শিক্ষাগত নির্দেশনা কাকে বলে | শিক্ষাগত নির্দেশনার উদ্দেশ্য | Educational Guidance

নির্দেশনার বিভিন্ন ধরনের মধ্যে শিক্ষাগত নির্দেশনা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে থাকে। তাই শিক্ষাগত নির্দেশনা (Educational Guidance) বিশেষভাবে উপযোগী।

সাধারণভাবে শিক্ষামূলক নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ উপযোগী। কারণ এই নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত যাবতীয় বিষয় ও সমস্যা জানতেও বুঝতে সাহায্য করে থাকে। এখানে শিক্ষাগত নির্দেশনা কাকে বলে? শিক্ষাগতা নির্দেশনার উদ্দেশ্য কি? সেগুলি আলোচনা করা হল।

শিক্ষাগত নির্দেশনা কাকে বলে | Educational Guidance

যে নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাক্ষেত্রে নানান ধরনের সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে থাকে, তাকে শিক্ষাগত নির্দেশনা বলে। অর্থাৎ শিক্ষাগতম নির্দেশনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সঙ্গে পরিচয় করন বা শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিবেধানে সহায়তা করে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় – কোনো শিক্ষার্থী কি ধরনের কোর্স বা বিষয় নির্বাচন করবে, সেই কোর্সের ভবিষ্যৎ কি বা কিভাবে সেই কোর্স সম্পূর্ণ করা যাবে সেই সম্পর্কে যাবতীয় নির্দেশনা দান করাই হল শিক্ষাগত নির্দেশনা বা শিক্ষামূলক নির্দেশনা।

তাই শিক্ষার্থীদের নিজস্ব আগ্রহ, প্রবণতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষার বিভিন্ন দিকে সহায়তা করাই হল শিক্ষাগত নির্দেশনা অন্যতম দিক।

শিক্ষাগত নির্দেশনার সংজ্ঞা

শিক্ষাগত নির্দেশনা সংজ্ঞা বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল –

1. মনোবিদ জোন্স (Jones) বলেছেন – শিক্ষাগত নির্দেশনা হল এমন এক ধরনের সাহায্যমূলক কর্মসূচি যেটি বিদ্যালয়, পাঠক্রম, বিষয় বা কোর্স এবং বিদ্যালয়ে জীবনের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে ক্ষেত্রে সঙ্গতি-বিধানে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করে থাকে।

2. আবার মনোবিদ Brewer বলেছেন – “Educational Guidance is a conscious effort to assist in the intellectual growth of an individual.” অর্থাৎ শিক্ষাগত নির্দেশনা হল ব্যক্তির বুদ্ধিভিত্তিক বিকাশে সহায়তা করার জন্য একটি সচেতন মূলক প্রচেষ্টা।

সুতরাং শিক্ষাগত নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জগতের সঙ্গে যথাযথভাবে পরিচয় করনে সাহায্য করে এবং শিক্ষার যাবতীয় সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

শিক্ষাগত নির্দেশনার উদ্দেশ্য

শিক্ষাগত নির্দেশনার উদ্দেশ্য বহুবিধ। শিক্ষাগত নির্দেশনা উদ্দেশ্য যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয় সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

1. শিক্ষার্থীদের উপযোগী শিক্ষা গ্রহণের সহায়তা করা এই নির্দেশনার অন্যতম উদ্দেশ্য।

2. শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা শিক্ষামূলক নির্দেশনার প্রধান উদ্দেশ্য।

3. শিক্ষার্থীদের সঠিক বিষয় নির্বাচনের সাহায্য করা এবং ভবিষ্যতের শিক্ষার্থীরা কিভাবে পড়াশোনা করবে সে সম্পর্কে এই নির্দেশনা বিশেষভাবে সাহায্য করে।

4. শিক্ষার পাঠক্রমের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় ঘটানো।

5. শিক্ষার্থীদের সুপ্ত সম্ভাবনার বিকাশ সাধন করা।

6. বিদ্যালয় বা শিক্ষার কোর্স সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের পরিচিতি করণ করানো। অর্থাৎ কোন কোর্সের মেয়াদ কত দিন বা কিভাবে কোর্সটি সম্পূর্ণ করা যাবে সে সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা।

7. শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয়তা, আগ্রহ ও সামর্থ্য অনুযায়ী পাঠক্রম এবং সহপাঠক্রমের কার্যাবলী নির্বাচন করতে সহায়তা করা শিক্ষামূলক নির্দেশনা অন্যতম উদ্দেশ্য।

8. শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা গুলি চিহ্নিতকরণ ও সেই অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা এই নির্দেশনার উদ্দেশ্য।

9. শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজন করানো বা সংহতিবিধান করানো এই নির্দেশনার উদ্দেশ্য।

10. শিক্ষার্থীরা যাতে শিক্ষার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ জীবনের উপযোগী হয়ে গড়ে ওঠে সেই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সহায়তা দান করা হল শিক্ষাগত নির্দেশনা অন্যতম উদ্দেশ্য।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

শিক্ষাগত নির্দেশনার কার্যাবলী

শিক্ষাগত নির্দেশনার কার্যাবলী যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল –

1. শিক্ষার্থীদের সঠিক মনোভাব গঠনের সাহায্য করা।

2. শিক্ষার্থীদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহী ও মনোযোগী করে গড়ে তোলা।

3. যথাযথ সহপাঠক্রমে কার্যাবলীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সাধন করা।

4. উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সমাজ উপযোগী করে গড়ে তোলা।

5. শিক্ষার্থীদের আত্মসচেতন হতে সহায়তা করা।

6. শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতার মূল্যায়ন করতে সাহায্য করা।

7. দুর্বল শিক্ষার্থীদের চিহ্নিতকরণ ও তাদের জন্য বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

8. শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলা।

9. উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রস্তুতিতে সাহায্য করা.

10. শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনের উপযোগী করে গড়ে তোলা। যার ফলে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারে।

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য বহুবিধ। ফলে আধুনিক শিক্ষা বর্তমানে জটিল হয়ে পড়ছে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষার মাধ্যমে কিভাবে লক্ষ্যে পৌঁছাবে তা স্থির করতে অনেকে ব্যর্থ হচ্ছে। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষামূলক নির্দেশনার প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ শিক্ষামূলক নির্দেশনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত যাবতীয় সমস্যা যথাযথভাবে সমাধান করা সম্ভবপর হয়।

তথ্যসূত্র (Reference)

  • Basu, N.C. Educational and Vocational Guidance.
  • Chauhan, S.S. – Principles and Techniques of Guidance.
  • Dave Indu – The Basic Essentials of Counseling.
  • Kocher, S.K. – Guidance and Counselling in Secondary School
  • NCERT- Guidance and Counseling.

প্রশ্ন – শিক্ষাগত নির্দেশনার বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ

উত্তর – শিক্ষাগত নির্দেশনার বৈশিষ্ট্য গুলি হল – শিক্ষাগত নির্দেশনা নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে কেন্দ্রিক, সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন মূলক, মানবসম্পদ যথাযথ ব্যবহার, সমস্যা সমাধান মূলক, মনোবিজ্ঞান সম্মত, মিথস্ক্রিয়া মূলক, ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, সম্পূর্ণ শিক্ষাগত প্রভৃতি।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close