১৮১৩ সালের শিক্ষা সংক্রান্ত সনদ আইনের 43 নম্বর ধারার ব্যাখ্যা নিয়ে শিক্ষা মহলে বিতর্কে সৃষ্টি হয়। আর এই বিতর্ক অবসানের জন্য মেকলের নেতৃত্বে যে মিনিট বা মন্তব্য পেশ হয় সেটি মেকলে মিনিট (Macaulay’s Minute) হিসাবে পরিচিত।
১৮১৩ সালের ৪৩ নম্বর ধারার ব্যাখ্যা নিয়ে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী এই দুটি দল তৈরি হয়। ফলে শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার সমস্যায় পরে। আর এই সমস্যা সমাধানের জন্য ১৮৩৪ সালে তৎকালীন বড়লাটের পরিষদের আইন সদস্য মেকলের উপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয় এবং মেকলে এই সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন সুপারিশ করেন।
মেকলে মিনিট কি | Macaulay’s Minute
মেকলে মিনিট হল ভারতীয় শিক্ষা সংক্রান্ত মেকলের সুপারিশ পত্র। ১৮১৩ সালের সনদ আইনের ব্যাখ্যা নিয়ে দুটি দল তৈরি হয়। একটি হল প্রাচ্যবাদী এবং অপরটি হল পাশ্চাত্যবাদী।
প্রাচ্যবাদীদের নেতৃত্বে প্রিন্সেপ দাবি করেন ১৮১৩ সালের সনদ আইনের সাহিত্য বলতে ভারতীয় প্রাচীন সাহিত্য এবং শিক্ষিত ভারতীয় বলতে প্রাচ্য শিক্ষায় শিক্ষিত পন্ডিতদেরকেই বোঝায়।
অপরদিকে পাশ্চাত্যবাদীদের নেতৃত্বে ট্র্যাভেলিয়ন প্রাচ্যবাদীদের বিপরীত ধারণা পোষণ করেন। ফলে দুই দলের মধ্যে ভারতীয় শিক্ষার সাহিত্য বা লিটারেচার নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়। এটিকে প্রাচ্য পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব বলে।
আর এইরকম সংকটময় সন্ধিক্ষণে ও প্রাচ্য পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব* সমাধানের ক্ষেত্রে এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদীদের তীব্র বিরোধিতা সত্বেও তৎকালীন বড়লাট উইলিয়াম বেন্টিংক এর কাছে লর্ড মেকলে ১৮৩৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তার বিখ্যাত মিনিট বা মন্তব্য পেশ করেন। ব্রিটিশ ভারতের শিক্ষার ইতিহাসে এটি মেকলে মিনিট নামে অধিক পরিচিত।
* শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রাচ্য পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব বলতে ১৮১৩ সালের সনদ আইনের ৪৩ নম্বর ধারার ব্যাখ্যা নিয়ে মতভেদ বা মতবিরোধকে বোঝায়।
মেকলে মিনিটের বক্তব্য
মেকলে তার মিনিটে বা সুপারিশ পত্রে ১৮১৩ সালের সনদ আইনের ৪৫ নম্বর ধারার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন –
“Literature বা সাহিত্য বলতে শুধুমাত্র সংস্কৃত বা আরবী সাহিত্যকে বোঝায় না, ইংরেজি সাহিত্যকেও বোঝায়। আর শিক্ষিত ভারতবাসী বলতে সংস্কৃত ভাষায় পন্ডিত বা আরবি ভাষায় পারদর্শী মৌলভীদের বোঝায় না। বরং যারা লকের দর্শন এবং মিলটনের কবিতায় পারদর্শী তাদেরকেও বোঝায়”।
অর্থাৎ তিনি শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন।
আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now |
লর্ড মেকলের শিক্ষানীতি
শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রাচ্য পাশ্চাত্যের দ্বন্দ্বের অবসানে লর্ড মেকলের যে মিনিট প্রেস করেন তার সুপারিশ গুলি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এটিকে লর্ড মেকলের শিক্ষানীতি বলা হয়। লর্ড মেকলের শিক্ষানীতির সুপারিশ গুলির বিষয়বস্তু নিম্নে আলোচনা করা হল –
1. শিক্ষার উদ্দেশ্য
লর্ড মেকলের শিক্ষানীতির ক্ষেত্রে শিক্ষার উদ্দেশ্য চুইয়ে পড়া নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি বলেন – উচ্চ শ্রেণীর এবং অভিজাত সম্প্রদায়ের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার বিস্তার সাধন করলে তাদের কাছ থেকে তা ক্রমশ সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছে যাবে।
2. শিক্ষার বিষয়বস্তু
লর্ড মেকলে তার শিক্ষা নীতিতে বা মিনিটে শিক্ষার বিষয়বস্তু হিসেবে পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিস্তার সাধনের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের মাধ্যমে ভারতবাসীদের শিক্ষা দিতে হবে।
3. শিক্ষার মাধ্যম
শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে তিনি ইংরেজি ভাষার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ভারতীয় ভাষা সম্পর্কে মেকলের সম্পূর্ণ অনীহা ছিল এবং তিনি ভারতীয় ভাষা সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন – ভারতীয় ভাষা বা দেশীয় ভাষা দীন এবং ঐশ্বর্যহীন। তাই এই ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করা উচিত নয়।
শিক্ষার মাধ্যম সম্পর্কে মেকলের এই মন্তব্য অনেকেই তীব্র নিন্দা করেন এবং এটি বিশেষভাবে সমালোচিত হয়। কারণ মেকলে তার মিনিটে ইংরেজি শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন।
উপসংহার (Conclusion)
সর্বোপরি বলা যায়, প্রাচ্য পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বের অবসানে মেকলে মিনিট বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হলেও ভারতীয় সংস্কৃত ও আরবি গ্রন্থ সম্ভার সম্পর্কে মেকলের আপত্তিকর মন্তব্য, ইংরেজি বিষয়ের প্রতি অধিক গুরুত্ব আরোপ এবং আরো কিছু বিষয়ের জন্য মেকলে মিনিট বিশেষভাবে সমালোচিত হয় এবং এটি গৃহীত হয়নি।
তথ্যসূত্র (References)
- Education in India-Past-Present-Future, Vol. I and II, J. P. Banerjee
- Landmarks in the History of Modern Indian Education, J. C. Aggarwal
- History of Education in India, Dr. R N Sharma and R K Sharma
- Report of Commissions – Radhakrishnan, Mudaliar, Kothari.
- National Policy on Education, 1986. Policy perspective.
- Internet Sources
প্রশ্ন – মেকলে মিনিট কে কবে প্রতিষ্ঠা করেন
উত্তর – মেকলে মিনিট ১৮৩৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি লর্ড মেকলে প্রতিষ্ঠা করেন।
আরোও পড়ুন
- শিক্ষার অধিকার আইন 2009| Right to Education Act | RTE Act 2009
- মনোযোগ কাকে বলে | শিক্ষাক্ষেত্রে মনোযোগের ভূমিকা | Attention in Psychology
- শিখন সঞ্চালনের তত্ত্ব | Theory of Transfer of Learning
- শিখন সঞ্চালনের প্রকারভেদ | Types of Transfer of Learning
- আগ্রহ কাকে বলে | শিক্ষাক্ষেত্রে আগ্রহের গুরুত্ব লেখ | Interest in Psychology
- শিখন সঞ্চালন কাকে বলে | শিখন সঞ্চালনের বৈশিষ্ট্য | Transfer of Learning