Share on WhatsApp Share on Telegram

বুদ্ধির সংজ্ঞা দাও | বুদ্ধি কাকে বলে | Definition of Intelligence

Join Our Channels

বুদ্ধি হল এমন একটি মানসিক ক্ষমতা, যেটি ব্যক্তিকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের মধ্যে টিকে থাকতে বা অভিনব সংগতিবিধানে সহায়তা করে। বুদ্ধি এমন একটি প্রক্রিয়া যার বিভিন্ন সংজ্ঞা বা ধারণা (Definition of Intelligence) বর্তমান।

অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় মানুষকে বুদ্ধিমান জীব হিসেবে গণ্য করা হয়। কারণ পরিবর্তনশীল পরিবেশের মধ্যে অভিযোজন বা সংহতিবিধানের ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় মানুষ নিজেকে সহজে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। যার ফলে শুধু বুদ্ধিমান হিসেবে মানুষকে গণ্য করা হয় না, বরং প্রাণীকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবেও গণ্য করা হয়। এই অধ্যায় বুদ্ধির সংজ্ঞা, বুদ্ধি কাকে বলে, বুদ্ধির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

বুদ্ধি কাকে বলে

সাধারণ অর্থে বুদ্ধি হল কোনো কিছু কর্ম সম্পাদন করার ক্ষমতা। তাই যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন করা হয় তাকে বলে বুদ্ধি। বিভিন্ন মনোবিদ্যার মধ্যে বুদ্ধি সংজ্ঞা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তাই বুদ্ধির গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা পাওয়া যায় না।

বিভিন্ন মনোবিদ বিভিন্নভাবে বুদ্ধিকে ব্যাখ্যা করেছেন। তাই বুদ্ধি কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ব্যক্তি চলার পথে যখন কোন সমস্যা দেখা দেয় তখন বুদ্ধি মাধ্যমে সেই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব করা হয়। তাই বুদ্ধি একদিকে যেমন ব্যক্তিকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সহায়তা করে, বিমুর্ত চিন্তা করতে সহায়তা করে অপরদিকে তেমনি ব্যক্তিকে যথাযথভাবে যুক্তিপূর্ণ চিন্তন ও সমস্যার সমাধানের সাহায্য করে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় – ইট দিয়ে যেমন বাড়ি বানানো যায় আবার এটি বিপদের সময় আত্মরক্ষার অস্ত্র হিসাবে কাজে লাগে। এক্ষেত্রে ব্যক্তি ইটটি কোন কাজে ব্যবহার করবেন তা বুদ্ধির উপর নির্ভর করে।

বুদ্ধির সংজ্ঞা দাও | Definition of Intelligence

বিভিন্ন মনস্তত্ত্ববিদ বুদ্ধিকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। মনস্তত্ত্ববিদগণদের দেওয়া বুদ্ধির সংজ্ঞা (Definition of Intelligence) গুলিকে মোটামুটি চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। বুদ্ধির সংজ্ঞা যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

1. বুদ্ধির জৈবিক সংজ্ঞা

বুদ্ধির জৈবিক সংজ্ঞা অনুযায়ী – পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সার্থক অভিযোজন হলো বুদ্ধি। অর্থাৎ সতত পরিবর্তনশীল সমাজের সঙ্গে মানিয়ে চলা বা অভিযোজন করা হলো বুদ্ধি।

মনোবিদ্‌ স্টার্ন (Stern) এর মতে, – জীবনের নতুন সমস্যা এবং পরিস্থিতির সঙ্গে সার্থকভাবে অভিযোজন করার মানসিক ক্ষমতাই হল বুদ্ধি। (“Intelligence is the mental adaptability to new problems and conditions life.”)

2. বুদ্ধির মনস্তাত্ত্বিক সংজ্ঞা

বুদ্ধির মনস্তাত্ত্বিক সংজ্ঞা অনুযায়ী মানসিক প্রক্রিয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। অর্থাৎ চিন্তন ক্ষমতার বিকাশকে বুদ্ধি বলে।

বিশিষ্ট মনোবিদ্‌ টারম্যান (Terman) এর মতে, – বুদ্ধি হল বিমূর্ত চিন্তা করার ক্ষমতা। (“Ability to carry abstract thinking”)

3. বুদ্ধির শিক্ষামূলক সংজ্ঞা

বুদ্ধির শিক্ষামূলক সংজ্ঞা অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা কিভাবে জ্ঞান অর্জন করে বা কিভাবে শেখে তাকে বুদ্ধি হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

বিশিষ্ট মনোবিদ্‌ বার্কিংহাম (Buckingham) বলেছেন – বুদ্ধি হল শিখনের ক্ষমতা। (“Intelligence is capacity to learn.”)

4. বুদ্ধির পরীক্ষানির্ভর সংজ্ঞা

বুদ্ধির পরীক্ষামূলক বলা হয়েছে বুদ্ধি হল আচরণের পরিবর্তন।

মনোবিদ্‌ Pieron -এর মতে, – নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে আচরণের মূল্যমান নির্ণয়করণ হল বুদ্ধি।

এগুলি ছাড়াও বুদ্ধির আরোও যে-সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা বর্তমান, সেগুলি হল –

গিলফোর্ডের মতে – বুদ্ধি হল একটি নির্দিষ্ট ফলাফলের উদ্দেশ্যে কর্ম সম্পাদন করা।

বিশিষ্ট মনোবিদ্‌ Gardner বলেছেন – “Intelligence is the ability to solve problems, or to create products, that are valued within one or more cultural settings.”

মনোবিদ্‌ A. Jensen বলেছেন – “Intelligence is a general factor that runs through all types of performance.” অর্থাৎ – “বুদ্ধি হল একটি সাধারণ উপাদান যা সব ধরনের কর্মক্ষমতার বিকশিত হয়।”

আবার, বিশিষ্ট মনোবিদ Wechsler বলেছেন – পরিবেশের সঙ্গে ব্যক্তির সামগ্রিকভাবে উদ্দেশ্যপূর্ণ কাজ, যুক্তিপূর্ণ চিন্তন এবং যথাযথভাবে কর্ম সম্পাদন করার ক্ষমতাকে বলা হয় বুদ্ধি।

বুদ্ধির বৈশিষ্ট্য

বুদ্ধির বৈশিষ্ট্য বুদ্ধির সংজ্ঞা গুলি থেকে পরিলক্ষিত হয়। বুদ্ধির বৈশিষ্ট্য দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল –

1. বুদ্ধি হল মানসিক ক্ষমতা।

2. বুদ্ধি হল সহজাত এবং অর্জিত উভয় প্রকার । তাই অনেক মনোবিদগণ মনে করেন বুদ্ধির ক্ষেত্রে বংশগতির প্রভাব রয়েছে।

3. বুদ্ধি হল বিমুর্ত চিন্তন ক্ষমতা।

4. বুদ্ধি সর্বজনীন। অর্থাৎ প্রতিটি মানুষের মধ্যে কম বা বেশি বুদ্ধি থাকে।

5. বুদ্ধি পরিমাপযোগ্য। অর্থাৎ বুদ্ধিকে পরিমাপ করা যায়। এরজন্য বিভিন্ন অভিক্ষা বর্তমান।

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, বুদ্ধি শব্দটি একটি জীবনে সর্বক্ষেত্র ব্যবহার হয়। কোন কাজ করার ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে সাহায্য করে। অনেক সময় আমরা কারোর কাজ করার ধরন দেখে তাকে বুদ্ধি কম বা বেশি হিসাবে গণ্য করি। যেমন – বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীর রেজাল্ট ভালো হলে আমরা তাকে বুদ্ধিমান হিসেবে গণ্য করি। আবার তুলনামূলকভাবে যারা খারাপ রেজাল্ট করে বা ফেল করে তাদেরকে কম বুদ্ধিমান হিসেবে গণ্য করে থাকি।

তবে বলা যায়, বুদ্ধি এমন একটি বিষয় যেটি কোন সমস্যা সমাধানে বা ব্যক্তিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ক্রিয়া করতে, যুক্তিপূর্ণ চিন্তা করতে এবং সার্থকভাবে পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজনে সহায়তা করে।

তথ্যসূত্র (Reference)

  • A. Woolfolk – Educational Psychology – Pearson Education
  • J. W. Santrock – Educational Psychology – Mc Gray Hill
  • J. C. Aggarwal – Essentials of Educational Psychology – Vikas publisher
  • S. K. Mangal – Essentials of Educational Psychology – PHI Ltd.
  • S. K. Mangal – Advanced Educational Psychology – PHI Ltd
  • S. S. Chauhan – Advanced Educational Psychology – Vikas publisher
  • E. B. Hurlock – Child Development – Anmol Publication Pvt. Ltd
  • L. E. Berk – Child Development – PHI Ltd
  • Internet Sources

প্রশ্ন – বুদ্ধির একটি জৈবিক সংজ্ঞা দাও

উত্তর – জৈবিক সংখ্যা অনুযায়ী – বুদ্ধি হল পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সার্থকভাবে অভিযোজন করা বা মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা।

প্রশ্ন – বুদ্ধ্যঙ্ক বলতে কী বোঝায়?

উত্তর – বুদ্ধাংক হল বুদ্ধির একক। বিভিন্ন অভিক্ষার মাধ্যমে বুদ্ধির যে পরিমাপ করা হয় তা বুদ্ধাঙ্কের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। তাই কোন ব্যক্তির বুদ্ধির পরিমাণ কতটা বা অন্য ব্যক্তির তুলনায় কতটা কম বেশি তা যাচাই করার সংখ্যামূলক পরিমাপ হল বুদ্ধ্যঙ্ক বা বুদ্ধাংক।

প্রশ্ন – বুদ্ধাংক শব্দের প্রবর্তক কে?

উত্তর – ১৯১৪ সালে জার্মান মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম স্টার্ন সর্বপ্রথম বুদ্ধাংক IQ শব্দটি ব্যবহার করেন। অর্থাৎ বুদ্ধাংক শব্দের প্রবর্তক হলেন উইলিয়াম স্টার্ন (William Starn).

প্রশ্ন – IQ এর সূত্র কি?

উত্তর – IQ এর সূত্রটি হল – MA/CA×100
এখানে MA = Mental Age বা মানসিক বয়স এবং CA = Chronological Age বা শারীরিক বয়স।

প্রশ্ন – IQ এর পূর্ণরূপ কী?

উত্তর – IQ এর পূর্ণরূপ হল – Intelligence Quotient বা বুদ্ধাংক।

প্রশ্ন – একজন সাধারণ মানুষের IQ কত?

উত্তর – একজন সাধারণ মানুষের IQ হল 90 থেকে 100 পর্যন্ত।

আরোও পড়ুন

4.5/5 - (6 votes)

Author Photo

Mr. Debkumar – Founder of Edutiips.com

A teacher and author of several books published by Aheli Publication, including Communication Skills, Aspect of Democratic Citizenship, Sociological Foundation of Education, Computer Applications, Fundamentals of Education, Educational Organization and Planning, and Educational Research.

Leave a Comment

close