প্রতিভাবান শিশুদের উন্নত শিক্ষা প্রদান করার ক্ষেত্রে ১৯৮৬ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি সুপারিশ অনুযায়ী যে বিদ্যালয় স্থাপনের কথা বলা হয়েছে সেটি হল নবোদয় বিদ্যালয় (Navodaya Vidyalaya)।
প্রতিভাবান শিশুদের বা মেধাবী শিক্ষার্থীদের উন্নত মানের শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি যে নবোদয় বিদ্যালয়ের স্থাপনের সুপারিশ করেছিল সেটি ১৯৯২ সালের গুরুত্ব পায়। এবং এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারতবর্ষের বিভিন্ন জেলায় কেন্দ্রীয় সরকার নবোদয় বিদ্যালয় চালু করার উদ্যোগ নেয়।
নবোদয় বিদ্যালয় | Navodaya Vidyalaya
শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন ভিত্তিক পথনির্দেশক বিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করা হয়। জাতীয় শিক্ষানীতির পথনির্দেশক বিদ্যালয়ের বাস্তবায়িত রূপকে নবোদয় বিদ্যালয় বলে। নবোদয় বিদ্যালয়কে অনেকে মডেল স্কুল বলে থাকেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনায় সারা ভারতবর্ষে মোট 432 টি জেলায় একটি করে নবোদয় বিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করা হয়। এই ধরনের বিদ্যালয় গুলিতে 300 জনের বেশি ছাত্রছাত্রী থাকবে না। অর্থাৎ উন্নতমানের শিক্ষার জন্য ছাত্র শিক্ষক অনুপাত বজায় রাখার কথা বলা হয়
নবোদয় বিদ্যালয় বৈশিষ্ট্য
নবোদয় বিদ্যালয় বৈশিষ্ট্য যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয় সেগুলি হল, নিম্নলিখিত –
1. এই বিদ্যালয়গুলি কেন্দ্রীয় সংগঠন (CBSE) বা বোর্ড দ্বারা পরিচালিত।
2. এই বিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত বজায় রাখা বা তিনশোর বেশি ছাত্র থাকবে না।
3. জেলাভিত্তিক জাতীয় পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তি নেওয়া হয়।
4. নবোদয় বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা অবৈতনিক ও সহ শিক্ষা মূলক।
5. এই শিক্ষা ব্যবস্থা আবাসিক প্রকৃতির। অর্থাৎ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা আছে।
6. উন্নত মানের শিক্ষা সহায়ক উপকরণের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করা হয়। অর্থাৎ এই স্কুলে টেলিভিশন, টেপ টেপ-রেকর্ডার, ভিডিও ক্যাসেট প্রভৃতি শিক্ষা সহায়ক উপকরণের মাধ্যমে উন্নতমানের শিক্ষা প্রদান করা হয়।
7. এই বিদ্যালয় গুলিতে শিক্ষার মাধ্যম হবে হিন্দি ও ইংরেজি।
8. এই নবোদয় বিদ্যালয় ধারাবাহিকভাবে সারা বছর শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত পারদর্শিতার মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে।
9. NCERT এই বিদ্যালয়ের সমৃদ্ধ এবং উন্নত মানের পাঠক্রম তৈরি করে থাকে।
10. এই ধরনের বিদ্যালয় গুলিতে কলা বিভাগ, বাণিজ্য বিভাগ এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা থাকে।
আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now |
নবোদয় বিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য
নবোদয় বিদ্যালয় স্থাপনের যে সমস্ত উদ্দেশ্য গুলি বর্তমান, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –
1. শিক্ষায় সমসুযোগের মাধ্যমে উন্নত শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
2. অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মেধাবী স্টুডেন্টদের সংরক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
3. উন্নত পাঠক্রম ও শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে উন্নতমানের শিক্ষা প্রদান।
4. প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা এই বিদ্যালয়ের প্রধান উদ্দেশ্য।
5. ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
উপসংহার (Conclusion)
সর্বোপরি বলা যায়, প্রতিভাবান শিশুদের জন্য খরচের কথা না ভেবে বা বিনা ব্যয়ে উন্নতমানের শিক্ষা জন্য জাতীয় শিক্ষানীতির (১৯৮৬) অন্যতম সুপারিশ হল এই নবোদয় বিদ্যালয়। যেটি বর্তমানে সারা ভারতবর্ষের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্যসূত্র (References)
- Education in India-Past-Present-Future, Vol. I and II, J. P. Banerjee
- Landmarks in the History of Modern Indian Education, J. C. Aggarwal
- History of Education in India, Dr. R N Sharma and R K Sharma
- Report of Commissions – Radhakrishnan, Mudaliar, Kothari.
- National Policy on Education, 1986. Policy perspective.
- Internet Sources
প্রশ্ন – নবোদয় বিদ্যালয় অপর নাম কি
উত্তর – নবোদয় বিদ্যালয় অপর নাম হল মডেল স্কুল। এটি জাতীয় শিক্ষানীতির অন্যতম সুপারিশ।
আরোও পড়ুন
- ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষার তুলনামূলক আলোচনা বা পার্থক্য | Comparison between Brahmanic and Buddhist Education
- জাতীয় শিক্ষানীতি 2020 সুপারিশ ও বৈশিষ্ট্য| Recommendations of NEP 2020
- প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব কি? ধারণা, কারণ ও ফলাফল | Oriental Occidental Controversy
- বৈদিক শিক্ষা ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য | 10 Characteristics of Vedic Education System
- মধ্যযুগে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য 10টি | Features of Islamic Education System
- ব্রাহ্মণ্য শিক্ষা ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য | 10 Brahmanic Education System Features