স্বামী বিবেকানন্দের মানুষ গড়ার শিক্ষা সংক্রান্ত ধারণাটি ব্যাখ্যা করো | Man Making Education

যুগ যুগ ধরে ভারতবর্ষে যে সমস্ত মহামানবের আবির্ভাব হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম হল স্বামী বিবেকানন্দ। স্বামী বিবেকানন্দের মানুষ গড়ার শিক্ষা সংক্রান্ত ধারণাটি (Man Making Education) তাঁর শিক্ষা চিন্তার অন্যতম ফসল।

যুগপুরুষ স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন উনবিংশ শতকের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। তিনি ১৮৬৩ সালে কলকাতার সিমলায় দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার ছিলেন বিশ্বনাথ দত্ত ও মাতা ভুবনেশ্বরী দেবী। স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষায় অবদান গুলির মধ্যে অন্যতম হল গণশিক্ষা, নারী শিক্ষা, মানুষ গড়া শিক্ষা প্রভৃতি।

স্বামী বিবেকানন্দের মানুষ গড়ার শিক্ষা | Man Making Education

শিক্ষাক্ষেত্রে স্বামী বিবেকানন্দের অবদান বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়। আর এই সমস্ত অবদানের মধ্যে অন্যতম হলো মানুষ গড়ার শিক্ষা। স্বামী বিবেকানন্দের মানুষ গড়ার শিক্ষা সংক্রান্ত ধারণাটি এখানে আলোচনা করা হলো।

বিবেকানন্দের মানুষ গড়ার শিক্ষা হল প্রকৃত মানুষ তৈরি করা। তিনি বলেছিলেন প্রকৃত মানুষ সমাজ গঠনের প্রধান কারিগর। তাই সমাজের সর্বস্তরের মানুষের শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের হিত সাধন করা ছিল মানুষ গড়ার শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য।

বিবেকানন্দ বলেছেন – শিক্ষার লক্ষ্য হলো শিশুর অন্তর্নিহিত সত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন করা। অর্থাৎ শিশুর মধ্যে যে সুপ্ত গুণাবলী আগে থেকে বিদ্যমান তার বিকাশ সাধনই হলো শিক্ষার লক্ষ্য।

বিবেকানন্দ ভারতবর্ষের দুঃখ মোচনের জন্য আজীবন নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। এবং তিনি শিক্ষার মাধ্যমে ভারতবাসীকে নতুন পথের দিশা দেখিয়েছিলেন। বিবেকানন্দ তাই সর্বপ্রথম মানুষ গড়ার শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন মানুষ গড়ার শিক্ষা একটি অন্যতম ও সর্বোত্তম ধারণা।

বিবেকানন্দ মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলেন ভারতবর্ষের উন্নতির জন্য দরকার প্রকৃত মানুষ। আর এর জন্য চাই উপযুক্ত শিক্ষা। তাই বিবেকানন্দ সবসময় শিক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত মানুষ তৈরির প্রতি গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

বিবেকানন্দ মানুষ শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে বলেছিলেন – ” আমাদের দেশে এখন প্রয়োজন এমন মানুষ যাদের মাংসপেশী হবে লৌহসদৃশ, স্নায়ু হবে ইস্পাততুল্য, এবং ইচ্ছা শক্তি এমন দৃঢ় হবে যার বিচলনকরা সম্ভব নয়”।

তাই বিবেকানন্দ মানুষ গড়ার জন্য যুবক সমাজকে সর্বদা উৎসাহিত করতেন। তিনি মনে করতেন – শিক্ষার মাধ্যমে নতুন ভারত জন্ম নেবে।

অর্থাৎ তাঁর মতে – ” নতুন ভারত বেরোক – বেরোক নাঙল ধরে, চামার কুটির ভেদ করে, জেলে মুচি মেথর ঝগড়ির মধ্যে থেকে, বেরোক মুদির দোকান থেকে, উনুনের পাশ থেকে, বেরোক কল কারখানা থেকে, হাট বাজার থেকে, বেরোক ঝোপ জঙ্গল পাহাড় পর্বত থেকে”।

উপসংহার (Conclusion)

সর্বোপরি বলা যায়, বিবেকানন্দের মানুষগড়ার শিক্ষা (Man Making Education) চিন্তা ভারতবর্ষকে এক নতুন পথের সন্ধান দিয়েছিল। তিনি বারবার যুব সমাজকে সমাজের যাবতীয় দায়ভার গ্রহণ করার জন্য আহবান করতেন। তিনি মনে করতেন যুবকরা শিক্ষিত হলে তবেই তারা স্বাবলম্বী হতে পারবে। তাই তার শিক্ষা চিন্তার মধ্যে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিক হল মানুষ গড়ার শিক্ষা।

তথ্যসূত্র (References)

  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1
  • Education in India-Past-Present-Future, Vol. I and II, J. P. Banerjee
  • Landmarks in the History of Modern Indian Education, J. C. Aggarwal
  • Internet Sources

প্রশ্ন – স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম ও মৃত্যু তারিখ

উত্তর – স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম ১৮৬৩ সালে উত্তর কলকাতা সিমলায় দত্ত পরিবারে। পরবর্তীকালে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এবং তার ইচ্ছা অনুযায়ী মানব কল্যাণে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেন। ১৮৯৩ সালে আমেরিকার বিশ্ব ধর্ম সভায় তিনি বক্তৃতার মাধ্যমে সারা পৃথিবীর মানুষের মন জয় করে নেন। তাছাড়া শিক্ষার ক্ষেত্রে স্বামী বিবেকানন্দের অবদান অনস্বীকার্য। এই মহান মানুষটি ১৯০২ সালে ৪ জুলাই তারিখে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে বেলুড় মঠে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় দেহ ত্যাগ করেন।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close