Share on WhatsApp Share on Telegram

বৌদ্ধ দর্শনের শিক্ষাগত তাৎপর্য | Educational Significance of Buddhist Philosophy

Join Our Channels

বৌদ্ধ দর্শনের প্রবক্তা হলেন গৌতম বুদ্ধ। তিনি তার মহৎ বাণী প্রচারের মাধ্যমে মানুষের দুঃখ দুর্দশা মোচনের চেষ্টা করেছিলেন। তাই বৌদ্ধ দর্শনের শিক্ষাগত তাৎপর্য (Educational Significance of Buddhist Philosophy) বিশেষভাবে প্রশংসনীয়।

বৌদ্ধ দর্শন বেদ বিরোধী এবং নাস্তিক দর্শন সম্প্রদায়। বৌদ্ধ শিক্ষা দর্শনের বিষয় হল গণতান্ত্রিকতা এবং সার্বজনীনতা। বুদ্ধদেব গতানুগতিক ধর্মকেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার বিরোধী ছিলেন। তাই বৌদ্ধ শিক্ষা দর্শন শুধু ভারত বর্ষ নয় ভারতবর্ষের বাইরে ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিস্তার লাভ করেছিল

বৌদ্ধ দর্শনের শিক্ষাগত তাৎপর্য | Educational Significance of Buddhist Philosophy

গৌতম বুদ্ধ ব্রাহ্মণ্য ধর্ম ও শিক্ষার বিরোধিতা করে বৌদ্ধ ধর্ম ও বৌদ্ধ শিক্ষার প্রসার সাধন করেছিলেন। বৌদ্ধ দর্শন হল বাস্তববাদীপ্রয়োগবাদী দর্শনের সংমিশ্রণ। ভারতবর্ষে এবং ভারতবর্ষের বাইরে বৌদ্ধ দর্শনের বিস্তার সাধন হয়েছিল। আধুনিক শিক্ষায় বৌদ্ধ দর্শনের শিক্ষাগত তাৎপর্য বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়। সেগুলি এখানে আলোচনা করা হল –

1. শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

বৌদ্ধ দর্শনের চরম লক্ষ্য হল – নির্বাণ লাভ বা পরিনির্বান।

নির্বাণ শব্দের অর্থ হল – সকল প্রকার কামনা বা বাসনা থেকে মুক্তি লাভ। তাই দুঃখ জর্জরিত সমাজ জীবনের বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ হল বৌদ্ধ দর্শন তথা শিক্ষার একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

আবার, বৌদ্ধ ধর্মে কামনা-বাসনার অবলুপ্তির মাধ্যমে মানব জীবনের মুক্তি সাধনকে শিক্ষার লক্ষ্য উদ্দেশ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বুদ্ধদেব দুঃখ জর্জরিত মানব জীবনের মুক্তি লাভের জন্য আটটি পথের সন্ধান দিয়েছিলেন। যেগুলিকে অষ্টাঙ্গিক মার্গ বলা হয়ে থাকে।

2. শিক্ষার পাঠক্রম

বৌদ্ধ শিক্ষা দর্শনে পাঠক্রম ছিল বৈচিত্র ধর্মী এবং শিক্ষার লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে এটি রচিত হয়। এই শিক্ষার পাঠক্রমের মধ্যে ধর্ম শিক্ষা এবং ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার সমন্বয় ঘটেছিল। অর্থাৎ বৌদ্ধ দর্শনে শিক্ষার পাঠক্রম ছিল অধিক গণতান্ত্রিক প্রকৃতির।

‘মিলিন্দপঞ্চহ’ গ্রন্থ থেকে বৌদ্ধ দর্শনে শিক্ষার পাঠক্রম বিষয়ে উনিশ রকম বিষয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে অন্যতম হল – বেদ, ইতিহাস, পুরান, সাহিত্য, ছন্দ, কাব্য প্রভৃতি।

3. শিক্ষাদান পদ্ধতি

বৌদ্ধ দর্শনে শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল আবৃতি মূলক। এই শিক্ষায় পাঠদানের মাধ্যম ছিল মাতৃভাষা। পরবর্তীকালে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে পালি ভাষা গুরুত্ব লাভ করে।

বৌদ্ধ দর্শনে শিক্ষাদান পদ্ধতি স্তরভেদে পরিলক্ষিত হয়। যথা –

i) প্রথম পর্যায়ে শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল আবৃত্তিমূলক

ii) দ্বিতীয় পর্যায়ে আলোচনা মূলক এবং

iii) তৃতীয় পর্যায়ে শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল শিক্ষক শিক্ষণ মূলক

4. শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্ক

বৌদ্ধ দর্শনের শিক্ষাগত তাৎপর্য গুলির মধ্যে অন্যতম হল শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্ক। এই শিক্ষায় শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল পিতা পুত্রের ন্যায় গভীর এবং আদর্শ স্থানীয়।

তাই বৌদ্ধ দর্শনে শিক্ষা ব্যবস্থায় সংঘের কথা বা গুরুদেবের কথা শেষ কথা ছিল না। অনেক সময় শিক্ষার্থী বা শ্রমণদের কথা বা সুবিধা অসুবিধা দেখা হত।

5. শিক্ষায় শৃঙ্খলা

বৌদ্ধ দর্শনে শিক্ষা ব্যবস্থায় শৃংখলা ছিল গণতান্ত্রিক প্রকৃতির। বৌদ্ধ শিক্ষায় বৌদ্ধ বিহার গুলিতে (যেখানে শিক্ষা দান করা হতো বা আধুনিক অর্থে বিদ্যালয়) নিয়মাবর্তিতা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা ছিল।

তবে কিছু কঠোর নিয়ম কানুন বিহার জীবনের অঙ্গ ছিল। যেমন – ত্রিশরন মন্ত্র পাঠ, অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুসরণ প্রভৃতি।

6. গণতান্ত্রিকতা

বৌদ্ধ দর্শনে শিক্ষার মূল বিষয় হল গণতান্ত্রিকতা। তাই বৌদ্ধ শিক্ষায় গণতান্ত্রিক ভাবধারা পরিলক্ষিত হয়। এখানে সকল শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সমান সুযোগ ছিল। অর্থাৎ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বৌদ্ধ শিক্ষার ছিল সবার জন্য শিক্ষা।

7. সংঘ ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা

বৌদ্ধ দর্শন অনুযায়ী শিক্ষা ছিল সংঘ ভিত্তিক প্রকৃতির। অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা শিক্ষার জন্য বৌদ্ধ সংঘে থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারত। এখানে শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিষ্যকে বা শিক্ষার্থীকে বৌদ্ধ সংঘে থাকতে হতো।

উপসংহার (Conclusion)

সর্বোপরি বলা যায়, সমকালীন শিক্ষা ব্যবস্থায় বৌদ্ধ দর্শনের শিক্ষাগত তাৎপর্য (Educational Significance of Buddhist Philosophy) ছিল অধিক গ্রহণযোগ্য এবং সর্বজনীন প্রকৃতির। কারণ বৌদ্ধ দর্শনে শিক্ষা ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক প্রকৃতির হওয়ার ফলে তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় এই শিক্ষা ব্যবস্থা বিস্তার লাভ করেছিল এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। । তাই বৌদ্ধ দর্শনে শিক্ষাগত তাৎপর্য আধুনিক শিক্ষাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে থাকে।

তথ্যসূত্র (References)

  • Aggarwal, J. C., Theory and Principles of Education. 13th Ed. Vikas Publishing House Pvt. Ltd.
  • V.R. Taneja, Educational Thoughts & Practice. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi
  • Nayak, B.K, Text Book of Foundation of Education. Cuttack, Odisha: KitabMhal
  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1,
  • Internet sources

প্রশ্ন – বৌদ্ধ দর্শন কয় প্রকার ও কি কি?

উত্তর – বুদ্ধদেবের মৃত্যুর পর বৌদ্ধ দর্শনের মতাদর্শগত কারণে বিভিন্ন শাখার জন্ম হয়েছে। সেগুলি হল – বৈভাষিক দর্শন, সৌতান্ত্রিক দর্শন, হীনযান সম্প্রদায় ও মহাযান সম্প্রদায়।

আরোও পড়ুন

5/5 - (2 votes)

Mr. Debkumar – Author and Founder of Edutiips.com

Mr. Debkumar – Author and Founder of Edutiips.com

A dedicated educator with 10+ years of teaching experience, UGC NET Qualified, and holder of MA, B.Ed, and M.Phil in Education (University of Calcutta).

He has authored several books published by Aheli Publication, such as Communication Skills, Aspect of Democratic Citizenship, Sociological Foundation of Education, Computer Applications, Fundamentals of Education, Educational Organization and Planning, and Educational Research.

He is also an active contributor on Quora, where he shares expert insights on education, history, and social issues.

Leave a Comment

close