শিক্ষার কাজ কি | What is the Function of Education

শিক্ষা হল শিশুর সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধনের মাধ্যমে সমাজ উপযোগী করে গড়ে তোলা। তাই শিক্ষার কাজ বহুবিধ। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার কাজ কি (What is the Function of Education) তা নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাবিদগণ বিভিন্ন ধারণা পোষণ করে থাকেন।

তবে কোনো কোনো শিক্ষাবিদগণ মনে করেন শিক্ষা হল ধারাবাহিক অভিজ্ঞতা লাভের প্রক্রিয়া। তাই শিক্ষার কাজও শিক্ষার্থীর বা শিশুর এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়ে থাকে। শিক্ষার কাজ কি তা নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ থাকলেও শিক্ষার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরিলক্ষিত হয় । যেগুলি শিশুকে সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধনের মধ্য দিয়ে সমাজ উপযোগী করে গড়ে তোলে। এখানে শিক্ষার কাজ কি তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হল।

শিক্ষার কাজ কি | What is the Function of Education

শিক্ষার কাজ কি -এ বিষয়ে বিভিন্ন শিক্ষাবিদগণ বিভিন্ন ধারণা পোষণ করেন। আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বা অভিযোজন করার জন্য শিক্ষার কাজকে বিভিন্ন শিক্ষাবিদগণ দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করেছেন, যথা – শিক্ষার মুখ্য কাজ ও শিক্ষার গৌণ কাজ। এখানে এগুলি আলোচনা করা হলো –

1. শিক্ষার মুখ্য কাজ

শিক্ষার মুখ্য কাজের মধ্যে ব্যক্তিজীবনের সর্বাঙ্গিক বিকাশের কথা বলা হয়েছে। শিক্ষার মুখ্য কাজের মধ্যে অন্যতম বিষয় হল ব্যক্তি কল্যাণ সাধন, সমাজকল্যাণ সাধন এবং জীবনী শক্তির গতি সঞ্চার করা। শিক্ষার মুখ্য কাজের মধ্যে অন্যতম কাজ গুলি হল নিম্নলিখিত –

ব্যক্তি কল্যাণ সাধন

শিক্ষার মুখ্য কাজের মধ্যে অন্যতম হল ব্যক্তি কল্যাণ সাধন বা ব্যক্তির সর্বাঙ্গীন বিকাশ। ব্যক্তিকল্যাণ সাধনের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়ে থাকে। যথা – বিশ্বে প্রকৃতির সাথে অভিযোজন এবং অন্তর প্রকৃতির সাথে অভিযোজন।

এছাড়া ব্যক্তি কল্যাণ সাধনের মধ্যে শিক্ষার অন্যতম কাজ হল –

  • পরিবর্তনশীল সমাজের সঙ্গে শিশুকে সার্থক অভিযোজনের সহায়তা করা,
  • মানব শিশুর সুপ্ত সম্ভাবনার বিকাশ সাধন করা,
  • ব্যক্তির সুস্থ জীবন যাপনে সহায়তা করা,
  • শিক্ষার্থীকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা প্রভৃতি।

সমাজ কল্যাণ সাধন

শিক্ষার মুখ্য কাজের মধ্যে অন্যতম হল সমাজ কল্যাণ সাধন করেন। সমাজ কল্যাণ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। যথা – সামাজিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ এবং সামাজিক সংস্কৃতির উন্নয়ন।

তাই সমাজ কল্যাণ সাধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্তির জীবন ধারনের মান উন্নয়ন করা হয়ে থাকে। তাছাড়া ব্যক্তিকে তার সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে সার্থক অভিযোজন বা সামাজিকীকরণের উপযোগী করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষা বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

এছাড়া সমাজ কল্যাণ সাধনের মধ্যে শিক্ষার অন্যতম কাজ গুলি হল –

  • শিশুকে সমাজ উপযোগী করে গড়ে তোলা।
  • সামাজিক রীতিনীতি ও নিয়ম কানুনের শিক্ষা প্রদান করা,
  • সামাজিক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও সঞ্চালন করা প্রভৃতি।

2. শিক্ষার গৌণ কাজ

শিক্ষার মুখ্য কাজ ছাড়াও শিক্ষার বিভিন্ন গৌণ কাজ পরিলক্ষিত হয়। শিক্ষার গৌণ কাজগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলি হল নিম্নলিখিত –

নেতৃত্বের প্রশিক্ষণ দান

শিক্ষার অন্যতম গৌণ কাজ হল শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দানের উপযোগী করে গড়ে তোলা। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যক্তিদের গড়ে তোলা হলো শিক্ষার অন্যতম কাজ।

মানবসম্পদ উন্নয়ন

শিক্ষার মধ্য দিয়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন করাই হল শিক্ষার অন্যতম কাজ। শিক্ষার মাধ্যমে একজন দক্ষ নাগরিক তৈরীর মধ্য দিয়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্ভব হয়।

বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদান

শিক্ষার কাজ হল শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় বৃত্তি শিক্ষা প্রদান করা। অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে কিভাবে জীবন যাপন করবে সে বিষয়ে শিক্ষা বিশেষভাবে সহায়তা করে।

জাতীয় সংহতি স্থাপন

শিক্ষার গৌণ কাজ হল জাতীয় সংহতি স্থাপন করা। জাতীয় সংহতি স্থাপনের মধ্য দিয়ে দেশের উন্নতি সম্ভবপর হয়। তাই জাতীয় সংহতির মধ্য দিয়ে ঐক্যবোধ, ভাতৃত্ববোধ, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়ে থাকে।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

এগুলি ছাড়াও শিক্ষার কাজ আরো যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

  • মূল্যবোধ গঠন করা,
  • প্রাক্ষোভিক বিকাশ সাধন,
  • নৈতিক চরিত্র গঠ্‌
  • দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা প্রভৃতি।

সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার ধারণা, 2 টি সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যব্যাপক অর্থে শিক্ষার ধারণা, সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য
ভাববাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাবপ্রয়োগবাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাব
বাস্তববাদ বা বস্তুবাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাব প্রকৃতিবাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাব
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা : ধারণা, সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যডেলর কমিশনের আধুনিক শিক্ষার চারটি স্তম্ভ

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষার কাজ শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধনের মধ্য দিয়ে সমাজ উপযোগী করে তোলে। ফলে শিক্ষার্থীরা বা ব্যক্তি পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সহজে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে ও সার্থক অভিযোজন করতে পারে। তাই মুখ্য কাজ ও গৌণ কাজ যাই হোক না কেন সব ক্ষেত্রে ব্যক্তি জীবনের সফলতা ও সামাজিক অগ্রগতি প্রাধান্য পায় একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

তথ্যসূত্র (References)

  • Aggarwal, J. C., Theory and Principles of Education. 13th Ed. Vikas Publishing House Pvt. Ltd.
  • V.R. Taneja, Educational Thoughts & Practice. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi
  • Nayak, B.K, Text Book of Foundation of Education. Cuttack, Odisha: KitabMhal
  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1,
  • Internet sources

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close