সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী কাকে বলে | সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য | Co Curricular Activities

শিক্ষা ক্ষেত্রে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাঠক্রমের পাশাপাশি এই সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী (Co Curricular Activities) শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিকাশের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়।

শিক্ষার উপাদান হিসেবে পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের বৌদ্ধিক বিকাশে সহায়তা করে থাকে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের বৌদ্ধিক বিকাশের পাশাপাশি অন্যান্য বিভিন্ন দিকের বিকাশের জন্য যে বিষয়ের প্রয়োজন হয় সেটি হল সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী।

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী কাকে বলে | Co Curricular Activities

সাধারণ অর্থে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী হল এমন এক ধরনের কার্যাবলী যেগুলি শিক্ষার্থীদের বৌদ্ধিক বিকাশের পাশাপাশি অন্যান্য সকল দিকের বিকাশ সাধনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন করা যায়।

পূর্বে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী বহিঃ পাঠক্রমিক কার্যাবলী হিসেবে অধিক পরিচিত ছিল। কিন্তু সমাজ ও শিক্ষার দ্রুত অগ্রগতি এবং দৃষ্টিভঙ্গির প্রসারের ফলে পরবর্তীকালে বহিঃ পাঠক্রমিক কার্যাবলীকে সহপাঠক্রমের কার্যাবলী হিসেবে গণ্য করা হয়।

অর্থাৎ শিক্ষার সমগ্র পাঠক্রমের কাঠামোর মধ্যে শ্রেণি বহির্ভূত কার্যাবলীর গুরুত্বকে বোঝানোর জন্য সহপাঠক্রম কথাটি অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর সংজ্ঞা

শিক্ষাক্ষেত্রে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীকে বিভিন্ন শিক্ষাবিদ বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, তা হল –

শিক্ষাবিদ H. N. Rivlin (রিভলিন) বলেছেন – যে সমস্ত কার্যাবলী শিক্ষার্থীদের বৌদ্ধিক বিকাশের পাশাপাশি জীবন বিকাশের অন্য দিকগুলিকে সার্থক করে গড়ে তোলে, তাদের বলা হয় সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী।

আবার মুদালিয়ার কমিশনের (১৯৫২-৫৩ সাল) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে – সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী বলতে আমরা এমন সমস্ত মূল্যবান এবং বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা ও কার্যাবলীকে বুঝি, যেগুলি বিদ্যালয়ের পাঠক্রমের সংযোজিত নয়, অথচ শিক্ষার্থীদের দেহ মনের সার্বিক বিকাশ, পুষ্টি সাধনে, সামাজিক সচেতনতা লালন পালনে, সামাজিক দক্ষতা অর্জনে এবং সর্বোপরি নৈতিক চরিত্র গঠনে অত্যন্ত অপরিহার্য।

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী উদাহরণ

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর উদাহরণ হল – ব্যায়াম, খেলাধুলা, বিতর্ক সভা, অভিনয়, অবসর যাপনমূলক কার্যাবলী, সমাজ সেবামূলক কার্যাবলী প্রভৃতি।

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর বৈশিষ্ট্য

সহপাঠক্রমের কার্যাবলীর বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়ে থাকে, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

1. নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যমুখী

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী পাঠক্রমের মতো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য প্রক্রিয়া। অর্থাৎ এটি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দিকের বিকাশ সাধন করে থাকে।

2. ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য নির্ভর

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রকৃতির। অর্থাৎ ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে এই কার্যাবলী শিক্ষা ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। তাই ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে প্রাধান্য দিয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী নির্ধারিত হয়ে থাকে।

3. বৈচিত্র্যপূর্ণ

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর বৈশিষ্ট্য হল এটি সর্বদা বৈচিত্র্যমুখী। অর্থাৎ এই সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্যমূলক বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। তাহলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে।

4. সৃজন মূলক বা সৃজন ধর্মী প্রকৃতির

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশ সাধন সম্ভবপর হয়। যেমন – নিত্য, গীত, অঙ্কন প্রভৃতি সহপাঠক্রমিক কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশ সাধন করা সম্ভব হয়। তাই সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী সৃজনমূলক বা সৃজনধর্মী প্রকৃতির।

5. আনন্দদায়ক প্রকৃতির

বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দ অনুভূতি জাগ্রত হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষায় অধিক বেশি মনোযোগী হতে পারে। তাই সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর বৈশিষ্ট্য হল এটি আনন্দদায়ক প্রকৃতির।

6. পরিবর্তনশীল

শিক্ষার্থীদের আগ্রহ, প্রবণতা ও চাহিদার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী শিক্ষা ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। ফলে ব্যক্তি ও সমাজের চাহিদার পরিবর্তনের সঙ্গে সংগতি অনুযায়ী সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী পরিবর্তনশীল হয়ে থাকে।

7. সমাজনির্ভর

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর বৈশিষ্ট্য হল এটি সমাজ নির্ভর প্রক্রিয়া। অর্থাৎ সামাজিক কৃষ্টি বা সংস্কৃতি প্রভৃতিকে কেন্দ্র করে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর বিষয়বস্তু নির্ধারিত হয়ে থাকে।

8. উৎপাদনশীল

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে উৎপাদনশীলতার মনোভাব গঠন করে। যেমন – বাগান তৈরি, মোমবাতি তৈরি, সমাজসেবামূলক কাজ প্রভৃতি। তাই এই প্রকার কার্যাবলী উৎপাদনশীল প্রকৃতির হয়ে থাকে।

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী (Co Curricular Activities) পাঠক্রমের পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষার বৃহত্তর উদ্দেশ্য পূরণে এবং শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সহায়তা করে। এই কার্যাবলী শিক্ষার্থীদের জ্ঞানমূলক বিষয়ের পাশাপাশি সুষম এবং পরিপূর্ণ বিকাশের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে।

তথ্যসূত্র (References)

  • Aggarwal, J. C., Theory and Principles of Education. 13th Ed. Vikas Publishing House Pvt. Ltd.
  • V.R. Taneja, Educational Thoughts & Practice. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi
  • Nayak, B.K, Text Book of Foundation of Education. Cuttack, Odisha: KitabMhal
  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1,
  • Internet sources

প্রশ্ন – সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী কি

উত্তর – সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী হল এক প্রকারের কার্যাবলী যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বৌদ্ধিক বিকাশের পাশাপাশি অন্যান্য দিকের বিকাশ সাধন করা হয়ে থাকে। যেমন – খেলাধুলা, গান, নৃত্য, অংকন, জাতীয় দিবস পালন প্রভৃতি।

প্রশ্ন – সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী চারটি উদাহরণ

উত্তর – সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী চারটি উদাহরণ হল – শরীরচর্চামূলক কার্যাবলী (ব্যায়াম, খেলাধুলা), সাংস্কৃতিক কার্যাবলী (নাটক, মহাপুরুষদের জীবনী), সমাজসেবামূলক কার্যাবলী (রক্তদান শিবির, স্বাস্থ্য সপ্তাহ পালন) এবং অবসরযাপনমূলক কার্যাবলী।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close