আর্যসত্য কি | বৌদ্ধ দর্শনের চারটি আর্য সত্য | 4 Noble Truths of Buddhism

গৌতম বুদ্ধ দীর্ঘ সাধনার পর সত্যের সন্ধান পান এবং সত্যকে উপলব্ধি করতে পারেন। তিনি মানুষের দুঃখ দুর্দশাময় জীবন থেকে মুক্তি লাভের উপায় হিসাবে বিভিন্ন বাণী প্রচার করেছিলেন। বৌদ্ধ দর্শনের চারটি আর্য সত্য (Noble Truths of Buddhism) মানুষের জীবনের দুঃখ দুর্দশাকে বর্ণনা করে।

আর্যসত্য কি

আর্যসত্য হল গৌতম বুদ্ধ দ্বারা প্রচারিত দুঃখ নিরোধের উপায়। গৌতম বুদ্ধ বোধি লাভের পর মানুষের জীবনের দুঃখ দুর্দশা থেকে মুক্তি লাভের উপায় হিসেবে চারটি সত্যের সন্ধান দিয়েছিলেন। যেগুলিকে একত্রে আর্যসত্য বলা হয়।

বৌদ্ধ দর্শনের চারটি আর্য সত্য | Noble Truths of Buddhism

বুদ্ধদেব কঠোর তপস্যার মাধ্যমে জীবনের সত্যের সন্ধান অনুসন্ধান করেছিলেন এবং মানুষকে দুঃখ দুর্দশা থেকে মুক্তি লাভের পথের সন্ধান দিয়েছিলেন। বৌদ্ধ দর্শনে মানুষের জীবনে দুঃখ এবং দুঃখ নিবারণের উপায় নির্দেশ করা হয়েছে। এই বৌদ্ধ দর্শনের চারটি আর্য সত্য বা মহান সত্য পরিলক্ষিত হয়। যেগুলি আর্য সত্য বা আর্যসত্য চতুষ্টয় নামে পরিচিত।

বৌদ্ধ দর্শনের চারটি আর্য সত্য নিম্নে আলোচনা করা হল –

1. দুঃখ আছে

বৌদ্ধ দর্শনের প্রথম আর্য সত্য হল দুঃখ আছে বা সবই দুঃখময়। গৌতম বুদ্ধ বলেন যে পৃথিবীতে সকল বস্তুই ক্ষণস্থায়ী। বুদ্ধদেব উপলব্ধি করেছিলেন যে মানুষের সমস্ত রকম জীবন ও জন্মের মূল কারণ হল দুঃখ। সুখের অনুভূতি অনিত্য। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের নিত্য সঙ্গী হল দুঃখ।

2. দুঃখের কারণ আছে

বৌদ্ধ দর্শনের দ্বিতীয় আর্য সত্য হল দুঃখের কারণ আছে। একে বৌদ্ধ দর্শনে ‘দুঃখ সমুদায়’ বলা হয়। বুদ্ধদেব বলেন প্রতিটি কার্যের কারণ আছে। কারণ ছাড়া কার্য সংঘটিত হয় না। এই মতবাদটিকে ‘প্রতীত্যসমুৎপাদবাদ’ বলা হয়।

বুদ্ধদেব দুঃখের কারণ হিসেবে বারটি উপাদান চিহ্নিত করেছেন। এগুলিকে বলা হয় দ্বাদশ নিদান বা ভব চক্র। এদের মধ্যে অন্যতম হল অবিদ্যা। বুদ্ধদেব এই অবিদ্যাকে দুঃখের মূল কারণ বলে মনে করেন।

3. দুঃখের নিরোধ বা নিবৃত্তি আছে

বৌদ্ধ দর্শনের তৃতীয় আর্য সত্যটি হল দুঃখ নিরোধ বা দুঃখের নিবৃত্তি সম্ভব। এটি দ্বিতীয় আর্য সত্য থেকে নিঃসৃত। বুদ্ধদেব বলেন – দুঃখের যে সমস্ত কারণ রয়েছে সেগুলিকে যদি বিনষ্ট করা যায়, তখন দুঃখের নিবিৃত্তি সম্ভব হয়। জন্ম মৃত্যু চক্র শেষ হয় এবং মানুষ নির্বান লাভ করে বা জরা ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভ করে।

4. দুঃখ নিবৃত্তির পথ আছে

বৌদ্ধ দর্শনের চারটি আর্য সত্যের মধ্যে সর্বশেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ আর্য সত্যটি হলো দুঃখ নিবৃত্তির পথ আছে। বুদ্ধদেব দুঃখ নিবৃত্তির পথ হিসাবে আটটি পথের সন্ধান দিয়েছেন। যেগুলোকে অষ্টাঙ্গিক মার্গ বলা হয়।

বুদ্ধদেব দুঃখ নিবৃত্তির পথ হিসেবে যে আটটি পথের বা অষ্টাঙ্গিক মার্গের সন্ধান দিয়েছিলেন, সেগুলি হল –

i) সম্যক্‌ দৃষ্টি,
ii) সম্যক্‌ সংকল্প,
iii) সম্যক্‌ বাক্য,
iv) সম্যক্‌ কর্মান্ত,
v) সম্যক্‌ আজীব,
vi) সম্যক্‌ ব্যায়াম,
vii) সম্যক্‌ স্মৃতি এবং
viii) সম্যক্‌ সমাধি।

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, বৌদ্ধ দর্শনে মানুষের দুঃখ দুর্দশাময় জীবনকে চারটি আর্য সত্যের (Noble Truths of Buddhism) মধ্যে বর্ণনা করা হয়েছে। এর মধ্যে চতুর্থ আর্য সত্য মানুষের দুঃখ দুর্দশাময় জীবন থেকে মুক্তি লাভের উপায় বা দুঃখ নিরোধের বা নিবারণের উপায় উল্লেখ করা হয়েছে। বুদ্ধদেব মানুষের জীবনের দুঃখ নিরোধের উপায় হিসেবে আটটি পথের সন্ধান দিয়েছিলেন। যেগুলি অষ্টাঙ্গিক মার্গ নামে পরিচিত। তাই গৌতম বুদ্ধের বা বৌদ্ধ দর্শনের চারটি আর্য সত্য মানুষের জীবনের ক্ষেত্রে খুবই মূল্যবান এবং গ্রহণযোগ্য।

তথ্যসূত্র (References)

  • Aggarwal, J. C., Theory and Principles of Education. 13th Ed. Vikas Publishing House Pvt. Ltd.
  • V.R. Taneja, Educational Thoughts & Practice. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi
  • Nayak, B.K, Text Book of Foundation of Education. Cuttack, Odisha: KitabMhal
  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1,
  • Internet sources

প্রশ্ন – আর্যসত্য বলতে কী বোঝায়

উত্তর – গৌতম বুদ্ধ বোধি লাভের পর মানুষের জীবনের দুঃখ দুর্দশা থেকে মুক্তি লাভের উপায় হিসেবে চারটি সত্যের সন্ধান দিয়েছিলেন। যেগুলিকে একত্রে আর্য সত্য বলা হয়।

প্রশ্ন – আর্যসত্য কোন ধর্মের অংশ

উত্তর – আর্যসত্য গৌতম বুদ্ধ দ্বারা প্রবর্তিত বৌদ্ধ ধর্মের অংশ।

প্রশ্ন – বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থের নাম কি?

উত্তর – বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থের নাম হল ত্রিপিটক। এটি পালি ভাষায় রচিত। বুদ্ধদেবের বাণী গুলি তার শিষ্যরা গ্রন্থের আকারে লিপিবদ্ধ করেন – একে বলা হয় ত্রিপিটক। এই ত্রিপিটকের তিনটি ভাগ রয়েছে। যথা – বিনয় পিটক, সূত্র পিটক এবং অভিধর্ম পিটক।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close