ষা

শিক্ষা হল এমন প্রক্রিয়া যা ব্যক্তিকে আত্মনির্ভরশীল ও স্বার্থশূন্য করে গড়ে তোলে।

3. স্বামী বিবেকানন্দের মতে শিক্ষা

বিবেকানন্দের মতে শিক্ষা হল – শিশুর অন্তর্নিহিত সত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন। (“Education is the manifestation of the perfection already in man.”)

4.গান্ধিজির মতানুযায়ী শিক্ষার সংজ্ঞা

গান্ধিজির মতে শিক্ষার সংজ্ঞা (Definition of Education) হল -“By education, I mean an all-round drawing out of the best in child and man -body, mind and spirit.” অর্থাৎ শিশুর দেহ, মন ও আত্মার সুষম বিকাশ সাধন।

5. অ্যারিস্টটলের মতানুযায়ী শিক্ষার সংজ্ঞা

অ্যারিস্টটলের মতানুযায়ী শিক্ষার সংজ্ঞা হল – “Education is the creation of a sound mind in a sound body.” অর্থাৎ শিক্ষা হল সুস্থ শরীরে সুস্থ মনের সৃষ্টি করা।

6. রবীন্দ্রনাথের মতানুযায়ী শিক্ষার সংজ্ঞা

রবীন্দ্রনাথের মতানুযায়ী শিক্ষার সংজ্ঞা হল – ‘তাকেই বলি শ্রেষ্ঠ শিক্ষা, যা কেবল তথ্য পরিবেশন করে না, যা বিশ্বসত্তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবন গড়ে তোলে’।

7. ঋষি অরবিন্দ মতে শিক্ষা

ঋষি অরবিন্দ বলেছেন – মানুষ যে বিকাশমান আত্মসত্তার অধিকারী, তার সুষম বিকাশ সাধন হল শিক্ষা।

8. জন ডিউই (John Dewey) মতে শিক্ষা

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ্‌ জন ডিউই (John Dewey) বলেছেন – শিক্ষা হল অভিজ্ঞতার অবিরাম পুনর্গঠনের মাধ্যমে জীবনযাপনের প্রক্রিয়া।

9. মন্টেগু (Montague) -র মতে শিক্ষা

শিক্ষা হল মানুষের বিভিন্ন প্রকার মানসিক শক্তির বিকাশ সাধন ও উপযুক্তভাবে অনুশীলন করা।

10. রুশোর (Rousseau) মতে শিক্ষা

শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষার জনক রুশো বলেছেন – শিক্ষা হল শিশুর স্বতঃস্ফূর্ত আত্মবিকাশ, যেটি মানব সমাজের সমস্ত কৃত্রিমতা বর্জিত একটি স্বাভাবিক মানুষ তৈরিতে সহায়ক।

11. প্লেটোর মতে শিক্ষা

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্লেটো বলেছেন – শিক্ষা হল এমন একটি ধারণাশক্তি, যেটি সঠিক মুহূর্তে আনন্দ ও বেদনা অনুভবে ব্যক্তিকে সাহায্য করে। শিক্ষা শিক্ষার্থীদের দেহ মনের সৌন্দর্য এবং অন্তর্নিহিত পূর্ণতাকে বিকশিত করে থাকে।

12. হার্বাট স্পেন্সার -এর মতে শিক্ষা

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হার্বাট স্পেন্সার বলেছেন – শিক্ষা হল পরিপূর্ণ জীবন যাপনের প্রক্রিয়া।

13. ফ্রয়েবেলের মতে শিক্ষা

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেল শিক্ষা সম্পর্কে বলেছেন – শিক্ষা হলো সেই বিকাশমান প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ব্যক্তি প্রকৃতির রাজ্যে নিজের বিস্তৃতি ঘটায় এবং মানব সমাজের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করে বা মানিয়ে নেয়।

14. কমেনিয়াস -এর মতে শিক্ষা

শিক্ষা সম্পর্কে কমেনিয়াস বলেছেন – শিক্ষা হল ব্যক্তির নৈতিক বিকাশের সাহায্যে ইহলোক ও পরলোকের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত করা। যেটি ব্যক্তিকে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। তিনি আরো বলেন – শিক্ষা ছাড়া ব্যক্তি বন্যপ্রাণী, বুদ্ধিহীন পশু বা বন্য ঝোপের পর্যায়ে থেকে যাবে।

15. জন অ্যাডামস -এর মতে শিক্ষা

জন অ্যাডামস বলেছেন – শিক্ষা হল একটি সচেতন এবং ঐচ্ছিক প্রক্রিয়া, যার দ্বারা একজন ব্যক্তি যোগাযোগ ও জ্ঞান নিয়ন্ত্রণের দ্বারা অন্য একজন ব্যক্তির বিকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

তাই বিভিন্ন শিক্ষাবিদের সংজ্ঞা গুলি বিশ্লেষণ করে বলা যায়, শিক্ষা হল শিশুর সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন যেমন – দৈহিক, মানসিক প্রাক্ষোভিক, আধ্যাত্মিক, চারিত্রিক, সামাজিক প্রভৃতি।

শিক্ষা’ এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ

ইংরাজী ‘Education’ শব্দটি চারটি লাতিন শব্দ থেকে এসেছে, যথা –

  • ‘Educare’ যার অর্থ হল – পরিচর্যা বা প্রতিপালন করা (to nourish, to bring up)।
  • ‘Educere’ যার অর্থ হল – নির্দেশনা দেওয়া (to lead out) বা নিষ্কশন করা (to draw out)।
  • ‘Educatum’ যার অর্থ হল – শিক্ষাদানের কাজ (act of teaching training)।
  • Educo’ যার অর্থ হল – বাইরে নিয়ে আসা (to lead out)।

শিক্ষার সংকীর্ণ ও ব্যাপক অর্থ (Narrow and Broader Concept of Education)

শিক্ষার অর্থকে বিশ্লেষণ করলে এটি দুটি অর্থ পাওয়া যায়। যথা –

i) শিক্ষার সংকীর্ণ অর্থ এবং

ii) শিক্ষার ব্যাপক অর্থ।

এই দুটি নিম্নে আলোচনা করা হল –

সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা

সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা হল পুঁথিগত জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানের বিস্তার সাধন করা। এই শিক্ষায় শিক্ষক বা পুস্তক হলেন জ্ঞান ভান্ডার বা সম্পূর্ণ জ্ঞানের উৎস। বিশেষ করে বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে এই শিক্ষা সম্পন্ন হয়ে থাকে ও শিক্ষার্থীরা অর্জন করে।

সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার বৈশিষ্ট্য

সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল –

  • এই শিক্ষা পুঁথিগত,
  • ডিগ্রী অর্জনের প্রক্রিয়া,
  • চার দেওয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ,
  • নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন বর্তমান,
  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা বিদ্যালয় কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা,
  • শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে সম্পর্ক দাতা ও গ্রহীতার।

সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার দুটি তত্ত্বের নাম

সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার দুটি তত্ত্বের নাম হল –

  • স্বর্নকনিকা তত্ত্ব (Gold Sack Theory) এবং
  • পাইপ ও নলের তত্ত্ব (Pipe Line Theory)।

স্বর্নকনিকা তত্ত্ব

সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার একটি অন্যতম দিক হল স্বর্ণকণিকা তত্ত্ব (Gold Sack Theory)। এই তত্ত্ব অনুযায়ী শিক্ষক হলেন জ্ঞানভান্ডার । আর অপরদিকে শিক্ষার্থীরা হল শ্রোতা। অর্থাৎ শিক্ষার্থীর শূন্য মনে জ্ঞানের দ্বারা পূর্ণ করাই হল শিক্ষকের অন্যতম কাজ। তাই সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা স্বর্ণকণিকা তত্ত্ব নামে পরিচিত।

ব্যাপক অর্থে শিক্ষা

যে শিক্ষা প্রক্রিয়া শিশুর সারা জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া তাকে ব্যাপক অর্থে শিক্ষা বলে। এই শিক্ষা হল এমন একটি প্রক্রিয়া, যা জীবনব্যাপী চলতে থাকে বা ব্যক্তির জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ক্রিয়াশীল থাকে।

ব্যাপক অর্থে শিক্ষার বৈশিষ্ট্য

ব্যাপক অর্থে শিক্ষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল –

  • এই শিক্ষা শিশুর সারা জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া,
  • এই শিক্ষা শিশুর চাহিদা ও আগ্রহভিত্তিক,
  • শিক্ষার্থী সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধনার প্রক্রিয়া।

আরোও পড়ুন

শিক্ষার লক্ষ্য (Aims of Education) – ব্যক্তিতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক ও বৃত্তিমূলক লক্ষ্য

1. শিক্ষার দুটি আধুনিক লক্ষ্য লেখো। (Write two modern aims of education.)

শিক্ষার দুটি আধুনিক লক্ষ্য হল –

  • শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য,
  • শিক্ষার বৃত্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক লক্ষ্য।

2. শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য বলতে কী বোঝায়? (What is meant by the socialistic aim of education?)

সমাজকে কেন্দ্র করে শিক্ষার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়, তাকে শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য বলে। শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য অনুযায়ী সমাজই সবকিছু। শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য অনুযায়ী ব্যক্তিকে সমাজ উপযোগী করে গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

3. শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য বলতে কী বোঝায়? (What is meant by the individualistic aim of education?)

সমাজে ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে যে শিক্ষা রচিত হয়, তাকে শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য বলে। শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যে ব্যক্তির অন্তর্নিহিত সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশের উপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ব্যক্তির চাহিদা, সামর্থ্য, প্রবণতা, আগ্রহ প্রভৃতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে শিক্ষা প্রদান করা হয়।

4. শিক্ষার গনতান্ত্রিক লক্ষ্য বলতে কি বোঝো? (What is meant by democratic aim of education?)

শিক্ষার যে লক্ষ্যের মাধ্যমে শিশুর মধ্যে স্বাধীন চিন্তার বিকাশ, মূল্যবোধের বিকাশ, শৃঙ্খলা বোধের বিকাশ ও দেশাত্মবোধ জাগ্রত হয়, তাকে শিক্ষার গণতান্ত্রিক লক্ষ্য বলে।

6. শিক্ষার বৃত্তিমূলক লক্ষ্য বলতে কি বোঝো? (What is meant by Vocational aim of education?)

শিক্ষার বৃত্তিমূলক লক্ষ্য হল শিশুকে ভবিষ্যৎ জীবনের উপযোগী করে গড়ে তোলা। অর্থাৎ যে শিক্ষার মাধ্যমে শিশুকে উপযুক্ত বৃত্তি নির্বাচনে সাহায্য করা ও বৃত্তির উপযোগী করে গড়ে তোলা হয় তাকে, বৃত্তিমূলক শিক্ষা বলে।

Show Book – শিক্ষার প্রাথমিক ভিত্তি স্ক্যানার (Introduction to Education)

তথ্যসূত্র – Click Here

প্রশ্ন – উপনিষদ অনুযায়ী শিক্ষার সংজ্ঞা দাও। (Definition of Education according to Upanishad.)

উত্তর – শিক্ষার সংজ্ঞা উপনিষদে বলা হয়েছে – “Education is that whose end product is salvation” অর্থাৎ শিক্ষা মানুষকে সংস্কারমুক্ত করে গড়ে তোলে।

প্রশ্ন – প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষা কি?

উত্তর – ব্রিটিশ শাসন পর্বে ভারতবর্ষে যে সমস্ত শিক্ষাবিদগণ প্রাচ্য শিক্ষা বিস্তারের পক্ষে ছিলেন ও ভারতীয় শিক্ষার কথা বলেন তাদের প্রাচ্যবাদী বলা হয় এবং সেই শিক্ষাকে প্রাচ্য শিক্ষা বলে। আবার যারা ইংরেজি শিক্ষার পক্ষে বা পাশ্চাত্য শিক্ষার পক্ষপাতিত্ব করেছিলেন তাদের পাশ্চাত্যবাদী বলা হয়। অর্থাৎ ভারতে ইংরেজি শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে জন্য যে শিক্ষা ব্যবস্থা তাকে পাশ্চাত্য শিক্ষা বলে।

প্রশ্ন – পাশ্চাত্য শিক্ষা কি?

উত্তর – ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনকালে শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রাচ্য পাশ্চাত্যের দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়। এই সময় পাশ্চাত্যবাদীরা ইংরেজি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে এবং বলেন শিক্ষা হবে ইংরেজি শিক্ষা আর এই শিক্ষাকে পাশ্চাত্য শিক্ষা বলে। তাই পাশ্চাত্যবাদীদের ইংরেজি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা শিক্ষাকে পাশ্চাত্য শিক্ষা বলা হয়।

প্রশ্ন – শিক্ষা সম্পর্কে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিদদের ধারণা

উত্তর – পাশ্চাত্য শিক্ষা হল পাশ্চাত্যের বিভিন্ন মনীষী বা শিক্ষাবিদদের দ্বারা শিক্ষার বিস্তার সাধন। পাশ্চাত্য শিক্ষা সম্পর্কে অ্যারিস্টটল বলেছেন – শিক্ষা হল সুস্থ দেহে সুস্থ মনের বিকাশ। আবার, ফ্রয়েবেল বলেছেন – শিক্ষা হল অন্তর্নিহিত সুপ্ত সম্ভাবনার বিকাশ সাধন।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close