বুদ্ধির অভীক্ষা কি | বুদ্ধির অভীক্ষার ব্যবহার | Intelligence Test

বুদ্ধি হল এমন একটি মানসিক প্রক্রিয়া যেটিকে পরিমাপ করা ও ব্যাখ্যা করা যায়। বুদ্ধি পরিমাপের জন্য তাই বুদ্ধির অভিক্ষার (Intelligence Test) জন্ম হয়েছে।

প্রাচীনকালে বুদ্ধির পরিমাপের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু মনোবিজ্ঞানের ধারণার বিস্তার লাভের সাথে সাথে অন্যান্য মানসিক ক্ষমতার মতো বুদ্ধিকে একটি মানসিক ক্ষমতা হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং বিভিন্ন মনোবিদগণ বুদ্ধি পরিমাপ করতে সচেষ্ট হন। এখানে বুদ্ধির অভীক্ষা কি, বুদ্ধির অভীক্ষার প্রকারভেদ এবং বুদ্ধির অভীক্ষার প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হল।

বুদ্ধির অভীক্ষা কি | Intelligence Test

ব্যক্তি বা শিক্ষার্থীর মানসিক দিককে পরিমাপের জন্য যার সাহায্য নেওয়া হয়, তাকে বলে অভীক্ষা। আর অন্যদিকে শিক্ষার্থীর বা ব্যক্তির মানসিক দিক হিসাবে বুদ্ধির পরিমাপ করার জন্য যে কৌশল অবলম্বন করা হয় তাকে বলা হয় বুদ্ধির অভীক্ষা।

বুদ্ধি একটি পরিমাপযোগ্য মানসিক প্রক্রিয়া। বুদ্ধি পরিমাপের উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে প্রস্তুত প্রশ্নের সমাহারকে বুদ্ধির অভীক্ষা বলে।

সর্বপ্রথম বুদ্ধির অভিক্ষার কথা বলেন বিখ্যাত ফরাসি মনোবিদ্‌ ও চিকিৎসক আলফ্রেড বিঁনে (Alfred Binet)। বিজ্ঞানসম্মতভাবে ১৯০৫ সালে সর্বপ্রথম বুদ্ধির অভিক্ষার প্রয়োগ করা হয়।

বুদ্ধির অভীক্ষার প্রকারভেদ (Types of Intelligence Test)

প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত বুদ্ধি পরিমাপের বিভিন্ন অভিক্ষা পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন প্রকার বুদ্ধির অভিক্ষার মধ্যে প্রচলিত বুদ্ধির অভিক্ষার প্রকারভেদ উল্লেখ করা হল –

বুদ্ধির অভিক্ষার নামউদ্ভাবকসালপ্রকৃতি
বিঁনে-সাইমন স্কেল (Binet-Simon Scale)বিঁনে ও সাইমন (Binet-Simon)1905ব্যক্তিগত (ভাষাভিত্তিক)
আর্মি বিটা ইন্টেলিজেন্স টেস্ট (Army Beta Intelligence Test)রবার্ট ইয়ারকেস (Robert Yerkes)1917দলগত (ভাষাবিহীন)
আর্মি আলফা ইন্টেলিজেন্স টেস্ট (Army Alpha Intelligence Test)রবার্ট ইয়ারকেস (Robert Yerkes)1918দলগত (ভাষাভিত্তিক)
ডিয়ারবর্নের ফর্ম বোর্ড টেস্ট (Dearborn’s Form Board Test)ডিয়ারবর্ন (Walter F. Dearborn)1922ব্যক্তিগত (ভাষাবিহীন)

বুদ্ধির অভীক্ষার ব্যবহার

বুদ্ধির অভীক্ষা বিভিন্ন ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। বুদ্ধির অভীক্ষার ব্যবহার যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল –

1. কর্মী নিয়োগ

বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের প্রয়োজন হয়। তাই কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বুদ্ধির অভীক্ষার ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানিতে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বুদ্ধির অভীক্ষার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাছাড়া প্রশাসনিক উচ্চপদে যেমন – ম্যানেজার, আইপিএস অফিসার প্রভৃতিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় বুদ্ধির পরিমাপ করা হয়ে থাকে।

2. প্রতিবন্ধী বা ব্যতিক্রমী শিশুদের চিহ্নিতকরণ

প্রতিবন্ধী বা ব্যতিক্রমী শিশুদের চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে বুদ্ধির অভীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বর্তমান। তাই শিক্ষা ক্ষেত্রে কোনো শিক্ষার্থীর বুদ্ধ্যাংক আগে থেকে জানা থাকলে শিক্ষাদান কার্য অনেক বেশি সহজে সম্পন্ন করা সম্ভবপর হবে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের বুদ্ধি সম্পর্কে শিক্ষকের ধারণা থাকলে শিক্ষার্থীদের বুঝতে ও শিক্ষার্থীদের আচরণ অনুশীলন করতে শিক্ষকের কাছে সহজ হয়। ফলে শিক্ষক মহাশয় শিক্ষার্থীদের বুদ্ধির স্তর অনুযায়ী শিক্ষাদান করতে পারেন।

3. নির্দেশনা ও পরামর্শদানের জন্য

নির্দেশনা ও পরামর্শদানের জন্য বুদ্ধির অভীক্ষা বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়। কারণ বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের আচরণগত, ব্যক্তিগত বা শিক্ষাগত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে এই সমস্ত সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য নির্দেশনা ও পরামর্শদানের প্রয়োজন হয়। তাই বুদ্ধির অভীক্ষার ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বুদ্ধি স্তর অনুযায়ী এই সমস্যা সমাধান করা সহজসাধ্য হয়।

4. শিক্ষা ও মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণায়

বর্তমানে শিক্ষা ও মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণায় বুদ্ধির অভীক্ষার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কারণ শিক্ষা ও মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণায় শিক্ষার্থীদের বুদ্ধির মাত্রা অনুযায়ী গবেষণা কাজ সম্পন্ন করা বা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সহজ স্বাস্থ্য হয়। তাছাড়া অনেক গবেষণায় বুদ্ধিকে একটি চলক হিসাবে ব্যবহারের মাধ্যমে গবেষণা কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় – শিক্ষার্থীদের বুদ্ধির সাথে শিখনের সম্পর্ক কি? বা বুদ্ধির ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কি? ইত্যাদি।

5. শিখন অক্ষম শিক্ষার্থীদের চিহ্নিতকরণ

শিখন অক্ষম শিক্ষার্থীদের সহজে চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে বুদ্ধির অভীক্ষার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন – যে সমস্ত শিক্ষার্থীদের বুদ্ধাংক ৭০ বা এর নীচে সেই সমস্ত শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ শিক্ষার প্রয়োজন হয়।

6. শিক্ষার্থীদের শ্রেণীবিন্যাসকরণ

শিক্ষার্থীদের বুদ্ধি অনুযায়ী শ্রেণীবিন্যাস করণ করতে ও শিক্ষাদানের কাজ সহজসাধ্য করতে বর্তমানে বুদ্ধের অভিক্ষার ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। তাই বুদ্ধির মাত্রা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের শ্রেণীবিন্যাসের মাধ্যমে তাদের সহজে শিক্ষাদান করার ক্ষেত্রে বুদ্ধির অভীক্ষা অত্যন্ত প্রয়োজন।

7. বৃত্তিমূলক নির্দেশনা

বৃত্তিমূলক নির্দেশনার ক্ষেত্রে বুদ্ধির অভীক্ষার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি কোন ব্যক্তির জন্য উপযুক্ত তা নির্ণয় করার জন্য বুদ্ধির অভীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সেনাবাহিনী নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আর্মি আলফা ইন্টেলিজেন্ট টেস্ট এবং আর্মি বিটা ইন্টেলিজেন্ট টেস্ট নামক এই দুটি বুদ্ধির অভিক্ষা ব্যবহার করা হয়েছিল।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, বুদ্ধির অভীক্ষা এমন একটি পরিমাপ যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির কতটা বুদ্ধি রয়েছে বা কোনো ব্যক্তি কতটা বুদ্ধিমান তা সহজে নির্ণয় করা যায়। প্রাচীনকালে বুদ্ধির পরিমাপের কোনো অভীক্ষা প্রচলিত ছিল না। ১৯০৫ সালে বিনের বুদ্ধির অভিক্ষার আবিষ্কারের পর থেকে বুদ্ধির পরিমাপের প্রাথমিক সূচনা হয় এবং এখনো পর্যন্ত বুদ্ধির পরিমাপের অনেক নির্ভরযোগ্য অভীক্ষা আবিষ্কার হয়েছে।

তথ্যসূত্র (Reference)

  • A. Woolfolk – Educational Psychology – Pearson Education
  • J. W. Santrock – Educational Psychology – Mc Gray Hill
  • J. C. Aggarwal – Essentials of Educational Psychology – Vikas publisher
  • S. K. Mangal – Essentials of Educational Psychology – PHI Ltd.
  • S. K. Mangal – Advanced Educational Psychology – PHI Ltd
  • S. S. Chauhan – Advanced Educational Psychology – Vikas publisher
  • E. B. Hurlock – Child Development – Anmol Publication Pvt. Ltd
  • L. E. Berk – Child Development – PHI Ltd
  • Internet Sources

প্রশ্ন – বুদ্ধির অভীক্ষার দুটি ব্যবহার লেখ

উত্তর – বুদ্ধির অভীক্ষার দুটি ব্যবহার হল – শিক্ষার্থীদের বুদ্ধি অনুযায়ী বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করার ক্ষেত্রে এবং ব্যতিক্রমিক শিশুদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে।

প্রশ্ন – বুদ্ধির অভীক্ষা কাকে বলে

উত্তর – যে অভীক্ষার দ্বারা কোনো ব্যক্তির মধ্যে কতটা বুদ্ধি রয়েছে বা কোনো ব্যক্তি কতটা বুদ্ধিমান তা পরিমাপ করাকে বুদ্ধির অভীক্ষা বলে।

প্রশ্ন – সাধারণ মানুষের গড় বুদ্ধাঙ্ক কত

উত্তর – সাধারণ মানুষের গড় বুদ্ধাঙ্ক 90 থেকে 110 পর্যন্ত।

প্রশ্ন – Iq শব্দটি কে প্রথম ব্যবহার করেন

উত্তর – Iq শব্দটি কে প্রথম ব্যবহার করেন জার্মান মনোবিদ্‌ স্টার্ন (William Stern) 1912 সালে।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close