হাইপোথিসিস কি | Hypothesis in Research

গবেষণায় হাইপোথিসিস (Hypothesis) কথাটির অর্থ হল – পূর্ব জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে গবেষণার উত্তর সম্পর্কে গবেষণা সম্পাদনের পূর্বেই গৃহীত অস্থায়ী সিদ্ধান্ত।

গবেষণায় হাইপোথিসিস একটি সাময়িক পরীক্ষামূলক সিদ্ধান্ত যা গবেষণার মাধ্যমে গৃহীত (Accepted) বা বাতিল (Rejected) হতে পারে। তাই হাইপোথেথিস একটি গবেষণা প্রশ্নের একটি অস্থায়ী উত্তর। তাই হাইপোথিসিস হল একটি তত্ত্ব বা ধারণা যা প্রমাণিত নয় কিন্তু পরীক্ষার জন্য গৃহীত হয়।

গবেষণায় হাইপোথিসিসের ধারণা (Concept of Hypothesis in Research)

ইংরাজী ‘Hypothesis’ শব্দটি দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত, যথা – ‘Hypo’ যার অর্থ ‘less than’ এবং ‘Thesis’. অর্থাৎ হাইপোথিসিস কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল – জ্ঞান বা সত্য থেকে কম (Less certain than a thesis).

সাধারণভাবে হাইপোথিসিস হল কোনো বিষয় বা ঘটনার পূর্ব জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে ফলাফল সম্পর্কে একটি সাময়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং এই সাময়িক সিদ্ধান্তকে গবেষণার মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়।

তাই হাইপোথিসিস বা অনুমিত সিদ্ধান্ত বা প্রকল্প হল এমন একটি ধারণা যেটির সত্যতা যাচাই করার জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। এটি একটি সাময়িক পরীক্ষামূলক সিদ্ধান্ত, যা গবেষণার মাধ্যমে, সংগৃহীত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে গৃহীত বা বাতিল করা হয়ে থাকে।

গবেষণায় হাইপোথিসিসের সংজ্ঞা (Definition of Hypothesis in Research)

বিভিন্ন গবেষকগণ হাইপোথিসিসকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। এখানে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা উল্লেখ করা হল –

1. বিশিষ্ট গবেষক Baily বলেছেন – হাইপোথিসিস হল একটি অস্থায়ী ব্যাখ্যা যার পরীক্ষার প্রয়োজনীয় প্রমাণ প্রচ্ছন্ন হলেও বর্তমান। (“A hypothesis is a tentative explanation for which the evidence necessary for testing is at potentially available.”)

2. Santosh Gupta এর মতে – হাইপোথিসিস হল জ্ঞান ও তত্ত্ব থেকে উৎসারিত স্থির ধারণা যা অন্যান্য অজানা তথ্য ও তত্ত্ব অনুসন্ধানে গাইড হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

3. গবেষক Neuman বলেছেন – হাইপোথিসিস হল গবেষণা ভিত্তিক প্রশ্নাবলির সম্ভাব্য উত্তর অনুসন্ধান।

4. বিশিষ্ট গবেষক Webster বলেছেন – হাইপোথিসিস হল কোনো যুক্তিভিত্তিক বা পরীক্ষা ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নির্ণয়ের জন্য সাময়িক অনুমান বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

5. আবার বিশিষ্ট গবেষক Kerlinger বলেছেন – হাইপোথিসিস হল একটি অস্থায়ী ব্যাখ্যা যার পরীক্ষার প্রয়োজনীয় প্রমাণ প্রচ্ছন্ন হলেও বর্তমান থাকে।

তাই বিশিষ্ট গবেষক Max Weber ভাষায় বলা যায়, হাইপোথিসিস হল ক্ষণস্থায়ী ব্যাখ্যা যা এর যৌক্তিক কিংবা বাস্তবিক ফলাফল প্রণয়ন বা পরীক্ষার জন্য গ্রহণ করা হয়।

গবেষণায় হাইপোথিসিসের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Hypothesis in Research)

হাইপোথিসিসকে বিশ্লেষণ করলে এর যে সমস্ত উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি নিম্ন আলোচনা করা হল –

i) হাইপোথিসিস হল সাময়িক সিদ্ধান্ত বিশেষ।

ii) হাইপোথিসিস হল পরীক্ষা-নিরীক্ষা নির্ভর।

iii) বাস্তব অভিজ্ঞতাভিত্তিক।

iv) হাইপোথিসিস পর্যবেক্ষণ যুক্ত ও সংক্ষিপ্ত প্রকৃতির।

v) হাইপোথিসিস প্রমাণসাপেক্ষ বিষয়।

vi )হাইপোথিসিস অস্থায়ী সিদ্ধান্ত। কারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এটি গৃহীত বা বাতিল হতে পারে।

vii) হাইপোথিসিস সর্বদা সরল প্রকৃতির।

viii) হাইপোথিসিস গবেষকের পূর্ব জ্ঞান এর উপর ভিত্তি করে গঠন করা হয়ে থাকে।

ix) হাইপোথিসিস নির্দিষ্ট ও স্বতন্ত্র প্রকৃতির। যেটি গবেষণাকে দিকনির্দেশ করতে সাহায্য করে।

তাই বলা যায় হাইপোথিসিস এমন একটি যুক্তিনির্ভর, পরীক্ষানির্ভর, সাময়িক সিদ্ধান্ত বিশেষ যা গবেষকের অনুসন্ধানমূলক কাজের মূল ভিত্তি হিসেবে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে।

গবেষণায় হাইপোথিসিসের প্রকারভেদ (Types of Hypothesis in Research)

প্রকৃতি বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী হাইপোথিসিসকে কয়েকটি বিশেষ ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

মূল হাইপোথিসিস বা পরীক্ষামূলক হাইপোথিসিস (Substantive or Research Hypothesis)

মূল হাইপোথিসিস বা পরীক্ষামূলক হাইপোথিসিস দুই প্রকারের হয়ে থাকে, সেগুলি হল –

  • নির্দেশক হাইপোথিসিস (Directional Hypothesis)
  • নন-ডিরেকশনাল হাইপোথিসিস (Non-Directional Hypothesis)

পরিসংখ্যানগত হাইপোথিসিস (Statistical Hypothesis)

পরিসংখ্যানগত হাইপোথিসিসকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়, যথা –

  • শূন্য হাইপোথিসিস (Null Hypothesis)
  • বিকল্প হাইপোথিসিস (Alternative Hypothesis)

এগুলি ছাড়াও এগুলি ছাড়াও প্রশ্নের আকারে হাইপোথিসিস (Question form Hypothesis), ঘোষণামূলক হাইপোথিসিস (Declarative form of Hypothesis) প্রভৃতি হাইপোথিসিসের অন্যতম ভাগ।

হাইপোথিসিসের গুরুত্ব (Importance of Hypothesis)

যে-কোনো গবেষণার ক্ষেত্রে হাইপোথিসিস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিক। হাইপোথিসিসের যে সমস্ত গুরুত্ব বর্তমান, সেগুলি হল –

i) হাইপোথিসিস গবেষণাকে সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করে থাকে।

ii) হাইপোথিসিস যে-কোনো বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

iii) হাইপোথিসিস যে-কোনো প্রকারের গবেষণার পথনির্দেশ করে থাকে।

iv) হাইপোথিসিস গবেষণার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহের সহায়তা করে থাকে।

v) হাইপোথিসিস গবেষণার সময় ও অর্থের অপচয় রোধ করে থাকে।

vi) হাইপোথিসিস গবেষণায় নির্ধারিত চলকগুলিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকে।

vii) এটি অপ্রয়োজনীয় তথ্যকে বর্জন বা বা বাতিল এবং প্রয়োজনীয় তথ্যকে গ্রহণ করে থাকে।

viii) হাইপোথিসিস কোন সমস্যা পরীক্ষামূলক সমাধান সূত্র খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহার (Conclusion)

সর্বোপরি বলা যায়, হাইপোথিসিস কোন গবেষণা সম্ভাব্য ফলাফলকে দিক নির্দেশ করে থাকে। তাই হাইপোথিসিস পরীক্ষামূলক গবেষণা, ঐতিহাসিক গবেষণা, বর্ণনামূলক গবেষণা, সার্ভে গবেষণা, দার্শনিক গবেষণা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

সুতরাং যেকোনো গবেষকের দ্বারা সুষ্ঠুভাবে গবেষণা কার্য সম্পন্ন করার জন্য হাইপোথিসিস গবেষণার প্রধান অংশ।

তথ্যসূত্র (Reference)

  • Best, J.W & Khan, J.V (2006) “Research in Education” (10th Ed.). New Delhi: PHI Learning Private Limited.
  • Kaul L. (1984) Methodology of Education Research, New Delhi, Vikas Publishing House
  • Creswell, J.W (2019) “Educational Research” (4th Ed.). Pearson, ISBN 978-93-325-4947-0
  • Internet Sources – Click Here

প্রশ্ন – হাইপোথিসিস বা প্রকল্প বলতে কি বোঝায়?

উত্তর – বিশিষ্ট গবেষক Max Weber ভাষায় বলা যায়, হাইপোথিসিস হল ক্ষণস্থায়ী ব্যাখ্যা যা এর যৌক্তিক কিংবা বাস্তবিক ফলাফল প্রণয়ন বা পরীক্ষার জন্য গ্রহণ করা হয়।

প্রশ্ন – পরিসংখ্যানে হাইপোথিসিস এর প্রকারভেদ।

উত্তর – পরিসংখ্যানে হাইপোথিসিসকে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা – শূন্য হাইপোথিসিস এবং বিকল্প হাইপোথেসিস।

প্রশ্ন – প্রকল্প কয় প্রকার ও কি কি?

উত্তর – প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী হাইপোথিসিস বা প্রকল্প দুই প্রকার, যথা – পরীক্ষামূলক হাইপোথিসিস এবং পরিসংখ্যানগত হাইপোথিসিস।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close