নমুনায়নের প্রকারভেদ | Main Types of Sampling

যে পদ্ধতিতে পপুলেশন থেকে নমুনা নির্বাচন করা হয় তাকে নমুনায়ন বলে। গবেষণায় নমুনায়ন পদ্ধতি বিভিন্ন প্রকারের (Types of Sampling) হয়ে থাকে।

যে-কোনো গবেষণার ক্ষেত্রে নমুনায়ন বা নমুনা নির্বাচন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ কোনো গবেষণাকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে সমগ্র পপুলেশন (Population) থেকে নমুনা নির্বাচন করে গবেষণা কাজটি সম্পন্ন করা হয়। গবেষণায় নমুনায়ন (Sampling) যদি সঠিকভাবে নির্বাচন না করা হয় তাহলে সমস্ত গবেষণা কাজের পরিশ্রম ব্যর্থ হয়। তাই গবেষণা কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্য গবেষককে বিভিন্ন নমুনা পদ্ধতি বা নমুনায়নের প্রকারভেদ (Types of Sampling) সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করতে হয়। এই অধ্যায়ে নমুনায়নের প্রকারভেদ আলোচনা করো তা আলোচনা করা হল।

Table of Contents

নমুনায়নের প্রকারভেদ (Types of Sampling)

Types of Sampling (Probability & Non-Probability Sampling)
Types of Sampling (Probability & Non-Probability Sampling)

নমুনায়নের ব্যবহার অনুযায়ী নমুনায়নকে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ (Types of Sampling) করা যায়। যথা –

  • সম্ভাবনানির্ভর নমুনায়ন (Probability Sampling) ও
  • সম্ভাবনাবিহীন নমুনায়ন (Non-Probability Sampling)

A. সম্ভাবনানির্ভর নমুনায়ন (Types of Probability Sampling)

সম্ভাবনানির্ভর নমুনায়নের সংজ্ঞাতে G.C. Halmstadter বলেছেন – “A probability sample is one that has been used selected in such a way that every element chosen has a known probability of being included.”

সম্ভাবনানির্ভর নমুনায়নকে (Probability Sampling) কয়েকটি ভাগে ভাগ (Types of Sampling) করা যায়, সেগুলি হল –

  1. সরল দৈব নমুনায়ন (Simple Random Sampling)
  2. স্তরিভূত দৈব নমুনায়ন (Stratified Random Sampling),
  3. পদ্ধতিগত নমুনায়ন (Systematic Sampling),
  4. ক্লাস্টার স্যাম্পলিং বা নমুনায়ন (Cluster Sampling)

1. সরল দৈব নমুনায়ন (Simple Random Sampling)

যে নমুনায়নের পপুলেশনের (Population) অন্তর্গত প্রত্যেকটি সদস্যদের নমুনা হিসেবে নির্বাচনের সুযোগ বা সম্ভাবনা সমান থাকে, তাকে Simple Random Sampling বলে। এটি সম্ভাবনানির্ভর নমুনায়নের একটি অন্যতম নমুনায়নের ভাগ (Types of Sampling)।

এই নমুনায়নের বিভিন্ন পদ্ধতি বর্তমান, যথা –

  • লটারি পদ্ধতি (Lottery Method)
  • Random Table Method
  • Tossing a coin,
  • Throwing a dice,
  • Blindfolded method,
  • Tippett’s table method প্রভৃতি

এই নমুনায়ন পদ্ধতির অন্যতম সুবিধাগুলি হল –

  • এই নমুনায়ন সম্পূর্ণভাবে পক্ষপাত বা ব্যক্তিগত প্রভাব থেকে মুক্ত (Unbiased) এবং
  • এই নমুনায়নে নির্বাচিত নমুনা সমগ্র পপুলেশনকে প্রতিনিধিত্ব (Representative) করতে সক্ষম হয়,

2. স্তরিভূত দৈব নমুনায়ন (Stratified Random Sampling)

এই নমুনায়ন পদ্ধতিতে সমগ্র পপুলেশনকে বিভিন্ন ‘Subgroups’ বা ‘Stratum’ (বহুবচনে ‘Strata’)-তে ভাগ করা হয়ে থাকে, যেমন – পুরুষ (Male) ও মহিলা (Female)

এই নমুনায়ন পদ্ধতির সুবিধাগুলি হল –

  • নমুনা ভ্রান্তি (Sample Error) কম হয়।
  • এটি অনেক বেশি নমনীয় ও প্রয়োগযোগ্য এবং পরিচালনা করা সহজ।

3. পদ্ধতিগত নমুনায়ন (Systematic Sampling)

এই নমুনায়ন পদ্ধতিতে পপুলেশনের সকল একককে (Unit) প্রথমে মানের ক্রমানুসারে (যেমন – ক্লাস রোল নং, বয়স, আয় প্রভৃতি) সাজানো ও শ্রেনীব্যপ্তি (Interval) নির্ণয় করা হয়। এটি সম্ভাবনানির্ভর নমুনায়নের একটি অন্যতম নমুনায়নের ভাগ (Types of Sampling)।

এই নমুনায়নের বিভিন্ন পদ্ধতি বর্তমান সেগুলি হল –

  • রেখা নমুনায়ন (Line Systematic Sampling)
  • বিন্দু নমুনায়ন (Point Systematic Sampling)
  • Quadrates Systematic Sampling

এই নমুনায়ন পদ্ধতির অন্যতম সুবিধাগুলি হল –

  • এই পদ্ধতিতে বৃহৎ আকারের নমুনা সংগ্রহ করা সহজ হয়।
  • নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে সময়, শ্রম ও অর্থের সাশ্রয় হয়।

4. ক্লাস্টার স্যাম্পলিং বা নমুনায়ন (Cluster Sampling)

এই নমুনায়ন পদ্ধতিতে নমুনায়নের ক্ষেত্রে পপুলেশনের (Population) এককগুলোকে (Units) প্রথমেই তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণি (Multiple groups) অনুযায়ী ভাগ করা হয়, যেগুলিকে গুচ্ছ (Cluster) বলে। এটি সম্ভাবনানির্ভর নমুনায়নের একটি অন্যতম নমুনায়নের ভাগ (Types of Sampling)।

সমাজবিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রে এই ধরনের নমুনায়ন বৃহত্তর সমীক্ষা (Larger survey), ক্ষেত্র গবেষণা (Field Study) প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

এই নমুনায়ন পদ্ধতির অন্যতম সুবিধাগুলি হল –

  • এই নমুনায়ন পদ্ধতি নমনীয় এবং ব্যয় ও সময় কম লাগে।
  • প্রতিনিধিত্বকারী (Representative) নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভবপর হয়।

B. সম্ভাবনাবিহীন নমুনায়ন (Types of Non-Probability Sampling)

সম্ভাবনাবিহীন নমুনায়নকে (Non-Probability Sampling) কয়েকটি ভাগে ভাগ (Types of Sampling) করা যায়, সেগুলি হল –

  1. উদ্দেশ্যমূলক নমুনা (Purposive / Judgmental Sampling),
  2. কোটা স্যাম্পলিং বা নমুনায়ন (Quota Sampling),
  3. আকস্মিক/পরিস্থিতিগত নমুনা (Accidental/Situational/ Convenience Sampling),
  4. স্নোবল স্যাম্পলিং বা নমুনায়ন (Snowball Sampling),

1. উদ্দেশ্যমূলক নমুনা (Purposive / Judgmental Sampling)

এই পদ্ধতিতে গবেষকের নিজের পছন্দ-অপছন্দ, অভিজ্ঞতা বা নিজের বিচার-বুদ্ধির উপর নির্ভর করে পপুলেশন (Population) থেকে নমুনা সংগৃহীত হয়।

এটি সম্ভাবনাবিহীন নমুনায়নের একটি অন্যতম নমুনায়নের ভাগ (Types of Sampling)। এই নমুনায়নে গবেষকের নিজস্ব বিচারবুদ্ধি নমুনা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় বলে, এই নমুনায়ন পদ্ধতিকে বিচারমূলক নমুনায়নও (Judgmental Sampling) বলা হয়।

এই নমুনায়ন পদ্ধতির অন্যতম সুবিধাগুলি হল –

  • গবেষক সঠিক বিচার-বুদ্ধি, মেধা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করে সমগ্র পপুলেশন থেকে নমুনা নির্বাচন করেন।
  • এটি প্রতিনিধিত্বশীল (Representative) হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

2. কোটা স্যাম্পলিং বা নমুনায়ন (Quota Sampling)

এই নমুনায়ন পদ্ধতি পূর্বনির্ধারিত সংখ্যা বা এককের (Unit) অনুপাতের ভিত্তিতে Non-Random ভাবে নমুনা নির্বাচন করা হয়।  এটি একটি সম্ভাব্যতাবিহীন (Non-Probability) নমুনা পদ্ধতি।

এই নমুনায়ন পদ্ধতির অন্যতম সুবিধাগুলি হল –

  • সময় ও অর্থ কম লাগে।
  • খুব দ্রুত বা কম সময়ে কোনো নমুনা থেকে ফলাফল সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।

3. আকস্মিক / পরিস্থিতিগত নমুনা (Accidental / Situational / Convenience Sampling)

এই প্রকার নমুনায়ন পদ্ধতিতে গবেষক নমুনাকে যেভাবে পায়, সেইভাবে সংগ্রহ করে থাকে। তাই সম্ভাবনাবিহীন নমুনায়নের একটি অন্যতম নমুনায়ন পদ্ধতি হল আকস্মিক নমুনায়ন (Accidental Sampling)।

এই নমুনায়ন পদ্ধতির অন্যতম সুবিধাগুলি হল –

  • খুব সহজেই নমুনা নির্বাচন করা যায়।
  • এক্ষেত্রে সময়, পরিশ্রম অনেক কম লাগে।

4. স্নোবল স্যাম্পলিং বা নমুনায়ন (Snowball Sampling)

এই প্রকার নমুনায়ন পদ্ধতিতে প্রথমে পপুলেশন থেকে নির্দিষ্ট একটি একক (Unit) নির্বাচন করা হয়। তারপর ওই নির্দিষ্ট এককের (Unit) মাধ্যমে অন্যান্য এককগুলি (Units) চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় নমুনা নির্বাচন করা হয়।

এই নমুনায়ন পদ্ধতির অন্যতম সুবিধাগুলি হল –

  • সামাজিক সম্পর্ক গবেষণা ক্ষেত্রে খুবই ফলপ্রসু।
  • একে অন্যের সঙ্গে কীভাবে যুক্ত। অর্থাৎ Communication Pattern কেমন তা সহজেই বোঝা যায়।

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, উপরে উল্লেখিত নমুনার ভাগগুলি (Types of Sampling) একজন গবেষককে সঠিক নমুনা নিবাচনের পথপ্রদর্শন করবে। ফলে গবেষক তাঁর গবেষনাকে যথাযথভাবে সুসম্পন্ন করতে সক্ষম হবেন।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

তথ্যসূত্র (Reference)

  • Best, J.W & Khan, J.V (2006) “Research in Education” (10th Ed.). New Delhi: PHI Learning Private Limited.
  • Kaul L. (1984) Methodology of Education Research, New Delhi, Vikas Publishing House
  • Creswell, J.W (2019) “Educational Research” (4th Ed.). Pearson, ISBN 978-93-325-4947-0
  • Internet Sources – Click Here

প্রশ্ন – নমুনায়ন কত প্রকার ও কি কি

উত্তর – নমুনায়নের ব্যবহার অনুযায়ী নমুনায়নকে  প্রধান দুটি ভাগে ভাগ (Types of Sampling) করা যায়। যথা –
সম্ভাবনানির্ভর নমুনায়ন (Probability Sampling) ও
সম্ভাবনাবিহীন নমুনায়ন (Non-Probability Sampling)

প্রশ্ন – Non-Probability Sampling কাকে বলে?

উত্তর – সম্ভাবনানির্ভর নমুনায়নের বিপরীতধর্মী হল সম্ভাবনাবিহীন নমুনায়ন। যেখানে পপুলেশনের সমস্ত সদস্য অংশগ্রহণ করতে পারে না।
এই নমুনায়নে নমুনা নির্বাচন গবেষক বা তথ্যানুসন্ধানকারীর নিজস্ব বিবেচনার উপর নির্ভর করে। এই নমুনায়ন পদ্ধতি বিজ্ঞানভিত্তিক নয়।

প্রশ্ন – Probability Sampling কাকে বলে?

উত্তর – সম্ভাবনানির্ভর নমুনায়ন হল এমন নমুনায়ন পদ্ধতি যেখানে পপুলেশনের প্রতিটি এককের (Unit) নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা (Probability) সমান (Equal) থাকে।
তাই কোনো গবেষণায় ফলাফলের গ্রহনযোগ্যতা ও প্রামান্যের জন্য সম্ভাবনানির্ভর নমুনায়ন গ্রহন করা হয়।

প্রশ্ন – নমুনা ভ্রান্তি কাকে বলে?

উত্তর – তাই যখন কোনো নমুনার মধ্যে প্যারামিটার (Parameter) ও স্ট্যাটিসটিকস (Statistics)-এর মধ্যে পার্থক্য থাকে, তখন নমুনা ভ্রান্তি (Sampling error) ঘটে।

প্রশ্ন – নমুনায়ন বলতে কী বোঝ?

উত্তর – যে পদ্ধতিতে পপুলেশন থেকে নমুনা নির্বাচন করা হয় তাকে নমুনায়ন বলে। তাই Earl Babbie বলেছেন – নমুনায়ন হল পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পপুলেশন নির্বাচন করার প্রক্রিয়া। (“Sampling is the process of selecting a population of observations.”)

প্রশ্ন – নমুনা কি?

উত্তর – নমুনা হল সমগ্র পপুলেশনের প্রতিনিধিত্বকারী অংশ। অর্থাৎ গবেষণায় সমগ্র পপুলেশনকে প্রতিনিধিত্বকারী উপাদানকে বলা হয় নমুনা।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close