শিখন কাকে বলে | শিখনের বৈশিষ্ট্য | 5 Definition and Characteristics of Learning

মানব জীবনে শিখন হল একটি জটিল ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। শিখনের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে ও পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। শিখন (Learning) ছাড়া যে-কোনো শিক্ষার অর্থ তাই অস্তিত্বহীন।

মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম ধারণা হল শিখন (Learning)। মানুষ শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শেখে। আর এই মানিয়ে নেয়ার ফলে শিশুর মধ্যে নানা অভিজ্ঞতার জন্ম হয়। এক কথায় এগুলিকে শিখন বলা হয়ে থাকে। শিখন ছাড়া সমাজে শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন -এর পথে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। তাই ব্যক্তি জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে শিখন একটি অন্যতম দিক।

শিখন কাকে বলে (Definition of Learning)

শিখন হল আচরণের পরিবর্তন। তাই যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিশুর আচরণের পরিবর্তন সাধিত হয়, অভিজ্ঞতা অর্জন হয়, কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে তাকে শিখন বলে।

বিভিন্ন মনোবিদ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে শিখনকে (Learning) সংজ্ঞায়িত করেছেন, সেগুলি হল –

1. বিশিষ্ট মনোবিদ থনডাইক বলেছেন – শিখন হল উদ্দীপক ও প্রতিকার মধ্যে যথাযথভাবে সম্পর্ক স্থাপনের প্রক্রিয়া। (Learning is due to the connection of both stimulus and response.)

2. মনোবিদ ম্যাকডুগালের মতে – শিখন হল উদ্দেশ্য সাধনের জন্য উপযুক্ত উপায় নির্বাচন করার ক্ষমতা।

3. মনোবিদ Woolfolk বলেছেন – অভিজ্ঞতার কারণে ব্যক্তির মধ্যে জ্ঞান ও আচরণের যে আপেক্ষিক পরিবর্তন সাধিত হয়, তাই হল শিখন।

4. মনোবিদ Woodworth বলেছেন – শিখন হল ব্যক্তির সেই ধরনের সক্রিয়তা যার মাধ্যমে ব্যক্তির কেবলমাত্র পরিবর্তন হয় তাই নয়, বরং ব্যক্তির পূর্ববর্তী আচরণ ও অভিজ্ঞতার পরিবর্তন ঘটায়।

5. আবার বিশিষ্ট মনোবিদ বার্নাড বলেছেন – শিখন হল অনুশীলনের মাধ্যমে আচরণের পরিবর্তন সাধন। (Learning is the modification of behaviour through practice.)

তাই বলা যায়, শিখন হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তির আচরণ ধারার পরিবর্তন সাধিত হয়, অভিজ্ঞতার সঞ্চার হয়, জ্ঞান এবং চিন্তন দক্ষতার বিকাশ সাধিত হয়, নতুন পরিস্থিতির সাথে মোকাবিলা করতে ব্যক্তির সক্ষম হয়, ব্যক্তির কর্মতৎপরতা পরিলক্ষিত হয়, নতুন নতুন জ্ঞান অর্জন হয় প্রভৃতি।

শিখনের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Learning)

শিখন হল সামগ্রিক ও অভিজ্ঞতা লাভের প্রক্রিয়া। শিখনের বৈশিষ্ট্য বহুবিধ। অর্থাৎ শিখনের বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়। সেগুলি হল –

1. ধারাবাহিক প্রক্রিয়া

শিখন এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। অর্থাৎ এটি ব্যক্তির জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে। বিভিন্ন সময়ের শিক্ষার্থীরা বা ব্যক্তিরা শিখনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার জ্ঞান অর্জন করে থাকে।

2. জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়া

জ্ঞানার্জনের প্রক্রিয়া শিখনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কারণ শিখনের ফলে ব্যক্তি পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে সাথে পরিবর্তিত বা নতুন নতুন জ্ঞান সহজে আয়ত্ত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় – আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর যুগে প্রযুক্তিগত বিভিন্ন জ্ঞান ব্যক্তির সহজে আয়ত্ত করতে সক্ষম হচ্ছে।

3. নির্দিষ্ট লক্ষ্য মুখী প্রক্রিয়া

শিখনের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য বর্তমান। তাই শিখন হল লক্ষ্য অভিমুখী প্রক্রিয়া। নির্দিষ্ট লক্ষ্য শিখনকে ত্বরান্বিত করে। অর্থাৎ শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য হল ব্যক্তির পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন করা। আর এই পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে নতুন কিছু শিক্ষালাভ করার ক্ষেত্রে শিখনের গুরুত্ব বর্তমান।

4. অভিজ্ঞতামূলক বা অভিজ্ঞতা ভিত্তিক

শিখনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল অভিজ্ঞতামূলক বা অভিজ্ঞতা ভিত্তিক। শিখন হল অভিজ্ঞতামূলক অভিজ্ঞতা ভিত্তিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিরা সর্বদা নতুন নতুন জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকে। শিখনের ফলে ব্যক্তির অভিজ্ঞতার পুনর্গঠন সম্ভবপর হয়।

5. অনুশীলন নির্ভরতা

অনুশীলন নির্ভরতা শিখনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কারণ মানুষ সর্বদা নতুন কিছু শেখার জন্য পুরনো কিছু ভুলে যায়। যে ব্যক্তি যত অনুশীলন করবে শিখন তত বেশি সম্পন্ন হবে। তাই বিভিন্ন মনোবিদগণ শিখনের ক্ষেত্রে অনুশীলনকে গুরুত্ব আরোপ করেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় – কোন কবিতা একবার মুখস্থ করলে যতটুকু মনে থাকে তার থেকে যদি সেই কবিতাটি বারবার অনুশীলন করা হয় তাহলে সেই কবিতাটি মুখস্থ দীর্ঘস্থায়ী হয়। অর্থাৎ ব্যক্তির বারবার অনুশীলনের ফলে কবিতাটি আয়ত্ব সহজে করতে পারে।

6. আগ্রহ প্রেষণা নির্ভর

শিখন আগ্রহ ও প্রেষণার উপর নির্ভর করে। তাই শিখনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল আগ্রহ ও প্রেষণা নির্ভরতা। কারণ কোন কিছু ব্যক্তি যদি শিখতে আগ্রহী না হয় তাহলে ব্যক্তি সেই বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করতে পারে না। তাই আগ্রহের পাশাপাশি শিখন প্রেষণার উপর অধিকাংশ নির্ভর করে থাকে।

7. আচরণের স্থায়ী পরিবর্তনযুক্ত প্রক্রিয়া

যথাযথ শিখনের ফলে ব্যক্তির আচরণে স্থায়ী পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। তাই শিখন হল আচরণে স্থায়ী পরিবর্তন এর প্রক্রিয়া। অর্থাৎ শিখন এর মাধ্যমে ব্যক্তির যে আচরণ ধারার পরিবর্তন ঘটে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় – কোনো শিশু বা বা ব্যক্তি যদি খারাপ কোনো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয় বা কারো কাছ থেকে আঘাতপ্রাপ্ত হয় তাহলে সেই অভিজ্ঞতার ফলে ব্যক্তির আচরণ ধরার যে পরিবর্তন সাধিত হয় তা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে।

8. সমস্যা সমাধানমূলক

শিখনের (Learning) অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এটি সমস্যার সমাধান মূলক প্রক্রিয়া। অর্থাৎ শিখন এর ফলে ব্যক্তি নতুন নতুন জ্ঞান অর্জন করে থাকে। ফলে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সহজে মানিয়ে নিতে এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়। তাই শিখন হল সমস্যা সমাধানমূলক প্রক্রিয়া।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, ব্যক্তি জীবনের ক্ষেত্রে শিখন (Learning) একটি অবসম্ভাবী প্রক্রিয়া। সেখানে ফলে দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজের নতুন নতুন জ্ঞান অর্জন বা জ্ঞান শিক্ষার্থীরা সহজে আয়ত্ত করতে পারে। তাই শিখন হল সর্বদা গতিশীল বিষয় যা ব্যক্তির আচরণ ধরার পরিবর্তন বা আচরণ ধারার স্থায়ী পরিবর্তন সাধন করতে সক্ষম হয়।

তথ্যসূত্র (Reference)

  • A. Woolfolk – Educational Psychology – Pearson Education
  • J. W. Santrock – Educational Psychology – Mc Gray Hill
  • J. C. Aggarwal – Essentials of Educational Psychology – Vikas publisher
  • S. K. Mangal – Essentials of Educational Psychology – PHI Ltd.
  • S. K. Mangal – Advanced Educational Psychology – PHI Ltd
  • S. S. Chauhan – Advanced Educational Psychology – Vikas publisher
  • E. B. Hurlock – Child Development – Anmol Publication Pvt. Ltd
  • L. E. Berk – Child Development – PHI Ltd
  • Internet Sources

প্রশ্ন – শিখনের দুটি বৈশিষ্ট্য

উত্তর – শিখনের দুটি বৈশিষ্ট্য হল –
১. শিখন হল ধারাবাহিক অভিজ্ঞতা লাভের প্রক্রিয়া এবং
২. শিখন হল অনুশীলন নির্ভর প্রক্রিয়া।

আরোও পড়ুন

close