Share on WhatsApp Share on Telegram

শিশুর শিক্ষায় বংশগতি ও পরিবেশের ভূমিকা | Role of Heredity and Environment in Child Development

Join Our Channels

বংশগতি ও পরিবেশ হল শিশুর জীবন বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তাই শিশুর শিক্ষায় বংশগতি ও পরিবেশের ভূমিকা (শিশুর শিক্ষায় বংশগতি ও পরিবেশের ভূমিকা | Role of Heredity and Environment in Child Development) বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুর শিক্ষায় বংশগতি ও পরিবেশের ভূমিকা | Role of Heredity and Environment in Child Development

মানব শিশু জন্ম মুহূর্তে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী জন্মসূত্রে পেয়ে থাকে। আর অপরদিকে শিশু যে পরিবেশে জন্মগ্রহণ করে সেই পরিবেশেই তার সামগ্রিক বিকাশ সম্ভব হয়। অর্থাৎ শিশু জন্মের সময় পিতা-মাতা ও পূর্বপুরুষের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যে বৈশিষ্ট্য গুলি অর্জন করে, সেগুলি তার বংশগতি এবং পরিবেশ হল আমাদের চারিপাশের অবস্থিত পারিপার্শ্বিক জীব ও জড় প্রকৃতি।

বংশগতির সংজ্ঞা ও পরিবেশের সংজ্ঞা

বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী স্টোন বংশগতির সংজ্ঞায় বলেছেন – “শিশু জন্মের সময় পিতা-মাতা বা পূর্বপুরুষের কাছ থেকে যে সকল দৈহিক মানসিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করে, তার সমবায় হল বংশগতি”।

আবার বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী স্টোন পরিবেশের সংজ্ঞায় বলেছেন – ” পরিবেশ হলো সেই সকল জৈব উদ্দীপক, যা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত শিশুকে বেষ্টন করে রাখে”।

শিশুর শিক্ষায় বা শিশুর জীবন বিকাশের ক্ষেত্রে বংশগতি ও পরিবেশ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অর্থাৎ বংশগতি ও পরিবেশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শিশুর সামগ্রিক বিকাশ সম্ভব হয়। তাই শিশুর বিকাশে বা শিশুর শিক্ষায় বংশগতি ও পরিবেশের ভূমিকা গুলি হল নিম্নলিখিত –

শারীরিক বিকাশ সাধন

শিশুর শারীরিক বিকাশের ক্ষেত্রে বংশগতি ও পরিবেশের ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ শিশুর শারীরিক গঠন বৈশিষ্ট্য বংশগতি সূত্রে অর্জিত হয় এবং পরিবেশের মাধ্যমে সে শারীরিকভাবে সুস্থ সবল ভাবে গড়ে উঠতে পারে।

মানসিক বিকাশ সাধন

মানসিক বিকাশ সাধনের ক্ষেত্রে বংশগতি ও পরিবেশ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ পারিবারিক পরিবেশ, পারিবারিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য শিশু মানসিক বিকাশের সহায়ক। এক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস বা বংশগতি এবং পারিপার্শ্বিক পারিবারিক পরিবেশ শিশুর সুস্থ মানসিক বিকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

সৃজনশীলতার বিকাশ

শিশুর সৃজনশীলতার বিকাশ বা প্রকাশ বংশগতির সূত্র থেকে এবং পরিবেশের প্রভাবে হয়ে থাকে। অর্থাৎ সৃজনশীলতার বিকাশে বংশগতি ও পরিবেশ উভয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই যে শিশু যে পরিবেশে জন্মগ্রহণ করে ও যে বংশে জন্মগ্রহণ করে সেই অনুযায়ী তার সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যদি আফ্রিকার জঙ্গলে জন্মগ্রহণ করতেন তাহলে সাহিত্যক্ষেত্রে তাঁর অবদান ও সৃজনশীলতার বিকাশ হয়তো ঘটা সম্ভব হতো না।

ভাষার বিকাশ

শিশুর ভাষার বিকাশের ক্ষেত্রে বংশগতি ও পরিবেশ উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভাষা হল ভাব প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম। ভাষা বিকাশের ক্ষেত্রে বংশগতি বা পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি শিশু যে পরিবেশে জন্মগ্রহণ করে বা বড় হয় সেই পারিপার্শ্বিক পরিবেশ অনুযায়ী তার ভাষার বিকাশ সাধন হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কেউ কোনো শিশু বাঙালি পরিবারের জন্মগ্রহণ করলে প্রাথমিক পরিবারের ভাষা হিসাবে বাংলা ভাষার বিকাশ ঘটে, আবার পরিবেশের কারণে পরবর্তীকালে সে ইংরেজি, হিন্দি বা অন্যান্য ভাষায় পারদর্শী হয়ে উঠতে পারে।

চারিত্রিক বিকাশ

শিশু বিভিন্ন গুন বা বৈশিষ্ট্য বংশগতি সূত্রে বা পূর্বপুরুষের কাছ থেকে পেয়ে থাকে। আবার পরবর্তীকালে পরিবেশের প্রভাবে তার চারিত্রিক বিভিন্ন গুণাবলীর বিকাশ ঘটে। তাই শিশুর চারিত্রিক বিকাশে বংশগতি ও পরিবেশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

সামাজিক বিকাশ

শিশুর সামাজিক বিকাশে বংশগতি ও পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন। কারণ জন্ম মুহূর্তে শিশু থাকে অসহায়। কিন্তু পরিবার শিশুর সামাজিকীকরণের মাধ্যমে তার সামাজিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটিয়ে থাকে। তাই সামাজিক গুনাবলির বিকাশ বা সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে বংশগতি ও পরিবেশের ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজন

পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে শিশুকে সার্থক অভিযোজন করার ক্ষেত্রে বংশগতির পাশাপাশি পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অর্থাৎ বংশগতির পাশাপাশি পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে কিভাবে মানিয়ে নিতে হয় তা পরিবেশের মাধ্যমে শিশু জ্ঞান অর্জন করতে পারে।

নিয়ম শৃঙ্খলার বিকাশ

শিশুর নিয়ম-শৃঙ্খলার বিকাশে পরিবেশ ও বংশগতির ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ সামাজিক বিভিন্ন নিয়ম-কানুন, রীতিনীতি, শৃঙ্খলাবোধ প্রভৃতির বিকাশে বংশগতির পাশাপাশি পরিবেশের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, মানব জীবন বিকাশের ক্ষেত্রে বংশগতির যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়, তেমনভাবে পরিবেশের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শিশুর সামগ্রিক বিকাশের ক্ষেত্রে বংশগতি সূত্রে প্রাপ্ত বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য গুলির বিকাশ সম্ভব হয় পরিবেশের মাধ্যমে। তাই বংশগতি ও পরিবেশ উভয় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শিশুর বিকাশে বা শিশুর শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তথ্যসূত্র (References)

  • Aggarwal, J. C., Theory and Principles of Education. 13th Ed. Vikas Publishing House Pvt. Ltd.
  • V.R. Taneja, Educational Thoughts & Practice. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi
  • Nayak, B.K, Text Book of Foundation of Education. Cuttack, Odisha: KitabMhal
  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1,
  • Internet sources

প্রশ্ন – বংশগতি ও পরিবেশ বলতে কি বুঝায়

উত্তর – বংশগতি হল উত্তরাধিকার বা জৈবিক উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত কিছু বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীর সমষ্টি। তাই বংশগতি বলতে বোঝায় শিশু সেই সমস্ত দৈহিক মানসিক বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়, যা তার পূর্বপুরুষের কাছ থেকে জন্মসূত্রে পেয়ে থাকে। আর অপরদিকে পরিবেশ হলো শিশুর পারিপার্শ্বিক অবস্থা। , অর্থাৎ পরিবেশ হলো সেই সমস্ত সামাজিক বা পারিপার্শ্বিক অবস্থা যার শিশুকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

প্রশ্ন – বংশগতি বিদ্যার জনক কে

উত্তর – বংশগতি বিদ্যার জনক হলেন বিশিষ্ট জীববিজ্ঞানী মেন্ডেল।

আরোও পড়ুন

Rate this post

Mr. Debkumar – Author and Founder of Edutiips.com

Mr. Debkumar – Author and Founder of Edutiips.com

A dedicated educator with 10+ years of teaching experience

He is also an active contributor on Quora, where he shares expert insights on education and social issues.

Leave a Comment

close