সৃজনশীলতা ব্যক্তির একটি অনন্যতা বৈশিষ্ট্য। সৃজনশীল বিকাশের ক্ষেত্রে বিশেষ অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ সৃজনশীলতার প্রতিপালন (Creativity be Nurtured) ব্যক্তিকে আরও সৃজনশীল হতে সহায়তা করে।
সৃজনশীলতা ব্যক্তির মধ্যে নতুনত্বের বা নতুন সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে বিশেষ সাহায্য করে। অর্থাৎ সৃজনশীলতা নতুনত্বের প্রতীক। তাই সৃজনশীলতা প্রতিপালন বা লালন পালন করা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
সৃজনশীলতার প্রতিপালন | Creativity be Nurtured
সৃজনশীলতা প্রতিপালন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সৃজনশীলতা লালন পালন বা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে দুই রকমের পরিবেশের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। এই দুই ধরনের পরিবেশ হল –
i) গৃহ পরিবেশগত দিক এবং
ii) শিক্ষাগত বা বিদ্যালয় পরিবেশগত দিক
গৃহ পরিবেশগত দিক
কোনো শিশুর সৃজনশীলতা প্রতিপালন বা লালন-পালনের ক্ষেত্রে গৃহ পরিবেশগত দিক ও তার প্রভাব বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। গৃহ পরিবেশগত যে সমস্ত উপাদান শিশুর সৃজনশীলতা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে সহায়ক সেগুলি হল নিম্নলিখিত –
1. পিতা মাতার কর্তৃত্বহীন মনোভাব
পিতা-মাতা যখন মুক্ত মনের অধিকারী হন, তখন শিশুর নতুন ধারণা, ভিন্ন মতামত এবং সৃজনশীল প্রচেষ্টাকে বিকশিত হতে সহায়তা করে। অর্থাৎ পিতা-মাতার কর্তৃত্বহীন মনোভাব শিশুর সৃজনশীলতা বিকাশের বা সৃজনশীলতা প্রতিপালনের বিশেষ সহায়ক।
2. সৃজনশীল কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ
সৃজনশীল কাজে শিশুরা যাতে অংশগ্রহণের বেশি করে সুযোগ পায় সেদিকে গৃহ পরিবেশের বিশেষ নজর দিতে হবে। অর্থাৎ পরিবার বিশেষভাবে যুক্ত করার মাধ্যমে শিশুর সৃজনশীলতাকে বিকশিত করতে সহায়তা করবেন।
3. স্বাধীনতা প্রদান
সৃজনশীলতা বিকাশের অন্যতম দিক হল স্বাধীনতা। স্বাধীনতা ছাড়া সৃজনশীলতা প্রতিপালন বা বিকশিত করা কখনোই সম্ভব নয়। তাই শিশুর চিন্তন ক্ষমতা, কার্যকলাপ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশের ক্ষেত্রে পরিবারের স্বাধীনতা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
4. সৃজনশীলতা শনাক্তকরণ
শিশুর সৃজনশীলতা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে অন্যতম দিক হল শিশুর মধ্যে থাকা সৃজনশীলতার শনাক্তকরণ করা। এক্ষেত্রে শিশুর সৃজনশীলতা কোন দিকে প্রকাশ পায় বা শিশুর আগ্রহ কোন দিকে তা পরিবারের সনাক্তকরণ করা খুবই প্রয়োজন।
আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now |
শিক্ষাগত বা বিদ্যালয় পরিবেশগত দিক
সৃজনশীলতা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে গৃহ পরিবেশগত দিক বা পিতামাতার ভূমিকার পর শিক্ষাগত বা বিদ্যালয় পরিবেশগত দিকের বিশেষ ভূমিকা বর্তমান। অর্থাৎ বিদ্যালয় বা শিক্ষালয় শিশুর সৃজনশীলতা প্রতিপালন বা লালন পালনের অন্যতম মাধ্যম। এক্ষেত্রে শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের পঠন-পাঠনের উপর সৃজনশীলতার প্রতিপালন নির্ভর করে থাকে।
সাধারণভাবে বিদ্যালয় শিশুর সৃজনশীলতা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এগুলি হল নিম্নলিখিত –
1. বৈচিত্রধর্মী শিক্ষাপদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষাদান
শিক্ষা পদ্ধতির মধ্যে বৈচিত্র আনার মাধ্যমে শিশুদের সৃজনশীলতার প্রতিপালন বা লালন-পালন করা সম্ভব। অর্থাৎ বিদ্যালয়ে গতানুগতিক পাঠদান পদ্ধতির পরিবর্তে বৈচিত্রধর্মী শিক্ষাপদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষাদান শিশুর সৃজনশীলতা বিকাশের বিশেষ সহায়ক।
2. দলগত শিখন
শিশুর সৃজনশীলতা প্রতিপালন ও বিকাশের ক্ষেত্রে দলগত শিখন বিশেষ কার্যকরী। অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা যদি দলগতভাবে কোনো কিছু কাজ সম্পন্ন করে তাহলে তাদের সৃজনশীলতা বিকশিত হবে।
3. মত প্রকাশের সুযোগ
শিশুর সৃজনশীলতা বিকাশের ক্ষেত্রে মত প্রকাশের সুযোগ একটি অন্যতম দিক। অর্থাৎ বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও মত প্রকাশের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করবেন। যার ফলে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকশিত হবে।
4. মনোবিজ্ঞানসম্মত পাঠক্রম
বিদ্যালয় মনোবিজ্ঞানসম্মত পাঠক্রম শিশুর সৃজনশীলতা বিকাশের সহায়ক। অর্থাৎ সৃজনশীলতা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে বিদ্যালয় শিশুর মনোবিজ্ঞানসম্মত ও আধুনিক পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষাদান করবে।
5. শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা দান
সৃজনশীলতা প্রতিপালন ও বিকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা দান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিদ্যালয় যদি শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা দেয় তাহলে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকশিত হবে।
এগুলি ছাড়াও সৃজনশীলতা প্রতিপালন বা লালন-পালনের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের আরোও যে সমস্ত ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়, তা হল –
i) আলোচনা সভার আয়োজন করা বা বিতর্ক সভার আয়োজন করা,
ii) Brain Storming Question -এর ব্যবস্থা করা,
iii) শিক্ষার্থীদের আবিষ্কারের সুযোগ দেওয়া,
iv) শিক্ষার্থীদের কোনো কাজে মোটিভেট করা বা প্রেষণা দান করা প্রভৃতি।
উপসংহার (Conclusion)
পরিশেষে বলা যায়, সৃজনশীলতা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে পরিবার ও বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বর্তমান। কেবলমাত্র পরিবারই নয় পরিবারের পাশাপাশি বিদ্যালয় শিশুর সৃজনশীলতা প্রতিপালন বা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ বিদ্যালয়কে সমাজের প্রতিচ্ছবি হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই পরিবারের পাশাপাশি বিদ্যালয়ও শিশুর সৃজনশীলতা বিকাশের সহায়ক।
তথ্যসূত্র (Reference)
- A. Woolfolk – Educational Psychology – Pearson Education
- J. W. Santrock – Educational Psychology – Mc Gray Hill
- J. C. Aggarwal – Essentials of Educational Psychology – Vikas publisher
- S. K. Mangal – Essentials of Educational Psychology – PHI Ltd.
- S. K. Mangal – Advanced Educational Psychology – PHI Ltd
- S. S. Chauhan – Advanced Educational Psychology – Vikas publisher
- E. B. Hurlock – Child Development – Anmol Publication Pvt. Ltd
- L. E. Berk – Child Development – PHI Ltd
- Internet Sources
প্রশ্ন – সৃজনশীলতার প্রতিপালন কি
উত্তর – সৃজনশীলতার প্রতিপালন হল শিশুর মধ্যে যে সুপ্ত সম্ভাবনা আছে বা সৃজনশীলতা রয়েছে সেগুলি যথাযথভাবে বিকশিত করা। অর্থাৎ সৃজনশীলতা প্রতি পালনের মাধ্যমে শিশুর সৃজনশীলতার বিকাশ সাধন করা। যার মাধ্যমে শিশুর মধ্যে সৃজনশীল চিন্তাভাবনা বিকশিত হয়।
প্রশ্ন – কোন বয়সে বাচ্চারা সবচেয়ে সৃজনশীল হয়?
উত্তর – সাধারণত চার থেকে ৬ বছরের বাচ্চারা থেকে বেশি সৃজনশীল প্রকৃতির হয়ে থাকে।
আরোও পড়ুন
- মনোযোগ কাকে বলে | শিক্ষাক্ষেত্রে মনোযোগের ভূমিকা | Attention in Psychology
- শিখন সঞ্চালনের তত্ত্ব | Theory of Transfer of Learning
- শিখন সঞ্চালনের প্রকারভেদ | Types of Transfer of Learning
- আগ্রহ কাকে বলে | শিক্ষাক্ষেত্রে আগ্রহের গুরুত্ব লেখ | Interest in Psychology
- শিখন সঞ্চালন কাকে বলে | শিখন সঞ্চালনের বৈশিষ্ট্য | Transfer of Learning
- শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের পদ্ধতি | Methods of Educational Psychology