মাধ্যমিক স্তরে নির্দেশনার প্রয়োজনীয়তা | Need for Guidance at the Secondary Level

Join Our Channels

নির্দেশনা হল এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ব্যক্তি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ও পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। শিক্ষার সমস্ত স্তরের মতো মাধ্যমিক স্তরে নির্দেশনার প্রয়োজনীয়তা (Need for Guidance at the Secondary Level) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মাধ্যমিক স্তরে নির্দেশনার প্রয়োজনীয়তা | Need for Guidance at the Secondary Level

নির্দেশনা হল ব্যক্তিকে সাহায্যদানের এমন একটি প্রক্রিয়ায় যার মাধ্যমে ব্যক্তি তার ব্যবহারিক জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে ও পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে।

বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী রজার্স বলেছেন – নির্দেশনা হলে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তিকে তার উপযুক্ত নির্বাচন বা সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সহায়তা দিয়ে তাকে ব্যক্তিগত উন্নয়ন এবং পরিপূর্ণতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের কাছে নির্দেশনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই শিক্ষার প্রতিটি স্তরে নির্দেশনার বিশেষ প্রয়োজনীয়তা পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে শিক্ষার মাধ্যমিক স্তর হল এমন একটি স্তর যেখানে শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা ব্যতীত সামগ্রিক বিকাশ সম্ভব নয়। কারণ মাধ্যমিক স্তর সময়কাল হল শিক্ষার্থীদের কৈশোরকালীন অবস্থা। এই সময় শিক্ষার্থীদের দৈহিক, মানসিক ও প্রাক্ষোভিক বিভিন্ন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। ফলে মাধ্যমিক স্তর বা বয়ঃসন্ধিকালে বা কৈশোরকালে নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের সঠিক বিকাশের সহায়তা করে।

বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী হারমিন এবং এরিকসন বলেছেন – মাধ্যমিক স্তরে নির্দেশনা বলতে শিক্ষামূলক কার্যক্রমের সেই দিকসমূহ কে বোঝায়, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তার বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলা এবং নিজের আগ্রহ, অক্ষমতা ও সামাজিক চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণের সহায়তা করা হয়।

তাই মাধ্যমিক স্তরে নির্দেশনার প্রয়োজনীয়তা যে সমস্ত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ সেগুলি হল –

শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধানের সহায়তা

শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সমস্যা, মানসিক সমস্যা ও প্রাক্ষোভিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে নির্দেশনা সহায়তা করে। কারণ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই সমস্যা গুলি প্রকট আকারে দেখা দেয়। তাই শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক স্তরের নির্দেশনা প্রয়োজনীয়তা বর্তমান।

পেশাগত বা বৃত্তিগত প্রস্তুতি প্রদান

মাধ্যমিক স্তরে নির্দেশনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পেশাগত বা বৃত্তিগত প্রস্তুতি প্রদানে সাহায্য করা হয়। অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ জীবনে কিভাবে কর্মজগতে প্রবেশ করবে বা ভবিষ্যৎ জীবনে উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য মাধ্যমিক স্তরের থেকে বিভিন্ন ধরনের কোর্সে অংশগ্রহণ করে থাকে। ফলে প্রতিটি শিক্ষার্থীর আগ্রহ, চাহিদা অনুযায়ী সে কোন পেশার জন্য উপযুক্ত বা বৃত্তির জন্য উপযুক্ত সে বিষয়ে প্রস্তুতি প্রদান করা সহজসাধ্য হয়।

বিষয় নির্বাচনে সহায়তা

মাধ্যমিক স্তর শিক্ষার্থীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই স্তরের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং আগ্রহ ও চাহিদা অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করতে হয়। এক্ষেত্রে উপযুক্ত নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের বিষয় নির্বাচনে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের আগ্রহ, চাহিদা, সক্ষমতা, প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রভৃতি শিক্ষার্থীদের নির্দেশনার মাধ্যমে সচেতন করা ও বিষয় নির্বাচনের সাহায্য করা যায়।

শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান

মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে নির্দেশনা বিশেষভাবে কার্যকরী। তাছাড়া বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্দেশনা কার্যসূচি বিশেষভাবে কার্যকর হয়ে ওঠে। তাই মাধ্যমিক স্তরে নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন শিক্ষাগত সমস্যার সমাধান ও শিক্ষা ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যা গুলি মোকাবিলার ক্ষেত্রে দক্ষ করে তোলে।

বয়সন্ধিকালীন সমস্যার সমাধান

মাধ্যমিক স্তর হল শিক্ষার্থীদের কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকাল। এই স্তরের ছেলে মেয়েদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক, মানসিক, প্রাক্ষোভিক দ্বন্দ্ব ও সমস্যার সৃষ্টি হয়। ফলে এই স্তরে নির্দেশনা খুবই কার্যকরী। অর্থাৎ বয়সন্ধিকালের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষামুখী করা ও পরিবেশের সঙ্গে সুষ্ঠ সংগতিবিধানে সাহায্য করার ক্ষেত্রে নির্দেশনার প্রয়োজনীয়তা বর্তমান।

আত্মবিশ্বাস তৈরি

মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দেয়। আরে আত্মবিশ্বাস তৈরীর ক্ষেত্রে নির্দেশনা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই মাধ্যমিক স্তরের নির্দেশনা কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করে জীবনের মূল লক্ষ্যে চালিত করা সম্ভব হয়।

দলগত মনোভাব ও দায়িত্ববোধ গঠন

মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দলগত মনোভাব গঠন করা খুবই জরুরী। কারণ এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব তৈরিতে সাহায্য করে। তাই মাধ্যমিক স্তরের নির্দেশনার কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দলগত মনোভাব ও দায়িত্ববোধ গঠন করার সহজসাধ্য হয়।

সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি

মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যাগুলি অনেক সময় তারা সমাধান করতে পারে না। তাছাড়া তাদের দৈহিক পরিবর্তনের কারণে নিত্য নতুন চাহিদা সৃষ্টি হয়। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরের নির্দেশনা মূলক কর্মসূচি এই সমস্যার সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধিতে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করে। তাই মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে নির্দেশনার প্রয়োজনীয়তা বর্তমান।

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপ ও সমস্যার বা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে নির্দেশনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ও শিক্ষাগত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

তথ্যসূত্র (Reference)

  • Basu, N.C. Educational and Vocational Guidance.
  • Chauhan, S.S. – Principles and Techniques of Guidance.
  • Dave Indu – The Basic Essentials of Counseling.
  • Kocher, S.K. – Guidance and Counselling in Secondary School
  • Need for Guidance at the Secondary Level
  • NCERT- Guidance and Counseling.

প্রশ্ন – মাধ্যমিক স্তরে নির্দেশনা কেন প্রয়োজন?

উত্তর – শিক্ষার্থীদের কাছে মাধ্যমিক স্তর একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা স্তর। কারণ এই স্তরে শিক্ষার্থীরা বয়ঃসন্ধি পর্যায় বা কৈশোরকালে অবস্থান করে। এই সময়কালকে ঝড়ঝঞ্ঝার কাল বলা হয়। তাই মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের দৈহিক, মানসিক, প্রাক্ষোভিক বিভিন্ন বিকাশের ক্ষেত্রে নির্দেশনা গুরুত্বপূর্ণ।

আরোও পড়ুন

মাধ্যমিক স্তরে নির্দেশনার প্রয়োজনীয়তা | Need for Guidance at the Secondary Level সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Comment

close