ধর্ম কাকে বলে | ধর্ম ও শিক্ষার সম্পর্ক | Definition of Religion Sociology

সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে একটি অন্যতম বিশেষ দিক হল ধর্ম। মানুষের প্রয়োজনের তাগিদে বা কোন কিছু বিশ্বাসের উপরে নির্ভর করে ধর্ম (Religion) নামক ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

পৃথিবীর প্রতিটা সমাজে সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে কোনো না কোনো ধর্মের অস্তিত্ব দেখা দেয়। অর্থাৎ পৃথিবীর সকল সমাজে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় বিশ্বাসের ব্যক্তিবর্গ অবস্থান করে। ধর্ম হল মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। সমাজ গঠনের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে ধর্ম একটি বিশেষ উপাদান।

ধর্ম কাকে বলে | Definition of Religion

ধর্মের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ

ধর্ম কি বা ধর্ম কাকে বলে ? সে সম্পর্কে জানতে হলে আগে দেখে নেয়া যাক ধর্মের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কি । ব্যুৎপত্তিগত অর্থে ধর্ম শব্দটি ‘ধৃ’ – ধাতু থেকে এসেছে। যার অর্থ হল ধারণ করা। তাই ধর্ম হল মানুষের আবেগ ও অনুভূতির একটি বিশেষ দিক, যেটি মানুষের আচার ব্যবহারকে পরিমার্জিত করে থাকে।

ধর্মের সংজ্ঞা

বিভিন্ন সমাজবিদ ও চিন্তাবিদগণ বিভিন্ন দিক থেকে ধর্মকে ব্যাখ্যা করেছেন এবং ধর্মকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

1. বিশিষ্ট সমাজতাত্ত্বিক ও জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্ক্স (Karl Marx) ধর্ম সম্পর্কে বলেছেন – “ধর্ম হল জনগণের আফিং”। (“Religion is the opium of the people.”)

2. সমাজতাত্ত্বিক টাইলার (Edward Burnett Tylor) বলেছেন – “ধর্ম হল আধ্যাত্মিক জীবে বিশ্বাস”। (Religion as belief in spiritual beings.)

3. বিশিষ্ট সমাজতাত্ত্বিক ম্যাকাইভার বলেছেন – “ধর্ম মানুষ এবং ঊর্ধশক্তির মধ্যে সম্পর্ক রচনা করে থাকে”।

4. আবার বিশিষ্ট ভারতীয় শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন – “The religion is the manifestation of divinity already in man.”

তাই বলা যায়, ধর্ম একটি বিশেষ পদ্ধতি, যেটি কতকগুলি পবিত্র বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে যার মধ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যকলাপ বর্তমান।

ধর্ম ও শিক্ষার সম্পর্ক

আধুনিক শিক্ষা ক্ষেত্রে ধর্মের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। যে কোনো শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধর্মকেন্দ্রিক না হলেও ধর্মের নিয়ম-কানুন, রীতিনীতি আর ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। তাই ধর্ম ও শিক্ষা একে অপরের পরিপূরক। অর্থাৎ ধর্ম ও শিক্ষার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় প্রকৃতির। সাধারণভাবে ধর্ম ও শিক্ষার সম্পর্ক যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয় সেগুলি হল –

1. প্রাচীন কাল থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত শিক্ষার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে পরিলক্ষিত হয় যে প্রাচীনকাল ও মধ্যযুগের শিক্ষা ছিল সম্পূর্ণ ধর্ম কেন্দ্রে। শিক্ষার লক্ষ্য, শিক্ষাদান পদ্ধতি, পাঠক্রম প্রভৃতি ধর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল।

কিন্তু আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা ধর্মনিরপেক্ষ হলেও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ধর্মীয় রীতি নীতি বা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয়ে থাকে। এদিক থেকে বিবেচনা করে বলা যায় শিক্ষা ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিশেষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

2. স্বাধীনতার পর ১৯৪৮-৪৯ সালে গঠিত রাধাকৃষ্ণান কমিশনের শিক্ষা সংক্রান্ত সুপারিশে ধর্ম শিক্ষা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কমিশনের সুপারিশ ছিল – প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন মহাপুরুষের জীবন দর্শনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দান করবেন।

3. শিক্ষামূলক কার্যাবলীতে ধর্মীয় প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাস শুরুর আগে কয়েক মিনিট নীরব প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাজ শুরু হয়। এক্ষেত্রে দেশকাল ভেদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ধর্মীয় প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

4. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের সামাজিক গুণাবলীর বিকাশ সাধন করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে শিক্ষা ও ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়।

5. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হল সমাজের প্রতিচ্ছবি। আর প্রতিটা সমাজ কোন না কোন ধর্মের দ্বারা বা ধর্মীয় বিশ্বাসের দ্বারা পরিচালিত। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সেই সমাজের দ্বারা নির্বাচিত ধর্মীয় বিশ্বাস বা ধর্মীয় প্রভাব পরিলক্ষিত হয় যার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের নৈতিক গুণাবলীর বিকাশ সাধন করা সম্ভবপর হয়।

6. আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপযুক্ত শৃঙ্খলা স্থাপন করা। যেটি ধর্ম দ্বারা অনেকাংশে প্রভাবিত। এদিক থেকে ধর্ম ও শিক্ষার সম্পর্ক বর্তমান। বা শিক্ষার ক্ষেত্রে ধর্মের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়

7.প্রত্যেক ধর্মের মূলকথা হল সুন্দর জীবনযাপন বা সত্যম শিবম সুন্দরের উপাসনা করা। যার মধ্য দিয়ে একটি সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করা যায়।

8. ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং জাতীয় সংহতি বজায় রাখার পাশাপাশি প্রতিটি ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া শিক্ষা প্রদান করা হয়।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষা হল ধর্মের মূল কেন্দ্রবিন্দু। কারণ সমাজ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষার কথা চিন্তা করা যায় না। সমাজের ধর্মীয় বিশ্বাস শিক্ষার মধ্য দিয়ে প্রভাবিত হয়। এবং সেই অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের জীবন গঠিত হয়। অর্থাৎ ধর্ম এবং শিক্ষা উভয়ই ব্যক্তিদের মধ্যে মূল্যবোধ এবং বিশ্বাস গঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

সুতরাং সমাজে বিভিন্ন ধর্মের নেতিবাচক ও ইতিবাচক দুটি দিকই বর্তমান। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে ধর্মকে অবৈজ্ঞানিক ও অযৌক্তিকভাবে যুক্ত করা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ ধর্মের যে সমস্ত ভালো দিক গুলি রয়েছে সেগুলি শিক্ষার মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণতা আনাই হল শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য। আর এদিক থেকে ধর্ম এবং শিক্ষা একে অপরের পরিপূরক।

প্রাথমিক গোষ্ঠীর ধারণা, সংজ্ঞা, বৈশিষ্ঠ্য ও শিক্ষাগত তাৎপর্যসামাজিক গোষ্ঠীর ধারণা, সংজ্ঞা ও শ্রেণীবিভাগ
শিশুর সামাজিকীকরণে পরিবারের ভূমিকাশিশুর সামাজিকীকরণে বিদ্যালয়ের ভূমিকা

তথ্যসূত্র (Reference)

  • Brown, F. J. (1954). Educational Sociology. New York: Prentice-Hall.
  • Bhattacharjee, Srinivas. (1996). Philosophical & Sociological Foundation of Education. Herald book service.
  • Das, P. (2007). Sociological Foundation of Education. New Delhi: Authorspress
  • Shukla, S & K Kumar. (1985). Sociological Perspective in Education. New Delhi, Chanakya
    Publications
  • Sodhi, T.S & Suri, Aruna. (1998). Philosophical & Sociological Foundations of Education, H.P Bhargav Book House, Agra,

প্রশ্ন – সাধারণ ধর্ম কাকে বলে

উত্তর – সাধারণভাবে ধর্ম হল মানুষের কোনো কিছু প্রতি বা এমন কোনো শক্তির প্রতি বিশ্বাস, যদি মানুষকে নমনীয়, আদর্শবাদী, মূল্যবোধযুক্ত এবং সৎ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে। তাই অন্ধ ধর্ম বিশ্বাস কখনোই কাম্য নয়। তাই মানুষের থেকে মহৎ উন্নত শক্তিতে বিশ্বাস ও অস্থায়ী হল ধর্ম।

আরোও পড়ুন

2 thoughts on “ধর্ম কাকে বলে | ধর্ম ও শিক্ষার সম্পর্ক | Definition of Religion Sociology”

Leave a Comment

close