পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচির পার্থক্য | Curriculum and Syllabus

শিক্ষাকে সার্থক রূপায়নের ক্ষেত্রে বা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচি বিশেষভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে এই পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচির পার্থক্য (Curriculum and Syllabus) বিশেষ কিছু দিক থেকে বিদ্যমান।

শিক্ষার উপাদান গুলির মধ্যে অন্যতম হল পাঠক্রম আর পাঠক্রমের অংশ হল পাঠ্যসূচি। পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচির মধ্যে বিশ্লেষণ করলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচির পার্থক্য এই পর্বে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হল।

পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচির মধ্যে পার্থক্য | Curriculum and Syllabus

পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচির মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য বর্তমান। যে সমস্ত দিক থেকে পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচির মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান সেগুলি নিম্ন আলোচনা করা হল –

প্রথমতধারণাগত পার্থক্য

শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধনের জন্য পূর্বনির্ধারিত ও সুনির্বাচিত অভিজ্ঞতার সমষ্টি হল পাঠক্রম।

আর অপরদিকে পাঠক্রমের অন্তর্গত বিভিন্ন বিষয়ের নির্ধারিত পাঠ্য তালিকাকে পাঠ্যসূচি বলে। অর্থাৎ পাঠ্যসূচি হল পাঠক্রমের অংশ মাত্র।

দ্বিতীয়ত – পরিধিগত পার্থক্য

পাঠক্রমের পরিধি ব্যাপক এবং বিস্তৃত।

আর অপরদিকে পাঠ্যসূচির পরিধি সংকীর্ণ প্রকৃতির।

তৃতীয়ত – কার্যগত পার্থক্য

পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীন বিকাশের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়ে থাকে।

আর অপরদিকে, পাঠ্যসূচির মাধ্যমে মূলত শিক্ষার্থীদের জ্ঞানমূলক বিকাশের দিকে গুরুত্ব আরোপ করা হয়ে থাকে।

চতুর্থত – বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য

পাঠক্রম হল সর্বদা পরিবর্তনশীলকারী বিষয়।

আর অপরদিকে পাঠ্যসূচি হল অপরিবর্তনীয়।

পঞ্চমত – ব্যবহারগত পার্থক্য

পাঠক্রমের বিষয়গুলির অনুশীলন শ্রেণিকক্ষের মধ্যে এবং বাইরের সংঘটিত হয়ে থাকে।

আর অপরদিকে, পাঠ্যসূচির বিষয়গুলির অনুশীলন শ্রেণিকক্ষের অভ্যন্তরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।

ষষ্ঠত – অন্তর্ভুক্তি

পাঠক্রমের মধ্যে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী অন্তর্ভুক্তি থাকে।

পাঠ্যসূচির মধ্যে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর অন্তর্ভুক্তি থাকে না।

সপ্তমত – ভিত্তিগত পার্থক্য

পাঠক্রমের মধ্যে তত্ত্বগত আদর্শের সাথে বাস্তব উপযোগিতার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়ে থাকে।

আর অপরদিকে, পাঠ্যসূচির মধ্যে তাত্ত্বিক ও আদর্শ ভিত্তিক বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়ে থাকে।

অষ্টমত – লিখিত ও অলিখিতগত পার্থক্য

পাঠক্রম লিখিত ও অলিখিত এই দুই প্রকৃতির হয়ে থাকে।

আর অপরদিকে, পাঠ্যসূচি কেবলমাত্র লিখিত প্রকৃতির হয়ে থাকে। অর্থাৎ পাঠ্যসূচিকে লিখিতআকারে প্রকাশ করা হয়।

উপসংহার (Conclusion)

উপরের উল্লেখিত পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচির পার্থক্য (Curriculum and Syllabus) গুলি থেকে বলা যায়, পাঠক্রম একটি সার্বিক বিষয় আর অপরদিকে পাঠ্যসূচী হল পাঠক্রমের অংশ মাত্র। উদাহরণস্বরূপ – কলেজের শিক্ষা তিন বছরের সম্পূর্ণ কোর্সটি পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত। আর এর মধ্যে যে সমস্ত বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে সেগুলি পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত। তাই পাঠক্রম হল কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বৃক্ষস্বরূপ আর পাঠ্যসূচি হল সেই বৃক্ষের শাখা ও পোশাখা।

তথ্যসূত্র (References)

  • Aggarwal, J. C., Theory and Principles of Education. 13th Ed. Vikas Publishing House Pvt. Ltd.
  • V.R. Taneja, Educational Thoughts & Practice. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi
  • Nayak, B.K, Text Book of Foundation of Education. Cuttack, Odisha: KitabMhal
  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1,
  • Internet sources

প্রশ্ন – কারিকুলাম ও সিলেবাস

উত্তর – কারিকুলাম বা পাঠক্রম হল এমন একটি সুনির্দিষ্ট ও পূর্বনির্ধারিত বিষয় যা শিক্ষার্থীদের সুষম বিকাশে সহায়তা করে। আর অপরদিকে সিলেবাস বা পাঠ্যসূচি হল পাঠক্রমের অন্তর্গত বিভিন্ন বিষয়ের নির্ধারিত পাঠ্য তালিকা। অর্থাৎ পাঠ্যসূচি পাঠক্রমের অংশমাত্র।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close