প্রেষণা কাকে বলে | প্রেষণার প্রকারভেদ | 5 Definition and Types of Motivation

প্রতিটি ব্যক্তির জীবনে কিছু না কিছু চাহিদা পরিলক্ষিত হয়। এই চাহিদা থেকে জন্ম হয় তাড়না, অভাব বোধ বা লক্ষ্য পূরণের আকাঙ্ক্ষা। এর ফলে ব্যক্তি চাহিদা পূরণের জন্য সচেষ্ট হয়। মনোবিদগণ এটিকে প্রেষণা (Motivation) হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রেষণা একটি আভ্যন্তরীণ মানসিক প্রক্রিয়া। যা প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে কম বেশি পরিলক্ষিত হয়। কোনো ব্যক্তির চাহিদার বা আকাঙ্ক্ষার উপর নির্ভর করে প্রেষণা। মনোবিদগণ বলেন মানুষের সমস্ত আচরণের পেছনে যা ক্রিয়াশীল তাই হল প্রেষণা। এখানে প্রেষণা কাকে বলে ও প্রেষণার প্রকারভেদ গুলি কি তা আলোচনা করা হল।

প্রেষণা কাকে বলে | Definition of Motivation

ইংরাজি ‘Motivation’ শব্দটি To move ক্রিয়াপদ থেকে এসেছে যার অর্থ হল – গতিশীল বা গতিশীলতা দান করা। অর্থাৎ প্রেষণা হল এক ধরনের প্রেরণা বা শক্তি (force) যা ব্যক্তিকে কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য অভিমুখী আচরণ সম্পন্ন করতে সহায়তা করে থাকে।

প্রেষণা (Motivation) সম্পর্কিত মনোবিদগণের প্রদত্ত সংজ্ঞা গুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল –

1. বিশিষ্ট মনোবিদ ব্যারন (Baron) বলেছেন – প্রেষণা হল একটি শক্তি যা ব্যক্তিকে লক্ষ্য অভিমুখী আচরণকে উৎসাহিত ও নির্দেশিত করে। (“Motivation is the force that energies and directs a behaviour towards a goal”.)

2. মনোবিদ সুইফট (Swift) বলেছেন – ব্যক্তির নানান প্রকার চাহিদা পরিতৃপ্তির জন্য যে পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া ব্যক্তির আচরণ ধারাকে সর্বদা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, তাকে প্রেষণা বলা হয়।

3. মনোবিদ উইনার (Weiner) প্রেষণার সংজ্ঞায় যথার্থ বলেছেন – প্রেষণা হল এমন একটি মানসিক অবস্থা যা কোনো ব্যক্তিকে বিশেষ একটি কাজ সম্পন্ন করতে উদ্বুদ্ধ করে, কাজকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমুখী করে এবং লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তিকে সেই কাজে ব্যস্ত রাখে।

4. মনোবিদ কোহেন (Cohen) বলেছেন – প্রেষণা হলে এমন কিছু যা কোন কাজকে উৎসাহিত বা তাড়িত করে এবং যা সেই ব্যক্তি করে বা করতে চায়।

5. আবার বিশিষ্ট মনোবিদ উলফক্‌ বলেছেন – প্রেষণা হলে এমন এক ধরনের মানসিক অবস্থা যা ব্যক্তির কোনো আচরণকে উদ্বুদ্ধ করে, নির্দেশিত করে এবং সংরক্ষণ করে থাকে।

প্রেষণার প্রকারভেদ | Types of Motivation

ব্যক্তি চাহিদার উপর নির্ভর করে বা ব্যক্তির আকাঙ্ক্ষার স্তরের উপর নির্ভর করে প্রেষণার প্রকারভেদ পরিলক্ষিত হয়। এখানে প্রেষণার প্রকারভেদ যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল –

অ) প্রেষণার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রকারভেদ বা শ্রেণীবিভাগ –

1. জৈবিক প্রেষণা

ব্যক্তির যে চাহিদা গুলি দৈহিক দিক থেকে পরিলক্ষিত হয় তাকে জৈবিক প্রেষণা বলে। ক্ষুধা, তৃষ্ণা, খাদ্যের চাহিদা, ঘুমের চাহিদা, মাতৃত্ব প্রভৃতি জৈবিক প্রেষণার অন্তগত। এই ধরনের প্রেষণা সহজাত প্রকৃতির হয়ে থাকে। ব্যক্তির ব্যক্তিগত চাহিদার ভিত্তিতে এই প্রেষণার সৃষ্টি হয়।

2. ব্যক্তিগত প্রেষণা

ব্যক্তির যে প্রেষণা গুলি একান্ত ব্যক্তিগত তাকে ব্যক্তিগত প্রেষণা বলে। ব্যক্তির আত্মসচেতনতামূলক চাহিদা এই ধরনের প্রেষণার অন্তর্ভুক্ত। এই প্রেষণা মানসিক প্রকৃতির। অর্থাৎ ভালবাসার চাহিদা, আত্ম শ্রদ্ধার চাহিদা, আত্ম প্রতিষ্ঠার চাহিদা প্রভৃতি ব্যক্তিগত প্রেষণার অন্তর্গত।

3. সামাজিক প্রেষণা

প্রতিটি মানুষ সামাজিকভাবে জীবন যাপন পালন করে। তাই মানুষকে সমাজবদ্ধ জীব বলা হয়। সাধারণভাবে সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে ব্যক্তি যে সমস্ত চাহিদার সৃষ্টি হয় তাকে সামাজিক প্রেষণা বলে।

এই প্রেষণার অন্তর্গত অন্যতম বিষয় হল – সামাজিক নিরাপত্তা চাহিদা, সম্মানের চাহিদা, সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভের চাহিদা প্রভৃতি। বিশেষ করে সুষ্ঠুভাবে সামাজিকীকরণের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে জীবন যাপন করাই হল সামাজিক প্রেষণা।

আ) উদ্বোধকের ভিত্তিতে প্রেষণার প্রকারভেদ –

4. বাহ্যিক প্রেষণা

বাইরের কোনো উদ্দীপকের প্রভাবে ব্যক্তির মধ্যে যখন কোনো প্রেষণা সৃষ্টি হয়, তখন তাকে বাহ্যিক প্রেষণা বলে। এটি প্রধানত কোনো কিছু পাওয়ার আশায় ব্যক্তি বা শিক্ষার্থীরা কোনো কাজ সম্পন্ন করে থাকে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় – পুরস্কার বা প্রশংসার জন্য শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হওয়া।

5. অভ্যন্তরীণ প্রেষণা

বিভিন্ন মনোবিদগণ প্রেষণার ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ প্রেষণা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। যে প্রেষণা অভ্যন্তরীণভাবে উৎপন্ন হয় তাকে অভ্যন্তরীণ প্রেষণা বলে। অর্থাৎ ব্যক্তির নিজের তাগিদে বা তাড়ণায় কোন কাজ করাকে আভ্যন্তরীণ প্রেষণা বলে। এটি বাহ্যিক প্রেষণার সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী।

উদাহরণস্বর বলা যায় – জ্ঞানার্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পড়াশোনা করা। এক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজের চেষ্টাতে বিষয়টি শেখার চেষ্টা করে।

মনোবিদগণ বলেন প্রেষণার কার্যকারিতার দিক থেকে অভ্যন্তরীণ প্রেষণা একটি নির্ভরযোগ্য ও আদর্শ প্রক্রিয়া। তাই এই প্রেষণার মাধ্যমে ব্যক্তি বা শিক্ষার্থীরা সহজেই সাফল্য লাভ করতে পারে।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, প্রেষণা ব্যক্তির চাহিদা বা তাড়ণার উপর বিশেষভাবে নির্ভর করে থাকে। কোন ব্যক্তি কতটা প্রেষিত হবে তা নির্ভর করে ব্যক্তির সমস্যা বা চাহিদার উপর। এই চাহিদা বা তাড়না বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। যথা – খাদ্যের চাহিদা, ঘুমের চাহিদা, যৌন চাহিদা, অর্থের চাহিদা, সুষ্ঠুভাবে জীবন যাপনের চাহিদা প্রভৃতি।

Educational Psychology – (Siksha Manobidya) – Bengali Version

Educational Psychology Bengali BOOK
  • New CBCS and NEP Syllabus অনুযায়ী লিখিত
  • Bengali Edition  by Adhyapak (Dr.) Bijon Sarkar (Author)
  • Also help Primary TET, CTET, SLST Education UGC NET and WB SET

তথ্যসূত্র (Reference)

  • A. Woolfolk – Educational Psychology – Pearson Education
  • J. W. Santrock – Educational Psychology – Mc Gray Hill
  • J. C. Aggarwal – Essentials of Educational Psychology – Vikas publisher
  • S. K. Mangal – Essentials of Educational Psychology – PHI Ltd.
  • S. K. Mangal – Advanced Educational Psychology – PHI Ltd
  • S. S. Chauhan – Advanced Educational Psychology – Vikas publisher
  • E. B. Hurlock – Child Development – Anmol Publication Pvt. Ltd
  • L. E. Berk – Child Development – PHI Ltd
  • Internet Sources

প্রশ্ন – প্রেষণা কত প্রকার ও কি কি

উত্তর – প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রেষণা – তিন প্রকার। যথা – জৈবিক প্রেষণা, সামাজিক প্রেষণা ও ব্যক্তিগত প্রেষণা। আবার উদ্বোধক এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রেষণা দুই প্রকার। যথা – বাহ্যিক প্রেষণা ও অভ্যন্তরীণ প্রেষণা।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close