সাধারণভাবে মনোবিদ্যা হল মনের বিজ্ঞান। মনোবিদগণ বিভিন্নভাবে ও বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেছেন। তাই মনোবিদ্যার বিভিন্ন সংজ্ঞা (Definition of Psychology) পরিলক্ষিত হয়।
মনোবিদ্যা কাকে বলে | Definition of Psychology
ইংরাজি ‘Psychology’ শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ‘Psyche’ এবং ‘Logos’ থেকে এসেছে। যাদের অর্থ হল যথাক্রমে ‘আত্মা’ (Soul) এবং বিজ্ঞান (Science)। অর্থাৎ সাইকোলজি বা Psychology শব্দের অর্থ হল – আত্মার বিজ্ঞান।
মনোবিদ্যার ধারণাগত পরিবর্তন
মনোবিদ্যাকে বিশ্লেষণ করলে এর কয়েকটি ধারা পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ মনোবিদ্যার ধারণাগত পরিবর্তন মনোবিজ্ঞানের সংজ্ঞার বিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে, সেগুলি হল –
মনের বিজ্ঞান
মনোবিদ্যাকে প্রথমে আত্মার বিজ্ঞান বলা হলেও পরবর্তীকালে এই ধারণার পরিবর্তন সাধন হয়। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট মনোবিদ হোল্ডিং বলেছেন – মনোবিদ্যা হল মনের বিজ্ঞান। (Psychology is the science of mind)
চেতনার বিজ্ঞান
পরবর্তীকালে বিভিন্ন মনোবিদ মনোবিদাকে মনের বিজ্ঞান হিসাবে শব্দটি ব্যবহারের আপত্তি করেন। কারণ তারা বলেন আত্মার মত মনেরও নিরীক্ষণ ও স্পর্শ করা যায় না। তাই এই ধারণাটি সার্বজনীন হয়নি। এই ধারণাটির পরিবর্তে মনোবিদগণ বলেন – মনোবিদ্যা হল চেতনার বিজ্ঞান।
এ প্রসঙ্গে এঞ্জেল বলেছেন – মনোবিদ্যা হল চেতনার বিজ্ঞান (Psychology is the science of consciousness.)
আচরণের বিজ্ঞান
এটি মনোবিদ্যার ধারণার ক্ষেত্রে অন্যতম আধুনিক এবং সর্বজন স্বীকৃত ধারণা। পরবর্তীকালে বিভিন্ন মনোবিদগণ মনোবিদ্যাকে আচরণের বিজ্ঞান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ হিসেবে তারা বলেছেন যে মানুষের আচরণের মধ্যে মানসিক ক্রিয়া-কলাপ পরিলক্ষিত হয়।
বিশিষ্ট মনোবিদ ওয়াটসন (Watson), ম্যাকডুগাল (Mc.Dougall), উডওয়ার্থ (Woodworth) প্রমুখ মনোবিদগণ মনোবিদ্যাকে আচরণের বিজ্ঞান হিসেবে চিহ্নিতকরণ করেছেন।
মনোবিজ্ঞান কে আচরণের বিজ্ঞান বলা হয় কেন
মনোবিজ্ঞানের ধারণার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে আধুনিক মনোবিদগণ মনোবিজ্ঞানকে আচরণের বিজ্ঞান হিসেবে চিহ্নিতকরণ করেছেন।
বিশিষ্ট মনোবিদ ভুন্ড (Wond) সর্বপ্রথম ১৮৭৫ সালে জার্মানির লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয় মনোবিজ্ঞানের অনুশীলনের জন্য পরীক্ষাগার স্থাপন করেন। তাই তাকে আধুনিক মনোবিজ্ঞানের জনক বলা হয় এবং এখান থেকেই মনোবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান ভিত্তিক করে তোলার চেষ্টা করা হয় এবং মনোবিজ্ঞান আচরণের বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
মনোবিজ্ঞান কে আচরণের বিজ্ঞান বলা হয় কেন তার কারণ গুলি হল, নিম্নলিখিত –
1. মনোবিজ্ঞান হল প্রাণীর আচরণের অনুশীলনকারী বিজ্ঞান।
2. মনোবিজ্ঞান হল পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণ সাপেক্ষ।
3. আচরণ হল প্রাণীর এবং পরিবেশের মিথস্ক্রিয়ার ফল
4. মনোবিজ্ঞানে ব্যক্তির দৈহিক ও মানসিক উভয় ধরনের প্রক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করা হয়।
5. মনোবিজ্ঞান হল বিষয়নিষ্ঠ বা আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান।
আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now |
উপসংহার (Conclusion)
পরিশেষে বলা যায়, মনোবিজ্ঞান বা মনোবিদ্যা হলো এমন একটি বিজ্ঞান যেটি প্রাণীর আচরণ সম্বন্ধীয় প্রভৃতির ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার নির্ণয়ের মাধ্যম বিচার বিশ্লেষণ করে থাকে। তাই মনোবিজ্ঞান হল এমন একটি বিজ্ঞান যার সাহায্যে মানুষের বা ব্যক্তির আচার-আচরণের বিচারবিশ্লেষণ করার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পূর্বাভাস দেয়া সম্ভবপর হয়।
তথ্যসূত্র (Reference)
- A. Woolfolk – Educational Psychology – Pearson Education
- J. W. Santrock – Educational Psychology – Mc Gray Hill
- J. C. Aggarwal – Essentials of Educational Psychology – Vikas publisher
- S. K. Mangal – Essentials of Educational Psychology – PHI Ltd.
- S. K. Mangal – Advanced Educational Psychology – PHI Ltd
- S. S. Chauhan – Advanced Educational Psychology – Vikas publisher
- E. B. Hurlock – Child Development – Anmol Publication Pvt. Ltd
- L. E. Berk – Child Development – PHI Ltd
- Internet Sources
প্রশ্ন – মনোবিদ্যা বলতে কী বোঝো
উত্তর – মনোবিদ্যা হল প্রাণীর আচরণের বিজ্ঞান। মনোবিদ্যার সংজ্ঞায় Mc.Dougall বলেছেন – মনোবিদ্যা হল প্রাণীর আচরণের বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান।
প্রশ্ন – মনোবিজ্ঞান কাকে বলে
উত্তর – বি. এফ. স্কিনার (Skinner) বলেছেন – মনোবিজ্ঞান হল আচরণ ও অভিজ্ঞতার বিজ্ঞান। (Psychology is the science of behaviour and experience.”)
প্রশ্ন – মনোবিজ্ঞান হলো আচরণের বিজ্ঞান এটি কে বলেছেন
উত্তর – মনোবিজ্ঞান হলো আচরণের বিজ্ঞান এটি বলেছেন – ওয়াটসন (Watson)
প্রশ্ন – আধুনিক মনোবিজ্ঞানের জনক কে
উত্তর – বিশিষ্ট মনোবিদ ভুন্ড (Wond) সর্বপ্রথম ১৮৭৫ সালে জার্মানির লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয় মনোবিজ্ঞানের অনুশীলনের জন্য পরীক্ষাগার স্থাপন করেন। তাই তাকে আধুনিক মনোবিজ্ঞানের জনক বলা হয়
আরোও পড়ুন
- শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ | বৃদ্ধি ও বিকাশের মধ্যে পার্থক্য | 10 Difference Between Growth and Development
- বৃদ্ধি কাকে বলে | বৃদ্ধির বৈশিষ্ট্য | 4 Definition of Growth
- বৃদ্ধি ও বিকাশের বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Growth and Development
- জীবন বিকাশের বিভিন্ন স্তর গুলি আলোচনা কর | 4 Stages of Human Development
- শিখন কাকে বলে | শিখনের বৈশিষ্ট্য | 5 Definition and Characteristics of Learning
- ব্যক্তিত্ব কাকে বলে | ভালো ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য (5 Definition and Characteristics of Personality)
1 thought on “মনোবিদ্যা কাকে বলে | মনোবিজ্ঞান কে আচরণের বিজ্ঞান বলা হয় কেন | 10 Definition of Psychology”