বৃত্তিমূলক নির্দেশনা কাকে বলে | বৃত্তিমূলক নির্দেশনার উদ্দেশ্য | Vocational Guidance

বিভিন্ন প্রকার নির্দেশনার মধ্যে বৃত্তিমূলক নির্দেশনা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কারণ এটি ব্যবহারিক দিককে গুরুত্ব আরোপ করে থাকে। তাই বৃত্তিমূলক নির্দেশনা (Vocational Guidance) আধুনিক কারে শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিলক্ষিত হয়।

নির্দেশনা ব্যক্তিকে সমাজের সঙ্গে সার্থক অভিযোজনে সহায়তা করে থাকে। কিন্তু ব্যক্তিকে সমাজ উপযোগী করে তোলার ক্ষেত্রে বৃত্তিমূলক নির্দেশনার প্রয়োজন বর্তমান। কারণ বৃত্তি বা কোনো পেশার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি ভবিষ্যৎ জীবনের উপযোগী হয়ে ওঠে এবং তার দৈনন্দিন জীবনে স্বাচ্ছন্দ আনে। তাই এটি একটি ধনাত্মক ক্রিয়াগত পরিবর্তনের প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হয়।

বৃত্তিমূলক নির্দেশনা কাকে বলে | Vocational Guidance

বৃত্তিমূলক নির্দেশনা হল ব্যক্তিকে ভবিষ্যৎ জীবনের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য যথাযথ নির্দেশনা দান করা। তাই যে নির্দেশনা ব্যক্তিকে কোনো বৃত্তি নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলে বা বৃত্তি নির্বাচনের ক্ষেত্রে যথাযথ তথ্য প্রদান করার মধ্য দিয়ে সহায়তা করে তাকে বৃত্তিমূলক নির্দেশনা বলে।

বৃত্তিমূলক নির্দেশনা ব্যক্তিকে উপযুক্ত পেশায় নিযুক্ত হতে বা উপযুক্ত বৃত্তি নির্বাচন করতে সহায়তা করে থাকে। অর্থাৎ ব্যক্তির পছন্দ অনুযায়ী বৃত্তি নির্বাচনের ক্ষেত্রে বৃত্তিমূলক নির্দেশনা বিশেষ কার্যকরী।

বৃত্তিমূলক নির্দেশনার সংজ্ঞা

বৃত্তিমূলক নির্দেশনার বিভিন্ন সংজ্ঞা পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল –

1. মেয়ারস (Mayers) বলেছেন – বৃত্তিমূলক নির্দেশনা হল কোনো ব্যক্তিকে তার নিজের বৃত্তি বা পেশা সংক্রান্ত নির্দিষ্ট বিষয়গুলি পরিচালিত করার জন্য সহায়তা মূলক একটি বিশেষ প্রক্রিয়া। (“Vocational Guidance is the process of assisting the individual to do for himself certain definite things pertaining to his vocation.”)

2. ক্রো এবং ক্রো (Crow and Crow) বলেছেন – বৃত্তিমূলক নির্দেশনা হল শিক্ষার্থীদের বৃত্তি নির্বাচনে, বৃত্তির জন্য প্রস্তুতিকরণে এবং বৃত্তির অগ্রগতি যাচাইকরনের একটি প্রক্রিয়া। (“Vocational Guidance usually is interpreted as the assistence given to the learners to choose, prepare for and progress in an occupation.”)

তাই বলা যায়, বৃত্তিমূলক নির্দেশনা ব্যক্তিকে কেবলমাত্র উপযুক্ত বৃত্তি নির্বাচনে সহায়তা করে তা না, বৃত্তির সঙ্গে সার্থক অভিযোজনেও বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে।

বৃত্তিমূলক নির্দেশনার উদ্দেশ্য

বৃত্তিমূলক নির্দেশনার উদ্দেশ্য যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল –

1. বৃত্তিমূলক নির্দেশনা মাধ্যমে শিক্ষার্থী তথা ব্যক্তিকে সমাজ উপযোগী এবং ভবিষ্যতের উপযোগী করে গড়ে তোলা সম্ভব করা হয়।

2. বৃত্তিগত নির্দেশনের মাধ্যমে বৃত্তি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সরবরাহ করা সম্ভবপর হয়। তাই এই নির্দেশনা উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের কাছে যথাযথ তথ্য প্রদানের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি নির্বাচনের উপযোগী করে গড়ে তোলা।

3. বৃত্তির ব্যাপকতা বা বিস্তার সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ওয়াকিবহল করা।

4. বৃত্তি শিক্ষার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরা। ফলে শিক্ষার্থীরা আগে থেকে বৃত্তি সংক্রান্ত বিষয় জানতে পারে।

5. শিক্ষার্থীদের কোনো বৃত্তি বা পেশার ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করা।

6. শিক্ষার্থীরা কিভাবে তাদের পছন্দের পেশা বা বৃত্তি সহজে নির্বাচন করতে পারবে এবং কিভাবে সাফল্য লাভ করবে সে সম্পর্কে যাবতীয় নির্দেশনা দান করা।

7. বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয়করণের মধ্য দিয়ে পেশা সংক্রান্ত বা বৃত্তি সংক্রান্ত ভয়-ভীতি দূরীকরণ করা।

8. বৃত্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের সেমিনার, ওয়ার্কশপ বা ক্যাম্পাসিং এর ব্যবস্থা করা। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সহজে তাদের আগ্রহ, প্রবণতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী বৃত্তি নির্বাচন করতে সক্ষম হয়।

9. শিক্ষার্থীদের কোনো বৃত্তিতে প্রবেশের আগে এই বৃত্তি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দান বা পেশাগত দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা বৃত্তিমূলক নির্দেশনা অন্যতম উদ্দেশ্য।

10. বৃত্তিমূলক নির্দেশনার মাধ্যমে কোনো বৃত্তির কোন কোন ঝুঁকি রয়েছে? বা কিভাবে সাফল্য পাওয়া যাবে? কি কি যোগ্যতা লাগবে? উক্ত বৃত্তির ভবিষ্যৎ কি? প্রভৃতি সম্পর্কে যথাযথ তথ্য সরবরাহ করে থাকে।

তাছাড়া শিক্ষার্থীদের আগ্রহ, প্রবণতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং মানসিক যোগ্যতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করা বৃত্তিমূলক নির্দেশনার অন্যতম বিশেষ উদ্দেশ্য।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, বৃত্তিমূলক নির্দেশনা আধুনিক শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শুধুমাত্র পুঁথিগত জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সমাজ উপযোগী করে গড়ে তোলা সম্ভবপর নয়। বরং বৃত্তি শিক্ষার মধ্য দিয়ে শিক্ষার ব্যবহারিক লক্ষ্যকে পরিপূর্ণতা দান করার ক্ষেত্রে বৃত্তিমূলক নির্দেশনা বিশেষভাবে উপযোগী।

তথ্যসূত্র (Reference)

  • Basu, N.C. Educational and Vocational Guidance.
  • Chauhan, S.S. – Principles and Techniques of Guidance.
  • Dave Indu – The Basic Essentials of Counseling.
  • Kocher, S.K. – Guidance and Counselling in Secondary School
  • NCERT- Guidance and Counseling.

প্রশ্ন – বৃত্তিমূলক নির্দেশনার তিনটি বৈশিষ্ট্য লেখো

উত্তর – বৃত্তিমূলক নির্দেশনার তিনটি বৈশিষ্ট্য হল – বৃত্তিমুলা নির্দেশনা নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কেন্দ্রিক প্রক্রিয়া, এটি সহায়তা মূলক প্রক্রিয়া এবং এটি ভবিষ্যৎমুখী ও সমাজ উপযোগী প্রক্রিয়া।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close