শারীরিক শিক্ষা হল এমন শিক্ষা যা শারীরিক ক্রিয়া-কলাপ এর মাধ্যমে একটি শিশুর সম্পূর্ণ ব্যক্তিত্বের বিকাশ হয়। তাই শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (Aims and Objectives of Physical Education) বহুমুখী প্রকৃতির হয়ে থাকে।
শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য | Aims and Objectives of Physical Education
শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল শিশুর সর্বাঙ্গীন বিকাশ। আর্থাৎ শারীরিক শিক্ষার মাধ্যমে বা শারীরিক কার্যকলাপের অংশগ্রহণের মাধ্যমে অর্জিত ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ। শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –
1. শারীরিক বিকাশ সাধন
শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের বা ব্যক্তির শারীরিক বিকাশ সাধন। তাই শিক্ষার্থীদের ব্যায়াম, খেলাধুলা ও বিভিন্ন শারীরিক কার্যাবলীর মাধ্যমে শারীরিক বিকাশ সাধন সম্ভবপর হয়। এর মাধ্যমে যে সমস্ত বৃদ্ধি ও বিকাশ সম্ভব হয়, সেগুলি হল –
i) শিক্ষার্থীদের স্নায়ু ও পেশীর সুষ্ঠু সমন্বয় ও বিকাশ ঘটানো,
ii) কাজে আগ্রহ বৃদ্ধি ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি,
iii) শারীরিক পরিশ্রম করা বা সহজে ক্লান্তি অনুভব না করা এবং
iv) স্নায়ু সঞ্চালন মূলক কাজে সহায়তা করা।
2. ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন
শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কেবলমাত্র শারীরিক বিকাশ বা শারীরিক উন্নতি নয়। বরং ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধনের ক্ষেত্রে শারীর শিক্ষার ভূমিকা অনবদ্য। অর্থাৎ শারীরিক শিক্ষার মাধ্যমে সমগ্র ব্যক্তিসত্তার উন্নতি সাধন করাই হল শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে থমাস উড (Thomas Wood) বলেছেন – শারীর শিক্ষার লক্ষ্য হবে শিক্ষার মত বিস্তৃত এবং মানুষের মতো মহান ও উৎসাহ ব্যঞ্জক।
3. মানসিক বিকাশ সাধন
শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্যতম হল শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ সাধন। অর্থাৎ শারীরিক শিক্ষার মাধ্যমে সুস্থ দেহ তৈরি করা সম্ভব যা সুস্থ মনের পরিচয়। তাই বলা হয় সুস্থ দেহে সুস্থ মনের বাস। দেহকে বা শরীরকে সুস্থ সবল রাখতে পারলে তাহলে বিভিন্ন প্রকারের মানসিক ব্যাধি দূর হয়। যেমন – সহজে ক্লান্তি অনুভব না হওয়া বা সব সময় হাসিখুশি থাকা প্রভৃতি। এ প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দ যথার্থ বলেছিলেন যে – গীতা পাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলা শ্রেয়।
4. সামাজিক বিকাশ সাধন
শারীর শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সামাজিক বিভিন্ন গুণাবলীর পিতার সাধন সম্ভব হয়। তাই শারিশিক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে প্রতিযোগিতা অভ্যাস করতে শেখায়, যা তাদের সামাজিক বন্ধন তৈরি করে ও সামাজিক বিকাশে সহায়তা করে। আবার শারীর শিক্ষার বিভিন্ন কার্যাবলীতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সামাজিক ভেদাভেদ (যেমন – ধনী-দরিদ্র, উচ্চ নিচ, শিক্ষিত অশিক্ষিত) দূরীকরণের সাহায্য করে থাকে।
5. নেতৃত্বের বিকাশ সাধন
শারীর শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বদানে দক্ষ করে তোলা সম্ভবপর হয়। অর্থাৎ শারীর শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা রেফারি বা প্রশিক্ষক হিসেবে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে।
6. নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলা
শারীর শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শারীর শিক্ষার বিভিন্ন খেলার নিয়ম-কানুন আয়ত্ত করে ও মেনে চলে। তাছাড়া নেতৃত্বের বা প্রশিক্ষকের কথা মেনে চলা, বিভিন্ন খেলার নিয়ম কানুন মেনে চলা, সহযোগিতা করা প্রভৃতি গুণাবলির বিকাশ সাধন হয়। তাই শারীর শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে খেলোয়াড়ের মনোভাব গড়ে ওঠে। ফলের সৌজন্যবোধ, আত্মসম্মান বোধ, অন্যের প্রতি আনুগত্য তৈরি হয় ফলে সে সমাজের কোন নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠছে সক্ষম হয়।
পরিশেষে শারীর শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিশিষ্ট শারীবিদ চার্লস বিউকার কয়েকটি বিশেষ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কথা বলেছেন, যথা –
i) দৈহিক বিকাশ সাধন
ii) গতি সঞ্চালনের বিকাশ বা মোটর ডেভেলপমেন্ট
iii) জ্ঞান সম্পর্কিত ও মানসিক বিকাশ সাধন
iv) সামাজিক বিকাশ সাধন এবং
v) কার্যকরী বিকাশ সাধন।
আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now |
উপসংহার (Conclusion)
পরিশেষে বলা যায়, শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গিন বিকাশের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সুস্থ শরীর সুস্থ মনের পরিচয়। শরীরকে সঠিকভাবে চর্চা করার মাধ্যমে বা শরীর চর্চার মাধ্যমে শুধুমাত্র শারীরিক বিকাশ ঘটে না। বরং এটি ব্যক্তির সর্বাঙ্গিন বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তথ্যসূত্র (Reference)
- A. Woolfolk – Educational Psychology – Pearson Education
- J. W. Santrock – Educational Psychology – Mc Gray Hill
- J. C. Aggarwal – Essentials of Educational Psychology – Vikas publisher
- S. K. Mangal – Essentials of Educational Psychology – PHI Ltd.
- S. K. Mangal – Advanced Educational Psychology – PHI Ltd
- S. S. Chauhan – Advanced Educational Psychology – Vikas publisher
- E. B. Hurlock – Child Development – Anmol Publication Pvt. Ltd
- L. E. Berk – Child Development – PHI Ltd
- Aims and Objectives of Physical Education
- Internet Sources
প্রশ্ন – শারীর শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি
উত্তর – শারীর শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের বা ব্যক্তিত্বের সর্বাঙ্গিন বিকাশ সাধন করা। অর্থাৎ শারীর শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দৈহিক, মানসিক, প্রাক্ষোভিক, সামাজিক প্রভৃতি দিকের বিকাশ সম্ভব হয়।
প্রশ্ন – স্বাস্থ্য শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী কী?
উত্তর – স্বাস্থ্য শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের মধ্যে দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, নেতৃত্ব দানের দক্ষতা প্রভৃতির বিকাশ সাধন।
আরোও পড়ুন
- শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ | বৃদ্ধি ও বিকাশের মধ্যে পার্থক্য | 10 Difference Between Growth and Development
- বৃদ্ধি কাকে বলে | বৃদ্ধির বৈশিষ্ট্য | 4 Definition of Growth
- বৃদ্ধি ও বিকাশের বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Growth and Development
- জীবন বিকাশের বিভিন্ন স্তর গুলি আলোচনা কর | 4 Stages of Human Development
- শিখন কাকে বলে | শিখনের বৈশিষ্ট্য | 5 Definition and Characteristics of Learning
- ব্যক্তিত্ব কাকে বলে | ভালো ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য | 5 Definition and Characteristics of Personality