বর্তমানে সারা বিশ্ব জুড়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন কারণে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা (Need for Inclusive Education) বর্তমানে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাচীনকালে শিক্ষায় প্রতিবন্ধী শিশু বা অক্ষমতার শিশুদের জন্য কোন ব্যবস্থা বা সুযোগ-সুবিধা ছিল না। বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার প্রভৃতির ফলে অক্ষমতা যুক্ত শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত থাকতো। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রে অক্ষমতা যুক্ত শিশুদের অন্তর্ভুক্তিকরণের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। সাধারণভাবে এই শিক্ষা আন্দোলনকে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা | Need for Inclusive Education
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা হল শিক্ষা ক্ষেত্রে সকল শিশু বিশেষ করে অক্ষমতা কিন্তু শিশুদেরকে শিক্ষার অন্তর্ভুক্তকরন। আধুনিক শিক্ষার ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল হওয়ার কারণে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা (Inclusive education benefits) উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাকে বিশ্লেষণ করলে এই শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তা (Inclusive education benefits) গুলি হল নিম্নলিখিত –
1. শিক্ষায় সমসুযোগ দান
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে সকল শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে প্রতিবন্ধকতা যুক্ত বা অক্ষমতা যুক্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মূল স্রোতে নিয়ে আসা সম্ভবপর হয়। অর্থাৎ শিক্ষায় সমসুযোগ দান করার ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বর্তমান।
2. সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা
বর্তমানে প্রতিটি শিক্ষার্থীদের বা শিশুর শিক্ষার অধিকার রয়েছে। আর এই অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই শিশুর শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে থাকে।
3. বৈচিত্র্যের প্রতি গুরুত্ব আরোপ
শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ প্রত্যেকটি শিশুর আগ্রহ, সামর্থ্য ও বৈশিষ্ট্য আলাদা ধরনের হয়ে থাকে। আর অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে এই শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্যের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বা বৈচিত্র্যতা অনুযায়ী শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে।
4. নাগরিকত্বের বিকাশ
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে নাগরিকত্বের বিকাশ সাধন করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিশেষ শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে শিক্ষা লাভ করার ফলে একে অপরের প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতা গড়ে ওঠে। ফলে তাদের মধ্যে নাগরিকত্বের বিকাশ সাধিত হয়ে থাকে।
5. নৈতিক বিকাশ
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক বিকাশ ও নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করা সম্ভবপর হয়। অর্থাৎ এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টির জন্য বিশেষ উপযোগী। অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার অন্যতম প্রয়োজনীয়তা (Inclusive education benefits) হল শিক্ষার্থীদের নৈতিক বিকাশ সাধন করা।
এগুলি ছাড়াও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আরও যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –
i) অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে প্রতিটি শিশুর মৌলিক অধিকারকে রক্ষা করা সম্ভব হয়।
ii) অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনগুলিকে পূরণ করে থাকে।
iii) অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন সম্ভব হয়।
iv) অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা মানবসম্পদ বিকাশেও বিশেষ প্রয়োজনীয়।
v) এই শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সমাজ উপযোগী করে গড়ে তোলা সম্ভব হয়।
vi) অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমুখী প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। ফলে তারা ভবিষ্যতে নিজেদের জীবনধারণের উপযোগী হয়ে গড়ে ওঠে।
উপসংহার (Conclusion)
সর্বোপরি বলা যায়, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা (Inclusive education benefits) বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর হয়। তাছাড়া সকলের জন্য শিক্ষা এটিও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বর্তমান। তাই অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষার মাধ্যমে সমাজ উপযোগী তথা ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্যসূত্র (References)
- Education in India-Past-Present-Future, Vol. I and II, J. P. Banerjee
- Landmarks in the History of Modern Indian Education, J. C. Aggarwal
- History of Education in India, Dr. R N Sharma and R K Sharma
- Report of Commissions – Radhakrishnan, Mudaliar, Kothari.
- National Policy on Education, 1986. Policy perspective.
- Internet Sources
প্রশ্ন – অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব?
উত্তর – বর্তমানে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়। এগুলি হল – শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীন বিকাশ, শিক্ষায় সমসুযোগ বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের মানসিক, নৈতিক ও মূল্যবোধের বিকাশ প্রভৃতি।
প্রশ্ন – অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার সুবিধা
উত্তর – অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার বিভিন্ন সুবিধা বর্তমান, সেগুলি হল –
i) শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিবন্ধকতা বা অক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষা লাভের সুযোগ পায়।
ii) জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে শিক্ষা সকলের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে। বা সমসুযোগ বর্তমান।
iii) অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রসার ঘটে।
iv) সকল শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মূল স্রোতে নিয়ে আসা সম্ভবপর হয়।
v) সামাজিক অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার এর অবসান ঘটানো সম্ভব।
vi) সমাজের বিভিন্ন কার্যকলাপে সমস্ত শিশুরা (বিশেষ করে প্রতিবন্ধী বা অক্ষমতা যুক্ত শিশুরা) অংশগ্রহণ করতে পারে। এর ফলে সামাজিক উন্নতি সম্ভবপর হয়.
vii) মানবসম্পদ বিকাশের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার সুবিধা বর্তমান।
আরোও পড়ুন
- ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষার তুলনামূলক আলোচনা | Comparison between Brahmanic and Buddhist Education
- জাতীয় শিক্ষানীতি 2020 সুপারিশ | Recommendations of NEP 2020
- প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব কি? ধারণা, কারণ ও ফলাফল | Oriental Occidental Controversy
- বৈদিক শিক্ষা ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য | 10 Characteristics of Vedic Education System
- মধ্যযুগে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য 10টি | Features of Islamic Education System
- ব্রাহ্মণ্য শিক্ষা ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য | 10 Brahmanic Education System Features