সর্বাত্মক পরিচয় পত্রের সুবিধা ও অসুবিধা | Advantages and Disadvantages of Cumulative Record Cards

বর্তমান শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহের ও তথ্য বিশ্লেষণের অন্যতম মাধ্যম হল সর্বাত্মক পরিচয় পত্র। এটি ধারাবাহিক পরিচয় পত্র বা CRC (Cumulative Record Cards) নামে অধিক জনপ্রিয়।

সাধারণভাবে যখন নির্দিষ্ট সময় অন্তর ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কিত তথ্য পূরণ করা হয়, তখন তাকে ধারাবাহিক পরিচয় পত্র বা সর্বাত্মক পরিচয় পত্র বলে। আমেরিকায় ধারাবাহিক পরিচয় পত্রের আন্দোলন শুরু হয় ১৯২৫ সালে এবং ১৯৩০ সালে এটি গুরুত্ব লাভ করে। তখন থেকে এর ব্যবহার সারা বিশ্বের ছড়িয়ে পড়ে।

ধারাবাহিক পরিচয় পত্র বা সর্বাত্মক পরিচয় পত্র কাকে বলে

তথ্য সংগ্রহের যে ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দিকের পারদর্শিতা ও তার সম্পর্কিত সংগ্রহ অন্যান্য সব রকমের তথ্য একত্রে সুবিন্যস্ত ভাবে তালিকা বদ্ধ করার হয় সেই ব্যবস্থার জনপ্রিয় নাম হল, ধারাবাহিক পরিচয় পত্র বা সর্বাত্মক পরিচয় পত্র (Cumulative Record Cards)।

CRC এর সুবিধা ও অসুবিধা | Advantages and Disadvantages of Cumulative Record Cards

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় সর্বাত্মক পরিচয় পত্র বা ধারাবাহিক পরিচয় পত্র বা CRC (Cumulative Record Cards) -এর ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আধুনিক শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষা সর্বাত্মক পরিচয় পত্রের সুবিধা ও অসুবিধা বা CRC এর সুবিধা ও অসুবিধা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হল –

সর্বাত্মক পরিচয় পত্রের সুবিধা

বিদ্যালয়ের সর্বাত্মক পরিচয় পত্র বা CRC -এর উদ্দেশ্য কেবলমাত্র তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ নয়। বরং এটি বিদ্যালয় পরিচালনা ও শিক্ষককে বিভিন্নভাবে সাহায্য করে থাকে। তাই সর্বাত্মক পরিচয় পত্রের সুবিধা বহুবিধ, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

শিক্ষার্থী সম্পর্কে ধারনা

সর্বাত্মক পরিচয় পত্রের সুবিধা হল এখান থেকে বিদ্যালয়ের কোনো নবাগত শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যাবলী এবং পূর্ব শিক্ষাগত পারদর্শিতা সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করা যায়।

শ্রেণীবিন্যাস

ধারাবাহিক পরিচয় পত্রের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে পঠন পাঠানোর সুবিধার্থে শিক্ষার্থীদের শ্রেণীবিভাগ করা সহজসাধ্য হয়। কারণ এই কার্ডে সংরক্ষিত তথ্য বলে বিশ্লেষণ করে কোন কোন শিক্ষার্থীরা শিক্ষাগত পারদর্শিতায় সমধর্মী তা সহজে জানা যায়।

উন্নত মানের শিক্ষণ

এই পরিচয় পত্রে রক্ষিত তথ্যাবলী অনুশীলন করে শিক্ষক মহাশয় বিদ্যালয় পাঠরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে কারা উন্নত বুদ্ধি সম্পন্ন তা নির্ণয় করে ও তাদের জন্য উন্নত মানের শিক্ষা পরিকল্পনা রচনা করতে পারেন। তাই এটি শিক্ষককে উন্নতমানের শিক্ষণ কার্যে অংশগ্রহণ করতে সহায়তা করে।

আচরণগত সমস্যার সমাধান

এই পরিচয় পত্রের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন আচরণগত তথ্য সংরক্ষিত থাকে। যার মাধ্যমে শিক্ষক মহাশয় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন রকম আচরণগত সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করে এবং সেগুলির জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের বিশৃঙ্খল আচরণগত সমস্যার সমাধান করার ক্ষেত্রে ধারাবাহিক পরিচয় পত্র বিশেষ সুবিধা জনক।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

সর্বাত্মক পরিচয় পত্রের অসুবিধা

সর্বাত্মক পরিচয় পত্রের অসুবিধা বা ধারাবাহিক পরিচয় পত্রের অসুবিধা যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল –

ব্যবহারিক অসুবিধা

সর্বাত্মক পরিচয় পত্র ব্যবহার করা জটিল বিষয়। অর্থাৎ প্রত্যেক শিক্ষকের ক্ষেত্রে এই কার্ড ব্যবহার করা বিশেষ অসুবিধাজনক। তাই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাবে আজও প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে এই কার্ড ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি।

নির্ভরযোগ্যতার অভাব

ধারাবাহিক পরিচয় পত্র বা সর্বাত্মক পরিচয় পত্রের আভ্যন্তরীণ নির্ভরযোগ্যতা এবং যে পরিমাপক দ্বারা তথ্যগুলি সংগ্রহ করা হয় তা নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে অনেক সময় সংশয় বা প্রশ্নচিহ্ন দেখা দেয়। ফলে নির্ভরযোগ্যতা জনিত কারণে ধারাবাহিক পরিচয় পত্র বা সর্বাত্মক পরিচয় পত্র ব্যবহার করা অসুবিধাজনক।

যথার্থতার অভাব

সর্বাত্মক পরিচয় পত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথার্থতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ যে পরিমাপক দ্বারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তথ্যগুলি সংগ্রহ করা হয় সেগুলি যদি যথার্থ না হয় তাহলে এই কার্ডের বা ধারাবাহিক পরিচয় পত্রের গুরুত্ব হ্রাস পায়।

নৈব্যক্তিকতার অভাব

সর্বাত্মক পরিচয় পত্রের থেকে বড় ত্রুটি হলো নৈব্যক্তিকতার অভাব। অর্থাৎ এখানে ব্যক্তিগত প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তাই যে সমস্ত ব্যক্তিবর্গের দ্বারা ধারাবাহিক পরিচয় পত্রের জন্য তথ্যগুলি সংগ্রহীত করা হয় তাদের ব্যক্তিগত প্রভাব এই তথ্য সংগ্রহের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। হলে নৈব্যক্তিকতার পরিমাণ হ্রাস পায়।

সময় ও পরিশ্রমসাধ্য

ধারাবাহিক পরিচয় পত্রের বা সর্বাত্মক পরিচয় পত্রের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা বেশ সময় সাপেক্ষ এবং পরিশ্রমসাধ্য। এর কারণে অনেক সময় ধারাবাহিক পরিচয় পত্র বা সর্বাত্মক পরিচয় পত্র ব্যবহার করা হয় না।

খরচ সাপেক্ষ

ধারাবাহিক পরিচয় পত্র বা সর্বাত্মক পরিচয় পত্র রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করার জন্য যথেষ্ট খরচ হয়ে থাকে। অর্থাৎ আর্থিক দিক থেকে বিদ্যালয়ের সর্বাত্মক পরিচয় পত্র ব্যবহার থেকে শুরু করে রক্ষণাবেক্ষণ করা পর্যন্ত অনেকটা খরচ হয়ে থাকে।

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের সর্বাত্মক পরিচয় পত্রের ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ সহজে করা যায়। ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত পারদর্শিত সহজে চিহ্নিতকরণ করার মাধ্যমে শিক্ষার উন্নতি সাধন করা সহজ হয়। তাই আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা সর্বাত্মক পরিচয় পত্র (Cumulative Record Cards) একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

তথ্যসূত্র (Reference)

  • Essentials of Examinations System: Evaluation, Test and Measurement – J.C. Aggarwal – Vikash Publishing House Pvt. Ltd.
  • Statistics in Psychology and Education – S.K. Mangal – PHI Learning Pvt. Ltd.
  • E. B. Hurlock – Child Development – Anmol Publication Pvt. Ltd
  • L. E. Berk – Child Development – PHI Ltd
  • Advantages and Disadvantages of Cumulative Record Cards
  • Internet Sources

প্রশ্ন – সর্বাত্মক পরিচয় পত্র কী

উত্তর – যার মাধ্যমে ব্যক্তির বা শিক্ষার্থীর দৈহিক, মানসিক, সামাজিক ও প্রাক্ষোভিক প্রভৃতি দিকের তথ্যাবলির সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং ক্রমিক তালিকাবদ্ধ করা হয় তাকে সর্বাত্মক পরিচয় পত্র বা ধারাবাহিক পরিচয় পত্র বলে।

প্রশ্ন – CRC এর পুরো নাম কি

উত্তর – CRC এর পুরো নাম হল – Cumulative Record Card.

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close